Tuesday 13 December 2016

♨♨♨♨ অমল ও চাওআলা ♨♨♨♨

রবি ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে ...
                                                         অমল ও চাওআলা 
চাওআলা = চায়ে― চায়ে― লিকার চায়ে, দুধ চায়ে!
অমল = চাওআলা, চাওআলা, ও চাওআলা!
চাওআলা = ডাকছ কেন? চা খাবে?
অমল = কেমন করে খাবো! আমার তো খুচরো পয়সা নেই! একটাই ২০০০এর নোট। তুমি খুচরো দেবে?
চাওআলা = কেমন ছেলে তুমি। খুচরো নেই তো আমার বেলা বইয়ে দাও কেন?
অমল = আমি যদি সবার মতন এটিএম আর ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিতে পারতুম!
চাওআলা = আচ্ছা তোমার কাছে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড আছে? তোমার পেটিএম নেই! তাহলে একটা দুধ চায়ের সাথে এক ভাঁড় লিকার ফ্রী পেতে!
অমল = একটা পুরনো ৫০০টাকার নোট আছে, ওটা নেবে?
চাওআলা = না বাবু ওটা কালোধন। ওটা নিতে পারবো না।
অমল = তুমি যে কত দূর থেকে হাঁকতে হাঁকতে চলে যাচ্ছ শুনে আমার মন কেমন করছে। ঠিক যেন তুমি আমার 'মন কি বাত' বলে যাচ্ছো।
চাওআলা = (চায়ের চুলা সহ কেটলি নামাইয়া) , মিত্রোঁ.., তুমি এখানে বসে কী করছ?
অমল = কবিরাজ আমাকে বেরোতে বারণ করেছে, বলেছে সুদিন এলে তবেই বের হবি। তাই আমি সারাদিন এইখেনেই বসে থাকি।
চাওআলা = আহা মিত্রোঁ, তোমার কী হয়েছে? কোন ডাক্তারি পরীক্ষা করাওনি?
অমল = আমি জানি নে। আমি তো ফোটোশপ শিখি নি, তাই আমি এক্স-রে রিপোর্ট দেখে বুঝতে পারি নে আমার কী হয়েছে। চাওআলা, তুমি কোথা থেকে আসছ?
চাওআলা = আমাদের গ্রাম থেকে আসছি।
অমল = তোমাদের গ্রাম? অনে―ক দূরে তোমাদের গ্রাম?
চাওআলা = দিল্লিতে আমার একটা ঘর আছে বটে, তবে সেখানে এখন যাইনা। আমাদের আদি গ্রাম সেই গুজরাটে। সবরমতি নদীর ধারে।
অমল = গুজরাটের গ্রাম ― সবরমতি নদী― কী জানি,হয়তো তোমাদের গ্রাম দেখেছি― কবে সে আমার মনে পড়ে না।
চাওআলা = তুমি দেখেছ? গুজরাটে গিয়েছিলে নাকি?
অমল = না, কোনোদিন যাই নি। টিভিতে আমি দেখেছি। তোমাদের গ্রামে গডসের মন্দির আছে না?
চাওআলা = ঠিক বলেছ বাবা।
অমল = তোমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে ট্রেন লাইন গেছে না? একবার ট্রেনে কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।
চাওআলা = কী আশ্চর্য! ঠিক বলছ।
অমল = তোমাদের গ্রামের লোকেদের মধ্যে একবার দাঙ্গা লেগেছিল না?
চাওআলা = বা! বা! ঠিক কথা। তুমি নিশ্চয় কোনোদিন সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলে!
অমল = সত্যি বলছি চাওআলা, আমি একদিনও যাই নি। কবিরাজ যেদিন আমাকে বাইরে যেতে বলবে সেদিন তুমি নিয়ে যাবে তোমাদের গ্রামে?
চাওআলা = যাব বই কি বাবা, খুব নিয়ে যাব! তবে আমি তো বেশিরভাগ সময় বিদেশে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করি, তাই গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না!
অমল = আমাকে তোমার মতো ঐরকম চা বেচতে শিখিয়ে দিয়ো। আমিও দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করবো।
চাওআলা = মরে যাই! চা বেচতে যাবে কেন বাবা। এত এত পুঁথি পড়ে তুমি পণ্ডিত হয়ে উঠবে।
অমল = না, না, আমি কক্‌খনো পণ্ডিত হব না। আমি তোমার মতন দূর দূর দেশে গিয়ে চা বিক্রি করে বেড়াবো! কী রকম করে তুমি বল, মিত্রোঁ....চায়ে চায়ে গরম চায়ে। আমাকে সুরটা শিখিয়ে দাও।
চাওআলা = ওরে পাগল! এ সুরও শেখা অতো সহজ নয়! এর জন্য ৫৬ইন্চি ছাতি দরকার।
অমল = না, না, ও আমার শুনতে খুব ভালো লাগে। ঐ রাস্তার মোড় থেকে ঐ গাছের সারির মধ্যে দিয়ে যখন তোমার ডাক আসছিল, আমার মন তোলপাড় হচ্ছিল― যেন মনের মধ্যে সার্জিক্যাল স্টাইক হচ্ছিল!
চাওআলা = বাবা, এক ভাঁড় লিকার চা তুমি খাও।
অমল = আমার তো পয়সা নেই।
চাওআলা = না না না না― পয়সার কথা বোলো না। তুমি তো আমার মিত্রোঁ! আর আমি মিত্রোঁদের কাছে থেকে পয়সা নিই না। আমার কতো মিত্রোঁকে তো আমি হাজার হাজার কোটি টাকার চা বিনে পয়সায় খাওয়াই।
অমল = তোমার কি অনেক দেরি হয়ে গেল?
চাওআলা = কিচ্ছু দেরি হননি মিত্রোঁ, আমার কোনো লোকসান হয় নি। আমি এর দাম ঠিক অন্যদের ঘাড় থেকে তুলে নেব। এখন একটু জানালার কাছে এসো তো!
অমল = জানালার কাছে কেন?
চাওয়ালা = চায়ের কাপ হাতে তোমার সাথে একটা সেলফি তুলবো। আর ছবিতে যেহেতু জানালা থাকবে তাই এটাকে 'উইনডো-শপিং' বলে দিব্যি বাজারে চালাতে পারবো।