Tuesday 19 September 2017

মহিষাসুরমর্দিনী

প্রতি বছরই মা কৈলাস থেকে ফ্লাইট ধরে দার্জিলিং-এ ল‍্যান্ড করেন। তারপর দার্জিলিং থেকে কোলকাতায়। এবছর দার্জিলিংয়ের আবহাওয়া ভালো নয়। আকাশ 'গুরুং, গুরুং' করছে। 'হড়কা' বানের সম্ভবনাও আছে। মা তো ক্ষেপে ব‍্যোম! সরাসরি গঙ্গাপাড়ের বাড়িতে ফোন, বলি পাহাড় এতো হাসলে আমি ল‍্যান্ড করবো কি করে? আর কতদিন লাগবে হাসি থামাতে? ওপার থেকে পিসি, না মানে ওরা কোন ট্র‍্যাকে খেলতে চাইছে সেটা ধরে ফেলেছি। আর মাত্র কয়েকটি দিন। দেবী রেগে গিয়ে, তোমরা কেমন খেলছো সেটা বাইচুং-কে দেখেই বুঝতে পারছি! লক্ষী বলল, মা এবারে তাহলে পাতলেবাসে যাওয়া হবেনা? দেবী গম্ভীরভাবে বললে, এবারে শুধু বাসেই যেতে হবে বোধহয়।

গনেশ এতক্ষণ খবর দেখছিল। সে হঠাৎ ছুটে এসে বলল, মা এবারে অন্ডালে ল‍্যান্ড করি চলো। ওখান থেকে 'বুলেটপ্রুফ' ট্রেনে কোলকাতায় যাওয়া যাবে। দেবী অবাক হয়ে বলল, বলিস কিরে গনশা! তোর পিসি বুলেটপ্রুফ ট্রেন চালু করে দিয়েছে! ভালো করে খোঁজ নিয়ে দ‍্যাখ ঢপ দেয়নি তো! হ‍্যাঁরে সর, তুই কিছু শুনেছিস? সরস্বতী ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলল, পিসি কন‍্যাশ্রীর পুরস্কার পাওয়ার প্রচার ছাড়া আর কিছু করছে বলে শুনিনি। অতপর দোনামোনা ক‍রে অন্ডালেই মা ল‍্যান্ড করলেন। তারপর বুলেটপ্রুফ ট্রেন না পেয়ে মা পুরো খচে ব‍্যোম! অনেক কষ্টে কার্তিক শান্ত করে। নারদ কাকুকে হোয়াটস অ্যাপ করতে, উনি ওলা নিয়ে হাজির হন। লং জার্নিতে এমনিতেই ক্লান্ত, খিদেও পেয়েছে তাই ল‍্যাঙচা আর শিঙাড়া কিনে নিয়ে ওলাতে চাপলো সবাই। ল‍্যাঙচাটা জঘন্য খেতে। তবে সিঙাড়াটা দারুণ। কার্তিক হেসে বলল, জানতাম এটা ভালো হবে। দোকানের ওপরে তো সুব্রত কাকুর হোল্ডিং ঝুলছে দেখেছি।

দীর্ঘ জার্নি শেষ করে অবশেষে তারা গঙ্গা পাড়ের বাড়িতে পৌঁছায়। বাড়ির নীচে নারদকে আটকে দিলো সিকিউরিটি। দেবী জিজ্ঞেস করাতে সিকিউরিটি বলল, ম‍্যাডামের নিষেধ আছে। যদি আবার স্টিং ফিং কিছু করে বসে। তারপর লিফ্টে করে চোদ্দ তলায় পৌঁছালেন দেবী। দেবী বললেন, এতো কড়া সিকিউরিটি! এতোগুলো কুকুর পাহারায়! কার্তিক বলল, আমাদের দেখে ঘেউঘেউ করেই চলেছে। পিসি হেসে বলল, নারে কাতু, তোদের দেখে নয়! ওরা ডিএ-র জন‍্য চ‍্যাঁচাচ্ছে। তারপর পিসি দেবীকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললেন, এত লাগেজ নিয়ে একা একা কেউ আসে! নন্দী ভিঙ্গীকে সাথে করে আনতে পারতে তো! দেবী আক্ষেপের সুরে বললেন, নিয়ে আসবো তো ঠিকই ছিল, তারপর হঠাৎ কোথা থেকে খবর পেল যে অষ্টমী থেকে টানা পাঁচদিন জল বন্ধ। ব‍্যাস, আর আসতে চাইলো না। পিসি হেসে বললে, আরে ধুর, ওটা তো নামেই বন্ধ। আসলে যারা ব্ল‍্যাকে বেচে তাদেরকেও তো দেখতে হবে নাকি! ওরা আবার প্রচুর অনুদান দেয়। এরপর পিসি হাসি মুখে সবার খোঁজ নিতে লাগলো, তা সর, কন‍্যাশ্রীর টাকা পেয়েছ তো? লক্ষী মা, সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়েছো? গনেশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, ওমা! ১৫০০ কেজির বাচ্চাটা কতো বড়ো হয়ে গেছে! ওমা, কাতুটাকে কি সুন্দর লাগছে! তুই বাংলা সিনেমা কর। আরে চিন্তা করিসনা, আমি ছবি ট‍্যাক্স ফ্রি করিয়ে দেব।

আরও এটা সেটা কথার পর দেবী বললেন, তা এবারে কোন অসুরটাকে মারবো? বয়স হয়েছে আমার তাই বেশি ছোটাছুটি করতে পারবো না। একটা ভালো দেখে অসুর বেছে দাও, আমি তার ফোনে ব্লু হোয়েল ইনস্টল করে দেব ব‍্যাস। পিসি বললেন, এবারে আর কাউকে মেরোনা! এমনিতেই সিবিআইয়ের চাপে বড়ো বড়ো অসুরগুলো সব আধমরা হয়ে আছে। চাপ সবাই নিতে পারছে না। দেবী বললেন, সেকি! অসুর না মেরেই ফিরে যাবো! সেটা কি করে হয়! এত খরচা করে স্বপরিবারে এলাম! পিসি বলল, তাতে কি হয়েছে! আমিও তো দলবল নিয়ে সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানি ঘুরি। আমি কি বিনিয়োগ আনি নাকি!

দেবী বলল, অসুর যখন মারা হবে না তাহলে এবছর দশমীর দিন সকালেই ফ্লাইট ধরে ফিরবো। পিসি হেসে বলল, আসা পঞ্জিকা মতে, কিন্তু যাওয়া আমার ইচ্ছায়। রেড রোডে ফ‍্যামিলি প‍্যারেড না করেই চলে যাবে, ওটি হচ্ছে না। দেবী অবাক হয়ে বলল, মানে! আমাকে আরও দুদিন থাকতে হবে! কার্তিক খুব খুশি। আচ্ছা পিসি, এবারের কার্নিভালটা ব্রাজিলিয়ান স্টাইলে করলে হয়না! ইওয় ভয়েস উইথ বেঙ্গা বয়েস! পিসি হেসে বলল, দুষ্টু...