Thursday 15 February 2018

কৈলাশে ভ‍্যালেনটাইন

সকাল থেকেই পার্বতী আজ খুব কনফিউশনে আছে। বাবা ভোলেনাথকে গোলাপ দিয়ে আগে ভ‍্যালেনটাইন উইস করবে, নাকি মাথায় দুধ ঢেলে স্নান করাবে। তার ওপর ছেলেমেয়ে গুলো সকাল থেকেই একটার পর একটা আবদার করেই চলেছে। 

কার্তিক সাতসকালে মাঞ্জা দিয়ে ড্রেস করে এসে বলল, মা হাজার কুড়ি ক‍্যাশ দাও তো! এতো টাকা তুই কি করবি! আরে এবারে শিল্প সম্মেলনে গিয়ে একটা শিল্পপতির মেয়েকে পটিয়েছি তাই খরচা একটু বেশি। প্রথমে একটু খরচা হবে, তবে মেয়ে বলেছে ওর বাবা আমার ব‍্যবসায় বিনিয়োগ করবে। পার্বতী হাঁ করে ছেলের কথা শুনছিল। তারপর বলল, সে তো বুঝলাম, কিন্তু অতো টাকা তো এখন আমার কাছে নেই। কার্তিক এবারে আবদার করে বলল, পিসির ভোট প্রচারের জন‍্য মামা গতকাল যে এক কোটি তোমার কাছে দিয়ে গেছে, ওটা থেকেই নাহয় দাও। খবদ্দার কাতু, ঐ টাকার দিকে ভুলেও তাকাবিনা! জানিস তো তোর পিসি কেমন রাফ এন্ড টাফ! আবার গুন্ডা কন্ট্রোল করে! কার্তিক হতাশ হয়ে বলল, মা পিসির জন‍্য এবারও বিনিয়োগটা মনেহয় আটকে গেল!

সরস্বতী মন খারাপ করে বসে আছে দেখে পার্বতী কি ব‍্যাপার জিঞ্জেস করে জানতে পারলো ওর কাছে টাকা নেই। তাই ভ‍্যালেনটাইন-ডে তে ব্রম্মাকে সোনার চেন গিফ্ট করবে প্রমিস করেছিল। পার্বতী বলল, কেন তোর পিসি তো কন‍্যাশ্রীর টাকা দিয়েছে ওটা দিয়ে কিনে দে। সরস্বতী হেসে বলল, ঐ টাকায় কি হবে! ব্রম্ভার চারটে মাথা, চারটে চেন লাগবে। তাছাড়া নারদ কাকু পিসির দেওয়া কন‍্যাশ্রীর টাকা থেকে কমিশন খেয়েছে। পার্বতী সব শুনে বলল, এবছরটা জামাইকে বলে কয়ে ম‍্যানেজ করে নে। সরস্বতী মুখ বাঁকিয়ে বলল, তোমার জামাই পদ্মফুলে বসে থাকে, প্রচুর কালোধনের মালিক, অল্পতে মোটেই খুশি হবেনা। আহাঃ একটা বছরই তো! সামনে বছর তোর পিসি রূপশ্রীর টাকা দেবে তখন দেখবি আর সমস্যা হবে না।

এমন সময় গনেশ কাঁদতে কাঁদতে এলো। মা, মা, আমি আর তোমার বৌমা আজ একটু সেন্ট্রাল পার্কে বসে গল্প করছিলুম। হঠাৎ একদল ছেলে এসে আমাদের ক‍্যালাতে লাগলো। বলে কিনা পার্কে বসে গল্প করা যাবেনা। সত‍্যি করে বল, তোরা কি শুধুই গল্প করছিলিস? গনেশ মাথা নিচু ক‍রে বলল, একটা কিস খেয়েছি। তাবলে ওরা মারবে! আমি আমার বৌকে খেয়েছি, ওদের বৌকে তো খাইনগ। ওদের দলের মেইন পান্ডা পবন কাকুর ছেলে। 

এই প্রথম কোনো ভ‍্যালেনটাইনডে লক্ষীকে বিছানায় শুয়ে শুয়েই কাটাতে হচ্চে। আসলে নারায়ণ এখন দক্ষিণ লন্ডনে নতুন ফ্ল‍্যাট নিয়েছে। ওখানের কর্পোরেশনের জল খেয়েই বিপত্তি। বেচারির ডাইরিয়া হয়ে গেছে। 

ছেলেমেয়েদের সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে পার্বতী স্বামীর জন‍্য গোলাপ আর দুধ দুটো নিয়েই হাজির হলো। বাবা তখন ফুল আউট। পাঁচ ছ বার ডেকেও যখন সাড়া পেলো না তখন নন্দী ভিঙ্গীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল, কি কেস! এতো গাঁজা বা ভাং নয়! কি খাইয়েছিস! তখন নন্দী মিঙমিঙ করে বলল, আপনার বোনের বাড়ি থেকে যে বোতলগুলো সিআইডি উদ্ধার করেছিল সেগুলো ... ভিঙ্গীর দিকে তাকাতে সেও ভয়েভয়ে বলল, কয়েকটা গুজরাট ভোটে বেঁচে যাওয়া বোতলও ছিল ওর সাথে। আসলে বাবার দুরকম খেয়ে ককটেল হয়ে গেছে। পার্বতী ধমক দিয়ে বলল, যা তাড়াতাড়ি লেবু নিয়ে এসে খাওয়া। নন্দী বলল, নাগপুর থেকে আনবো? পার্বতী আরও রেগে বলল, পাতিলেবু লাগবে, কমলা নয়!

অবশেষে লেবু খাইয়ে নেশা কাটিয়ে বাবা উঠে বসলেন। তখন পার্বতী বাবাকে বলল, আমি সত‍্যিই কনফিউশনে, কোনটা তোমাকে আগে দেব! গোলাপ নাকি দুধ? মহাদেব তখন হেসে বললেন, ওরে পাগলী গোলাপের পাপড়িগুলো ছিড়ে ঐ দুধে ছড়িয়ে দে। তারপর ঐ পাপড়ি মেশানো দুধটা আমার মাথায় ঢেলে দে। তাহলেই তোর শিবরাত্রী আর ভ‍্যালেনটাইন, দুটোই একসাথে পালন করা হয়ে যাবে।