Thursday 16 June 2016

অথ মদনানন্দ বচনামৃত


(জেলের মধ্যে এক কয়েদী ও কনস্টেবলের কাল্পনিক কথোপকথন)

কনস্টেবল = অনেক রাত হলো, এবারে ঘুমিয়ে পড়ুন।

(কয়েদী কনস্টেবলের দিকে না তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে নিজের পেগ বানাতেই ব্যস্ত)

কনস্টেবল = বলছিলাম কি স্যার, আজ অনেকটা খেয়েছেন। তাছাড়া আপনার শরীরটাও এখন ভালো যাচ্ছে না। এমনিতেই প্রায় প্যানিক অ্যাটাক হয়। সেদিন তো এস এস কে এম-এর সিঁড়িতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন।

কয়েদী = (কটমট করে লাল চোখে তাকিয়ে) স্যার! কে স্যার? কার স্যার? স্যার তো এখন ঐ মেদনীপুরিয়া। অধিকারীরই তো এখন সব অধিকার। আমি তো বলির পাঁঠা!

কনস্টেবল = (মনে মনে) ব্যাটা ছিল ছাগল, হয়েছে পাঁঠা! (প্রকাশ্যে) ছিঃ! ছিঃ! কি যে বলেন, আপনিই তো আমাদের স্যার, আপনিই আমাদের দাদা! মাত্র কয়েকটা ভোটেরই তো পার্থক্য! মানুষ কিন্তু আপনার বিন্দু বিন্দু করে উন্নয়নের সিন্ধু করার কথা মোটেই ভোলেনি।

কয়েদী = (এক ঢোকে পেগটা শেষ করে দিয়ে) তিন দিন, বুঝলে মাত্র তিন দিন আমাকে বাইরে ছেড়ে দিয়ে আবার ভোট করুক। দেখি কত দম! কম করে পঞ্চাশ হাজার ভোটে জিতবো!

কনস্টেবল = বলেন কি দাদা! (মনে মনে) নেশাটা বেশ চড়েছে তাহলে!

কয়েদী = কি বিশ্বাস হচ্ছে না! মা সারদার দিব্যি, পঞ্চাশ হাজারে যদি না জিতি তাহলে সার্টিফিকেটই নেব না। আরে মানুষ আমার বক্তৃতা শুনলো না, আমাকে চোখে দেখল না, তাতেই এতো ভোট। তাহলে ভাবো আমি যদি বাইরে থাকতাম তাহলে কি রেজাল্ট হতো!

কনস্টেবল = শুনেছিলাম ভোটের সময় বীরভূম থেকে ঢাকী এসেছিল কামারহাটিতে চড়াম্‌ চড়াম্‌ করে ঢাক বাজাবে বলে! কেন্দ্রীয় বাহিনী আর কমিশনের জন্য নাকি তারা ঠিকমতো ঢাক বাজাতেই পারেনি?

কয়েদী = হ্যাঁ, কমিশন তো সিপিএমের হয়েই কাজ করেছে। কিন্তু তাতেও সিপিএমের এখন যা অবস্থা, তাতে OLX- বেচে দিতে হবে।

কনস্টেবল = কিন্তু স্যার, কেরালায় তো সিপিএম আবার জিতলো। ত্রিপুরাতেও ওদের গরমেন্ট আছে!

কয়েদী = আরে, ত্রিপুরাটা সামনের বার নিয়ে নেবো! খালি আমাকে একটু বেরোতে দিক না! কেরালাটাও ওদের হাতছাড়া হবে। সাউথে অনেকগুলো নায়িকা আমার জানাশোনা!

কনস্টেবল = (মনে মনে) নেশাটা একেবারে ব্রহ্মতালুতে চড়ে গেছে মনে হচ্ছে! (প্রকাশ্যে) আচ্ছা, আপনাকে তাহলে ছাড়ছে না কেন, স্যার! সবাইকেই তো ছেড়ে দিচ্ছে! এই তো মুন্নাভাই ছাড়া পেয়ে গেলো! দিদিভাই একটু দাদাভাইকে বলে ব্যবস্থা করতে পারছে না?

কয়েদী = (একটু হতবিহ্বল চোখে কিছুক্ষণ কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর মুখ খুললো) হবে, হবে! সব হবে! তাছাড়া, আমি তো এখন ‘প্রভাবশালী’ও নই, ‘প্রাক্তন’  হয়ে গেছি। সিনেমাটা কিন্তু দেখার ইচ্ছে ছিল। দেখি, সিডিটা আনিয়ে নিতে হবে! 

কনস্টেবল = আচ্ছা স্যার, আপনি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটা দেখেছিলেন? ওটা তো ১০কোটি টাকার গালা মেগা ইভেন্ট! প্রচুর ঘ্যামা লোকজন এসেছিল। সবাই বলাবলি করছিল, এটা নাকি বিশ্বমানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছে! ঢালাও খানাপিনারও আয়োজন ছিল। হায়াত রিজেন্সি থেকে খাবার এসেছিল।

কয়েদী = যেতে তো পারিনি, তাই এই লক-আপে বসে বসেই আমার এল ই ডি-তে দেখেছি। অনেকগুলো সুবিধাবাদী লোক স্টেজে ঘোরাফেরা করছিল। কয়েকটা দিব্যি মন্ত্রীও হয়ে গেল। আমার এক চ্যালা এসে বললো, ‘গুরু খাওয়া-দাওয়ার মেনুতে সব দারুণ দারুণ চাট্‌ ছিল।’ আমার কপাল খারাপ তাই এই জেলে বসে শুকনো ছোলাভাজা, শসা আর কাঁচা লঙ্কা দিয়েই কাজ চালাচ্ছি।

কনস্টেবল = নবান্নে ঢুকতেই পুষ্পবৃষ্টি! আমাদের ডিপার্টমেন্ট তো ওনাকে 'গার্ড অব অনার' দিলো।

কয়েদী = (এবারে কিছুটা বিরক্ত হয়ে) আরে অমন পুষ্পবৃষ্টি আমি যখন জেলে ঢুকি তখন অনেকেই দিয়েছিল। আর কি বললে! গার্ড অব অনার! ওটা অনার (Honour) নয়, ওনার (Owner)। মানে আগামী পাঁচ বছর তুমি টেবিলের নিচে থাকো।

কনস্টেবল = আচ্ছা দিদি তো বলেছিলেন, আগে জানলে যারা নারদাকান্ডে অভিযুক্ত তাদেরকে টিকিটই দিতেন না। আর জেতার পরই তাদেরই মন্ত্রী করে দিলো! এটা একটা কেমন কেমন হলো না?

(কয়েদী পরের পেগটা বানাতে বানাতে হঠাৎ থমকে গিয়ে কট্‌মট্‌ আবার কনস্টেবলের দিকে তাকালেন)

কনস্টেবল = (চকিতে মনে পড়ে গেলো, ইনিও তো নারদায় অভিযুক্ত। তাই তাড়াতাড়ি প্রসঙ্গ পাল্টে) না মানে, অনেকেই তো হেরে গিয়েও মন্ত্রী সমতুল্য পদ পেল। তাই বলছিলুম, যদি আপনাকেও আবগারি দপ্তর বা কারা বিভাগের উপদেষ্টামন্ডলীর চেয়ারম্যান করে দিতেন তাহলে খুব ভালো হতো। আফটার অল, এই দুটি দপ্তর সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা তো আপনারই সবচেয়ে বেশি।

কয়েদী = (কপট রেগে গিয়ে পেগটাতে জল-সোডা কিছুই না মিশিয়ে একেবারে র’ মেরে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিট চুপ থাকার পর মুখ খুললো) নাহ, আমি কিছুতেই কুনাল হবো না। আমার হাজার রাগ হলেও আমি ওনার বিরুদ্ধে কিছুতেই মুখ খুলবো না। (তারপর দুটো ছোলাভাজা গালে ফেলে, রিমোটটা হাতে নিয়ে মিউজিক সিস্টেমটার ভলিউম বাড়িয়ে দিলো)

কনস্টেবল = আচ্ছা, আপনি তো বলেছিলেন ভোটের রেজাল্টের পর ভোজপুরী শুনবেন। তাহলে হঠাৎ মহম্মদ রফি শুনছেন কেন?

কয়েদি = ভোজপুরী আমার বরাবরই প্রিয়। তবে এখন এই জেলের ভিতর একা একা বসে ভোজপুরী শুনতে বড়ো কষ্ট হয়। বারে বারে মনটা পিয়ালীর জন্য হু হু করে ওঠে। চোখের সামনে পুরনো দিনগুলোর স্মৃতি ভেসে ওঠে।

(চোখের কোনে হালকা জল গারদের আবছা আলোতে একবার চিক্‌চিক্‌ করে ওঠে। মিউজিক সিস্টেমে তখন রফির কন্ঠ ভেসে আসছে, ‘জিনা ইঁহা, মরনা ইঁহা, ইসকে সিবা জানা কাঁহা!’)

(cartoon: collected from net)

******

1 comment:

  1. এইসব বলে এখন কোন লাভ নেই।
    বিন্দুমাত্র ভাল লাগে নি।

    ReplyDelete