কেল্টু কেমন ছেলে সেটা আর নিশ্চয়ই নতুন করে বলতে হবে না! সুবোধ বালক বলে তার নামে কেউ কোনদিন কোনো দুর্নাম রটায়নি। তার অত্যাচারের শিকার হয়নি এমন কোনো ছেলে হোস্টেলে আছে বলে মনে হয় না! রান্নার ঠাকুর থেকে বাগানের মালী, এমনকি সুপারিনটেন্ডেন্টবাবুও বাদ যেতেন না। তবে সবচেয়ে বেশি অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে নন্টে আর ফন্টেকে।
প্রথম প্রথম হোস্টেলের সবার
টিফিনে সে জোর করে ভাগ বসাতো। রান্নার ঠাকুরকে চমকে রান্নাঘর থেকে খাবার সরাতো। তবে
যেদিন থেকে সুপারিনটেন্ডেন্ট সাহেব সেই কেল্টুকেই হোস্টেলের মনিটর করে দিল, সেদিন
থেকেই কেল্টুর দৌরাত্ম্য লাগামছাড়া হয়ে গেলো। নিয়মিত হোস্টেলের অন্য ছেলেদের র্যাগিং
করে ‘দাদাগিরি ফি’ মানে তোলা আদায় করতে লাগল। ইদানিং তো কেল্টুর বাড়বাড়ন্ত হোস্টেল
ছাড়িয়ে,
গোটা সেক্টর ফাইভে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেলুনওয়ালা থেকে গরিব রিক্সাওয়ালা
পর্যন্ত তার হাত থেকে নিস্তার পেত না।
গতকাল সকালে হঠাৎ নাসিরের রুম থেকে
চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে নন্টে আর ফন্টে দৌড়ে গিয়ে দেখে, কেল্টুদা জোর করে নাসিরের মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে নিচ্ছে। নাসির
হোস্টেলে নতুন। মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে সে বাংলাদেশ থেকে এদেশে পড়তে এসেছে। একটু
গো-বেচারা টাইপের ছেলে নাসির। তাই কেল্টু যখন তাকে চমকালো, তখন সে একটু ভয়ই পেয়ে
গিয়েছিল। কেল্টু নাসিরের মানিব্যাগ থেকে কড়কড়ে একটা ৫০০টাকার নোট বার করে নিয়ে
বললে, ‘দু’দিনের দুটো কার্লসবার্গ আর চাটের খরচ।’ তারপর নাসিরকে উদ্দেশ্য করে বললে,
‘সপ্তাহে ৫০০ করে সেলামি দিতে হবে। আর
হ্যাঁ,
পরের বার আমি নিতে আসব না, আমার রুমে এসে দিয়ে
যাবি।’
কেল্টু চলে যাবার পর নাসির তার বড়ো
খালা মহসিনাকে ফোন করে সব বেত্তান্ত বললো। এমনকি কেল্টুর একটা ছবিও হোয়াটস্অ্যাপে
পাঠিয়ে দিলো। মহসিনা খালা প্রতিবেশী দেশের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার ওপর খালার
সাথে সুপারিনটেন্ডেন্ট সাহেবের আবার মধুর সম্পর্ক। তাই নাসিরের কাছ থেকে সবটা শুনে
যখন মহসিনা বিবি সুপারিনটেন্ডেন্ট সাহেবকে কেল্টুর নামে অভিযোগ করলেন, তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই সুপারিনটেন্ডেন্ট সাহেব পুলিশ ডাকলেন। যদিও
কেল্টু যে হোস্টেলে তোলাবাজি করে, সে কথা নন্টে-ফন্টে আগে
অনেকবার সুপারিনটেন্ডেন্ট সাহেবকে বলেছে, কিন্তু তখন তিনি এসব কথা কানেই তোলেনি।
তখন তো সুপারিনটেন্ডেন্ট সাহেবের নয়নের মণি ছিল কেল্টু। আর তোলার টাকায় প্রায়ই
সুপারিনটেন্ডেন্ট সাহেবের জন্য নিত্যনতুন খাবার নিয়ে আসতো কেল্টু।
কেল্টুকে আজ যখন পুলিশ কলার ধরে
প্রিজন ভ্যানে ভরে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন হোস্টেলের সবাই তা দেখে নিজেদের
মধ্যে গুজ্গুজ্ ফুস্ফুস্ করছিল। সুপারেনটেন্ডেন্ট স্যার তার রুমের বাইরে
দাড়িয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন, ‘হতচ্ছাড়াটা বড় বেড়েছিল, এতদিনে বিদায় হলো।’ কিন্তু
কেল্টুর ভবি ভোলবার নয়। প্রিজন ভ্যানে ঢোকার আগে সে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে নাসিরের
দিকে তাকিয়ে বলল, ‘পুলিশ আমাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারবে না। জামাইবাবুকে ফোন
করেছি, বলেছে থানায় ছেলে পাঠিয়ে ছাড়িয়ে আনবে। ফিরে এসে
হিসাবের খাতাটা মিলিয়ে নেব। তৈরি থাকিস্।’
নন্টে আর ফন্টে হোস্টেলের গেটের
কাছে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। যখন প্রিজন ভ্যানটা গেট থেকে বের হচ্ছিল, তখন নন্টে
কেল্টুদার দিকে তাকিয়ে ফন্টেকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আমাদের কেল্টুদা আজ ইন্টারন্যাশনাল
তোলাবাজের স্বীকৃতি পেল।’
No comments:
Post a Comment