Tuesday 9 August 2016

✍✍✍ NOবেল রহস্য ✍✍✍


সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। মাঝেমধ্যে ১০-১৫মি বিরতি, তারপর আবার শুরু। ফেলুদার এখন তেমন কাজের চাপ নেই। তাই জমিয়ে খিচুড়ি আর ইলিশ দিয়ে পেট পুজো করে দুপুরবেলা খাটেতে শুয়ে শুয়ে গতকাল রাতে ডাউনলোড করা 'প্রাক্তন' দেখতে ব্যস্ত। আমারও স্কুল বন্ধ তাই পাশের সোফাতে শুয়ে আমিও 'আজব ছড়া' বইটা নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। যদিও বইটি আমি ২১১ বার, না না ২১৩ বার পড়েছে, তবুও এটা পড়তে দারুণ লাগে। 

আসলে একেই বর্ষাকাল, বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। তার ওপর স্কুল ছুটি। আসলে বাবাই স্কুলে যেতে এখন নিষেধ করেছেন। সেদিন টিভিতে খবর দেখার পর বাবাই বললেন ' তোদের স্কুলের আশেপাশে প্রচুর ময়লা আবর্জনা, পুরোসভা স্কুলের কর্মচারী কেউই ঠিকমতো পরিষ্কার করেনা। স্কুলের পিছনে থানার গ্যারেজটা তো মশার আড়ত! আগে ওগুলো পরিষ্কার হোক, তারপর স্কুলে যাবি। নাহলে নির্ঘাত ডেঙ্গি হবে"। ফেলুদা অবশ্য সেদিন বাবার কথা শুনে হেসে বলেছিল ' তোপসে, তুই মনেহয় একমাসর ছুটি পেয়ে গেলি'

বিকেল ৫টা বাজতেই কলিংবেলটা 'টিংটং' করে বেজে উঠলো। ফেলুদা শুয়ে শুয়ে ট্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়ে চারমিনারে একটা টান দিয়ে বলল ' যা দরজা খোল, লালমোহন বাবু এসেছেন'। দরজা খুলে দেখি সত্যিই লালমোহন বাবু। আমি ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে ফেলুদার দিকে তাকাতেই, ফেলুদা শেষ হয়ে যাওয়া চারমিনারে সুখটান দিয়ে ফিল্টারটাকে ক্যারামের স্টাইকারের মতন জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে এক চান্সে বাইরে ফেলে বললেন ' ৪৪বছরের (৩৪+১০) পুরনো অ্যাম্বাসাডরের শব্দ চিনতে ফেলু মিত্তিরের ভুল হব'!

তারপর লালমোহন বাবুর সাথে ঝাড়া ৩ঘন্টা বাঙালি আড্ডা চলল চা সিঙাড়া তেলেভাজা সহযোগে। লালমোহন বাবুর তো কৌতূহলের শেষ নেই! আর ফেলুদাকে পেলে তো ভদ্রলোকের সময় সম্পর্কে আর কোনো হুঁশই থাকে না। বঙ্গপোসাগরে বিমান দুর্ঘটনা থেকে রাষ্ট্রপতির পাহাড় থেকে বেঁচে ফেরা। আবেশের খবর থেকে গোটা দেশের খবর। তবে গো-হত্যা নিষিদ্ধকরণের খবরটা মনেহয় জেনে বুঝেই চেপে গেলেন। হাজার হোক ব্রাহ্মণ তো! আড্ডা মোটামুটি শেষের পথে এমন সময় হটাৎ লালমোহন বাবু বললেন ' দেখেছেন মিত্তির মশাই গল্পে গল্পে আপনাকে আসল খবরটা দিতেই ভুলে গেছি! এই ভুলভুলাটিস রোগটা মনেহয় আর সারলো না! বলছি নোবেলের কেসটা শুনেছেন? আবার তদন্ত হবে! উনি নাকি নিজেই তদন্ত করবেন!

ফেলুদা আরেকটা চারমিনার ধরিয়ে বলল ' উনি যদি তদন্ত করেন তাহলে আপত্তি কিসের?' লালমোহন বাবু কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন ' যে কাজ সিবিআই পারলো না, সেটা উনি করবেন! তাহলে তো মিরাক্কেলিয়াস ব্যাপার হবে মশাই'। ফেলুদা হাওয়াতে একটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বলল ' আপনি ভুলে যাচ্ছেন লালমোহন বাবু, একটা চোরই কিন্তু একটা চোরকে ভালো চেনে"। লালমোহন বাবু কিন্তু কিন্তু করে বললেন ' তা আপনি ঠিকই বলেছেন, তবে গোয়েন্দাগিরি কি ওনার কম্ম'! ফেলুদা মুচকি হেসে বললেন "সেকি মশাই আপনি গোয়েন্দা গিন্নি দেখন না! উনি হলেন আমাদের গোয়েন্দা দিদি। সারাদিন উপন্যাস নিয়ে না পড়ে থেকে মাঝেমধ্যে একটু সিরিয়াল টিরিয়াল দেখুন। তবে হ্যাঁ এবারে পুজোর জন্য কিন্তু এটা ভালো উপন্যাস হতে পারে, মদন পেলো না বেল, দিদির হাতে নোবেল"।


গেট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতেই গাড়িটা ৩-৪বার ঘড়ঘড় করার পর স্টার্ট নিলো। লালমোহন বাবু একগাল হেসে বললেন 'এবারে দেখছি গাড়িটা পাল্টাতেই হবে'। ফেলুদাও হেসে বললেন ' আরে না না, শুধু নম্বর প্লেটটাই পাল্টে WB জায়গায় BG (বঙ্গ) করলেই হবে'

No comments:

Post a Comment