Monday 29 August 2016

প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন



                                  প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন  
বাজারের ব্যাগটা বারান্দায় রেখেই স্ট্যান্ড ফ্যানটা অন করে চেয়ারে বসে হাঁপাতে লাগলো শুভ। এক ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে তাকে আজ প্রায় ১০মিনিটি হেঁটে বাজার থেকে বাড়ি আসতে হয়েছে। তার ওপর এই গুমোট গরমে বেচারা একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেছে। মা ফ্রিজ থেকে জলের বোতলটা নিয়ে গ্লাসে ঢেলে শুভকে দিতে যাচ্ছিল, শুভ তার মায়ের হাত থেকে জলের বোতলটা নিয়ে ঢগঢগ করে হাফটা শেষ করে দিলো। তারপর বাকি জলটার কিছুটা চোখে মুখে ছিটিয়ে ঠান্ডা করে অবশিষ্ট টুকু আবার গলায় ঢেলে দিলো। তারপর চেয়ারে বসে শুভ তার মাকে বললো 'একটা বাইক কিনে দাও নাহলে প্রতিদিন এই ভারী ব্যাগ নিয়ে এতোটা হেঁটে আসা যায় না'। শুভর মা এতক্ষণ ছেলের কান্ড-কারখানা দেখছিল, এবারে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে রওনা দিলো। রান্নাঘরের দরজার সামনে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো 'দানা মাঝিকে ১০কিলোমিটারের বেশি হাঁটতে হয়েছিল। আর বোঝা মনেহয় তোর থেকে অনেক ভারীই ছিলো"। শুভ মায়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে খালি জলের বোতলটা অজান্তেই আবার গালে তুলে দু'ফোঁটা ঢেলে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করলো।

দানা মাঝির ঘটনা যেদিন প্রথমে জানতে পারি সেদিন লোকটার অসহায়ত্বে করুনা হয়েছিল, শ্রদ্ধায় মাথা নত করেছিলাম স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দেখে। আজ শুনলাম দানা মাঝির এই করুণ বাস্তব সাগরপাড়ের মনেও কষ্ট দিয়েছে। আদিবাসী এই ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন বাহারিনের প্রধানমন্ত্রী খলিফা বিন সলমান আলি। খুশী হলাম এই ভেবে যে মানবিকতা এখনও মুছে যায়নি। অবাক হলাম বাহারিনের মতন এমন একটা দেশ থেকে সাহায্য আসায়। আর চীর কৃতজ্ঞ রইলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কারণ ডিজিটাল ইন্ডিয়া না করলে বাহারিনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দানা মাঝির কষ্টটা পৌঁছাতো না আর সাহায্যটাও আসতো না।
সকালবেলায় যখন দানা মাঝি তার স্ত্রীর মৃতদেহটা কাঁধে নিয়ে ছোট্টো মেয়েটিকে সাথে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে তখন হয়তো উনি ঘুম থেকে উঠে সলভাসন করে ক্লান্ত হয়ে তিরঙ্গায় ঘাম মুছে বেতের আরাম কেদারায় বসে উষ্ণ দার্জিলিংএ ঠোঁট ভিজিয়ে 'গুড মর্নিং সেলফি' তুলে পোস্ট করতে ব্যস্ত। গিনেস বুকে নাম তোলা পোশাকের হলোগ্রামের মাত্র একটা অক্ষর যদি ঐ আদিবাসীটির কপালে জুটতো তাহলে হয়তো কষ্টটা কিছুটা লাঘব হতো। যদি একবার আখলাকের মতন দানা মাঝির বাড়িতে কিছু লোক পাঠাতেন গো-মাংসের খোঁজে তাহলে হয়তো বুঝতে পারতেন ওদের ঘরে আপনার 'মেইক ইন ইন্ডিয়া'র বাতিটি কতোটা সুদিনের আলো ছড়াচ্ছে।
এমনিতেই আপনি বছরের বেশিরভাগ সময় এখন বিদেশে সেলফি তুলে কাটাচ্ছেন। আর বড়োলাটের ওয়ান্টেড তালিকাও তো আপনি গো-মুত্র দিয়ে শুদ্ধ করে দিয়েছেন। তাই এবারে যখন সিলিকন ভ্যালিতে যাবেন তখন গতবার লিখে আসা 'সত্য মেব জয়তে' ও 'অহিংসাই পরম ধর্ম' লাইন দুটির নিচে দানা মাঝির নামটা লিখে দিয়ে আসবেন। লোকটা সোসাল মিডিয়ার নাম কস্মীনকালে না শুনলেও, ওটার মাধ্যমে গোটা দেশবাসীকে (আপনাকে বাদে) যে থাপ্পড় মেরেছে সেটা আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি। তবে হ্যাঁ, আর্থিক সাহায্যের প্যাকেটটা কিন্তু বাহারিন থেকে আসছে। তাই নাগপুরের স্নিফার ডগ গুলোকে দিয়ে একটু প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন। বলাতো যায়না যদি প্যাকেটের মধ্যে দু-একপিস গো-মাংস থেকে যায়!

No comments:

Post a Comment