Wednesday 22 March 2017

কালীপিসির কবিতা পাঠ

                               কালীপিসির কবিতা পাঠ
গতকাল বিশ্ব কবিতা দিবস ছিল। কিন্তু ঐ নারদ মামলার জন‍্য ওটা আর সেলিব্রেশন করা হয়নি। বুঝতেই তো পারছো কতো চাপে রয়েছি। 'সুপিম কোট' একমাস সময় দিয়েছে, তাই একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম। একমাসের ভিতর ঠিক ম‍্যানেজ করে নেব। যাক সে কথা! শুনলুম এদিকে নাকি 'শিজাত' আমার 'মাকেট' ডাউন করে দিয়েছে! কি দুলাইন লিখে সব টিআরপি কেড়ে নিয়েছে! 

'শিজাত' যদি 'তিশূল' নিয়ে কবিতা লিখতে পারে তাহলে আমিও 'তিফলা' নিয়ে ওর থেকেও হাজার গুন ভালো 'পোতিবাদী' কবিতা লিখতে পারি!
"শুক্ততে লাগে কাঁচকলা/ঐ দ‍্যাখো জ্বলছে তিফলা/খেতে ভালোবাসতো অভীর বাপ/তিফলার গায়ে নীলসাদা সাপ/শুক্ত বড়োই প্রিয় আমার/রাজ‍্যে উন্নয়নের জোয়ার"। কেমন হলো বল! একি, হাততালি কই!

হতে পারে ও 'শিজাত', কবিতা জিনিটা কিন্তু আমার সহজাত। ভেতর থেকে অটোমেটিক চলে আসে। এই যেমন ধরো, আমি পাহাড়ে সভা করতে যাচ্ছি, হঠাৎ ঝন্না দেখে দুলাইন লিখে ফেললুম। 'ঝন্না ঝন্না ঝন্না/পাহাড়ে আনবো উন্নয়নের বন‍্যা/ হাইওয়েতে ধন্না/আমিই অগ্নিকন‍্যা"। যখন মন্দারমনিতে সান্ধ‍্য 'ভোমোনে' বেরিয়ে 'সূয্যাস্তের' আলোয় রোজভ‍্যালির হোটেলটাকে দেখতাম, ঠিক যেন তাজমহল মনে হত। নিজের অজান্তেই লিখে ফেলতাম,'রোজভ‍্যালি রোজভ‍্যালি/হাততালি হাততালি/কালিঘাটে আছে কালী/আমি হবো তোমার মালি'। আবার যখন জঙ্গলমহলে 'ছত্তধরের' সাথে সভা করতে যেতাম তখন শাল পলাশের 'পেমে' পড়ে দুলাই লিখে ফেলতাম,' ওরে আমার শাল/ওরে আমার পলাশ/তোদের মাঝেই পড়ে আছে সালুক সোরেনের লাশ'। আমি বিদেশ 'ভোমোন' করে এসে একটা 'আন্তোজাতিক' মানের কবিতা লিখেছিলাম, ' লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুর/বিনিয়োগ অনেক দুর/ কোনদিনই আসবে না মানি/ বিএমডাবলিউ দেবেনা 'জাম্মানি'।'

সামনে বসা ভিড়ের মধ‍্যে থেকে একজন বলল, পিসি বিশ্ব বাংলা নিয়ে দুলাইন। পেছনের দিক থেকে একজন বলল, বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে একটা হয়ে যাক! পাশ থেকে একজন বলল, পিসি শিশুদের জন‍্য শিশুচুরি নিয়ে একটা ছড়া হোক। কালীপিসি হাত তুলে বলল, ঠিক আছে সব হব। কবিতা শুনে জোরে হাততালি দিতে হবে কিন্তু!" বিশ্ব বাংলা, আহারে বাংলা/খাচ্ছে দ‍্যাখো যেন হ‍্যাংলা/ এতকিছু কি করে গেলো/ভুলেও যেও না অ্যাপেলো"। এবারে শিশুচুরি ছড়া," ইশ্বর আল্লা জিশু/জুহি চন্দনা শিশু/প‍্যান্টে করে হিসু/এটা ঐতিহাসিক ইসু।"

ভিড়ের মধ‍্যে থেকে 'পিসি পিসি' বলে আবদার এলো, নরেন মুদিকে নিয়ে একটা রোমান্টিক কবিতা বলতে হবে। শুনেই তো পিসির গাল লজ্জায় গেরুয়া হয়ে গেলো। তারপর পিসি কবিতা শুরু করলো,' তুমি লাড্ডু, আমি ল‍্যাংচা/ তুমি পদ্ম, আমি ঘাস/ তুমি দিতেই পারো না আমায় বাঁশ/এটা আমার অন্তরের বিশ্বাস'।

তবে এই বিশ্ব কবিতা দিবসে আমি মামাটির জন‍্য একটা 'ইস্পেশাল' কবিতা লিখেছি সেটা বলেই আজকের সভা শেষ করবো।
এই আমরা কারা - তিনোমূল
যাচ্ছে কারা - তিনোমূল
এই রাজপথেতে - তিনোমূল
এই বুক চিতিয়ে - তিনোমূল

(হঠাৎ ভিড়ের মাঝে থেকে একজন বলে উঠলো) পিসি এটা তো এসএফআই-এর স্লোগান!

এই কে বললি রে? কেষ্টা, ভিড়ের মধ‍্যে থেকে মালটাকে বার করে নিয়ে স্টেজের পিছনে আন তো...

Wednesday 8 March 2017

একটি কাল্পনিক বক্তৃতা

                                 একটি কাল্পনিক বক্তৃতা 
এই, এই, চোপ! চোপ! আজ 'আনতোরজাতিক' নারী উৎসব। তাই এই উপলক্ষে আমি দু-চার কথা বলতে চাই। সবাই মন দিয়ে শোনো। নারী মানেই পিসি। পিসি মানে কেবল অভিষেকের নয়! সমস্ত দুষ্টু দামালদের পিসি! নারী মানেই দিদি। দিদি মানেই যে গণতন্ত্রের শেষ কথা সে আর আপনাদের নতুন করে বলতে হবে না! সব্বোপরি নারী মানে মা। আর মা মানেই 'মামাটি'। আর গত ছবছরে এই মামাটির সরকার নারীদের জন‍্য কি করেছে সে তো আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন।

সিপেম ৩৪বছরে রাজ‍্যকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছিল। আমার নেতৃত্বে এই মামাটি সরকার বাংলাকে নারী নির্যাতনে দেশের শীর্যে তুলে এনেছে। এখন লোককে মালদা কিসের জন‍্য বিখ‍্যাত জিঞ্জেস করলে বলে না আমের জন‍্য! এখন বলে নারী নির্যাতনের জন‍্য। এই পরিবর্তন নিয়ে এসেছে আমাদের মামাটির সরকার। ধর্ষনের জন‍্য আমাদের গরমেন্ট আলাদা আলাদা রেট ঠিক করে দিয়েছে। তবুও বিরোধীরা কুৎসা করে, অপোপোচার করে যে আমরা কিছুই করিনা!

তোমরা সবাই আমাকে অগ্নিকন‍্যা বলে ডাকো কিন্তু তোমার জানো কি দেশের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় সংঘঠন আমাকে দুগ্গা বলে ডাকে! এতো দিন আমি জহ্লাদ বাহিনী বানিয়েছি, ভৈরব বাহিনী বানিয়েছি, বাইক বাহিনী বানিয়েছি, এবারে আমি ওদের দুগ্গা বাহিনীর অনুপ্রেরণায় নারীদের নিয়ে একটা কালী বাহিনী বানাবো ঠিক করেছি। এরাই টুম্পা মৌসুমীদের মতন মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। ছাত্রী থেকে শুরু করে কিশোরী, যুবতী থেকে শুরু করে গৃহবধূ, সবাই এই বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। আর হ‍্যাঁ, যে সমস্ত বেকার যুবতীরা টেটে পরীক্ষা ভালো করে দিয়েও কেবল অনুদানের অভাবে চাকরি পাননি, তারা বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

আমি এখুনি এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকেই একটা কমিটি গঠন করে দায়িত্ব ভাগ করে দিচ্ছি। সোনালী, সোনালী কোথায় গেল! ও ঐ তো পাত্তোর পাশে বসে! সোনালী এই বাহিনীর সদস‍্যদের শেখাবে, কিভাবে বাচ্চা খসাতে হয়! অর্পিতা কোথায়! ঐ তো, অর্পিতা শেখাবে কিভাবে 'প্রেক্ষিত' বিচার করে লড়তে হয়। কাকলী তোমাদের খরিদ্দার চিনতে শেখাবে। জয়া কোথায় গেল আবার! ঐ তো! বক্সিদার সাথে গপ্পো করছে! জয়া এদিকে এসো, জয়া শেখাবে, আমার দিকে কেউ আঙুল তুললে কিভাবে কেটে ফেলতে হয়। তাছাড়া কেষ্টা বোমা বাঁধা, ইদ্রিশ আগুন জ্বালানো, শোভন সাঁতার, শুভেন্দু অপহরণ এগুলো শিখিয়ে দেবে। তোমরা নিশ্চিন্তে এই বাহিনীর শিক্ষা শিবিরে যোগ দিতে পারো!

শরীর খারাপ বা টেনিং এর সময় চোট পেলে মাঝি কাকু আছে তো! মাল বাবু নেই তো কি হয়েছে, তোমাদের সুরক্ষার জন‍্য মাল বাবুর ছেলেরা তো আছে। ঐ দ‍্যাখো, সবাই আবার দেব, দেব বলে চ‍্যাঁচাচ্ছে কেন! আচ্ছা, আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি, খোকাবাবু মাঝে মাঝে গিয়ে পাগলু নেচে তোমাদের খুশি করে আসবে! গৃহবধূদের বলছি, আপনাদের যদি বাচ্চা থাকে তাহলে অযথা চিন্তা করবেন না! বাচ্চাদের নিয়েই এই শিবিরে যোগ দিতে পারেন। চন্দনা মাসি বাচ্চাদের দেখাশুনার দায়িত্বে আছেন। তাহলে অফিসিয়াল ভাবে আমি কালী বাহিনী গঠন করে দিলুম, কার কি দায়িত্ব সেটাও বলে দিলুম।

এই, এই, দাঁড়াও! দাঁড়াও! যাচ্ছো কোথায় তোমরা! এখনও আমার স্লোগান দেওয়া বাকি আছে তো! আমি পোথম লাইন বলবো তারপর তোমরা সবাই মিলে একসাথে বলবে!

এই নারী নির্যাতনে - তিনোমূল, এই ধর্ষনেতে - তিনোমূল, এই দিকে দিকে - তিনোমূল, এই পার্ক স্ট্রিটেতে, এই কামদুনীতে, এই কাকদ্বীপেতে, এই কাটোয়াতে, এই ধুপগুড়িতে, এই মধ‍্যমগ্রামে, এই বারাসাতে, এই সোনারপুরে, এই রানাঘাটেতে, এই লাভপুরেতে, এই গড়বেতাতে...
( স্লোগান একঘন্টা ধরে চলল, তাই সমস্ত নাম বলা সম্ভব হলো না। )

( বি.দ্র. - এটি একটি কাল্পনিক বক্তৃতা, বাস্তবের সাথে কোনো মিল থাকলে সেটা কাকতালীয় )