Monday 11 December 2017

চারমূর্তি

শীত পড়তেই এবছর কোথায় পিকনিক করতে যাওয়া হবে সেই নিয়ে জোর ঝামেলা হাবুল আর প‍্যালার মধ‍্যে। হাবুলের ইচ্ছা বোলপুরে তাই হাবুল বলল, বোলপুর হলো 'কবিগুড়ি'র দ‍্যাশ। ছাতিম গাছের তলে বইস‍্যা কচি পাঁঠার ঝোল আর ভাত, ভাবলেই জিভে জল চইলা আ্যাইসে। তাছাড়া আমাগো মামা হইচে বীরভূমের ডিএসপি, সবাই তাকে দেইখ‍্যা সমীহ কইর‍্যা চলে। প‍্যালা এই শুনে বলল, থাক হাবুল, কেষ্টার হুমকি শুনে তোর মামার যে প‍্যান্ট ভিজে গিয়েছিল সেটা আমরা সবাই দেখেছি। তারচেয়ে বরং কোলকাতার কাছাকাছি নিউটাউন রাজারহাটের আশেপাশে কোথাও একটা করলে হয়। হাবুল বলল, আর জায়গা পেলিনা, মাংসের ঝোল কড়ায় ফুটবে আর হঠাৎ বিশ্ব বাংলার বল গড়িয়ে এসে সব উল্টেপাল্টে দিক আরকি!

এমন সময় ক‍্যাবলা বলল, ঐ তো টেনিদা আসছে। প‍্যালা পিছনের দিকে একবার তাকিয়েই তাড়াতাড়ি চানাচুরের ঠোঙাটা উল্টে পুরোটা গালের মধ‍্যে ঢেলে দিলো। টেনিদা এসে মাথায় চাঁটি মারতেই প‍্যালার মুখ দিয়ে চানাচুর বেরিয়ে পড়লো। টেনি মুখুজ‍্যেকে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নয়! যা এখুনি আমার জন‍্য ঝালমুড়ি নিয়ে আয়। অগত্যা প‍্যালা ঝালমুড়ি আনতে চলল। টেনিদা তারপর হাবুল আর প‍্যালার সব যুক্তি শুনে বলল, পিকনিক করতে হয় এমন এক জায়গায় যেখানে পাড়াহ থাকবে, সমুদ্র থাকবে, ঘন জঙ্গল থাকবে, তা নাহলে অ্যাডভেঞ্চার হয় নাকি! হাবুল বলল, এতো ডেলো, মন্দারমনি আর জঙ্গলমহলের ককটেল, এমন জায়গা বাংলায় কোথাও আছে বলে শুনিনি! ক‍্যাবলা এতক্ষণ সব শুনছিল, এবারে সে বলল, আচ্ছা টেনিদা পিকনিকটা লিলুয়ায় করলে কেমন হয়? টেনিদা গাঁট্টা মেরে বলল, বাংলা, বিশ্ব বাংলায় পরিনত হয়ে গেল আর তুই এখনও লিলুয়ার মায়া ছাড়তে পারলি না!

এমন সময় প‍্যালা বলল, আজকে হাবুলের পিসি ডি-লিট পাওয়ার খুশিতে খাওয়াবে বলেছিল না? টেনিদা প‍্যালার মাথায় একটা জোরে গাঁট্টা মেরে বলল, হতচ্ছাড়া এতক্ষনে মনে পড়লো! আমি তাই এসে থেকে ভাবছি আজ কোথায় যেন একটা খাওয়া আছে। চল তাড়াতাড়ি চল, খিদেটা হঠাৎ আবার বেড়ে গেল। হাবুল বলল, কিন্তু আমাদের পিকনিক কোথায় হবে সেটা তো ঠিক হলো না! টেনিদা এবার রেগে গিয়ে বলল, মেফিস্টোফিলিসের মতন কথা বলিস না হাবুল, খালি পেটে হাজার চেষ্টা করলেও আমার পিকনিকের স্পটের নাম মনে পড়বে না।

হাবুলের বাড়িতে চারমূর্তি হাজির হতেই পিসি গরম গরম আলুরচপ আর বেগুনি খেতে দিলো। যথারীতি টেনিদা বাকিদের একটা করে দিয়ে নিজে সবটাই উদরস্ত করলো। তারপর জল খেয়ে একটা ঢেকুর তুলে বলল, কে বলে বাংলার শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয়! পিসি হেসে বলল, তোমরা একটু বোসো আমি বাকি খাবারের জোগাড় একটু সেরে নিই! হাবুল বাকিদের নিয়ে তখন পিসির স্টাডিরুম ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো। দেওয়ালে সব পিসির আঁকা ঐতিহাসিক ছবি। হঠাৎ ক‍্যাবলা বলল, এই হাবুল সেই অ্যাটম বোম বিষ্ফোরণের ছবিটা দেখছি না! হাবুল বলল, ওটা কদিন আগে পিসি রাষ্ট্রপতিকে উপহার দিয়েছে। প‍্যালা টেবিল থেকে একটা বই হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো, 'এপাং ওপাং ঝপাং'। এটা শুনেই টেনিদা বলল, এদিকে খিদেতে আমার পেট চুঁই চুঁই করছে আর তোরা হরলিক্সের আ্যাড শোনাচ্ছিস! প‍্যালা বলল, আরে এটা অ্যাড নয়, এটা পিসির লেখা কবিতা!

এমন সময় পিসির ঢাক শুনে সবাই ছুটে গিয়ে রান্নাঘরে হাজির হলো। মাজ, মাংস, মিস্টি, এলাহি ব‍্যাপার। প‍্যালা দেখে বলল, এতো 'আহারে বাংলার' স্টল! টেনিদা রেগে গিয়ে বলল, প‍্যালা, তুই একদম বেশি খাবিনা। ব‍্যাটা পিলে রুগী, কাঁচা জল খেলে অম্বল হয়। তারপর টেনিদা নিজেই যথারীতি সিংহভাগ খাবার সাবাড় করে দিলো। এতে বাকিদের যথারীতি খুব রাগ হলো। তাই খাবার শেষে পিসি টেনিদাকে মিস্টি করে ধমক দিয়ে বলল, টেনি ম‍্যাক্সিমাম খেও না, মিনিমাম খাও। টেনিদা হেঁসে বলল, জিআই তকমা পাওয়ার পর নবীন ময়রার রসগোল্লার স্বাদ দ্বিগুণ ভালো হয়ে গেছে।
(পুরোটাই কাল্পনিক গল্প, বাস্তবের সাথে মিল থাকলে কাকতলীয়)

No comments:

Post a Comment