Friday 12 January 2018

পাগলা দাশু

আজ অভিকে হাসিমুখে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে ঢুকতে দেখে সবাই অবাক! কেষ্টা, নবিনচাঁদ ছুট্টে গেলো অভির কাছে। কেষ্টা জিঞ্জেস করলো, ভাই আজ এতো খুশির রহস্যটা কি? নবিনচাঁদ জিজ্ঞেস করলো, বিশ্ব বাংলার বলটা পিসি কি তোকে দিয়ে দিলো নাকি! অভি কেবল হাসতে লাগলো। দাশু একমনে বেঞ্চিতে ঘসে ঘসে কি একটা লিখছিলো। জগবন্ধু এসে দাশুকে বললো, ব‍্যাপারটা কিরে দাশু, অভি এতো লাফালাফি করছে কেন? দাশু বললো, অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকেই ওর মাথাটা গেছে। মাঝেমধ্যেই গরম হয়ে যায়, তখন এমন লাফালাফি করে। জগবন্ধু বললো, তবে যে ডাক্তার বললো অভি পুরো সুস্থ। দাশু হেসে বলল, ওরম মনে হয়!

অভি ক্লাসে ঢুকতেই জগবন্ধু অভির মাথায় একমগ জল ঢেলে দিলো। শীতেকালে এমনিতেই অভি সপ্তাহে একদিন স্নান করে। তাও গরম জলে। নেহাত তখন পাশে কেষ্টা আর নবিনচাঁদ ছিল, নাহলে জগবন্ধুর জগত ছাড়া হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারতো না। দুজনে মিলে অভিকে জাপটে ধরে রাখে। অভি চেঁচাতে থাকে, হারামজাদাটাকে আজ মেরেই ফেলবো! জগবন্ধু কাঁচুমাচু হয়ে বলতে লাগলো, দাশুই তো আমাকে বললো অভির মাথা মাঝেমধ্যে গরম হয়ে যায়! তাই আমি...। মিনিট দশেক বাদে অভি শান্ত হতে কেষ্টা জিঞ্জেস করলো, কি গুরু কেসটা কি বললে না তো! অভি বুক ফুলিয়ে বললো, আজ আমার পিসি ডক্টর হয়ে গেলো! নবিনচাঁদ উত্তেজিত হয়ে বললো করলো, নিশ্চয়ই হার্ট স্পেশালিস্ট! অভি ঘাড় নেড়ে না বললো। জগবন্ধু বললো, তাহলে ডেন্টিস্ট। পাড়ার মোড়ে পিসির ইয়া বড়ো দাঁত বার করা ছবি টাঙিয়েছে দেখেছি। কেষ্টা জগবন্ধুর দিকে কটমট করে তাকাতেই জগা চুপ হয়ে গেল। শেষে অভিই বলল, আরে এটা ঐ ডাক্তার নয় ডক্টরেট উপাধি দেওয়া হয়েছে। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পিসির 'পোতিভার' সম্মান জানিয়ে এটা দিয়েছে। দাশু এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিল, এবারে সে ফোড়ন কাটলো, তা পিসি কবে ইস্ট জর্জিয়ার উপাধিটা রিটার্ন করলো? অভি দাশুর কথার উত্তর না দিয়েই পিসির গুণকীর্তন করতে লাগলো। পিসি সমাজ সেবা করে, গান করে, কবিতা লেখে। দাশু আবার বলল, এপাং ওপাং ঝপাং। অভি উপেক্ষা করে বলেই চললো, পিসি পাহাড় জঙ্গল নিয়ে লেখা বই, গীতাঞ্জলি কথাঞ্জলী নানান বই আছে, পিসি দারুণ ছবিও আঁকে। দাশু আবার ফোড়ন কাটলো, এখন আর আঁকে না, খরিদ্দার এখন জেলে। এবারে অভির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। রেগে গিয়ে অভি দাশুকে বলতে লাগলো, আমার পিসির পিছনে লাগলে তোমার পিছনে অ্যাটম বোমা ফাটিয়ে দেব। এটা শুনেই নবিনচাঁদ বলল, তোর পিসির অ্যাটমবোমা বিষ্ফোরণের ছবিটা দারুণ।

এমন সময় প্রধানশিক্ষক বিষ্টুবাবু ক্লাসে প্রবেশ করলেন। ঝগড়া বন্ধ করে যে যার জায়গায় চুপচাপ বসে পড়লো। তোমাদের জন‍্য একটা সুখবর আছে। এবার থেকে প্রতিবছর যারা পরীক্ষায় প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় হবে তাদের স্কলারশিপ দেওয়ার হবে। জগবন্ধু, স‍্যারের প্রিয় ছাত্র। তাই দিকে তাকিয়ে বিষ্টুবাবু বললেন, জগবন্ধু মেডেল হাতছাড়া করলে চলবে না! কেষ্টা বললো, স‍্যার হঠাৎ করে এই স্কলারশিপ কি উপলক্ষে চালু হলো? বিষ্টুবাবু বললেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষামন্ত্রীর স্ত্রী গত হয়েছেন, তাই তার স্মরণে এটা উনি চালু করলেন। জগবন্ধু হাতের গাঁট গুনছে দেখে বিষ্টুবাবু জিঞ্জেস করলেন, কি হিসাব করছো? জগবন্ধু আফসোসের সুরে বলল, তিনটে বছর প্রথম হওয়া বৃথা হয়ে গেলো! যদি বছর খানেক আগে এটা চালু হতো...। বিষ্টুবাবু জিভ কেটে বললেন, ছিঃ ছিঃ অমন বলতে নেই! পিছনের বেঞ্চে বসে কেষ্টা আর দাশু ফিসফিস করে কথা বলছিল। বিষ্টুবাবুর চোখ যেতেই উনি কেষ্টাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি আলোচনা চলছে শুনি! তোমাদের তো এ জন্মেআর স্কলারশিপ পাওয়ার আশা দেখছি না! কেষ্ট বলল, স‍্যার খাদ‍্যমন্ত্রীর স্ত্রী মারা গেলে কি স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক প‍্যাকেট করে মিহিদানার প‍্যাকেট দেওয়া হবে? বিষ্টুবাবুর বেতের লাঠি কেষ্টার পিঠে পড়তেই কেষ্টা কাঁদতে কাঁদতে বলল, স‍্যার দাশু আমাকে বলেছে।

বিষ্টুবাবু ক্লাস থেকে বের হতে যাবেন এমন সময় নবিনচাঁদ বলল, স‍্যার আগামীকাল কি স্কুল ছুটি থাকবে? বিষ্টুবাবু রেগে গিয়ে বললেন, কোন দুঃখে! পড়াশোনার নাম নেই, কেবল ছুটি! নবিনচাঁদ ধমক খেয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বলল, না মানে দাশু বলছিল অভির পিসি ডক্টর হয়েছে সেইজন‍্য আগামীকাল স্কুল অফিস কাছারি সব ছুটি থাকবে। স‍্যার যখন নবিনচাঁদকে ধমকাচ্ছিল তখন দাশু পিছনের বেঞ্চে বসে মিচকে মিচকে হাসছিল।

আচ্ছা, দাশু কি সত্যি সত্যি পাগল, না কেবল মিচ্‌‌কেমি করে ?

No comments:

Post a Comment