Wednesday 11 July 2018

তারিনী খুড়োর দাদা নরেন খুড়ো

তারিনী খুড়োর কথা আপনারা কমবেশি সবাই জানেন। তার এক্সপিরিয়েন্সের স্টক অফুরন্ত। ভারতবর্ষের ৩৩টা শহরে ৫৬ রকম চাকরি করেছিলেন। শেষে কোলকাতার বেনিয়াটোলাতে একটা ফ্ল‍্যাট নিয়ে আছেন। পাড়ার ছেলে ছোকরাদের মধ‍্যে খুড়ো খুব জনপ্রিয়। খুড়োর অভিজ্ঞতার গল্প সবাই গোগ্রাসে গেলে। খুড়ো দাবি করেন, বলার সময় একটু রঙ মেশালেও তার সব গল্পই আসলে সত্য ঘটনা অবলম্বনে। গতকাল সন্ধ্যায় আড্ডার ঠেকে অনেকদিন পরে তারিনী খুড়োকে দেখে সবাই খুব খুশি। অনেকদিন পরে খুড়োকে পাওয়া গেছে, আজ একটা জমিয়ে গল্প শোনা যাবে। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। ন‍্যাপলা হেঁকে বলল, চারটে কাটা একটা গোটা লিকার! খুড়ো মুচকি হেসে বলল, আজ দুটো গোটা! ন‍্যাপলা অবাক হয়ে বললো, দুটো কেন? কেউ আসবে? খুড়ো রহস্যময় হাসি হেসে বলল, আমার দাদা।
আমরা এতদিন জানতাম তারিনী খুড়োর সাত কুলে কেউ নেই, তিনি একাই ভবঘুরের মতন ঘুরে বেড়ায়। খুড়োর একটা দাদা আছে! সুনন্দ বলল, আপনার দাদা আছে জানতাম না! তারিনী খুড়ো মুচকি হেসে বলল, তোমার ক পাতা বয়স! তুমি এর মধ‍্যেই আমার ব‍্যাপারে সব জেনে যাবে! ন‍্যপলা বলল, নাম কি? খুড়ো বললো, নরেন, আমার মতন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ। ৫৬" ছাতি! উনি অবশ্য সংসার পেতে ছিলেন কিছুদিনের জন‍্য, একটা চায়ের দোকানও খুলেছিলেন। পরে বৌদিকে পরিত্যাগ করে ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। এখন অবশ্য মাঝেমধ্যে ৭নম্বর রেস কোর্সে ওনাকে দেখা যায়। আমি যেমন তোদের, তোদের বাবাদের কাছেও খুড়ো। ঠিক তেমনই নরেন সবার কাছেই মিত্রো। আমার থেকেও নরেনের খুড়োর গল্পের স্টক অনেক বেশী। ৫৬টা দেশে ৭১ বার ভ্রমণ করেছেন উনি।
বাইরে বৃষ্টি তখনও চলছে। এমন সময় সেই বৃষ্টির মধ‍্য দিয়ে রেনকোর্ট পরে এক ব‍্যক্তি হাজির হলেন। মুখে সাদা দাড়ি, গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা! বুঝতে বাকি রইলোনা ইনিই খুড়োর দাদা। আমি বললাম, এই বৃষ্টিতে গাড়ি আনতে পারতেন, না হলে উবের ধরে নিতে পারতেন। উনি হসে বললেন, আমি ফকির আদমি! গাড়ি কোথায় পাবো! তারপর আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা বিশ্বকাপ দেখছ না! ন‍্যাপলা বলল, সারাদিন কলেজে কলেজে লাইন দিয়েই কেটে যাচ্ছে, রাত জাগার এনার্জি থাকে! ততক্ষণে চা এসে গেছে। নরেন খুড়ো চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বললেন, তোমাদের এখানে শুনছি অনুদান দিয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে? সুনন্দ বললো, হ‍্যাঁ, সব কলেজেই দিতে হচ্ছে। তবে জেইউ লড়েছে আমাদের জন‍্য। নরেন খুড়ো আরেকবার চুমুক দিয়ে বলল, কি জানি বাপু আমার কাছে জেএনইউ আর জেইউ দুটোই সমান! দেশদ্রোহীদের আখড়া মনেহয়! এবারে ন‍্যাপলা তারিনী খুড়োর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার দাদা যে ভক্ত সেটা কই বলেননি তো!
নরেন খুড়ো চা শেষ করে বলল, তোমরা আর্ষভট্টের নাম শুনেছ? আমি বললাম, হ‍্যাঁ উনি শূন্য আবিষ্কার করেছিলেন। নরেন খুড়ো বলল, ঠিক বলেছ, উনি জিরো আবিষ্কার করে বিখ্যাত হয়েছিলেন, আর আমরা জিরো ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়েই বিখ‍্যাত হবার সংকল্প নিয়েছি। তোমরা জিও ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারো। কোনো অনুদান লাগবেনা, যাদের জিও সিম আছে তারা অ্যাডমিশনে ডিসকাউন্ট পাবে। প্রাইম মেমবারদের কোনো পয়সাই লাগবেনা। ন‍্যাপলা বলল, গোগলে তো কই দেখাচ্ছে না? খুড়ো চুপিচুপি বলল, সব জিনিস সবসময় দ‍্যাখা যায়না! ঠিক যেমন ইস্ট জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি ম‍্যাপে দেখা যায়না। ২০৫০এর পর এটাকে সামনে আনা হবে। এই ইনস্টিটিউটের ক‍্যাম্পাস গুজরাট মডেলের অনুকরণে তৈরী করা হয়েছে। সুনন্দ জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা এখানে কোন কোন বিষয়ে পিএইচডি করা যাবে? খুড়ো হেসে বলল, হোয়াটস অ্যাপের ওপর থিসিস লিখলেই পিএইচডি বাধা। এটা পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গন, সমস্ত স্টাডি মেটেরিয়াল হোয়াটস অ্যাপেই দেওয়া হবে। কাগজ কালির কোনো ঝামেলা নেই। নোংরাও হবেনা, স্বচ্ছ ক‍্যাম্পাস!
তবে ড্রেস কোড খুব স্ট্রিক্ট! ফুলপ‍্যান্ট পরা যাবেনা। তবে সাভারকর আর গডসের কথা ভেবে হোমোসেক্সুয়ালিটির ব‍্যাপারে একটু নমনীয়তা দেখিয়েছি। তাহলে তোমরা সবাই তাড়াতাড়ি অ্যাপ্লাই করে ফেলো। ও হ‍্যাঁ, যাদের জিও সিম আছে তাদের আলাদা করে আধার নম্বর লাগবে না। আমি, ন‍্যাপলা, সুনন্দ সহ বাকিরা হাঁ করে খুড়োর কথা শুনছিলাম। টানা বৃষ্টিতে ততক্ষণে সামনের রাস্তা উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, বঙ্গোপসাগরে পরিনত হয়েছে। এমন সময় সেই জলের ওপর একটা সী-প্লেন এসে নামলো। তারপর ফকির নরেন খুড়ো সবার সাথে একটা সেলফি তুলে হাত নাড়াতে নাড়তে প্লেনে উঠে গেল। ন‍্যাপলা অবাক হয়ে তারিনী খুড়োকে বলল, আপনার দাদা কোথায় চললেন? তারিনী খুড়ো বললো, ফ্রান্সে, সেমিফাইনালে জয়ের শুভেচ্ছা জানাতে।

No comments:

Post a Comment