Friday 7 April 2017

ডিজিটাল রামায়ণ

                                    ডিজিটাল রামায়ণ
আদিকাণ্ড :-
দশরথ ছিলেন কোশল রাজ্যের রাজা। তখনকার দিনে রাজাদের বহুবিবাহ ছিল নিতান্তই 'ছোট্ট ঘটনা'। তাঁর তিন মহিষী: কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন নামে দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়। একদা ঋষি বিশ্বামিত্র দশরথের সভায় উপস্থিত হয়ে তাঁর আশ্রমে উপদ্রব সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করতে রাজার সহায়তা প্রার্থনা করেন। তিনি এই কাজের জন্য রাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে যান এবং শিফুজির স্পেশাল কমান্ডো ট্রেনিং ও রামদেব বাবার যোগ সাধনা করান। দুজনে সার্জিক‍্যাল স্টাইক করে আশ্রমে উপদ্রব সৃষ্টিকারী সকল সন্ত্রাসবাদীদের হত্যা করেন। এর ভিডিও ফুটেজ যদিও পাওয়া যায়নি! তবে হয়েছিল বটে!

এই সময়ে মিথিলার রাজা জনক তাঁর বিবাহযোগ্যা কন‍্যার জন্য স্বয়ম্বরের আয়োজন করেন। শিব রাজা জনককে একটা ধনুক গিফ্ট দিয়েছিলেন। রাজা গোঁ ধরেন, যে এই ধনুকে গুণ সংযোজন করতে পারবে, তাকেই অপরূপা সীতা পতিত্বে বরণ করবে। ঋষি বিশ্বামিত্র সীতার ফেসবুক পেজে এই খবর দেখে রাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে সেই স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত হলেন। রাম সেই ধনুকে গুণ পরালেন এবং বার খেয়ে সেটা ভেঙেও দিলেন। রামের সঙ্গে সীতার বিবাহ হল। শুধু তাই নয়, ডিমনিটাইজেশনের জন‍্য খরচ বাঁচাতে দশরথের অন্যান্য পুত্রদের সঙ্গে জনকে অন্যান্য কন্যা ও ভাগিনেয়ীদের বিবাহ সম্পন্ন হল।

অযোধ্যাকাণ্ড :-
রাম ও সীতার বিবাহের বারো বছরের বিবাহ বার্ষিকিতে বৃদ্ধ রাজা দশরথ রামকে একটা দশলাখি কোর্ট গিফ্ট করলেন এবং যুবরাজ হিসাবে অভিষিক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। পিসি মন্থরার কুমন্ত্রণায় কৈকেয়ী রাজার কাছে দাবি করেন যে রামকে চৌত্রিশ বছরের জন্য বনবাসে পাঠাতে হবে এবং তাঁর স্থলে ভরতকে যুবরাজ হিসাবে অভিষিক্ত করতে হবে। রানীর সব কিছুতেই চৌত্রিশ, এই নিয়ে পরে সবাই যখন সমালোচনা করতে শুরু করলো তখন উনি কমিয়ে চোদ্দ বছর করেন।

রাম পিতাকে আশ্বস্থ করে বলেছিল, চিন্তা করো না! কোনো ভয় নেই! জঙ্গলমহল এখন হাসছে! লক্ষ্মণও নিজের ক‍্যারিয়ার বিষর্জন দিয়ে, বৌ ছেড়ে দাদা বৌদির সাথে চলল। রাম চলে যাবার পর পুত্রশোকে দশরথের স্টোক হয়। এই ঘটনার সময় ভরত ছিলেন তাঁর মাতুলালয় নন্দীগ্রামে। সব শুনে ভরত সত্বর অযোধ্যায় ফিরে এলেন। রামকে খুঁজতে ভরতও জঙ্গলমহলে গেলো। তিনি রামকে অযোধ্যায় ফিরে রাজপদ গ্রহণের অনুরোধ জানাল। কিন্তু রাম রাজি না হলে, ভরত তখন রামের হাওয়াই চটি চেয়ে নিয়ে বললেন, এই হাওয়াই চটিই আপাতত রাজ‍্য চালাবে।

অরণ্যকাণ্ড:-
রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ, কোনো কালেই ওরা কখনও বামে যাননি তাই দক্ষিনে যাত্রা করেন। গোদাবরী নদীর তীরে আম্বানীর লিজে নেওয়া জমির পাশে পঞ্চবটী বনে কুটির নির্মাণ করে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন তাঁরা। একদিন রাবণের বোন সুর্পনখা রামকে দেখে প্রোপোজ করলো। রাম তারপর প্রোপজটা ভাই লক্ষণকে ফরয়ার্ড করলো। লক্ষণ এক ছোবলেই ছবি বানিয়ে দিলো।

রাবণ এই সংবাদ পেয়ে ভগিনীর অপমানের প্রতিশোধ নিতে অধিকারীর সাথে পরামর্শ করে সীতাকে অপহরণ করলেন। তিনি ঋষির ছদ্মবেশে এসে সীতার নিকট পতঞ্জলীর প্রোডাক্ট বিক্রি করতে এলেন। কসমেটিক দেখেই সীতা গন্ডির বাইরে বেরিয়ে এলো। আর তখনই রাবন তাকে নিয়ে পারসোনাল চাটার্ড ফ্লাইটে সোজা লঙ্কা।
রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় অশোক কানন নজরবন্দী করে একদল সন্ত্রাসবাদীর তত্ত্বাবধানে রাখলেন। তিনি সীতাকে প্রোপজও করলেন। সীতা তো এখন রামের অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডে জানাতেও পারবে না! অপমান সহ‍্য করা ছাড়া সীতার কিছু করার নেই।

কিষ্কিন্ধাকাণ্ড :-
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বানরবীর তথা সুগ্রীবের লবি হনুমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল রাম ও লক্ষ্মণের। সুগ্রীব ছিলেন কিষ্কিন্ধার নির্বাসিত এক রাজপদপ্রার্থী। ইভিএম-এ জালিয়াতি করে তাকে ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়। রাম সুগ্রীবের লবিতেযোগ দিলেন। রাম এবং সুগ্রীব, বালীকে চক্রান্ত করে হত্যা করলেন। রামের সহায়তায় সুগ্রীব নিজভ্রাতা বালীকে হত্যা করে কিষ্কিন্ধার সিংহাসনে আরোহণ করলেন।

সুন্দরকাণ্ড :-
হনুমান প্রদ‍্যুম্ন ভল্ট দিয়ে এক লাফে সাগর পার হয়ে লঙ্কায় উপস্থিত হলেন। লঙ্কায় এসে তিনি সীতাকে রামের দেওয়া জিও সিম লাগানো ফোরজি সেটটা দিলেন। সেটা দিয়েই সীতা প্রতিদিন রামকে মন কি বাত শোনাতো। হনুমান সীতাকে নিয়ে যেতে চাইলে সীতা বায়না ধরে, রামকে এসেই নিয়ে যেতে হবে। অতঃপর হনুমান রামের স্বচ্ছতার প্রোপাগান্ডা গুলি মেরে, নিজেই পাকামি মেরে লঙ্কায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালালেন। তারপর লেজে আগুন লাগিয়ে লঙ্কা পুড়িয়ে, নিজের মুখ পুড়িয়ে ফিরে আসে।

লঙ্কাকাণ্ড :-
সীতার হোয়সঅ্যাপ ম‍্যাসেজ পেয়ে রাম ও লক্ষ্মণ বানর সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। সমুদ্রতীরে রাবণের ভ্রাতা রেজ্জাকের সাথে দেখা হয়। তিনিও মন্ত্রীত্ব লাভের আশায় উন্নয়নের জোয়ারে সামিল হলেন। অঙ্গদ, জাম্বুবান প্রমুখ বানরেরা আর্কিমিডিসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাথর জলে ভাসিয়ে সমুদ্রের উপর একটি সেতু করলেন। সেই সেতুপথে রাম সসৈন্যে লঙ্কায় প্রবেশ করলেন। লঙ্কায় রাম ও রাবণের মধ্যে এক দীর্ঘ যুদ্ধ সংঘটিত হল। যুদ্ধান্তে রাবণ নিহত করে লঙ্কায় হিন্দু রাজ‍্য প্রতিষ্ঠা করলেন। সীতা ফিরে এলো কিন্তু রামের মন থেকে খচখচানি গেলো না! দীর্ঘদিন সন্ত্রাসবাদীদের সাথে সীতা ছিল। যদি কিছু ... তাই সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সতীত্ব প্রমাণ করতে বললেন রাম। সীতাও আর পাঁচটা গৃহবধূর মতন মেনেও নিলো।

উত্তরকাণ্ড :-
রাজা হওয়ার পর রাম অনেক কাল সীতাকে নিয়ে সুখে সংসার করেন। এদিকে অগ্নিপরীক্ষিতা হওয়া সত্ত্বেও সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় নানান কুৎসা অপপোচার ছড়াতে শুরু করে। এই সব বিচলিত হয়ে রাম সীতাকে নির্বাসনে পাঠান। প্রেগন‍্যান্ট সীতা রামের জননী সুরক্ষা যোজনার সুবিধা না পেয়ে আশ্রয় নেন ঋষি বাল্মীকির আশ্রমে। সেখানেই তাঁর যমজ পুত্রসন্তান লব ও কুশের জন্ম হয়। সীতা দুই শিশুকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আসলে বেশকিছু রামভক্ত যে শিশুপাচারে যুক্ত সেটা তিনি জানতেন।

বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও - এর প্রচারে লব ও কুশ রামের সভায় উপস্থিত হন। লব ও কুশের কথা শুনে রামের মনটা নস্টালজিক হয়ে পড়ে। তখন বাল্মীকি সীতাকে নিয়ে আসেন রামের সম্মুখে। কিন্তু রাম তো বাঙালী তাই অভ‍্যেসটা একই রয়ে গেছে। সকলের সম্মুখে সীতাকে পুনরায় অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার আবদার করে বসে। অপমানিতা সীতা স্বামীর এই নারীনির্যাতন সহ‍্য না করতে পেরে, মাতা ধরিত্রীকে আহ্বান জানান। মাটি বিদীর্ণ হয়। দেবী ধরিত্রী উঠে এসে সীতাকে নিয়ে পাতালে চলে যান। স্ত্রী চিরকালের মতন ছেড়ে যাবার পর, রামের চেতনা হয়। তখন রাম পুত্রদ্বয়ের হাতে শাসনভার ছেড়ে দিয়ে সরযূ নদীর উন্নয়নের জোয়ারে আত্মবিসর্জন করে বৈকুণ্ঠে ফিরে আসেন।

( বি.দ্র. - এটি একটি কাল্পনিক রচনা। ধর্মের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।)

No comments:

Post a Comment