Wednesday 26 April 2017

গরুর রচনা

নরেন স্কুলে প্রতিদিন একটি রচনাই মুখস্থ করে যায়। আর সেটা দিয়েই সব রচনা দিব‍্যি চালিয়ে দেয়। আসলে এই গুণটা তার জিন সূত্রে পাওয়া। সেই ঘটনাটা মনে আছে তো যেখানে একটা ছেলে স্কুলে কেবল কুমীরের রচনা মুখস্ত করে যেত। আর শিক্ষক তাকে যে রচনাই লিখতে দিতো, সে ঘুরে ফিরে সেই কুমিরেই এসে শেষ করতো। নরেন তার নাতির ছেলে। 'চারটে জেনারেশন' ধরে সেই একই ট্র‍্যাডিশন চলছে। কেবল কুমীর পাল্টে কখনও হয়েছে হনুমান, কখনও বা পাঁঠা। এই ফোর্থ জেনারেশনে এসে হয়েছে গরু। হ‍্যাঁ সেই কুমীরখ‍্যাত ভদ্রলোকের পোপৌত্র, নরেন স্কুলে কেবল একটি রচনাই মুখস্ত করে যায়। গরুর রচনা। গরু গৃহপালিত প্রানী। গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ..... গরু গোবর দেয়। গোবর থেকে ঘুটে ও গোবর গ‍্যাস তৈরী হয়। এই গোবর গ‍্যাসই সমস্ত শক্তির উৎস। এই গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

একেবারে ঝড়ঝড়ে ২০০টি শব্দের গরুর রচনা মুখস্ত করে নরেন স্কুলে হাজির। বাংলার শিক্ষক এসে, 'একটি গাছ, একটি প্রাণ' রচনা বলতে বললে নরেন শুরু করলো - গাছ খুব উপকারি, গাছ সালোকসংশ্লেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে আমাদের অক্সিজেন দেয়। তবে এই কাজ যে গাছ একা পারে তা কিন্তু নয়! গরুও পারে পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে অক্সিজেন ছাড়তে। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত। পরেরদিন শিক্ষক মশাই নরেনকে, 'জাতীয় সুরক্ষা' নিয়ে রচনা বলতে বললেন। নরেন যথারিতী শুরু করলো - জাতীয় সুরক্ষা দেশের পক্ষে খুব জরুরি। দেশে শক্তিশালী জল, স্থল ও আকাশ বাহিনী আছে। এছাড়া রয়েছে গো-রক্ষা বাহিনী। এরা গরুদের সুরক্ষা প্রদান করে। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

শিক্ষক মশাই দেখলো ভারি মুসকিল! নরেনকে যাই রচনা জিজ্ঞেস করে সে ঘুরে ফিরে গরুতেই এসে শেষ করে। পরেরদিন শিক্ষক মশাই একটু শক্ত রচনা দিলেন, 'অলিম্পিকে ভারত'। মনেমনে শিক্ষক মশাই ভাবতে লাগলেন, দ‍্যেখি অলিম্পিকে কি করে নরেন গরু ঢোকায়! নরেন একটু ভেবে শুরু করলো - অলিম্পিক বিশাল বড়ো খেলার আসর। ভারত এবারের অলিম্পিকে এতো কষ্ট করেও একটাও সোনা পায়নি। তবে সোনা কিন্তু সহজেই গো-মূত্রে পাওয়া যায়। গরুই আপনাকে দিতে পারে সোনা। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত। শিক্ষক মশাই রেগে আগুন তেলে বেগুন। পরেরদিন এসেই নরেনকে বলল, আজকের রচনা 'গ্লোবাল ওয়ার্মিং'। দ‍্যেখি এতে গরু ঢোকা! নরেন শুরু করলো - গ্লোবাল ওয়ার্মিং মানে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এটার জন‍্য দায়ী গ্রীনহাউস গ‍্যাস। যার মধ‍্যে থাকে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ( সি এফ সি )। এই গ‍্যাস রেফ্রিজেরেটরে ব‍্যবহার করা হয়। আর ওর ভিতরেই আকলাখ গো-মাংস লুকিয়ে রেখেছিল। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

আজ শিক্ষক মশাই কোনো কথা বলছে না, একেবারে গম্ভীর। ভিতরে ভিতরে রাগে ফুঁসছে। ক্লাসে ঢুকেই নরেনকে ডেকে বলল, আজ 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া' নিয়ে বল। দেখি এটার মধ‍্যে তুই কি করে গরু আনিস! হাতে বেতের ছড়িটা নিয়ে শিক্ষক স‍্যাডো প্র‍্যাক্টিস করতে শুরু করলেন।নরেন আজ বিখ‍্যাত উক্তি কোট করে শুরু করলো - 'পরে হবে ভাত ডাল, আগে হোক ডিজিটাল'। আমাদের দেশে এখন সুদিন, দেশ এখন ডিজিটাল। দেশ এখন ক‍্যাসলেস। দেশ এখন কার্ড নির্ভর। প‍্যানকার্ড, এটিএম কার্ড, আঁধার কার্ড। আঁধার কার্ডের সুবিধা এবার থেকে গরুরাও পাবে। গরুও এখন থেকে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শরিক। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

শেষে হতাশ হয়ে ও রেগে গিয়ে শিক্ষক মশাই চিৎকার করে বলতে লাগলো, গরুর আঁধার কার্ড হবে, গরু গোয়ালে না থেকে ইন্দিরা আবাসের ঘরে থাকবে, গরুর জনধন যোজনায় অ্যাকাউন্ট হবে, গরু এবার থেকে ভোটাধিকারও পাবে। নরেন মুচকি হেসে বলল, স‍্যার গরু জিওর সিমও তুলতে পারবে।

No comments:

Post a Comment