Thursday 20 April 2017

কালীপিসির পুরী ভ্রমণ

অনেকদিন ধরেই পিসি ভাবছে পুরী গিয়ে পুজো দিয়ে আসবে কিন্তু লন্ডন জার্মানি একটার পর একটা ট‍্যুর, বিশ্ব ব‍্যাঙ্গ সম্মেলন, আহারে বাহারে নানা উৎসব আর কাজের মধ‍্যে সময় হয়নি। তাই উনি ঠিক করেছেন, হার্মাদের দেশে যাবার আগে এবারে পুজোটা দিয়েই যাবেন। তাছাড়া পুরীর কাছেই ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে পিসির দুই ভাই, দীপ আর মাল, পা ভেঙে ভর্তি আছে। তাদের সাথে দ‍্যাখাও করবে। গোলাপী উপত‍্যাকায় ট্রেকিং করতে গিয়ে পা ভাঙে। কয়েক মাস হলো ভর্তি আছে। পিসি ভাইয়েদের দেখতে যায়নি বলে তারা খুব দুঃখু পেয়েছে। দীপ হাসপাতালে পিসিকে দেখেই,' দিদি গো..' বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো! পিসি দীপের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আহারে বাছা একেবারে শুকিয়ে গেছে! জিম না করেই ১৫-২০কিলো ওজন কমিয়ে ফেলেছে! দীপ বরাবরই সাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করে, তাই পিসি ভেবেছিল সবুজ সাথীর সাইকেল একটা দিয়ে আসবে। কিন্তু পা তো ভাঙা, চালাবে কি করে! তাই একটা ডায়েরি দিয়ে বলে এসেছে, এটাতে গান কবিতা যা মনে আসে লেখ, ছবি আঁকো। আমি বই মেলাতে এটাকে প্রকাশ করবো। নাম হবে, 'হাসপাতালের ডায়েরি'। 'মাল'টার সাথে পিসি আর দ‍্যাখা করেনি। পিসি খোঁজ নিয়ে দেখেছে, 'মাল'টা হাসপাতালে প্রতিদিন ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন খেয়ে দিব‍্যি আছে।


এদিকে হয়েছে আরেক বিপত্তি। গতবছর পিসির এক ভাই কৃষ্ণ দাস মানে কেডিভাই পিসির বাড়িতে নারায়ণ পাঠিয়ে ছিলেন পুজো করার জন‍্য। পিসির আরেক ভাই 'বাল'এশ্বর দায়িত্ব নিয়ে পুজো করিয়ে সবাইকে প্রসাদ দেয়। পিসির বেশকিছু ভাই, ভাইপো, ভাইঝি পুজোর প্রসাদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। খবরটা গোটা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকেই তারা মাঝে মধ‍্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তো। বেলভিউতে ভর্তিও করতে হয়েছে কয়েকবার। পিসি তার নিজের ডায়গনস্টিক সেন্টারে সবাইকে ফ্রিতে পরীক্ষা করবে বলেছিল। সেটা বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর টেনশানে আর করে উঠতে পারেনি। তবে জনস্বার্থে, এই অসুখ ছোঁয়াচে কিনা জানার জন‍্য স‍্যাম্পেল দিল্লীর ল‍্যাবে পাঠানো হয়েছিল। প্রসাদ প্রায় সবাই খেয়েছিল। কেউ তোয়ালে মুড়ে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল, তো কেউ খবরের কাগজ মুড়ে নিয়ে গিয়েছিল! কেউ আবার ব‍্যাগে করে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল! পিসির নকুল ভাই তো সবারচেয়ে বেশী প্রসাদ খেয়েছিল। এক ভাই জলখাবারে সিঙাড়া দিয়েই খেয়েছিল আর মাতাল ভাইটা তো পুজোর ফলকে চাট বানিয়ে পেগ মারতে মারতে খেয়েছিল। ভাইপোর ফিজিক্সের প্রাইভেট টিউটর, ফুটবল কোচ সবাই খেয়েছিল। পিসির ফ‍্যামেলি ফিজিসিয়ন মিতালী আর হাকিম সাহেবও খেয়েছিল। এমনকি বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডও খেয়েছিল। এটা নিশ্চিত, প্রসাদ আরও অনেকে খেয়েছিল। তবে বাকিদের অবস্থা দেখে আর কেউ মুখ খুলছে না! পাড়ার লোকজনের মুখে একটাই কথা, পিসির বাড়ির নাযরাণ পুজো আর পিসি প্রসাদ পায়নি! এটা হতেই পারে না।

দিল্লীর ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ১৩জনের ইনফেকশনের রিপোর্ট এসেছে। মনেহয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। উডবার্নে রেখে চিকিৎসা করলে রোগ সারবে না তাই ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হবে। সেটা পিসি ভালো ভাবেই জানেন। খুব শীঘ্রই আরও জনা পোনেরোর রিপোর্ট পাঠাবে জানিয়েছে দিল্লী থেকে। তাই ভাইয়েদের হাসপাতালে থাকতে যাতে কোনো অসুবিধা নাহয় সেটাই তদারকি করতে উনি এসেছেন। অবশ‍্য সেকথা পিসি স্বিকার করেনা। বলে, আমি পুজো দিতে এসেছি।

একটার পর একটা টেনশানে পিসি যখন জর্জরিত তখন ভাবলেন পুরীর সমুদ্রে জয় জগন্নাথ বলে একটা ঢুব দিয়ে মন্দিরে একবার মাথা ঠেকিয়ে আসি। কিন্তু সমস‍্যা যেন পিসির পিছু ছাড়ছে না! এক পান্ডা হুমকি দিয়েছে, পিসিকে পুজো দিতে দেবেনা। এতো আর সাংবাদিক পান্ডা নয়, যে পিসির চাবকানির ভয়ে চুপ করে যাবে! এ আই এস আই ছাপ যুক্ত বিশুদ্ধ হিন্দু পান্ডা। পিসির রাফ এন্ড টাফ মেজাজকে তোড়াই কেয়ার করে! পান্ডাটা নিশ্চয়ই পিসিকে হিজাব পরে টিভিতে দেখেছে। অনেক কষ্টে নিজেকে 'পোকিতো হিন্দু পোমান' করে পিসি পুজো দিতে পেরেছে।

এতো ঝামেলার চাপে পড়ে কাকাতুয়া থেকে ভাইপোর জন‍্য জিভেগজা কিনবে সেটাও ভুলে গিয়েছে। জিভেগজা যে ভাইপোর ফেবারিট। বারবার করে পিসিকে জিভেগজা আনতে বলেছে ভাইপো। তাই পিসি সোনার তরী থেকে বার হবার সময় হোটেলের ম‍্যানেজারকে ২০০০এর একটা নোট দিয়ে বললো, কাউকে দিয়ে খাজা এনে দিন তো। ম‍্যানেজার মুচকি হেসে বলল, নিতে হবেনা ম‍্যাডাম! কদিন বাদেই তো ছোটোবাবু এখানে আসবে। তখন প্রতিদিন খাজা খাবে।

বি.দ্র. - বাস্তবের সাথে এই গল্পের কোনো মিল নেই। থাকলে কাকতালীয়।

No comments:

Post a Comment