Sunday 8 May 2016

‘রবীন্দ্র মরেনি’

এ্যাই, এ্যাই, চোপ্‌! চোপ্‌! কোনো কথা নয়! আমি কি বলছি সবাই মন দিয়ে শোনো। আজ ২৫শে বৈশাখ, ‘কবিগুড়ি’-র জন্মদিন। সমস্ত কাগজে আমার গরমেন্ট থেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। উনি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। তবে ওনার অভাব আমাদের নাটাবাড়ির রবি অনেকটাই পূরণ করে দিয়েছেন। এই তো সামনেই বসে আছে আমাদের রবি। রবি একটু দাঁড়িয়ে হাতটা নেড়ে দাও।

হ্যাঁ, যে কথা বলছিলুম, ওনার সাথে আমার প্রথম আলাপ হয় কোলকাতা বইমেলায় ‘ভাগো বাংলা’-র স্টলে। উনি আমার লেখা ‘আমার জঙ্গল’, ‘আমার পাহাড়’, ‘আমার দামাল’, ‘সিন্ডিকেট সুবিধা’, ‘আমরা সবাই চোর’, ‘আজব ত্রিফলা’, ‘কলঙ্কিত সারদা’ ইত্যাদি বইগুলি খুব মন দিয়ে দেখছিলেন। তখনই ওনার সাথে আমার পরিচয় হয়। উনি বললেন, ‘‘আমি আপনার গুণমুগ্ধ পাঠক।’’ আমি সঙ্গে সঙ্গে ‘কথাঞ্জলি’-র একটা কপি ওনাকে আমার অটোগ্রাফ দিয়ে গিফ্‌ট করি। পরে উনি ‘কথাঞ্জলি’-র অনুপ্রেরণায় ‘গীতাঞ্জলি’ নামে একটা বই লেখেন। ওই কয়েকটা গান-টান আর কি!

তো একদিন বিকেলে হঠাৎ উনি আমার বাড়িতে চলে এলেন। আবদার করে বললেন, ‘কথাঞ্জলি’-র মতন ‘গীতাঞ্জলি’-র ও ইংরেজি অনুবাদটা করে দিতে হবে। বয়স্ক মানুষের অনুরোধ তো আর ফেলতে পারি না। অগত্যা বাধ্য হয়ে করে দিলাম। নোবেল প্রাইজও পেয়ে গেলেন। অবশ্য পরে দেখা করে এর জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছিলেন। নোবেল নেওয়ার জন্য যখন লন্ডনে যাওয়ার কথা বললেন, আমিই সব ব্যবস্থা করে দিলাম। ওখানে শেক্সপীয়ার আর কীটস্‌-এর সঙ্গে সিটিং করার অ্যাপোটা আমিই করে দিয়েছিলাম। আর কেউই সেটা পারছিল না। যাইহোক এসব ‘ছোট্ট ঘটনা’।  

ঝর্না দেখে উনি ‘মুক্তধারা’ লিখেছিলেন সেকথা তোমাদের আগেই বলেছি। আজ আরও একটা গোপন কথা বলছি। উনি ‘সোনার তরী’ কবিতাটি, পুরীতে আমার হোটেলে বসেই লেখেন।

এই এই কে কথা বলছে! আমি কি বলছি শোনো! গান্ধীজি যখন অনশন করেন তখন উনি নিজের হাতে গান্ধীজিকে ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙান। তখনই তো উনি লিখেছিলেন, ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়, করুণাধারায় এসো।’

আমি যখন সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় অনশন করি তখন উনি এসে আমাকে চকলেট খাইয়ে যেতেন। গরমের সময় যখন উনি বোলপুরে থাকতেন, শরীর ‘ঠান্ডা ঠান্ডা, কুল কুল’ রাখতে প্রতিদিন অনুব্রতর ‘গুড় জল’ খেতেন।

৩৪ বছর ধরে উনি বাংলায় কোনো সম্মান পাননি। তাই ‘পরিবর্তন’-এর পরে আমি ওনাকে ট্র্যাফিক সিগন্যাল পোস্টে ঝুলিয়ে দিয়েছি। যাতে বাংলার মানুষ হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও ওনাকে স্মরণ করতে পারেন। তবে কারো কারো ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না। ছোটলাটের বউয়ের নাকি শীতের রাতে রাজভবনের সামনের সিগন্যালে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আওয়াজে ঘুম হচ্ছিলো না, তাই সাউন্ড কমানোর কমপ্লেন করেছে লালবাজারে। আমিও বলে দিয়েছি, ওখানে আওয়াজ কমাচ্ছো, কমাও, কিন্তু আর কোথাও একফোঁটা কমানো আমি অ্যালাউ  করবো না।  

এ্যাই, এ্যাই, চেঁচামেচি একদম নয়! সবাই এবারে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ো আমরা এবারে কেক কাটবো। সবাই আমার সাথে গলা মিলিয়ে বলো, “Happy birthday to you, Happy birthday to you, Happy birthday dear Rabi.”

শোনো, শোনো, এবার পোগ্গাম শেষ। আমার গরমেন্ট-এর শেষ কাজ হিসেবে আমি রবীন্দ্রনাথকে চিরজীবী করে যেতে চাই, যেমন সত্তোজিতকে করে দিয়েছি। আজ থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সামনের রাস্তার নাম করে দিলাম রবীন্দ্র মরেনি


এবার সবাই হাততালি দাও। কি হলো? হাততালি দিতে বলছি তো!!!? দিচ্ছো না কেন? এ্যাই, এ্যাই......সবাই চুপ কেন?...কি হলো? কি হয়েছে?!!!!!!!!!!!!!!

No comments:

Post a Comment