Wednesday 11 July 2018

তারিনী খুড়োর দাদা নরেন খুড়ো

তারিনী খুড়োর কথা আপনারা কমবেশি সবাই জানেন। তার এক্সপিরিয়েন্সের স্টক অফুরন্ত। ভারতবর্ষের ৩৩টা শহরে ৫৬ রকম চাকরি করেছিলেন। শেষে কোলকাতার বেনিয়াটোলাতে একটা ফ্ল‍্যাট নিয়ে আছেন। পাড়ার ছেলে ছোকরাদের মধ‍্যে খুড়ো খুব জনপ্রিয়। খুড়োর অভিজ্ঞতার গল্প সবাই গোগ্রাসে গেলে। খুড়ো দাবি করেন, বলার সময় একটু রঙ মেশালেও তার সব গল্পই আসলে সত্য ঘটনা অবলম্বনে। গতকাল সন্ধ্যায় আড্ডার ঠেকে অনেকদিন পরে তারিনী খুড়োকে দেখে সবাই খুব খুশি। অনেকদিন পরে খুড়োকে পাওয়া গেছে, আজ একটা জমিয়ে গল্প শোনা যাবে। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। ন‍্যাপলা হেঁকে বলল, চারটে কাটা একটা গোটা লিকার! খুড়ো মুচকি হেসে বলল, আজ দুটো গোটা! ন‍্যাপলা অবাক হয়ে বললো, দুটো কেন? কেউ আসবে? খুড়ো রহস্যময় হাসি হেসে বলল, আমার দাদা।
আমরা এতদিন জানতাম তারিনী খুড়োর সাত কুলে কেউ নেই, তিনি একাই ভবঘুরের মতন ঘুরে বেড়ায়। খুড়োর একটা দাদা আছে! সুনন্দ বলল, আপনার দাদা আছে জানতাম না! তারিনী খুড়ো মুচকি হেসে বলল, তোমার ক পাতা বয়স! তুমি এর মধ‍্যেই আমার ব‍্যাপারে সব জেনে যাবে! ন‍্যপলা বলল, নাম কি? খুড়ো বললো, নরেন, আমার মতন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ। ৫৬" ছাতি! উনি অবশ্য সংসার পেতে ছিলেন কিছুদিনের জন‍্য, একটা চায়ের দোকানও খুলেছিলেন। পরে বৌদিকে পরিত্যাগ করে ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। এখন অবশ্য মাঝেমধ্যে ৭নম্বর রেস কোর্সে ওনাকে দেখা যায়। আমি যেমন তোদের, তোদের বাবাদের কাছেও খুড়ো। ঠিক তেমনই নরেন সবার কাছেই মিত্রো। আমার থেকেও নরেনের খুড়োর গল্পের স্টক অনেক বেশী। ৫৬টা দেশে ৭১ বার ভ্রমণ করেছেন উনি।
বাইরে বৃষ্টি তখনও চলছে। এমন সময় সেই বৃষ্টির মধ‍্য দিয়ে রেনকোর্ট পরে এক ব‍্যক্তি হাজির হলেন। মুখে সাদা দাড়ি, গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা! বুঝতে বাকি রইলোনা ইনিই খুড়োর দাদা। আমি বললাম, এই বৃষ্টিতে গাড়ি আনতে পারতেন, না হলে উবের ধরে নিতে পারতেন। উনি হসে বললেন, আমি ফকির আদমি! গাড়ি কোথায় পাবো! তারপর আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা বিশ্বকাপ দেখছ না! ন‍্যাপলা বলল, সারাদিন কলেজে কলেজে লাইন দিয়েই কেটে যাচ্ছে, রাত জাগার এনার্জি থাকে! ততক্ষণে চা এসে গেছে। নরেন খুড়ো চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বললেন, তোমাদের এখানে শুনছি অনুদান দিয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে? সুনন্দ বললো, হ‍্যাঁ, সব কলেজেই দিতে হচ্ছে। তবে জেইউ লড়েছে আমাদের জন‍্য। নরেন খুড়ো আরেকবার চুমুক দিয়ে বলল, কি জানি বাপু আমার কাছে জেএনইউ আর জেইউ দুটোই সমান! দেশদ্রোহীদের আখড়া মনেহয়! এবারে ন‍্যাপলা তারিনী খুড়োর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার দাদা যে ভক্ত সেটা কই বলেননি তো!
নরেন খুড়ো চা শেষ করে বলল, তোমরা আর্ষভট্টের নাম শুনেছ? আমি বললাম, হ‍্যাঁ উনি শূন্য আবিষ্কার করেছিলেন। নরেন খুড়ো বলল, ঠিক বলেছ, উনি জিরো আবিষ্কার করে বিখ্যাত হয়েছিলেন, আর আমরা জিরো ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়েই বিখ‍্যাত হবার সংকল্প নিয়েছি। তোমরা জিও ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারো। কোনো অনুদান লাগবেনা, যাদের জিও সিম আছে তারা অ্যাডমিশনে ডিসকাউন্ট পাবে। প্রাইম মেমবারদের কোনো পয়সাই লাগবেনা। ন‍্যাপলা বলল, গোগলে তো কই দেখাচ্ছে না? খুড়ো চুপিচুপি বলল, সব জিনিস সবসময় দ‍্যাখা যায়না! ঠিক যেমন ইস্ট জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি ম‍্যাপে দেখা যায়না। ২০৫০এর পর এটাকে সামনে আনা হবে। এই ইনস্টিটিউটের ক‍্যাম্পাস গুজরাট মডেলের অনুকরণে তৈরী করা হয়েছে। সুনন্দ জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা এখানে কোন কোন বিষয়ে পিএইচডি করা যাবে? খুড়ো হেসে বলল, হোয়াটস অ্যাপের ওপর থিসিস লিখলেই পিএইচডি বাধা। এটা পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গন, সমস্ত স্টাডি মেটেরিয়াল হোয়াটস অ্যাপেই দেওয়া হবে। কাগজ কালির কোনো ঝামেলা নেই। নোংরাও হবেনা, স্বচ্ছ ক‍্যাম্পাস!
তবে ড্রেস কোড খুব স্ট্রিক্ট! ফুলপ‍্যান্ট পরা যাবেনা। তবে সাভারকর আর গডসের কথা ভেবে হোমোসেক্সুয়ালিটির ব‍্যাপারে একটু নমনীয়তা দেখিয়েছি। তাহলে তোমরা সবাই তাড়াতাড়ি অ্যাপ্লাই করে ফেলো। ও হ‍্যাঁ, যাদের জিও সিম আছে তাদের আলাদা করে আধার নম্বর লাগবে না। আমি, ন‍্যাপলা, সুনন্দ সহ বাকিরা হাঁ করে খুড়োর কথা শুনছিলাম। টানা বৃষ্টিতে ততক্ষণে সামনের রাস্তা উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, বঙ্গোপসাগরে পরিনত হয়েছে। এমন সময় সেই জলের ওপর একটা সী-প্লেন এসে নামলো। তারপর ফকির নরেন খুড়ো সবার সাথে একটা সেলফি তুলে হাত নাড়াতে নাড়তে প্লেনে উঠে গেল। ন‍্যাপলা অবাক হয়ে তারিনী খুড়োকে বলল, আপনার দাদা কোথায় চললেন? তারিনী খুড়ো বললো, ফ্রান্সে, সেমিফাইনালে জয়ের শুভেচ্ছা জানাতে।

বুকটা এখনও চীন চীন করছে

অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে, সাত গাঁয়ের সবাইকে বড় মুখ করে কালীপিসি বলেছিল, এবারে 'চায়না' যাবো! গত একমাস ধরে মাঠে হাটে ঘাটে সব জায়গায়তেই একই আলোচনা, পিসি এবারে চায়না যাচ্ছে। নিন্দুকেরা আড়ালে আবডালে বলতে শুরু করলো, এদিকে বলে আমি হার্মাদের দুচক্ষে দেখতে পারিনা, আর তাদের দেশেই যাচ্ছে! আর কতো ঢং দেখতে হবে কে জানে! কৌতূহলবশত কেউ কেউ খোঁজ নিলো, পিসি দূরবীন নিয়ে যাচ্ছে কি না! কেউ কেউ জানতে চাইলো লন্ডনে টেমসের পাশে যেমন গান করেছিলেন এখানেও কি হোয়াংহো বা ইয়াংসিকিয়াং-এর পাড়ে দুকলি রবীন্দ্র নজরুল ঝরে পড়বে? পাড়ার বুদ্ধিজীবীরা অবশ‍্য বলতে শুরু করলো, উনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে ওনার সনাতনী তৃনমূলী মতাদর্শ বিনিময় করতে যাচ্ছেন। আর দামাল ছেলেরা স্লোগান তুললো, পিসি যাচ্ছে এবার চীন, বাংলায় আসবে আচ্ছে দিন! পাড়ায় পাড়ায় পোস্টার পড়লো, সিঙ্গাপুর থেকে সিঙ্গাপুরী কলা, জার্মানি থেকে বিএমডব্লিউ আনার পর পিসি এবার চীন থেকে চাউমিন শিল্প আনবে। বেকার যুবকদের আর চপ তেলেভাজার ওপর নির্ভর করতে হবেনা! পাড়ার মোড়ে বড়ো হোর্ডিং টাঙানো হলো চীনের প্রাচীরের ওপর পিসি হাঁটছে। ফাই-হিয়েন আর হিউ-এন-সাং এর ছবি দিয়ে নীচে লেখা অনুপ্রেরণায় পিসির চীন ভ্রমণ।

এদিকে পিসি চায়না যাবে শুনে ভাই ভাইপোদের নানান আবদার। স্নেহের কানন বলল, আমার জন‍্য বেজিং থেকে একটা চাইনিজ সিল্কের তোয়ালে আনবে কিন্তু। চাঁদ'দি বলল, যা গরম পড়েছে! দুটো চাইনিজ হাতপাখা এনো! দারুণ দেখতে ওগুলো! আমি আর সন্ধ্যা'দি সংসদে বসে ক‍্যালকাটা নাস্তা খেতে খেতে হাওয়া খাবো! সুব্বতো তোমার কি চাই? হেসে বলল, অনেকদিনের ইচ্ছা চাইনিজ চায়ের সাথে সিঙাড়া খাওয়ার! এরপর পিসি হাসিমুখে অধিকারীর দিকে তাকিয়ে বলল, তোর জন‍্য চপস্টিক আনবো, তুই বিরোধী প্রার্থী যারা ভোটে জিতবে তাদের পিছনে কাঠি করে উন্নয়নে সামিল করবি! ঘরের এক কোনে বসেছিল কেষ্টা, এমনিতেই তার মাথায় অক্সিজেন কম যায়, তার ওপর গরম পড়েছে! পিসি হেসে জিজ্ঞেস করলো, কি রে কেষ্টা, তোর জন‍্য কি চাইনিজ পেটো আনবো? কেষ্টা মাথা নেড়ে অসম্মতি জানিয়ে বলল, মশা আটকানো যাবেনা! মালের কোনো গ‍্যারান্টি নেই! মালের কথা শুনেই দরজার পাশে বসে থাকা মদন নড়েচড়ে বসে বলল, আমারও চাইনিজ মাল পছন্দ নয়! দিশির মতন টেম্পার নেই! তবে চাটের জন্য চিলিচিকেন আনতে পারো! ভেতরে যখন এই নিয়ে আলোচনা চলছে, বাইরে তখন কয়লা মাফিয়া কালু, তোলাবাজ তোতোন, সিন্ডিকেট সেক্রেটারি শঙ্কর নিজেদের মধ‍্যে মারামারি শুরু করে দিয়েছে। এবারে পিসির সফর সঙ্গী কে হবে এই নিয়ে!

ইদানিং নীলসাদার ভাগ্য যে খুব একটা ভালো যাচ্ছে না! শুধু বিশ্বকাপ নয়, উন্নয়নেরও ভাগ‍্য খারাপ চলছে! এদিকে সবাই পিসির চীন সফর নিয়ে উত্তেজিত থাকলে কি হবে, সীমান্তের ওপার থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। চীনের কোনো প্রতিনিধিই নাকি পিসির সাথে সাক্ষাৎকারে উৎসুক নয়! কেউ পিসিকে পাত্তাই দিচ্ছে না! সুর খারাপ বুঝে পিসি শেষ পর্যন্ত সফর বাতিল করতে বাধ‍্য হয়। মুহূর্তের মধ‍্যে ভেঙে যায় ভাই ভাইপোদের স্বপ্ন! পিসি যতই পাড়ার সবাইকে বলতে থাকে, আমার 'পোচুর' কাজ পড়ে আছে। তাই বেড়ানোর 'পোগ্গাম' বাতিল করলাম‌। পাড়ার লোক কিন্তু সব বুঝতে পেরেছে। দু-এক জায়গায় কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ইংল্যান্ড সফরের সময় পিসির সাঙ্গপাঙ্গরা হোটেল থেকে রুপোর চামচ চুরি করেছিল তাই চীন আর পিসির ওপর ভরসা করতে পারছে না! ওরাও জেনে গেছে পিসির বিদেশ সফ‍র চোরেদের দলবল নিয়েই করে!

আজ সকালে পিসি নরেন মুদির দোকানে গিয়েছিল বাজার করতে। দোকানে ভিড় না থাকায় পিসির সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো মুদির...
- তা গোছগাছ সব হয়ে গেছে? ফ্লাইট কটায়? নাকি চপার নিয়ে?
- খোটা না দিলে কি হচ্ছিল না! জানোই তো 'পোগ্গাম' ক‍্যানসেল হয়েছে!!
- এ বাবা! সত্যিই জানতাম না! তবে দুঃখ পেওনা, আবার সুযোগ আসবে!
- ন‍্যাকা! আমি কখন ট‍্যুইট করে দিয়েছি, আর উনি জানেনা! আমার কি আর আপনার মতন আচ্ছে দিন আছে, যে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবো! কতো স্বপ্ন ছিলো চীনের প্রাচীরের ওপর বসে একটা কবিতা লিখবো! ভাবলেই কষ্টে এখনও বুকটা চীন চীন করছে!

(এটি একটি কাল্পনিক রচনা। বাস্তবের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।)

Friday 22 June 2018

মেসিকে পিসির ফোন

                                            মেসিকে পিসির ফোন
গতকাল কোর কমিটির বৈঠক থেকেই কালীপিসি মটকা গরম হয়েছিল। আর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ৩ গোলে হারার পর রাগ চরমে পৌঁছে যায়। রাতেই তড়িঘড়ি নবান্নে বৈঠক ডাকা হয়। ডাকা হয় সমস্ত নেতা, মন্ত্রী, আমলাদেরও। আর্জেন্টিনার টিমের অফিসিয়ালদের ওপর ভরসা না করেই সিআইডিকে দিয়ে এই হারের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং সিট গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে আনন্দবাবু বিশ্বকাপ কভার করতে রাশিয়া গেছে কিন্তু পিসির সাথে তার সম্পর্ক ইদানিং একটু এগিয়ে না থেকে পিছিয়ে রয়েছে তাই ফোন করে খোঁজ নিতেও পাচ্ছেন না! অগত্যা বাধ্য হয়েই নবান্ন থেকে পিসি সরাসরি ভিডিও কল করে মেসিকে ধমক দিলেন।
কি ব‍্যাপার! খেলায় তো দেখছি আদৌ মন নেই! তুমিও কি কাননের মতন কাউকে জুটিয়ে মাঠের বদলে খাটে কালবৈশাখী ঝড় তুলছো! আমার কতদিনের ইচ্ছা এবারে বিশ্বকাপ জিতলে ওনাকে নিয়ে আর্জেন্টিনা গিয়ে তোমাদের সংবর্ধনা দিতে যাবো! প্রত‍্যেককে আমার লেখা বই উপহার দেব! তাছাড়া ওনার এখনও আর্জেন্টিনা ভ্রমণ করা হয়নি, ২০১৯শের আগেই করতে হবে। পরে যদি সুযোগ না মেলে! আর তোমরা ব‍্যাপারটা মোটেই সিরিয়াসলি নিচ্ছোনা! কতবার বলেছি নীলসাদা জার্সি কেবল পরে খেললে হবেনা! সাথে হাওয়াই চটিও পরতে হবে। এ্যাই ববি, তুমি কালই ১০০জোড়া হাওয়াই চটি রাশিয়াতে পাঠানোর ব‍্যবস্থা করো। আমি তিন আঁচড়ে একটার পর একটা 'আন্তোরজাতিক' মানের ছবি আঁকছি আর তুমি তিন কাঠির মধ‍্যে বল রাখতে পারলেনা! ঠিক আছে চাপ নিও না, আমি ফিফার সাথে কথা বলছি, পরের ম‍্যাচ গুলোতে যেন রাগবির গোল পোস্ট লাগানোর ব‍্যবস্থা করে।
খেলার মধ‍্যে সেই ছন্দ আদৌ দেখতে পাচ্ছি না! ডিফেন্স খুব দুব্বল, অ্যাটাকও ঠিকমতো হচ্ছে না! সাম্পাওলিকে দিয়ে কিসস‍্যু হবেনা! আমি ভাইপোকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, ও বেশকিছু টিপস দেবে। বিশ্বকাপে না খেললেও বিশ্ববাংলার বল নিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে দারুণ। তিন তিনটে গোল খেতে হলো! ডিফেন্স বলে তো কিছু নেই! আমি ভাইপোর সাথে কেষ্টাকেও পাঠাচ্ছি। কিভাবে উন্নয়নকে দাঁড় করিয়ে ডিফেন্স করতে হয় শিখিয়ে দেবে। 'ফরোয়াড' তো দূর, একটা মশাও গলতে দেবেনা! এমনকি রেফারি, লাইস ম‍্যানকেও ডিফেন্সের ধারেকাছে ঘেসতে দেবেনা।
গ্রুপের শেষ ম‍্যাচ নাইজেরিয়ার সাথে। যেভাবেই হোক জিততেই হবে। আমি অধিকারীকে বলে দিচ্ছি - এ্যাই অধিকারী, তুমি আজ রাতের ফ্লাইটে বেরিয়ে যাও। এই কদিনের মধ‍্যে নাইজেরিয়ার স্টাইকারদের ভয় দেখিয়ে দল বদল করিয়ে আর্জেন্টিনার দলে নিয়ে নাও! আর হ‍্যাঁ যাওয়া সময় ১০০ সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়ে যেও। ওরা খেলার সময় রাশিয়ার পুলিশের সাথে মাঠে ডিউটি করবে। আর সুযোগ পেলে বিরোধীদের গোলে বল ঢোকাতে সাহায্য করবে। ঠিক যেমন পঞ্চায়েত ভোটে করেছিল!
তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, খেলা হচ্ছে রাশিয়ায়। হার্মাদের দেশে। এর পেছনে সিপেমের চক্কান্ত থাকলেও থাকতে পারে। তাই 'তাজা ছেলে' এঁড়েবুলকে বলেছি 'গুফ' লীগের শেষ ম‍্যাচের আগে ও বাইক বাহিনী নিয়ে রাশিয়ার পৌঁছে যাবে আর স্টেডিয়ামের বাইরে পাহারা দেবে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলল, বাইক নিয়ে বাংলা থেকে রাশিয়া! কালীপিসি দৃপ্ত কন্ঠে বলল, কেন পারবেনা! গৌতম বুদ্ধ যদি হেঁটে নেপাল থেকে জাপান যেতে পারে তাহলে বাইক বাহিনী কেন বাংলা থেকে রাশিয়া যেতে পারবেনা!
যে পরামর্শ গুলো দিলাম সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলো তবেই সাফল‍্য আসবে! যে পাবলিক তোমাকে আজ ভগবান ভাবে, ভুলে যেওনা তারাই ৩০০বছর পর আমার মন্দির করে পুজো করবে।
ও হ‍্যাঁ, আরেকটা কথা, নাইজেরিয়া সাথে খেলায় মাঠে নেমে সবাই একসাথে 'পাত্থোনা' করার পর আমার এই লেটেস্ট কবিতাটা সবাই মিলে একবার বলবে তাহলে দেখবে জয় আর কেউ আটকাতে পারবেনা!
ধরবো বল, কর্মফল, এগিয়ে চল,
'কন্নার' তোল, হবে গোল, হাল্লাবোল
অফসাইড, দারুণ ফাইট, ডে-নাইট
'ফি-কিক', চারিদিক, রেফারিক ধিক্
নেই ভয়, হবেই জয়, নিশ্চয়
(এটি কাল্পনিক রচনা। বাস্তবের সাথে কোনো মিল থাকলে কাকতালীয় )

Thursday 15 February 2018

কৈলাশে ভ‍্যালেনটাইন

সকাল থেকেই পার্বতী আজ খুব কনফিউশনে আছে। বাবা ভোলেনাথকে গোলাপ দিয়ে আগে ভ‍্যালেনটাইন উইস করবে, নাকি মাথায় দুধ ঢেলে স্নান করাবে। তার ওপর ছেলেমেয়ে গুলো সকাল থেকেই একটার পর একটা আবদার করেই চলেছে। 

কার্তিক সাতসকালে মাঞ্জা দিয়ে ড্রেস করে এসে বলল, মা হাজার কুড়ি ক‍্যাশ দাও তো! এতো টাকা তুই কি করবি! আরে এবারে শিল্প সম্মেলনে গিয়ে একটা শিল্পপতির মেয়েকে পটিয়েছি তাই খরচা একটু বেশি। প্রথমে একটু খরচা হবে, তবে মেয়ে বলেছে ওর বাবা আমার ব‍্যবসায় বিনিয়োগ করবে। পার্বতী হাঁ করে ছেলের কথা শুনছিল। তারপর বলল, সে তো বুঝলাম, কিন্তু অতো টাকা তো এখন আমার কাছে নেই। কার্তিক এবারে আবদার করে বলল, পিসির ভোট প্রচারের জন‍্য মামা গতকাল যে এক কোটি তোমার কাছে দিয়ে গেছে, ওটা থেকেই নাহয় দাও। খবদ্দার কাতু, ঐ টাকার দিকে ভুলেও তাকাবিনা! জানিস তো তোর পিসি কেমন রাফ এন্ড টাফ! আবার গুন্ডা কন্ট্রোল করে! কার্তিক হতাশ হয়ে বলল, মা পিসির জন‍্য এবারও বিনিয়োগটা মনেহয় আটকে গেল!

সরস্বতী মন খারাপ করে বসে আছে দেখে পার্বতী কি ব‍্যাপার জিঞ্জেস করে জানতে পারলো ওর কাছে টাকা নেই। তাই ভ‍্যালেনটাইন-ডে তে ব্রম্মাকে সোনার চেন গিফ্ট করবে প্রমিস করেছিল। পার্বতী বলল, কেন তোর পিসি তো কন‍্যাশ্রীর টাকা দিয়েছে ওটা দিয়ে কিনে দে। সরস্বতী হেসে বলল, ঐ টাকায় কি হবে! ব্রম্ভার চারটে মাথা, চারটে চেন লাগবে। তাছাড়া নারদ কাকু পিসির দেওয়া কন‍্যাশ্রীর টাকা থেকে কমিশন খেয়েছে। পার্বতী সব শুনে বলল, এবছরটা জামাইকে বলে কয়ে ম‍্যানেজ করে নে। সরস্বতী মুখ বাঁকিয়ে বলল, তোমার জামাই পদ্মফুলে বসে থাকে, প্রচুর কালোধনের মালিক, অল্পতে মোটেই খুশি হবেনা। আহাঃ একটা বছরই তো! সামনে বছর তোর পিসি রূপশ্রীর টাকা দেবে তখন দেখবি আর সমস্যা হবে না।

এমন সময় গনেশ কাঁদতে কাঁদতে এলো। মা, মা, আমি আর তোমার বৌমা আজ একটু সেন্ট্রাল পার্কে বসে গল্প করছিলুম। হঠাৎ একদল ছেলে এসে আমাদের ক‍্যালাতে লাগলো। বলে কিনা পার্কে বসে গল্প করা যাবেনা। সত‍্যি করে বল, তোরা কি শুধুই গল্প করছিলিস? গনেশ মাথা নিচু ক‍রে বলল, একটা কিস খেয়েছি। তাবলে ওরা মারবে! আমি আমার বৌকে খেয়েছি, ওদের বৌকে তো খাইনগ। ওদের দলের মেইন পান্ডা পবন কাকুর ছেলে। 

এই প্রথম কোনো ভ‍্যালেনটাইনডে লক্ষীকে বিছানায় শুয়ে শুয়েই কাটাতে হচ্চে। আসলে নারায়ণ এখন দক্ষিণ লন্ডনে নতুন ফ্ল‍্যাট নিয়েছে। ওখানের কর্পোরেশনের জল খেয়েই বিপত্তি। বেচারির ডাইরিয়া হয়ে গেছে। 

ছেলেমেয়েদের সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে পার্বতী স্বামীর জন‍্য গোলাপ আর দুধ দুটো নিয়েই হাজির হলো। বাবা তখন ফুল আউট। পাঁচ ছ বার ডেকেও যখন সাড়া পেলো না তখন নন্দী ভিঙ্গীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল, কি কেস! এতো গাঁজা বা ভাং নয়! কি খাইয়েছিস! তখন নন্দী মিঙমিঙ করে বলল, আপনার বোনের বাড়ি থেকে যে বোতলগুলো সিআইডি উদ্ধার করেছিল সেগুলো ... ভিঙ্গীর দিকে তাকাতে সেও ভয়েভয়ে বলল, কয়েকটা গুজরাট ভোটে বেঁচে যাওয়া বোতলও ছিল ওর সাথে। আসলে বাবার দুরকম খেয়ে ককটেল হয়ে গেছে। পার্বতী ধমক দিয়ে বলল, যা তাড়াতাড়ি লেবু নিয়ে এসে খাওয়া। নন্দী বলল, নাগপুর থেকে আনবো? পার্বতী আরও রেগে বলল, পাতিলেবু লাগবে, কমলা নয়!

অবশেষে লেবু খাইয়ে নেশা কাটিয়ে বাবা উঠে বসলেন। তখন পার্বতী বাবাকে বলল, আমি সত‍্যিই কনফিউশনে, কোনটা তোমাকে আগে দেব! গোলাপ নাকি দুধ? মহাদেব তখন হেসে বললেন, ওরে পাগলী গোলাপের পাপড়িগুলো ছিড়ে ঐ দুধে ছড়িয়ে দে। তারপর ঐ পাপড়ি মেশানো দুধটা আমার মাথায় ঢেলে দে। তাহলেই তোর শিবরাত্রী আর ভ‍্যালেনটাইন, দুটোই একসাথে পালন করা হয়ে যাবে।

Thursday 18 January 2018

রানীর অসুখ

রানীর ভারি অসুখ। সরকারি, বেসরকারি, সুপার স্পেশ‍্যালিটি, কোনো হাসপাতালের ডাক্তারই সারাতে পারলো না। অসুখটা যে কী তা কেউ বলতে পারে না, অসুখ সারাতেও পারে না। সারাবে কী করে? অসুখ তো আর সত্যিকারের নয়। রানীর কেবলই মনেহয়, আসেপাশের সবাই তার বিরুদ্ধে চক্কান্ত, ষড়যন্ত্র করছে। কত রকমের কত ওষুধ রানী খেয়ে দেখলেন, কিছুতেই কিছু হল না। আই ফোন কিনে দেওয়া হলো, হাওয়া বদলের জন‍্য সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হলো, কিন্তু রানীর মানসিক অবস্থার কোনো উন্নতি হ'ল না।

তখন রানী'মা গেলেন ক্ষেপে। তিনি বললেন, "চাবকে লাল করে দাও এই অপদার্থগুলোকে, পেছনে বাঁশ দিয়ে দাও।" এমনি করে চিকিৎসকেরা বিদায় হলেন। এমনকি রানীর পছন্দের চিকিৎসক, কুকুরের ডায়ালিসিস স্পেশালিস্টও ভয়ে আর কেউ রানীর বাড়ির দিকেও যায় না। তখন সকলের ভাবনা হ'ল, তাই তো, শেষটায় কী রানী প‍্যানিকেই মারা যাবেন?

এমন সময় নাগপুর থেকে এক হাফ প‍্যান্ট পরা সন্ন্যাসী এসে বলল, "অসুখ সারাবার উপায় আমি জানি, কিন্তু সে ভারি শক্ত। তোমরা কী সব করতে পারবে?" মন্ত্রী, কোটাল, সেনাপতি, পাত্রমিত্র সবাই বলল— "কেন পারব না? খুব পারব।" রানীর প্রিয় দামালরা বলল, "জান্‌ দিতে হয় জান্‌ দেব!" তখন সন্ন্যাসী বলল, "প্রথমে এমন এক লোক খুঁজে আন যিনি গোমাতার ভক্ত, যিনি সারাক্ষণ বন্ধুদের (মিত্রোঁ) মনের কথা শোনান (মন কি বাত), যে দাঙ্গা হোক বা কৃষক আত্মহত্যা, সব সময়ে, সব অবস্থাতেই খুশি থাকে।" সবাই বলল, "তারপর?" সন্ন্যাসী বলল, "তারপর সেই লোকের হাতে বানানো চা যদি রানীকে খাওয়ানো যায়, তাহলেই সব অসুখ সেরে উঠবে।"

তাড়াতাড়ি রানী মার কাছে খবর গেল। তিনি শুনে বললেন, "আরে, এই সহজ উপায়টা থাকতে এতদিন সবাই মিলে করছিল কী? যাও, এখনি খোঁজ করে সেই চা-ওয়ালা লোকটার কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে এস। জয়, মামা-টিমা-নুষ এর জয়"

চারিদিকে লোক ছুটল, রাজ্যময় 'খোঁজ-খোঁজ' রব পড়ে গেল, অলিতে গলিতে পাড়ার মোড়ে হাইওয়ের পাশে সব জায়গায় রানীর কাতিলানা হাসি মুখের ছবি দিয়ে পোস্টার টাঙানো হলো, কিন্তু সে লোকের আর সন্ধান পাওয়া যায় না। যে যায় সেই ফিরে আসে আর বলে, " কই, তেমন লোকের তো দেখা পাওয়া গেল না!" সবার মুখে এই একই কথা। তখন মন্ত্রীমশাই রেগে বললেন, "এদের দিয়ে কী কোন কাজ হয়? এ মূর্খেরা খুঁজতেই জানে না।" এই বলে তিনি নিজেই বেরোলেন সে অজানা লোকের খোঁজ করতে।

বিহারে গিয়ে তিনি দেখলেন, এক বুড়ো লোক প্রচুর গরুদের চারা খাওয়াচ্ছেন। মন্ত্রী ভাবলেন বাঃ এই লোকটাকে তো বেশ হাসি-খুশি দেখাচ্ছে, ওর তো অনেক ছেলেপুলে, টাকা পয়সাও আছে দেখছি। তাছাড়া এতো গরুকে ভালোবাসে। এর হাতের চা খেলেই রানী নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবেন। মন্ত্রীমশাই এর রকম ভাবছেন, ঠিক এই সময়েই পুলিশ এসে তাকে জেলে ধরে নিয়ে গেল। আশপাশের লোকজনদের জিঞ্জেস করে জানা গেল, লোকটা গরুদের খাবার নাকি নিজেই খেয়ে নিয়েছে। ব্যাপার দেখে মন্ত্রীমশাই মাথা নেড়ে সেখান থেকে সরে পড়লেন।

তারপর তিনি খোঁজ করতে দিল্লি চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে রামলীলা ময়দানে দেখলেন এক বৃদ্ধ লোক শুয়ে আছে আর তাকে ঘিরে প্রচুর লোক জড়ো হয়েছে। কাছে গিয়ে তিনি জানলেন বৃদ্ধটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে অনশন করছেন। বৃদ্ধকে সমস্ত কথা খুলে বললেন মন্ত্রী। বৃদ্ধ বললেন, আমি তো অতো দূর যাওয়ার ধকল সইতে পারবো না! মন্ত্রী ভাবলো এতো আরেক সমস্যা, জোর করে নিয়ে গেলে যদি পথেই পটল তোলে! রানীকে খবর দেওয়া হলো। সব শুনে রানী নিজেই দ‍্যাখা করতে দিল্লি রওনা দিলেন। অবাক কান্ড, রানী দিল্লি পৌঁছে রামলীলা ময়দানে বসে আছে কিন্তু সেই বৃদ্ধর আর কোনো পাত্তা নেই! রানী বেজায় চটে গেছেন।

কিছুদিন পরে আবার রামলীলা ময়দানে ভিড় জমেছে দেখে মন্ত্রী ভাবলেন বৃদ্ধ বুঝি ফিরে এসেছে। অনেক আশা নিয়ে গিয়ে দেখলেন, সেই বৃদ্ধ নয়, এক অন‍্য গেরুয়া পোশাক পরা সাধু নাচানাচি করছে ওখানে। লোকটার মাথাভরা চুল, মুখভরা দাড়ি, সমস্ত শরীর পেঁচিয়ে ঠিক অস্কার পুরষ্কারের ট্রফির মতন অবস্থায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন মাঝেমধ্যেই। তার সামনে রাখা আছে চাল ডাল সাবান শ‍্যাম্পু থেকে নুডুলস। মন্ত্রী দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। ইনি কি সাধু! নাকি মুদি দোকানদার! মন্ত্রী সেই বাবাকে সব কথা খুলে বলল। সব শুনে বাবা বললো, আমার পরিচিত এমন এক লোক আছে, তবে তাকে পাওয়া মুসকিল। আসলে তিনি কখন কোন দেশে থাকে বোঝা মুসকিল! আমি বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। মন্ত্রী ঠিকানা নিয়ে প্রনাম করে উঠতে যাবে তখন বাবা তাকে তার বেশকিছু প্রোডাক্ট প‍্যাকেট দিয়ে বলল, এগুলো রানীর জন‍্য, একেবারে স্বদেশী।

দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়, মন্ত্রী সেই বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। কানাঘুষো শুনতে পায় লোকটা নাকি সার্জিক্যাল স্টাইক করে বিদেশে পালিয়েছে। অবশেষে ছমাস পর দেখা মিলল। ছাপান্ন ইন্চি ছাতি, গায়ে ১০লাখ টাকার কোট, মুখে রানীর মতন শিশুসুলভ হাসি। মন্ত্রী বিনয়ের সাথে তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি যোদ্ধা? তিনি হেসে বলেন, আমি চৌকিদার। মন্ত্রী তারপর রানীর অসুখের কথা তাকে বলতে তিনি বললেন, আমি থাকতে রানীর কোনো ভয় নেই। এই নিন দুটো লাড্ডু, এদুটো রানীর দুহাতে দিয়ে দেবেন। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রানীকে নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসুন। দেরি করবেন না, আমাকে আবার জন্মদিনের কেক কাটতে বিদেশে চলে যেতে হবে।

রানীকে সব কথা খুলে বলতে, রানী তার বাড়িতে চা খেতে যেতে রাজি হয়ে গেল। যদিও প্রথমে একটু ইতস্তত করছিলেন। তারপর দুজনে একান্তে বন্ধ ঘরে চা খেতে খেতে কথা শুরু করলেন। ঘন্টা তিনেক পর যখন দুজনে ঘর থেকে বার হলেন, তখন দুজনের মুখেই হাসি। একজন 'বিকাশ' বলে চিৎকার করছেন তো অন‍্যজন 'উন্নয়ন' বলে চিৎকার করছেন। মন্ত্রী পারিষদ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। রানীকে এতো খুশি আগে কোনোদিন কেউ দেখেনি। শেষে রানীর সাথে উনি একটা সেলফি তুলে টুইট করলেনে। রানী ফেরার পথে সেটা রিটুইট করতে ভুললেন না।

(পুরোটাই কাল্পনিক গল্প)

Friday 12 January 2018

পাগলা দাশু

আজ অভিকে হাসিমুখে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে ঢুকতে দেখে সবাই অবাক! কেষ্টা, নবিনচাঁদ ছুট্টে গেলো অভির কাছে। কেষ্টা জিঞ্জেস করলো, ভাই আজ এতো খুশির রহস্যটা কি? নবিনচাঁদ জিজ্ঞেস করলো, বিশ্ব বাংলার বলটা পিসি কি তোকে দিয়ে দিলো নাকি! অভি কেবল হাসতে লাগলো। দাশু একমনে বেঞ্চিতে ঘসে ঘসে কি একটা লিখছিলো। জগবন্ধু এসে দাশুকে বললো, ব‍্যাপারটা কিরে দাশু, অভি এতো লাফালাফি করছে কেন? দাশু বললো, অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকেই ওর মাথাটা গেছে। মাঝেমধ্যেই গরম হয়ে যায়, তখন এমন লাফালাফি করে। জগবন্ধু বললো, তবে যে ডাক্তার বললো অভি পুরো সুস্থ। দাশু হেসে বলল, ওরম মনে হয়!

অভি ক্লাসে ঢুকতেই জগবন্ধু অভির মাথায় একমগ জল ঢেলে দিলো। শীতেকালে এমনিতেই অভি সপ্তাহে একদিন স্নান করে। তাও গরম জলে। নেহাত তখন পাশে কেষ্টা আর নবিনচাঁদ ছিল, নাহলে জগবন্ধুর জগত ছাড়া হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারতো না। দুজনে মিলে অভিকে জাপটে ধরে রাখে। অভি চেঁচাতে থাকে, হারামজাদাটাকে আজ মেরেই ফেলবো! জগবন্ধু কাঁচুমাচু হয়ে বলতে লাগলো, দাশুই তো আমাকে বললো অভির মাথা মাঝেমধ্যে গরম হয়ে যায়! তাই আমি...। মিনিট দশেক বাদে অভি শান্ত হতে কেষ্টা জিঞ্জেস করলো, কি গুরু কেসটা কি বললে না তো! অভি বুক ফুলিয়ে বললো, আজ আমার পিসি ডক্টর হয়ে গেলো! নবিনচাঁদ উত্তেজিত হয়ে বললো করলো, নিশ্চয়ই হার্ট স্পেশালিস্ট! অভি ঘাড় নেড়ে না বললো। জগবন্ধু বললো, তাহলে ডেন্টিস্ট। পাড়ার মোড়ে পিসির ইয়া বড়ো দাঁত বার করা ছবি টাঙিয়েছে দেখেছি। কেষ্টা জগবন্ধুর দিকে কটমট করে তাকাতেই জগা চুপ হয়ে গেল। শেষে অভিই বলল, আরে এটা ঐ ডাক্তার নয় ডক্টরেট উপাধি দেওয়া হয়েছে। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পিসির 'পোতিভার' সম্মান জানিয়ে এটা দিয়েছে। দাশু এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিল, এবারে সে ফোড়ন কাটলো, তা পিসি কবে ইস্ট জর্জিয়ার উপাধিটা রিটার্ন করলো? অভি দাশুর কথার উত্তর না দিয়েই পিসির গুণকীর্তন করতে লাগলো। পিসি সমাজ সেবা করে, গান করে, কবিতা লেখে। দাশু আবার বলল, এপাং ওপাং ঝপাং। অভি উপেক্ষা করে বলেই চললো, পিসি পাহাড় জঙ্গল নিয়ে লেখা বই, গীতাঞ্জলি কথাঞ্জলী নানান বই আছে, পিসি দারুণ ছবিও আঁকে। দাশু আবার ফোড়ন কাটলো, এখন আর আঁকে না, খরিদ্দার এখন জেলে। এবারে অভির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। রেগে গিয়ে অভি দাশুকে বলতে লাগলো, আমার পিসির পিছনে লাগলে তোমার পিছনে অ্যাটম বোমা ফাটিয়ে দেব। এটা শুনেই নবিনচাঁদ বলল, তোর পিসির অ্যাটমবোমা বিষ্ফোরণের ছবিটা দারুণ।

এমন সময় প্রধানশিক্ষক বিষ্টুবাবু ক্লাসে প্রবেশ করলেন। ঝগড়া বন্ধ করে যে যার জায়গায় চুপচাপ বসে পড়লো। তোমাদের জন‍্য একটা সুখবর আছে। এবার থেকে প্রতিবছর যারা পরীক্ষায় প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় হবে তাদের স্কলারশিপ দেওয়ার হবে। জগবন্ধু, স‍্যারের প্রিয় ছাত্র। তাই দিকে তাকিয়ে বিষ্টুবাবু বললেন, জগবন্ধু মেডেল হাতছাড়া করলে চলবে না! কেষ্টা বললো, স‍্যার হঠাৎ করে এই স্কলারশিপ কি উপলক্ষে চালু হলো? বিষ্টুবাবু বললেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষামন্ত্রীর স্ত্রী গত হয়েছেন, তাই তার স্মরণে এটা উনি চালু করলেন। জগবন্ধু হাতের গাঁট গুনছে দেখে বিষ্টুবাবু জিঞ্জেস করলেন, কি হিসাব করছো? জগবন্ধু আফসোসের সুরে বলল, তিনটে বছর প্রথম হওয়া বৃথা হয়ে গেলো! যদি বছর খানেক আগে এটা চালু হতো...। বিষ্টুবাবু জিভ কেটে বললেন, ছিঃ ছিঃ অমন বলতে নেই! পিছনের বেঞ্চে বসে কেষ্টা আর দাশু ফিসফিস করে কথা বলছিল। বিষ্টুবাবুর চোখ যেতেই উনি কেষ্টাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি আলোচনা চলছে শুনি! তোমাদের তো এ জন্মেআর স্কলারশিপ পাওয়ার আশা দেখছি না! কেষ্ট বলল, স‍্যার খাদ‍্যমন্ত্রীর স্ত্রী মারা গেলে কি স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক প‍্যাকেট করে মিহিদানার প‍্যাকেট দেওয়া হবে? বিষ্টুবাবুর বেতের লাঠি কেষ্টার পিঠে পড়তেই কেষ্টা কাঁদতে কাঁদতে বলল, স‍্যার দাশু আমাকে বলেছে।

বিষ্টুবাবু ক্লাস থেকে বের হতে যাবেন এমন সময় নবিনচাঁদ বলল, স‍্যার আগামীকাল কি স্কুল ছুটি থাকবে? বিষ্টুবাবু রেগে গিয়ে বললেন, কোন দুঃখে! পড়াশোনার নাম নেই, কেবল ছুটি! নবিনচাঁদ ধমক খেয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বলল, না মানে দাশু বলছিল অভির পিসি ডক্টর হয়েছে সেইজন‍্য আগামীকাল স্কুল অফিস কাছারি সব ছুটি থাকবে। স‍্যার যখন নবিনচাঁদকে ধমকাচ্ছিল তখন দাশু পিছনের বেঞ্চে বসে মিচকে মিচকে হাসছিল।

আচ্ছা, দাশু কি সত্যি সত্যি পাগল, না কেবল মিচ্‌‌কেমি করে ?

Monday 11 December 2017

চারমূর্তি

শীত পড়তেই এবছর কোথায় পিকনিক করতে যাওয়া হবে সেই নিয়ে জোর ঝামেলা হাবুল আর প‍্যালার মধ‍্যে। হাবুলের ইচ্ছা বোলপুরে তাই হাবুল বলল, বোলপুর হলো 'কবিগুড়ি'র দ‍্যাশ। ছাতিম গাছের তলে বইস‍্যা কচি পাঁঠার ঝোল আর ভাত, ভাবলেই জিভে জল চইলা আ্যাইসে। তাছাড়া আমাগো মামা হইচে বীরভূমের ডিএসপি, সবাই তাকে দেইখ‍্যা সমীহ কইর‍্যা চলে। প‍্যালা এই শুনে বলল, থাক হাবুল, কেষ্টার হুমকি শুনে তোর মামার যে প‍্যান্ট ভিজে গিয়েছিল সেটা আমরা সবাই দেখেছি। তারচেয়ে বরং কোলকাতার কাছাকাছি নিউটাউন রাজারহাটের আশেপাশে কোথাও একটা করলে হয়। হাবুল বলল, আর জায়গা পেলিনা, মাংসের ঝোল কড়ায় ফুটবে আর হঠাৎ বিশ্ব বাংলার বল গড়িয়ে এসে সব উল্টেপাল্টে দিক আরকি!

এমন সময় ক‍্যাবলা বলল, ঐ তো টেনিদা আসছে। প‍্যালা পিছনের দিকে একবার তাকিয়েই তাড়াতাড়ি চানাচুরের ঠোঙাটা উল্টে পুরোটা গালের মধ‍্যে ঢেলে দিলো। টেনিদা এসে মাথায় চাঁটি মারতেই প‍্যালার মুখ দিয়ে চানাচুর বেরিয়ে পড়লো। টেনি মুখুজ‍্যেকে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নয়! যা এখুনি আমার জন‍্য ঝালমুড়ি নিয়ে আয়। অগত্যা প‍্যালা ঝালমুড়ি আনতে চলল। টেনিদা তারপর হাবুল আর প‍্যালার সব যুক্তি শুনে বলল, পিকনিক করতে হয় এমন এক জায়গায় যেখানে পাড়াহ থাকবে, সমুদ্র থাকবে, ঘন জঙ্গল থাকবে, তা নাহলে অ্যাডভেঞ্চার হয় নাকি! হাবুল বলল, এতো ডেলো, মন্দারমনি আর জঙ্গলমহলের ককটেল, এমন জায়গা বাংলায় কোথাও আছে বলে শুনিনি! ক‍্যাবলা এতক্ষণ সব শুনছিল, এবারে সে বলল, আচ্ছা টেনিদা পিকনিকটা লিলুয়ায় করলে কেমন হয়? টেনিদা গাঁট্টা মেরে বলল, বাংলা, বিশ্ব বাংলায় পরিনত হয়ে গেল আর তুই এখনও লিলুয়ার মায়া ছাড়তে পারলি না!

এমন সময় প‍্যালা বলল, আজকে হাবুলের পিসি ডি-লিট পাওয়ার খুশিতে খাওয়াবে বলেছিল না? টেনিদা প‍্যালার মাথায় একটা জোরে গাঁট্টা মেরে বলল, হতচ্ছাড়া এতক্ষনে মনে পড়লো! আমি তাই এসে থেকে ভাবছি আজ কোথায় যেন একটা খাওয়া আছে। চল তাড়াতাড়ি চল, খিদেটা হঠাৎ আবার বেড়ে গেল। হাবুল বলল, কিন্তু আমাদের পিকনিক কোথায় হবে সেটা তো ঠিক হলো না! টেনিদা এবার রেগে গিয়ে বলল, মেফিস্টোফিলিসের মতন কথা বলিস না হাবুল, খালি পেটে হাজার চেষ্টা করলেও আমার পিকনিকের স্পটের নাম মনে পড়বে না।

হাবুলের বাড়িতে চারমূর্তি হাজির হতেই পিসি গরম গরম আলুরচপ আর বেগুনি খেতে দিলো। যথারীতি টেনিদা বাকিদের একটা করে দিয়ে নিজে সবটাই উদরস্ত করলো। তারপর জল খেয়ে একটা ঢেকুর তুলে বলল, কে বলে বাংলার শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয়! পিসি হেসে বলল, তোমরা একটু বোসো আমি বাকি খাবারের জোগাড় একটু সেরে নিই! হাবুল বাকিদের নিয়ে তখন পিসির স্টাডিরুম ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো। দেওয়ালে সব পিসির আঁকা ঐতিহাসিক ছবি। হঠাৎ ক‍্যাবলা বলল, এই হাবুল সেই অ্যাটম বোম বিষ্ফোরণের ছবিটা দেখছি না! হাবুল বলল, ওটা কদিন আগে পিসি রাষ্ট্রপতিকে উপহার দিয়েছে। প‍্যালা টেবিল থেকে একটা বই হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো, 'এপাং ওপাং ঝপাং'। এটা শুনেই টেনিদা বলল, এদিকে খিদেতে আমার পেট চুঁই চুঁই করছে আর তোরা হরলিক্সের আ্যাড শোনাচ্ছিস! প‍্যালা বলল, আরে এটা অ্যাড নয়, এটা পিসির লেখা কবিতা!

এমন সময় পিসির ঢাক শুনে সবাই ছুটে গিয়ে রান্নাঘরে হাজির হলো। মাজ, মাংস, মিস্টি, এলাহি ব‍্যাপার। প‍্যালা দেখে বলল, এতো 'আহারে বাংলার' স্টল! টেনিদা রেগে গিয়ে বলল, প‍্যালা, তুই একদম বেশি খাবিনা। ব‍্যাটা পিলে রুগী, কাঁচা জল খেলে অম্বল হয়। তারপর টেনিদা নিজেই যথারীতি সিংহভাগ খাবার সাবাড় করে দিলো। এতে বাকিদের যথারীতি খুব রাগ হলো। তাই খাবার শেষে পিসি টেনিদাকে মিস্টি করে ধমক দিয়ে বলল, টেনি ম‍্যাক্সিমাম খেও না, মিনিমাম খাও। টেনিদা হেঁসে বলল, জিআই তকমা পাওয়ার পর নবীন ময়রার রসগোল্লার স্বাদ দ্বিগুণ ভালো হয়ে গেছে।
(পুরোটাই কাল্পনিক গল্প, বাস্তবের সাথে মিল থাকলে কাকতলীয়)