Wednesday 5 October 2016

কালো এটিএম কার্ড

                                                      কালো এটিএম কার্ড
আজ সকালে কার্তিক'দার মোবাইলে SBI থেকে ম্যাসেজ এলো,' Your SBI AC BPJ420 is credited by Rs 15,00,000'. কার্তিক'দা তো দেখে হাঁ! প্রথমে ভাবলো মনেহয় পুজোর আগে বকেয়া DA-টা বুঝি ঢুকলো! তারপর ভালো করে আবার কটা শূন্য আছে গুনলো। নাহ এতোটা DA তো বকেয়া নেই! তাহলে কি ভুল করে অন্য কারোর অ্যাকাউন্টের টাকা চলে এলো!

প্রথমে ঠিক করেছিল ব্যাঙ্কে যাবেনা। পরে মনটা খচখচ করতে লাগলো, হাজার হোক এতো গুলো টাকা! তাই একটু খোঁজখবর নিতে দুপুর ১টা নাগাদ খাওয়া দাওয়া করে মোহনের দোকান থেকে একটা পান গালে পুরে চিবাতে চিবাতে গুটি গুটি পায়ে ব্যাঙ্কের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখলেন হুলস্থূল কান্ড! প্রচুর লোক হাজির। সবারই অ্যাকাউন্টে নাকি টাকা ঢুকেছে। ব্যাপারটা কি সেটা বুঝতে ভিড় থেকে পাশ কাটিয়ে ম্যানেজারের ঘরে ঢুকলেন। ম্যানেজারের সাথে কথা বলে তো কার্তিক'দা একেবারে হাঁ হয়ে গেলো!

ম্যানেজার বলল, বিদেশ থেকে ৬৫ হাজার ২৫০ কোটি কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে। এটা তারই একটা অংশ। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মনে নেই! কার্তিক'দা বলল, হরেন'দা, হাবুলের মা, ওরাও তাহলে টাকা পেয়েছে? ম্যানেজার মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। কার্তিক'দা ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে বাইরে কাউন্টারের সামনে বাগদী পাড়ার লোকগুলো হল্লা করছে কেন? রহিম চাচাকেও দেখলুম ওদের সাথে! ম্যানেজার ফিসফিস করে বলল, 'মশাই চেপে যান! আসলে দলিত আর সংখ্যালঘুদের ১৫০০টাকা করে দেওয়া হয়েছে।'

তারপর ম্যানেজার একটা কুচকুচে কালো ATM কার্ড বার করে কার্তিক'দাকে দিয়ে বললেন, 'এটা রাখুন, এই টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করতে হলে এটা লাগবে। এটা ছাড়া টাকা তোলাও যাবেনা, খরচও করা যাবেনা!' কার্তিক'দা কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখল পিছনে একটা গরুর ছবিও আছে। কার্তিক'দা অবাক হয়ে গরুটির ছবি দেখছে দেখে ম্যানেজার বলল, 'মশাই ওটা ফোটোশপ, আসল গরু নয়!' 'আচ্ছা এটার পাসওয়ার্ড কি?' বলাতে ম্যানেজার জানালেন এটা ভয়েস কোডে খোলে। আপনার ভয়েসটা আমরা এটার মধ্যে সেট করে দেব। আপনি শুধু কার্ডটা পাঞ্চ করে তিনবার 'জয় শ্রীরাম' বলবেন। তাহলেই টাকা বেরিয়ে আসবে।

এবারে ম্যানেজার কার্তিক'দাকে বোঝাতে লাগলেন যে এই ATM কার্ডে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় এটি ব্যবহার করা যাবেনা। এই কার্ডটি ব্যবহার করে পতঞ্জলীর যেকোনো প্রোডাক্ট কিনলে আপনি ফ্ল্যাট ৫০% ছাড় পেতে পারেন। এই কার্ডটি ব্যবহার করে কোনো চায়নিজ প্রোডাক্ট কেনা যাবেনা। পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী মিউজিক অ্যালবামও কিনতে পারবেন না। এটিকে যেকোনো পোশাকের দোকানে ব্যবহার করতে পারেন। ৬-৬০ যেকোনো বয়সের ছেলেদের হাফ প্যান্টে আপটু ৫৬% পর্যন্ত ডিসকাউন্ড। তবে মেয়েদের স্বল্প কাপড়ের পোশাক এটাতে কেনা যাবে না। আপনি দশ সন্তান পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ও হাসপাতালের সমস্ত খরচের উপরেও ছাড় পেতে পারেন এই কার্ড ব্যবহার করে। তবে কন্যা সন্তানের জন্ম হলে কিন্তু ছাড় পাবেন না! এই কার্ডটি আপিন ব্যবহার করে যেকোনো রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। কার্তিক'দা জিজ্ঞেস করল ' মোক্যাম্বোতেও?' হ্যাঁ যেকোনো, তবে কোনো বিফ বা পর্ক আইটেম খাওয়া যাবেনা। আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ যদি কোনো যোগা অনুশীলন কেন্দ্রের সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে তার মাসিক পেমেন্টটাও এই কার্ডের মাধ্যমে করতে পারেন।

তবে কার্ডটিকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মানে স্বচ্ছ রাখবেন আর রিনিউ করার জন্য ব্যাঙ্কে আসার দরকার নেই! কাছাকাছি কোনো মন্দিরের পুরোহিতের কাছে শনি মঙ্গলবারের রিনিউ করালেই হবে। আর প্রতিবার কিছু কেনাকাটা করলে সেই দোকানের মালিকের সাথে এই কার্ডটি হাতে নিয়ে কিন্তু অবশ্যই একটা সেলফি তুলে রাখবেন।

No comments:

Post a Comment