Tuesday 25 October 2016

✍✍✍✍ চারমূর্তী ✍✍✍✍

                                 ✍ চারমূর্তী 
পটলডাঙার চারমূর্তী চলল মিলন মেলায় 'আহারে বাংলা' উৎসবে। 
(ট্রেনে যেতে যেতে। অ্যাক্সিডেন্টের ভয়ে প্রাইভেট গাড়ি আর ভাড়া করেনি ) 

প্যালা = খাবারের মোচ্ছব, ভাবা যায়!

হাবুল = এমন একখান আইডিয়া কেবল আমাগো দিদির মাথা থ্যাইকাই বার হতে পারে।

প্যালা = আচ্ছা টেনিদা, খানে আলুরচপ বেগুনি পিঁয়াজী ডালবড়া পাওয়া যাবে?

টেনিদা = (জানালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেগে গিয়ে ) অমন মোফিস্টোফিলিসের মতন কথা বলিস না প্যালা। আমি এতক্ষণ ভালো ভালো খাবারের কথা ভাবছিলুম আর ব্যাটা দুম করে আলুরচপ নিয়ে হাজির হলো! তোর মাথাটা সত্যিই আলু থাসাতেই ভর্তি।

( মিলন মেলাতে চারমূর্তীর প্রবেশ )

ক্যাবলা = আরিব্বাস! এতো খাবারের দোকান!

টেনিদা = গাল বন্ধ কর ক্যাবলা। মাছি ঢুকে যাবে। আয় আমার পিছনে পিছনে আয়। প্রথমে মাছ দিয়েই শুরু করা যাক! কি বলিস হাবুল?

হাবুল = তাই হোক। তবে আমি আগে একটু জলের বোতলটা ভরে নিই। খেতে খেতে যদি বিশম লাগে!

টেনিদা = হ্যাঁ এটা ঠিক বলেছিস, খাবার আগে 'জল ধর, জল ভর'।

( মাছের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে )

টেনিদা = ইলিশ ভাপা, সরষে পাবদা, ভেটকির পাতুরি, তোপসের ফ্রাই, তেলকই, চিতলের মুইঠ্যা, চিলি পমপ্লেট , দই কাতলা আর তিনটে ফিস ফিঙ্গার।

চারজনে টেবিলে বসে আছে। টেনিদার অর্ডার শুনেই প্যালার মুখ থেকে জল টপে পড়ছিল। ওয়েটার পদ গুলি দিয়ে যেতেই হাবুল ক্যাবলা আর প্যালার প্লেটে একটা করে ফিস ফিঙ্গার তুলে দিয়েই বাকি প্লেট গুলো নিজের দিকে টেনে নিলেন।

প্যালা = এটা কি হলো টেনিদা! তুমি একা এতগুলো পদ খাবে আর আমাদের কপালে মাত্র একটা ফিস ফিঙ্গার!

টেনিদা = (ভেটকির পাতুরিটা গালে দিয়ে ) কতোবার তোকে বলেছি, সবসময় 'মিনিমাম' খাবি। আমার মতন 'ম্যাক্সিমাম' খেলে হজম করতে পারবি না।

হাবুল = (প্যালাকে উদ্দেশ্য করে) টেনিদা তো ঠিক কইসে, তাছাড়া একটা আস্ত ফিস ফিঙ্গার কি কম খাওয়া! (ফিসফিস করে) চেপে যা প্যালা, নাহলে ঝাল গাঁট্টা খেতে হবে।

টেনিদা = ( সবগুলো প্লেট খালি করে ) এই রে! মাছ খাবার পর হঠাৎ খিদেটা বেড়ে গেলো মনে হচ্ছে! চল ক্যাবলা একটু মাংসের আইটেম গুলো টেস্ট করে দেখি!

ক্যাবলা = বলছিলুম কি টেনিদা, একটু চাইনিজ খেলে হতো না?

টেনিদা = না একদম নয়! উরি হামলায় আমার দেশপ্রেম জাগ্রত হবার পর থেকেই আমি সমস্ত চাইনিজ খাবার বর্জন করেছি। তোরা যদি খাস তাহলে তোরা দেশদ্রোহী হয়ে যাবি।

হাবুল = তাহলে চাইনিজ খাইয়া আর কাম নাই! চল অন্য কিছু খাই!

প্যালা = আচ্ছা টেনিদা, থাই ইটালিয়ান বা কন্টিনেন্টাল খাবর তো খাওয়া যেতেই পারে। ওটাতে তো কোনো আপত্তি নাই!

টেনিদা = ব্যাটা পিলে রুগী, গুড়জল খেলে অম্বল হয়। তাও দ্যাখো খাই খাই, বলে কি না খাবে থাই!

( মাংসের স্টলের সামনে গিয়ে )

টেনিদা = কি কি আইটেম আছে?

ওয়েটার = কোয়েল বিরিয়ানি, টার্কি গন্ধরাজ, তন্দুরি কোয়েল, রোস্টেড ডাক, এমু, পর্ক, খরগোশ। কি খাবেন বলুন?

ক্যাবলা = দাদা এটা ফুডস্টল নাকি চিড়িয়াখানা?

টেনিদা = কচি পাঁঠার ঝোল পাওয়া যাবে?

ওয়েটার = সরি স্যার! পাঁঠার আইটেমের জন্য একটা পাঁঠা আমরা রেখেছিলাম বটে কিন্তু কদিন আগেই তাকে কোর্টের নির্দেশে ছেড়ে দিতে হয়।

টেনিদা = তাহলে ঐ কোয়েল বিরিয়ানি চারপ্লেট আর একটা রোস্টেড ডাক দিয়ে দাও।

ক্যাবলা = আচ্ছা টেনিদা, কোয়েল বিরিয়ানি আর পটলডাঙার কাউয়া বিরিয়ানি কি একই!

টেনিদা = দ্যাখ ক্যাবলা, আর একবার যদি এমন অপপ্রচার করিস তাহলে তোর কান টেনে কালীঘাটে পাঠিয়ে দেব কিন্তু!

( বিরিয়ানি খেতে খেতে)

প্যালা = বিরিয়ানির স্বাদটা যেন কেমন! মনেহয় ২টাকা কেজি চাল দিয়ে বানিয়েছে।

টেনিদা = দ্যাখ প্যালা, খেতে না ভালো লাগে আমার প্লেটে দিয়ে দে। কিন্তু কুৎসা করবি না! সমস্ত রান্না পতঞ্জলীর খাঁটি আয়ুর্বেদীক মাল দিয়েই করা হয়েছে। এমনকি সরষের তেলটাও বিশুদ্ধ 'সিঙ্গুর সরষের তেল' ব্যবহার করা হয়েছে। ওরে হাবুল আমি আর উঠতে পারছি না। তুই মিস্টির স্টল থেকে গোটা কুড়ি ল্যাংচা নিয়ে আয় তো!

( হাবুল ২০টা ল্যাংচা নিয়ে এলো)

প্যালা = এর পরেও ২০টা ল্যাংচা খাবে!

টেনিদা = ( মিষ্টির প্লেটটা থেকে শেষ ল্যাংচাটা গালে পুরে আঙুল চুসতে চুসতে ) আমি একটু বেশি খাই বলে তোদের হিংসে হয়, তাই না রে!

হাবুল = আরে না না! তুমি আর এমনকি বেশি খাও! পরের বছর আবার সবাই মিলে খেতে আসা হবে। আর আমি যেহেতু এত বছর পর টেটে পাশ করেছি তাই পরের বছর সব খরচ আমার।

টেনিদা = (চিৎকার করে ) লা গ্ল্যান্ডি ... ইয়াক ইয়াক।

No comments:

Post a Comment