Tuesday 4 October 2016

দেবীর আগমন

                                      দেবীর আগমন
দেবী আগে থেকেই হোয়াটস অ্যাপে খবরটা পেয়ে গিয়েছিল যে এবারে পুজোর ছুটি পঞ্চমী থেকেই, তাই আগে থেকেই প্যাকিং শুরু করে দিয়েছিল। কার্তিকের কলেজ এমনিতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ আর গণেশের স্কুল তো ডেঙ্গুর জন্য একমাস ধরে ছুটি। সরস্বতী খুব খুশী, এবারে টেট পরীক্ষায় পাশ করেছে। তবে দেবীর একটাই আফসোস, নেশা খোর বাপটা যদি টাকা পয়সা গুলো চিটফান্ডের পিছনে না ওড়াতো তাহলে হয়তো কিছু টাকা অনুদান দিয়ে মেয়ের চাকরির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যেত। তবে লক্ষ্মীর মনটা খারাপ! আই ফোন সেভেন কিনবে ঠিক করে রেখেছিল। তখন কি জানতো যে শিল্প চাষ দুটোরই ! ওর আসার একদম ইচ্ছে নেই!
পোলাপান নিয়ে দেবী পাহাড়ে ল্যান্ড করতেই বুঝতে পারলেন আবহাওয়া ভালো নয়! আকাশ গুরুং গুরুং করছে। মনে মনে নারদকে দুটো কাঁচা খিস্তি দিয়ে বললেন, 'হতচ্ছাড়াটা বলল কোনো সমস্যা হবেনা! পাহাড় জঙ্গল সবই এখন দাঁত ক্যেলিয়ে হাসছে। চারিদিকে কেবল উন্নয়নের জোয়ার! ব্যাটা ঢপবাজ। এখন বুঝলাম ব্যাটা ভুঁইয়ার সাথে কেন এতো ফেসবুকে চ্যাট করতো!" বাধ্য হয়েই একরাত ডেলোতে কাটিয়ে পরেরদিন রওনা হবেন স্থির করলেন।
সকালে উঠে আবার আরেক ঝামেলা! লক্ষ্মী আর সরস্বতী দুই বোনে ঝগড়া লেগে গেছে। লক্ষ্মী বলছে BMW তে যাব, আর সরস্বতীর বায়না VOLVO। দুর্গা যখন দুই বোনের ঝগড়া সামলাতে ব্যস্ত, তখন কার্তিক তার রয়্যাল এনফিন্ড স্টাট দিয়ে গণশাকে পিছনে নিয়ে বলল, ' তোমাদের ঝগড়া শেষ হলে তোমরা এসো! আমরা এগোলাম"। অনেক কষ্টে দুই বোনকে বুঝিয়ে শেষে OLA বুক করে দেবী রওনা দিলেন। মাঝ পথে হঠাৎ কার্তিকের ফোন, " মা, বাইকের তেল শেষ! পাম্পের লোক বলছে হেলমেট না থাকলে তেল মিলবে না! আমি আমাজনে একটা হেলমেট বুক করেছি। ওটা আসলেই তেল ভরে বেরিয়ে পড়বো। দেরি হলে চিন্তা করো না!"
দূর্গা কোলকাতা পৌঁছে জানলো যে তার আসতে দেরী হচ্ছে দেখে দিদি প্যান্ডেল উদ্বোধন করা শুরু করে দিয়েছে। দূর্গা রেগে গিয়ে তখন নবান্নে ফোন লাগালেন, 'কি ব্যাপার কি! আমি আসার আগেই উদ্বোধন হয়ে গেলো!" ওপার থেকে উত্তর এলো,'আমাকে এবছর ২১৪টা (২১১+বোনাস ৩) প্যান্ডেল উদ্বোধন করতে হবে। তাছাড়া আমরা কোনো কাজ ফেলে রাখা মোটেই পছন্দ করিনা। আমরা সবসময় রেডি থাকি রে"! দেবী মনে মনে ভাবলো, স্বর্গ থেকে মর্তে আসতে আমার কি তাহলে ৩০০বছর লেগে গেলো! তারপর দেবী বলল,'আমার পুজো, আমারই পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন হলো না! এটা কিন্তু অন্যায়।" ওপার থেকে উত্তর, 'কুৎসা করবেন না! রাজ্যে গণতন্ত্র আছে! আইন আছে! আইন আইনের পথে চলে! ৩৪ বছর আপনি আপনার ইচ্ছে মতন চলেছেন, আর নয়! ভুলে যাবেন না আমিও শীঘ্রই সেন্ট উপাধি পেতে চলেছি!"
হতাশ হয়ে এবারে দুর্গা বলল,' কোন অসুরটাকে মারবো সেটা তুমিই তাহলে ঠিক করো! একটা যদিও বা জেলে বন্দি ছিল সেটাকেও জামিন করিয়ে দিলে! আরেকটার তো এমনিতেই অক্সিজেন কম যায়! ও ব্যাটা তো লড়তেও পারবে না! আবার নতুন নিয়ম করেছ, সিন্ডিকেট থেকে যে অসুর নিয়ে কাজ চালিয়ে তাতেও হাজার ঝামেলা! কোন মালটা মিনিমাম আর কোনটা ম্যাক্সিমাম সেটা বুঝতেই তো বছর ঘুরে যাবে!' ওপার থেকে, " আপনাকে বেশি চাপ নিতে হবেনা! আমি অধিকারীকে বলে দিয়েছি, ও অটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে অসুর অপহরণ করতে। পেলেই ফোন করবে।"

No comments:

Post a Comment