Tuesday 25 October 2016

✍✍✍✍ চক্কান্তের গন্ধ ✍✍✍✍

                                  ✍ চক্কান্তের গন্ধ 
মা মারা যাবার পর ভাইপো ছাড়া কালীপিসির সাত কুলে আপন বলে কেউ নেই! রক্তের সম্পর্কের ভাই কার্তিক গনশা আছে বটে, তবে তাদেরকে পিসি বেশি পাত্তা দেয়না। পিসি জানে তারা সারাক্ষণ পিসির সম্পত্তি হাতানোর জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। পিসি তার ভাইয়েদের কান্ড দেখে তার চিটফান্ডের টাকা থেকে ছবি বিক্রির টাকা, সোনার তরী হোটেল, কবিতার বইয়ের ল্যয়ালিটি স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি এমনকি নতুন আইফোন-৭ টাও ভাইপোর নামে উইল করে দিয়েছে। কদিন আগে পিসির ভিক্ষা-মা মারা গেলেন। তারপর থেকে পিসি আরও একা হয়ে পড়েছে। তাই সারাক্ষণ পিসি তার ভাইপোকে আগলে রাখেন।

ছোটবেলা থেকেই ভাইপোও পিসি ন্যাওটা। সারাদিন পিসির নীল-সাদা আঁচল ধরে গোটা পাড়া ঘুরে বেড়াতো। পাড়ার কেউ ভাইপোর নামে অভিযোগ করলে পিসি তার বাড়ি গিয়ে ঝগড়া করে আসে। রীতিমতো পাড়ার সবাইকে হুমকি দিয়ে রেখেছে, ' যদি কেউ ভাইপোর নামে কোনো কুৎসা অপপ্রচার করে আমি কিন্তু চাবকে লাল করে দেব।' এমনিতেই পাড়ার লোকজন জানে কালীপিসি গুন্ডা কন্ট্রোল করেন, তাই পিসির সাথে কেউ ঝামেলায় যায়না। একবার বে-পাড়ার একটা ছোকরার সাথে ভাইপোর কথা-কাটাকাটি হচ্ছিলো। হঠাৎ ছোকরাটি ভাইপোকে সপাটে চড় মারাতে পিসির গুন্ডারা সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে দিয়েছিল।

দুদিন আগে ভাইপো জুলফির সিনেমা দেখে তার এক বন্ধুর সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিল। রাস্তার উল্টোদিক থেকে আসা এক গোয়ালার সাইকেলের সাথে হঠাৎ ধাক্কা! গোয়ালার সাইকেলের ক্যারিয়ারে দুটো দুধ ভর্তি জার থাকায় ভাইপোদের সাইকেলটা ধাক্কা মেরেই পাল্টি খেল। চোট বিশেষ হয়নি! চোখের কোলে একটু ছিলে গেছে আর হাতটা মুচড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার কিছু লোকে ভাইপোকে নিয়ে বেলতলার পীর বাবার কাছে নিয়ে ছুটলো। মুহূর্তের মধ্যেই খবরটা ছড়িয়ে পড়তে গোটা পাড়া বেলতলায় জড়ো হলো। পিসিও পড়ি মরি করে বেলতলায় ছুটে এলেন। পীর বাবা যখন পিসিকে বলল যে, চিন্তার তেমন কিছু নেই! তখন পিসি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। তারপর দুটো বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস নিয়ে উপস্হিত পাড়ার সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, গন্ধটা বড়ো সন্দেহ জনক!

এমনিতেই পিসির সন্দেহের শুচিবাই জিনটা বেশ প্রখর! লোকে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পার্ক সার্কাসের পচা গন্ধ পায় না। কিন্তু উনি কালীঘাট থেকে কালিংপঙের চক্কান্তের গন্ধ পান। পোলার বিয়ারও পিসির কাছে শিশু। তবে হ্যাঁ, উনি কেবল 'চক্কান্ত'এর গন্ধই পান। অন্য কোনো গন্ধে পিসির অলফ্যাক্টরি লোব কাজ করেনা। পিসি গম্ভীর ( গৌতম নয় ) ভাবে বলল, তদন্ত করে দেখতে হবে এটা ম্যান-মেড দুর্ঘটনা কিনা! সঙ্গে সঙ্গে পিসির এক অপহরণ স্পেশালিস্ট সাগরেদ বলল, দিদি বলেন তো গোয়ালা মালটাকে তুলে আনি! পিসি প্রথমে খোঁজ নিলেন, গোয়ালাটা কি লাল পোশাক পরেছিল? যদি না পরে থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে দ্যাখো দুর্ঘটনার দিন ওর চৌত্রিশ গুষ্টির কেউ লাল পোশাক পরেছিল কিনা? এই কেষ্টা, যে ছোকরাটি ভাইপোকে সাইকেলে করে নিয়ে আসছিল ওর মুখটা শুঁকে দ্যাখ তো! গুড়জলের গন্ধ বার হচ্ছে কিনা? কেউ নিশ্চয়ই ওকে 'চক্কান্ত' করে কিছু খাইয়ে দিয়েছে! কিন্তু পিসির কোনো প্রেডিকশানই মিলল না!

পিসির এই পাগলামো দেখে হাসতে হাসতে পাড়ার লোকজন যে যার কাজে ফিরে গেলেও কালীপিসি কিন্তু তখনও বেলতলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এ সি পি প্রদ্যুম্নের মতন হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলতে লাগলো, কুচ তো গড়বড় হ্যায় ! চক্কান্ত ! চক্কান্ত !
পীর বাবা, পিসির দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইপোর অসুখের ঔষধ আমার কাছে আছে, কিন্তু পিসির রোগের ঔষধ আমার কাছে নেই ...

No comments:

Post a Comment