Thursday 22 September 2016

জমি আন্দোলনের নবজাগরণ

                              জমি আন্দোলনের নবজাগরণ
কালীপিসি সিঙ্গুরের ৪০০০ বর্গ ফুট চিতা থেকে ঘোষণা করলেন " কথা দিয়েছি, কথা রেখেছি"। অমনি 'হর্ষধ্বনি'তে ফেটে পড়েছিল কার্শিয়াং থেকে কালীঘাট। ৯৯৭ একরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্হিত ছিলেন বেশ কিছু লুপ্তপ্রায় প্রাণী। এরা যে বেঁচে আছে সেটা এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান নাহলে রাজ্যবাসী জানতেও পারতো না! জ্বলন্ত চিতায় দাঁড়িয়ে হুমকির সুরে শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করলেন, সাত দিন সময় দিলাম, এর মধ্যে জমি নিতে হয় নিন। আজ সাতদিন অতিক্রান্ত। কোনো শিল্পপতি ওনার হুঙ্কারের 'সনমান' জানিয়ে সাড়া দিয়েছে বলে কোনো খবর নেই। ওনার অপহরণ মন্ত্রীও জার্মানী থেকে BMW এর কর্মকর্তাদের অপহরণ করতে ব্যর্থ।

তবে উনি জমি আন্দোলনের নবজাগরণ ঘটিয়ে অনিচ্ছুক(!) কৃষকদের জমি ফেরত দিয়ে বাংলায় আবার 'সবুজ বিপ্লব' ঘটানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, তা কিন্তু আজ অন্য মাত্রা নিয়েছে। ওনার জমি আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় আজ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকেরা তাদের অধিগৃহিত জমি ফেরত পাবার স্বপ্ন নতুন করে দেখছে। তারা আজ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, সিঙ্গুরের কৃষক যদি টাকা নিয়েও জমি ফেরত পায় তাহলে আমরা পাবোনা কেন! শুভ কাজে মিষ্টি মুখ করতে হয়, তাই ল্যাংচা হাবের জমি দিয়েই এই কর্মসূচীর শুভ সূচনা হয়।

ক্রমে ডেঙ্গুর থেকেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই জমি ফেরত পাওয়ার আন্দোলন। পুরুলিয়ায় রঘুনাথপুর ১ ব্লকের দুরমুট মৌজায় শিল্পতালুকের জন্য অধিগৃহিত ১,৮৯৭ একর জমি এবারে ফেরত চাইছেন কৃষকেরা। আন্দোলনের জোয়ার শিলিগুড়িতে পৌঁছে গেছে, দু এক সপ্তাহের মধ্যেই পাহাড়ে পৌঁছে যাবে মনেহয়। আন্দোলন যে কেবল পাহাড়মুখী, তা কিন্তু নয়! কোলকাতামুখীও বটে। নিউটাউন রাজারহাটের কৃষকেরাও এই জমি আন্দোলনের কর্মযঞ্জে ইতিমধ্যেই সামিল হয়েছেন।

এরপর যদি এই ঐতিহাসিক আন্দোলন যদি সিলেবাসে ঢোকে তাহলে তো আর কথাই নেই! একেবারে খাপে খাপ, মান্নার বাপ! ইডেনের বাইশ গজও একদা উর্বর দোফসলা জমি ছিলো। তাই ক্লাব হাউসের নিচেই মঞ্চ বেঁধে অনশনের টেস্ট ম্যাচ শুরু হয়ে যাবে।
এরপর রাজ্যের যেখানে যত অধিগৃহিত সরকারি জমি আছে, সেখানে সেখানেই জমিদাতারা বিক্ষোভ করবেন জমি ফেরতের জন্য। কারণ আপনিই ওদের এইভাবে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে শিখিয়েছেন। তাই এই সমস্যার মুখোমুখি আপনাকে প্রতিনিয়ত হতেই হবে, তা আপনি 'ইচ্ছুক' হন বা 'অনিচ্ছুক'! অবশ্য এতো কিছুর পরেও আপনি স্বভাবসিদ্ধ ডোন্ট-কেয়ার অ্যাটিচিউডে, এসব 'ছোট্টো' সমস্যায় 'আমারা সবসময় রেডি থাকি রে' বলতেই পারেন!

কোনদিন সকালে কিছু কৃষককে যদি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে, তাদের খাল পাড়ের জমি ফেরত পাওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখেন তাহলে আশ্চর্য হবেন না! পিসি কি তখন ঐ অধিগৃহিত জমি ফেরত দেবে! নাকি পিসি কোনো 'অলৌকিক' শক্তিবলে অধিকৃত 'অবৈধ' জমিটিকে বৈধ্য করে নেবেন! আসলে দেবীরা (ঠাকুর) সবই পারেন .....

No comments:

Post a Comment