Monday 19 September 2016

বোতলের দৈত্য

                                     বোতলের দৈত্য 

নিমাই'দার বাংলার দোকান থেকে কেষ্ট'দা প্রতিদিনের মতন আজও একটা বাংলার বোতল কিনে বাড়ি ফিরল। আজ কেষ্ট'দার কি হলো, কে জানে! মাত্র একটা বোতলেই ফুল আউট! নেশার ঘোরে খালি বোতলটার গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে কি সব বলছিল যেন। হঠাৎ বোতলের মধ্যে থেকে ধোঁয়া বার হতে লাগল। তারপর সেই ধোঁয়ার ভিতর থেকে একটা দৈত্য বেরিয়ে এসে বলল " হুকুম করো আকা, আমি আপনার অনুগত দাস।" কেষ্ট'দা তো দেখে হ্যাঁ হয়ে গেলো!

পরবর্তী কথোপকথন .....

কেষ্টদা = তুমি কে বাওয়া???

দৈত্য = আমি বোতলের দৈত্য। আপনার অনুগত দাস।

কেষ্টদা = যাহঃ কেলো! এতদিন জানতুম প্রদীপ ঘসলে দৈত্য বার হয়। এখন দেখছি বোতল ঘসলেও দৈত্য আসে!

দৈত্য = এটা পরিবর্তনের যুগ। এখন সবই সম্ভব।

কেষ্টদা = তোর মুখটা কতোকটা মদনার মতন লাগছে! আচ্ছা আমি যা বলবো তুই সব শুনবি? কই দেখি আমার জন্য একটা বাংলার বোতল নিয়ে আয় দেখি!

দৈত্য = (পকেট থেকে একটা একটা বাংলার বোতল বার করে কেষ্টদার হাতে দিয়ে) চাট কিছু লাগবে স্যার!

কেষ্টদা = ছোলা ভাজা আর কাঁচালঙ্কা হলেই চলবে। অনেকদিনের ইচ্ছা বারে বসে গান শুনে শুনে মাল খাবো। জুট মিলটা লক আউট হওয়ার পর থেকেই হাতে আর একটিও পয়সা নেই! সখটা আর এ জন্মে পূরণ হলো না!

দৈত্য = আপনি চাইলেই এখুনি গানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি!

( সঙ্গে সঙ্গে মিউজিক সিস্টেম হাজির। ভোজপুরী গান চলতে লাগল। কেষ্টদা বোতলটা খুলে পেগ বানাতে যাবে এমন সময় দৈত্য কেষ্টদার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে নিলো)

দৈত্য = স্যার আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমিই পেগ বানাচ্ছি।

কেষ্টদা = (দৈত্যের পেগ বানানো দেখে) ভাই তুমি এত 'বিন্দু বিন্দু করে' মেপে মেপে পেগ বানাচ্ছো কেন?

দৈত্য = আমি সবাইকে বিন্দু বিন্দু করেই সিন্ধু দর্শন করাই স্যার। একটা অনুরোধ ছিল স্যার! আসলে আমার সামনে কেউ বাংলা খেলে আমার গলাটা কেমন শুকিয়ে যায়। তাই যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার সাথে আমিইও পেগ দুই মারি!

কেষ্টদা = এতে আবার পারমিশনের কি আছে! মদ সবসময় মিলে মিশে ভাগ করে খেতে হয়। এতে একটা 'উৎসবের' পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

(পেগ দুই খাবার পর আরও নেশা চড়ে গেলো কেষ্টদার)

কেষ্টদা = আমার দাদার সিন্ডিকেটের ব্যবসা, প্রচুর পয়সা। কিন্তু শালা লোকের কাছে কেঁদে বেড়ায়, বাপের '৩৪' লাখ দেনা শোধ করতেই নাকি ওর সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে!

দৈত্য = ( আক্ষেপের সুরে ) আমার দিদিও আমাকে আর দেখেনা। ২২মাস টানা বোতল বন্দি ছিলাম। একদিনও দেখা করতে আসেনি! সে যাই হোক আপনি চাইলে আপনারও একটা অফিস করে দিতে পারি মিডল্যান্ড পার্কে!

কেষ্টদা = জুট মিলের কাজটা যেদিন চলে গেলো, সেই সন্ধ্যায় বৌ তল্পিতল্পা বেঁধে মেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়ি গিয়ে উঠলো। তিন মাসে একটাও ফোন করলো না! পাশের বাড়ির চম্পা বৌদি আগে আমাকে দেখে কি ঢলানি মারতো! বৌকে লুকিয়ে কতো গিফ্ট কিনে দিয়েছি। যেদিন শুনলো আমার কাজটা নেই, একবারও আমার দিকে ফিরেও চাইলো না! ( হঠাৎ দৈত্যের চোখ ছলছল করে উঠলো ) কি হলো তুমি কাঁদছো কেন?

দৈত্য = না ও কিছু নয়! পিয়ালীর কথা মনে পড়ল।

কেষ্টদা = ওপাড়ার হারুদা, ছেলের বিয়ে দিলো ধুমধাম করে। কতো লোক খেলো! আমার ছেলেটার মেয়েটার যদি অমন যাঁকজমক করে বিয়ে দিতে পারতুম! শালা কন্যাশ্রীর টাকার পুরোটাই মেরে দিলো পঞ্চায়েত প্রধান!

দৈত্য = যদিও আমি এখন আর আগের মতন প্রভাবশালী নেই নেই! এখন একটু অভাবশালী তবুও চিন্তা করবেন না স্যার! আপনার মেয়ের বিয়েতে ২৫০০টাকার প্লেট হবে। (পকেট থেকে দুটো কাগজ বার করে ) এই নিন আপনার মেয়ের বিয়ের মেনুকার্ড আর ডেলোর বাংলোতে হানিমুনের টিকিট।

কেষ্টদা = মেয়ের বিয়ের জন্য যখন এতকিছু করলেন, তখন একটা ভালো সরকারি চাকুরে ওয়ালা ছেলে খুঁজে দিন না! রাজ্য সরকার নয়! কেন্দ্রীয় সরকার। DAএর জন্য সংসারে অশান্তি হোক আমি চাইনা। ঐ কেন্দ্রীয় সরকারের যেকোনো ডিপার্টমেন্ট হলেই হবে। আর সিবিআই হলে তো কোনো কথাই নেই! সোনার টুকরো জামাই হবে।

সিবিআই এর নাম শুনে দৈত্যের প্যানিক অ্যাটাক হলো। দৈত্য ধোঁয়া হয়ে আবার বোতলে ঢুকে গেলো।

No comments:

Post a Comment