Monday 19 September 2016

বাবা বিশ্বকর্মার বঙ্গে পদার্পণ

                               বাবা বিশ্বকর্মার বঙ্গে পদার্পণ
স্বর্গ থেকে ফ্লাইটটা যখন দমদমে ল্যান্ড করলো তখন এয়ারপোর্ট সাংবাদিকে পুরো ঠাসা। বিতনু আবাপে লাইভ কমেন্ট্রি করছে " এই মাত্র স্বর্গের ফ্লাইট ল্যান্ড করল, হ্যাঁ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এক হাতে ঘুড়ি আর অন্য হাতে লাটাই নিয়ে নেমে আসছেন স্বয়ং বাবা বিশ্বকর্মা। হ্যাঁ সুমন, উনি এবারে নবান্নের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। হ্যাঁ উনি নবান্ন থেকে পাঠানো BMW তে উঠলেন।" নবান্ন আজ বিশ্বকর্মার আগমনে সেজে উঠেছে। সেখানেও সাংবাদিকদের উফছে পড়া ভিড়। নবান্নের অফিসিয়াল রির্পোটার নিরাশাবুল সেখান থেকে লাইভ কমেন্ট্রি দিচ্ছে " হ্যাঁ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বিশ্বকর্মাকে, আমাদের মাননীয়া অভ্যর্থনা করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থাই করে রেখেছেন। হ্যাঁ সুমন, এই মাত্র বিশ্বকর্মা নামলেন। চারিদিকে পুষ্প বৃষ্টি হচ্ছে। লাউড স্পিকারে বাজছে, যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে লাটাই তো আমার হাতে। মনেহয় এবারে সত্যিই রাজ্যে শিল্পের জোয়ার আসতে চলেছে। হ্যাঁ সুমন, উনি লিফ্টে উঠলেন ১৩ তলার উদ্দেশ্যে"।

বিশ্বকর্মা মাননীয়ার অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুড়ি ওড়াতে। প্রথমেই কোলকাতার কাছেই সল্টলেকে গেলেন। ঘুড়ি লাটাই নিয়ে গাড়ি থেকে বার হতেই সদ্য ছাড়া পাওয়া কাউন্সিলর হাজির। হুমকির সুরে বললেন " শুধু ঘুড়িই ওড়াবেন! আগে কিছু হাজারের পাত্তি ওড়ান!" বিশ্বকর্মা অবাক হয়ে বললেন "তুমি কে বাবা!" কাউন্সিলর তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিকে তাকিয়ে বললে " এ কে শান্তি গোপাল! ঘাটের মড়াটা আমার রেপুটেশান সম্পর্কে কিছুই জানেনা দেখছি!" তখন এক চ্যালা বলল " দাদার ফিক্স রেট, লোকালদের মিনিমাম আর ফরেনারদের ম্যাক্সিমাম। আপনি কোথাকার মাল?" বিশ্বকর্মা ঘুড়ি লাটাই গুড়িয়ে নিয়ে বলল " আমি দুটোর কোনোটিও নই।"

এরপর বিশ্বকর্মা নিউটাউনে গেলো। সেখানে ঘুড়ি বার করতেই ভজাই এসে বলল "ঘুড়ি যদি ওড়াতেই হয় তাহলে আমাদের সিন্ডিকেট থেকে ঘুড়ি কিনে ওড়াতে হবে। এটাই দাদার নির্দেশ।" বিশ্বকর্মা এবারে ঠিক করলেন গঙ্গার ধারে ঘুড়ি ওড়াবেন তাই তিনি বন্দর এলাকায় গেলেন। সেখানেও সমস্যা! লোকাল এক মন্ত্রীকে অনুরোধ করতে তিনি বললেন "আমি এসব ছোটো ব্যাপারে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করিনা।" কোথাও ঘুড়ি ওড়াতে না পেরে বাধ্য হয়ে বিশ্বকর্মা মাননীয়াকে সব কিছু ওয়াটস অ্যাপ করে জানালেন। মাননীয়ার রিপ্লাই দিলেন " আপিন জেলায় জেলায় ঘুরে চেষ্টা করুন। আমাদের ল্যান্ড ব্যাঙ্কের জমিতেও চেষ্টা করতে পারেন।" বিশ্বকর্মা মাননীয়ার নির্দেশে জেলা সফরে বেরিয়ে পড়লেন।

বীরভূমে গিয়ে শান্তিনিকেতনে শান্তিতে একটু ঘুড়ি ওড়াবেন ভাবলেন কিন্তু তা আর হলো কই! বীরভূমের বাতাসে তো অক্সিজন কম! বিশ্বকর্মার ঘুড়ি আবার কম অক্সিজেনে ওড়ে না। পুরুলিয়া বাকুড়ায় আবার মাওবাদী ফতেয়া। ঘুড়িতে AK47 এর ছবি থাকতে হবে। মালদার কালিয়াচকে তো ঘুড়ি টেস্ট করে দেখতে হবে ঘুড়িটা হিন্দু না মুসলিম! তারপর ওড়ানোর সিদ্ধান্ত। দার্জিলিং এর আকাশ তো হঠাৎ হঠাৎ গুরুং গুরুং করে। তাই ওখানেও ঘুড়ি ওড়ানো যাবেনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাঠে তো প্রচুর কেউটের উপদ্রব। তাও উনি চেষ্টা করলেন কিন্তু কোথা থেকে একটা এঁড়ে (বুল) এসে এমন গুঁতো মারল যে ঘুড়ি লাটাই সব লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। মুর্শিদাবাদে তো লাটাই এর মাঞ্জা দেওয়া সুতোর জন্য মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেলো! বলে কিনা এই ধারালো সুতো আসলে মানুষ খুন করার চক্রান্ত! শেষে মেদনীপুরে গিয়ে যদিও বা ঘুড়ি উড়ল, মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঘুড়িটা কে অপহরণ করে নিলো!

অবশেষে কোথাও ঘুড়ি ওড়াতে না পেরে বিশ্বকর্মা হতাশ হয়ে নবান্নে ফিরলে মাননীয়া হাসি মুখে বললেন "ঘুড়ি ওড়াতে গেলে জায়গা নিজেকই খুঁজে নিতে হবে। প্রয়োজনে জমির মালিকদের আদর করে বলুন, দাদা একটু ঘুড়ি ওড়াবো! আপনি খামোখা এতো ছোটাছুটি করলেন। সিঙ্গুরে গেলেই তো পারতেন! ওখানে প্রচুর জমি পড়ে আছে!" বিশ্বকর্মা হেসে বললেন " ওটা তো অবৈধ।"

No comments:

Post a Comment