Wednesday 26 April 2017

গরুর রচনা

নরেন স্কুলে প্রতিদিন একটি রচনাই মুখস্থ করে যায়। আর সেটা দিয়েই সব রচনা দিব‍্যি চালিয়ে দেয়। আসলে এই গুণটা তার জিন সূত্রে পাওয়া। সেই ঘটনাটা মনে আছে তো যেখানে একটা ছেলে স্কুলে কেবল কুমীরের রচনা মুখস্ত করে যেত। আর শিক্ষক তাকে যে রচনাই লিখতে দিতো, সে ঘুরে ফিরে সেই কুমিরেই এসে শেষ করতো। নরেন তার নাতির ছেলে। 'চারটে জেনারেশন' ধরে সেই একই ট্র‍্যাডিশন চলছে। কেবল কুমীর পাল্টে কখনও হয়েছে হনুমান, কখনও বা পাঁঠা। এই ফোর্থ জেনারেশনে এসে হয়েছে গরু। হ‍্যাঁ সেই কুমীরখ‍্যাত ভদ্রলোকের পোপৌত্র, নরেন স্কুলে কেবল একটি রচনাই মুখস্ত করে যায়। গরুর রচনা। গরু গৃহপালিত প্রানী। গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ..... গরু গোবর দেয়। গোবর থেকে ঘুটে ও গোবর গ‍্যাস তৈরী হয়। এই গোবর গ‍্যাসই সমস্ত শক্তির উৎস। এই গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

একেবারে ঝড়ঝড়ে ২০০টি শব্দের গরুর রচনা মুখস্ত করে নরেন স্কুলে হাজির। বাংলার শিক্ষক এসে, 'একটি গাছ, একটি প্রাণ' রচনা বলতে বললে নরেন শুরু করলো - গাছ খুব উপকারি, গাছ সালোকসংশ্লেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে আমাদের অক্সিজেন দেয়। তবে এই কাজ যে গাছ একা পারে তা কিন্তু নয়! গরুও পারে পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে অক্সিজেন ছাড়তে। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত। পরেরদিন শিক্ষক মশাই নরেনকে, 'জাতীয় সুরক্ষা' নিয়ে রচনা বলতে বললেন। নরেন যথারিতী শুরু করলো - জাতীয় সুরক্ষা দেশের পক্ষে খুব জরুরি। দেশে শক্তিশালী জল, স্থল ও আকাশ বাহিনী আছে। এছাড়া রয়েছে গো-রক্ষা বাহিনী। এরা গরুদের সুরক্ষা প্রদান করে। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

শিক্ষক মশাই দেখলো ভারি মুসকিল! নরেনকে যাই রচনা জিজ্ঞেস করে সে ঘুরে ফিরে গরুতেই এসে শেষ করে। পরেরদিন শিক্ষক মশাই একটু শক্ত রচনা দিলেন, 'অলিম্পিকে ভারত'। মনেমনে শিক্ষক মশাই ভাবতে লাগলেন, দ‍্যেখি অলিম্পিকে কি করে নরেন গরু ঢোকায়! নরেন একটু ভেবে শুরু করলো - অলিম্পিক বিশাল বড়ো খেলার আসর। ভারত এবারের অলিম্পিকে এতো কষ্ট করেও একটাও সোনা পায়নি। তবে সোনা কিন্তু সহজেই গো-মূত্রে পাওয়া যায়। গরুই আপনাকে দিতে পারে সোনা। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত। শিক্ষক মশাই রেগে আগুন তেলে বেগুন। পরেরদিন এসেই নরেনকে বলল, আজকের রচনা 'গ্লোবাল ওয়ার্মিং'। দ‍্যেখি এতে গরু ঢোকা! নরেন শুরু করলো - গ্লোবাল ওয়ার্মিং মানে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এটার জন‍্য দায়ী গ্রীনহাউস গ‍্যাস। যার মধ‍্যে থাকে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ( সি এফ সি )। এই গ‍্যাস রেফ্রিজেরেটরে ব‍্যবহার করা হয়। আর ওর ভিতরেই আকলাখ গো-মাংস লুকিয়ে রেখেছিল। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

আজ শিক্ষক মশাই কোনো কথা বলছে না, একেবারে গম্ভীর। ভিতরে ভিতরে রাগে ফুঁসছে। ক্লাসে ঢুকেই নরেনকে ডেকে বলল, আজ 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া' নিয়ে বল। দেখি এটার মধ‍্যে তুই কি করে গরু আনিস! হাতে বেতের ছড়িটা নিয়ে শিক্ষক স‍্যাডো প্র‍্যাক্টিস করতে শুরু করলেন।নরেন আজ বিখ‍্যাত উক্তি কোট করে শুরু করলো - 'পরে হবে ভাত ডাল, আগে হোক ডিজিটাল'। আমাদের দেশে এখন সুদিন, দেশ এখন ডিজিটাল। দেশ এখন ক‍্যাসলেস। দেশ এখন কার্ড নির্ভর। প‍্যানকার্ড, এটিএম কার্ড, আঁধার কার্ড। আঁধার কার্ডের সুবিধা এবার থেকে গরুরাও পাবে। গরুও এখন থেকে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শরিক। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

শেষে হতাশ হয়ে ও রেগে গিয়ে শিক্ষক মশাই চিৎকার করে বলতে লাগলো, গরুর আঁধার কার্ড হবে, গরু গোয়ালে না থেকে ইন্দিরা আবাসের ঘরে থাকবে, গরুর জনধন যোজনায় অ্যাকাউন্ট হবে, গরু এবার থেকে ভোটাধিকারও পাবে। নরেন মুচকি হেসে বলল, স‍্যার গরু জিওর সিমও তুলতে পারবে।

Thursday 20 April 2017

কালীপিসির পুরী ভ্রমণ

অনেকদিন ধরেই পিসি ভাবছে পুরী গিয়ে পুজো দিয়ে আসবে কিন্তু লন্ডন জার্মানি একটার পর একটা ট‍্যুর, বিশ্ব ব‍্যাঙ্গ সম্মেলন, আহারে বাহারে নানা উৎসব আর কাজের মধ‍্যে সময় হয়নি। তাই উনি ঠিক করেছেন, হার্মাদের দেশে যাবার আগে এবারে পুজোটা দিয়েই যাবেন। তাছাড়া পুরীর কাছেই ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে পিসির দুই ভাই, দীপ আর মাল, পা ভেঙে ভর্তি আছে। তাদের সাথে দ‍্যাখাও করবে। গোলাপী উপত‍্যাকায় ট্রেকিং করতে গিয়ে পা ভাঙে। কয়েক মাস হলো ভর্তি আছে। পিসি ভাইয়েদের দেখতে যায়নি বলে তারা খুব দুঃখু পেয়েছে। দীপ হাসপাতালে পিসিকে দেখেই,' দিদি গো..' বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো! পিসি দীপের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আহারে বাছা একেবারে শুকিয়ে গেছে! জিম না করেই ১৫-২০কিলো ওজন কমিয়ে ফেলেছে! দীপ বরাবরই সাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করে, তাই পিসি ভেবেছিল সবুজ সাথীর সাইকেল একটা দিয়ে আসবে। কিন্তু পা তো ভাঙা, চালাবে কি করে! তাই একটা ডায়েরি দিয়ে বলে এসেছে, এটাতে গান কবিতা যা মনে আসে লেখ, ছবি আঁকো। আমি বই মেলাতে এটাকে প্রকাশ করবো। নাম হবে, 'হাসপাতালের ডায়েরি'। 'মাল'টার সাথে পিসি আর দ‍্যাখা করেনি। পিসি খোঁজ নিয়ে দেখেছে, 'মাল'টা হাসপাতালে প্রতিদিন ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন খেয়ে দিব‍্যি আছে।


এদিকে হয়েছে আরেক বিপত্তি। গতবছর পিসির এক ভাই কৃষ্ণ দাস মানে কেডিভাই পিসির বাড়িতে নারায়ণ পাঠিয়ে ছিলেন পুজো করার জন‍্য। পিসির আরেক ভাই 'বাল'এশ্বর দায়িত্ব নিয়ে পুজো করিয়ে সবাইকে প্রসাদ দেয়। পিসির বেশকিছু ভাই, ভাইপো, ভাইঝি পুজোর প্রসাদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। খবরটা গোটা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকেই তারা মাঝে মধ‍্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তো। বেলভিউতে ভর্তিও করতে হয়েছে কয়েকবার। পিসি তার নিজের ডায়গনস্টিক সেন্টারে সবাইকে ফ্রিতে পরীক্ষা করবে বলেছিল। সেটা বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর টেনশানে আর করে উঠতে পারেনি। তবে জনস্বার্থে, এই অসুখ ছোঁয়াচে কিনা জানার জন‍্য স‍্যাম্পেল দিল্লীর ল‍্যাবে পাঠানো হয়েছিল। প্রসাদ প্রায় সবাই খেয়েছিল। কেউ তোয়ালে মুড়ে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল, তো কেউ খবরের কাগজ মুড়ে নিয়ে গিয়েছিল! কেউ আবার ব‍্যাগে করে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল! পিসির নকুল ভাই তো সবারচেয়ে বেশী প্রসাদ খেয়েছিল। এক ভাই জলখাবারে সিঙাড়া দিয়েই খেয়েছিল আর মাতাল ভাইটা তো পুজোর ফলকে চাট বানিয়ে পেগ মারতে মারতে খেয়েছিল। ভাইপোর ফিজিক্সের প্রাইভেট টিউটর, ফুটবল কোচ সবাই খেয়েছিল। পিসির ফ‍্যামেলি ফিজিসিয়ন মিতালী আর হাকিম সাহেবও খেয়েছিল। এমনকি বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডও খেয়েছিল। এটা নিশ্চিত, প্রসাদ আরও অনেকে খেয়েছিল। তবে বাকিদের অবস্থা দেখে আর কেউ মুখ খুলছে না! পাড়ার লোকজনের মুখে একটাই কথা, পিসির বাড়ির নাযরাণ পুজো আর পিসি প্রসাদ পায়নি! এটা হতেই পারে না।

দিল্লীর ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ১৩জনের ইনফেকশনের রিপোর্ট এসেছে। মনেহয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। উডবার্নে রেখে চিকিৎসা করলে রোগ সারবে না তাই ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হবে। সেটা পিসি ভালো ভাবেই জানেন। খুব শীঘ্রই আরও জনা পোনেরোর রিপোর্ট পাঠাবে জানিয়েছে দিল্লী থেকে। তাই ভাইয়েদের হাসপাতালে থাকতে যাতে কোনো অসুবিধা নাহয় সেটাই তদারকি করতে উনি এসেছেন। অবশ‍্য সেকথা পিসি স্বিকার করেনা। বলে, আমি পুজো দিতে এসেছি।

একটার পর একটা টেনশানে পিসি যখন জর্জরিত তখন ভাবলেন পুরীর সমুদ্রে জয় জগন্নাথ বলে একটা ঢুব দিয়ে মন্দিরে একবার মাথা ঠেকিয়ে আসি। কিন্তু সমস‍্যা যেন পিসির পিছু ছাড়ছে না! এক পান্ডা হুমকি দিয়েছে, পিসিকে পুজো দিতে দেবেনা। এতো আর সাংবাদিক পান্ডা নয়, যে পিসির চাবকানির ভয়ে চুপ করে যাবে! এ আই এস আই ছাপ যুক্ত বিশুদ্ধ হিন্দু পান্ডা। পিসির রাফ এন্ড টাফ মেজাজকে তোড়াই কেয়ার করে! পান্ডাটা নিশ্চয়ই পিসিকে হিজাব পরে টিভিতে দেখেছে। অনেক কষ্টে নিজেকে 'পোকিতো হিন্দু পোমান' করে পিসি পুজো দিতে পেরেছে।

এতো ঝামেলার চাপে পড়ে কাকাতুয়া থেকে ভাইপোর জন‍্য জিভেগজা কিনবে সেটাও ভুলে গিয়েছে। জিভেগজা যে ভাইপোর ফেবারিট। বারবার করে পিসিকে জিভেগজা আনতে বলেছে ভাইপো। তাই পিসি সোনার তরী থেকে বার হবার সময় হোটেলের ম‍্যানেজারকে ২০০০এর একটা নোট দিয়ে বললো, কাউকে দিয়ে খাজা এনে দিন তো। ম‍্যানেজার মুচকি হেসে বলল, নিতে হবেনা ম‍্যাডাম! কদিন বাদেই তো ছোটোবাবু এখানে আসবে। তখন প্রতিদিন খাজা খাবে।

বি.দ্র. - বাস্তবের সাথে এই গল্পের কোনো মিল নেই। থাকলে কাকতালীয়।

Friday 7 April 2017

মিনিটখানেক সঙ্গে চুমন

                              মিনিটখানেক সঙ্গে চুমন
চুমন = কেমন আছেন পিসি? না মানে এখন তো সুস্থ মানুষও হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে! তার ওপর আপনার ওপর তো গোটা রাজ‍্যের চাপ।

পিসি = তা যা বলেছ! এই তো ইকবাল আর কানন দিব‍্যি সুস্হ ছিল, হঠাৎ করে অসুস্থ‍্য হয়ে পড়ল।

চুমন = স্বাস্থ‍্যের কথা বললে এখন সবচেয়ে হট টপিক, গুন্ডা কন্ট্রোলের মতন বেসরকারি হাসপাতাল গুলোকেও কন্ট্রোল করতে শুরু করেছেন কি?

পিসি = তোর কি মনেহয়, পৃথাকে আমি ঘর সংসারের গল্প করতে ডেকেছিলাম! সবাই যদি বেসরকারিতে ছোটে তাহলে আমি যে সুপারস্পেশালিটির নামে নীলসাদা বাড়ি গুলো বানিয়েছি সেগুলোর কি হবে! ন‍্যায‍্য মূল‍্যের ব‍্যবসাটাও তো বন্ধ হয়ে যাবে!

চুমন = আচ্ছা পিসি, আপনি এখন আর ছবি আঁকেন না?

পিসি = কিনবে কে? যে কিনতো সে তো জেলে। তাই আর আঁকি না! সবাই তো এইসবের কদর বোঝে না!

চুমন = আচ্ছা সরকারি কর্মচারিদের ডিএ কবে বাড়বে? টেটে দূর্নিতীর অভিযোগ করছে বিরোধীরা। আপনি কি বলছেন?

পিসি = দ‍্যাখো বাপু, ভাতা হলো সরকারি অনুদান। আমি দিতেও পারি, নাও পারি। তাছাড়া অতো হুটোপাটা করলে চলবে! আমি দেব না, সে কথা তো একবারও বলিনি! এই তো আমার বিধায়করা বাইরে খাওয়া খায়ি করছে দেখে চক্ষু লজ্জায় ওদের ভাতা বাড়িয়ে দিলাম। বামেরা প্রত‍্যাখান করেছে সেটা আলাদা ব্যাপার। আর টেটের নিয়োগ ম‍্যক্সিমাম মিনিমাম থিওরি মেনেই স্বচ্ছভাবে হয়েছে।

চুমন = আচ্ছা শিশু চুরি প্রসঙ্গে কিছু বলুন? মেডিক‍্যালের মেয়েটা কিন্তু সবুজ শাড়ি পরেছিল? জুহি নাহয় অন‍্য দলের, চন্দনা তো আপনার দলের?

পিসি = দ‍্যাখো বাপু, চক্কান্ত কুৎসা আর অপপোচার করে চিটফান্ড ব‍্যবসাটা লাটে তুলে দিয়েছ! কিছু করে তো খেতে হবে নাকি! আর সবুজ শাড়ির কথায় বলি, সবুজ কিন্তু উন্নয়নের পোতিক। এটা হলো কেন্দ্র-রাজ‍্য যৌথ পোকল্প।

চুমন = সুদীপ তাপস কেমন আছে? কোনো যোগাযোগ আছে? নাকি মদনের মতন ওদেরও বয়কট করেছেন?

পিসি = দিব‍্যি আছে! তাপস তো চিলি চিকেন পিৎসার ছবি হোয়াটসঅ্যাপ করে পাঠায়। ওদের বলেছি, পুরীতে নতুন পার্টি অফিস খুলেছি। ওরা জেলে বসে আপাতত সেটার তদারকি করুক।

চুমন = অনেক প্রশ্ন হলো, এবারে আসল প্রশ্নে আসা যাক! নারদা নিয়ে কি ভাবছেন? আপনি তো বলেছিলেন আগে জানলে টিকিট দিতাম না! এখন কি করবেন? ম‍্যাথু বলেছে কেডি নাকি সমস্থ টাকা দিয়েছে। সুপ্রিম কর্টের রায় যদি বিপক্ষে যায় তাহলে আপনি কি করবেন?

পিসি = (রেগে গিয়ে ) সুপিম কোট যদি চক্কান্ত করে তাহলে আমি ইন্টারন‍্যাশান‍্যাল কোট হেগে যাবো। খচ্চার চিন্তা করি না! পাবলিকের করের টাকায় যাবো। বলেদিলুম...
তবে মনেহয় যেতে হবে না! একমাস সময় পেয়েছি তো! ঠিক ম‍্যানেজ করে নেবো। মণিপুর দিয়েই খেলা শুরু করে দিয়েছি। তবে কেডির ওপর আমি খুব খচে আছি। ওকে বুদ্ধবাবুর পাশে দেখে মনে হয়েছিল সত ব‍্যক্তি, এখন দেখছি পুরো জালি!

চুমন = তাহলে আপনি স্বিকার করছেন বুদ্ধবাবু সত? আচ্ছা আইপিএস অফিসারও আপনার পার্টির জন‍্য অনুদান নেয়?

পিসি = অনুদান যে কেউ নিতে পারে। আমার কাছে ভাগ আসলেই হলো! মদনকে নিয়ে আমার চিন্তা নেই! ওর জেল খাটা অভ‍্যেস আছে। বাকিদের নিয়ে আমার একটু চিন্তা আছে বটে। তবে জেল হলেও আমার চারটে প্রজন্ম রেডি আছে! তবে চিন্তা একটাই, নারদের অসম্পাদিত ফুটেজে যে ভাইপো আছে...
(হাসি মুখে) ও হ‍্যাঁ, আদবানী বাবু, সুসমা'জি আমার খুব প্রিয়। ওদের মধ‍্যে কাউকে আমি পরবর্তি রাষ্ট্রপতি হিসাবে দেখতে চাই।

চুমন = একটা শেষ প্রশ্ন, আপনি আগের মতন এখনও ব‍্যাগে টফি, চকলেট নিয়ে ঘোরেন?

পিসি = (এক গাল হাসি নিয়ে ) ওরে দুষ্টু, এখন কি হাইওয়ের পাশে মাচা বেঁধে আর অনশন করি! ওটা ইতিহাস....

চুমন = ধন‍্যবাদ পিসি। আমাদের চ‍্যানেলে সময় বার করে আসার জন‍্য।

পিসি = আমি কি সাধে এসেছি! জ্বালায় এসেছি!

চুমন = আপনার এতক্ষণ দেখছিলেন, মিনিটখানেক সঙ্গে চুমন। হেগে থাকে, হেগে রাখে।

ডিজিটাল রামায়ণ

                                    ডিজিটাল রামায়ণ
আদিকাণ্ড :-
দশরথ ছিলেন কোশল রাজ্যের রাজা। তখনকার দিনে রাজাদের বহুবিবাহ ছিল নিতান্তই 'ছোট্ট ঘটনা'। তাঁর তিন মহিষী: কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন নামে দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়। একদা ঋষি বিশ্বামিত্র দশরথের সভায় উপস্থিত হয়ে তাঁর আশ্রমে উপদ্রব সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করতে রাজার সহায়তা প্রার্থনা করেন। তিনি এই কাজের জন্য রাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে যান এবং শিফুজির স্পেশাল কমান্ডো ট্রেনিং ও রামদেব বাবার যোগ সাধনা করান। দুজনে সার্জিক‍্যাল স্টাইক করে আশ্রমে উপদ্রব সৃষ্টিকারী সকল সন্ত্রাসবাদীদের হত্যা করেন। এর ভিডিও ফুটেজ যদিও পাওয়া যায়নি! তবে হয়েছিল বটে!

এই সময়ে মিথিলার রাজা জনক তাঁর বিবাহযোগ্যা কন‍্যার জন্য স্বয়ম্বরের আয়োজন করেন। শিব রাজা জনককে একটা ধনুক গিফ্ট দিয়েছিলেন। রাজা গোঁ ধরেন, যে এই ধনুকে গুণ সংযোজন করতে পারবে, তাকেই অপরূপা সীতা পতিত্বে বরণ করবে। ঋষি বিশ্বামিত্র সীতার ফেসবুক পেজে এই খবর দেখে রাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে সেই স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত হলেন। রাম সেই ধনুকে গুণ পরালেন এবং বার খেয়ে সেটা ভেঙেও দিলেন। রামের সঙ্গে সীতার বিবাহ হল। শুধু তাই নয়, ডিমনিটাইজেশনের জন‍্য খরচ বাঁচাতে দশরথের অন্যান্য পুত্রদের সঙ্গে জনকে অন্যান্য কন্যা ও ভাগিনেয়ীদের বিবাহ সম্পন্ন হল।

অযোধ্যাকাণ্ড :-
রাম ও সীতার বিবাহের বারো বছরের বিবাহ বার্ষিকিতে বৃদ্ধ রাজা দশরথ রামকে একটা দশলাখি কোর্ট গিফ্ট করলেন এবং যুবরাজ হিসাবে অভিষিক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। পিসি মন্থরার কুমন্ত্রণায় কৈকেয়ী রাজার কাছে দাবি করেন যে রামকে চৌত্রিশ বছরের জন্য বনবাসে পাঠাতে হবে এবং তাঁর স্থলে ভরতকে যুবরাজ হিসাবে অভিষিক্ত করতে হবে। রানীর সব কিছুতেই চৌত্রিশ, এই নিয়ে পরে সবাই যখন সমালোচনা করতে শুরু করলো তখন উনি কমিয়ে চোদ্দ বছর করেন।

রাম পিতাকে আশ্বস্থ করে বলেছিল, চিন্তা করো না! কোনো ভয় নেই! জঙ্গলমহল এখন হাসছে! লক্ষ্মণও নিজের ক‍্যারিয়ার বিষর্জন দিয়ে, বৌ ছেড়ে দাদা বৌদির সাথে চলল। রাম চলে যাবার পর পুত্রশোকে দশরথের স্টোক হয়। এই ঘটনার সময় ভরত ছিলেন তাঁর মাতুলালয় নন্দীগ্রামে। সব শুনে ভরত সত্বর অযোধ্যায় ফিরে এলেন। রামকে খুঁজতে ভরতও জঙ্গলমহলে গেলো। তিনি রামকে অযোধ্যায় ফিরে রাজপদ গ্রহণের অনুরোধ জানাল। কিন্তু রাম রাজি না হলে, ভরত তখন রামের হাওয়াই চটি চেয়ে নিয়ে বললেন, এই হাওয়াই চটিই আপাতত রাজ‍্য চালাবে।

অরণ্যকাণ্ড:-
রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ, কোনো কালেই ওরা কখনও বামে যাননি তাই দক্ষিনে যাত্রা করেন। গোদাবরী নদীর তীরে আম্বানীর লিজে নেওয়া জমির পাশে পঞ্চবটী বনে কুটির নির্মাণ করে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন তাঁরা। একদিন রাবণের বোন সুর্পনখা রামকে দেখে প্রোপোজ করলো। রাম তারপর প্রোপজটা ভাই লক্ষণকে ফরয়ার্ড করলো। লক্ষণ এক ছোবলেই ছবি বানিয়ে দিলো।

রাবণ এই সংবাদ পেয়ে ভগিনীর অপমানের প্রতিশোধ নিতে অধিকারীর সাথে পরামর্শ করে সীতাকে অপহরণ করলেন। তিনি ঋষির ছদ্মবেশে এসে সীতার নিকট পতঞ্জলীর প্রোডাক্ট বিক্রি করতে এলেন। কসমেটিক দেখেই সীতা গন্ডির বাইরে বেরিয়ে এলো। আর তখনই রাবন তাকে নিয়ে পারসোনাল চাটার্ড ফ্লাইটে সোজা লঙ্কা।
রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় অশোক কানন নজরবন্দী করে একদল সন্ত্রাসবাদীর তত্ত্বাবধানে রাখলেন। তিনি সীতাকে প্রোপজও করলেন। সীতা তো এখন রামের অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডে জানাতেও পারবে না! অপমান সহ‍্য করা ছাড়া সীতার কিছু করার নেই।

কিষ্কিন্ধাকাণ্ড :-
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বানরবীর তথা সুগ্রীবের লবি হনুমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল রাম ও লক্ষ্মণের। সুগ্রীব ছিলেন কিষ্কিন্ধার নির্বাসিত এক রাজপদপ্রার্থী। ইভিএম-এ জালিয়াতি করে তাকে ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়। রাম সুগ্রীবের লবিতেযোগ দিলেন। রাম এবং সুগ্রীব, বালীকে চক্রান্ত করে হত্যা করলেন। রামের সহায়তায় সুগ্রীব নিজভ্রাতা বালীকে হত্যা করে কিষ্কিন্ধার সিংহাসনে আরোহণ করলেন।

সুন্দরকাণ্ড :-
হনুমান প্রদ‍্যুম্ন ভল্ট দিয়ে এক লাফে সাগর পার হয়ে লঙ্কায় উপস্থিত হলেন। লঙ্কায় এসে তিনি সীতাকে রামের দেওয়া জিও সিম লাগানো ফোরজি সেটটা দিলেন। সেটা দিয়েই সীতা প্রতিদিন রামকে মন কি বাত শোনাতো। হনুমান সীতাকে নিয়ে যেতে চাইলে সীতা বায়না ধরে, রামকে এসেই নিয়ে যেতে হবে। অতঃপর হনুমান রামের স্বচ্ছতার প্রোপাগান্ডা গুলি মেরে, নিজেই পাকামি মেরে লঙ্কায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালালেন। তারপর লেজে আগুন লাগিয়ে লঙ্কা পুড়িয়ে, নিজের মুখ পুড়িয়ে ফিরে আসে।

লঙ্কাকাণ্ড :-
সীতার হোয়সঅ্যাপ ম‍্যাসেজ পেয়ে রাম ও লক্ষ্মণ বানর সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। সমুদ্রতীরে রাবণের ভ্রাতা রেজ্জাকের সাথে দেখা হয়। তিনিও মন্ত্রীত্ব লাভের আশায় উন্নয়নের জোয়ারে সামিল হলেন। অঙ্গদ, জাম্বুবান প্রমুখ বানরেরা আর্কিমিডিসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাথর জলে ভাসিয়ে সমুদ্রের উপর একটি সেতু করলেন। সেই সেতুপথে রাম সসৈন্যে লঙ্কায় প্রবেশ করলেন। লঙ্কায় রাম ও রাবণের মধ্যে এক দীর্ঘ যুদ্ধ সংঘটিত হল। যুদ্ধান্তে রাবণ নিহত করে লঙ্কায় হিন্দু রাজ‍্য প্রতিষ্ঠা করলেন। সীতা ফিরে এলো কিন্তু রামের মন থেকে খচখচানি গেলো না! দীর্ঘদিন সন্ত্রাসবাদীদের সাথে সীতা ছিল। যদি কিছু ... তাই সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সতীত্ব প্রমাণ করতে বললেন রাম। সীতাও আর পাঁচটা গৃহবধূর মতন মেনেও নিলো।

উত্তরকাণ্ড :-
রাজা হওয়ার পর রাম অনেক কাল সীতাকে নিয়ে সুখে সংসার করেন। এদিকে অগ্নিপরীক্ষিতা হওয়া সত্ত্বেও সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় নানান কুৎসা অপপোচার ছড়াতে শুরু করে। এই সব বিচলিত হয়ে রাম সীতাকে নির্বাসনে পাঠান। প্রেগন‍্যান্ট সীতা রামের জননী সুরক্ষা যোজনার সুবিধা না পেয়ে আশ্রয় নেন ঋষি বাল্মীকির আশ্রমে। সেখানেই তাঁর যমজ পুত্রসন্তান লব ও কুশের জন্ম হয়। সীতা দুই শিশুকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আসলে বেশকিছু রামভক্ত যে শিশুপাচারে যুক্ত সেটা তিনি জানতেন।

বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও - এর প্রচারে লব ও কুশ রামের সভায় উপস্থিত হন। লব ও কুশের কথা শুনে রামের মনটা নস্টালজিক হয়ে পড়ে। তখন বাল্মীকি সীতাকে নিয়ে আসেন রামের সম্মুখে। কিন্তু রাম তো বাঙালী তাই অভ‍্যেসটা একই রয়ে গেছে। সকলের সম্মুখে সীতাকে পুনরায় অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার আবদার করে বসে। অপমানিতা সীতা স্বামীর এই নারীনির্যাতন সহ‍্য না করতে পেরে, মাতা ধরিত্রীকে আহ্বান জানান। মাটি বিদীর্ণ হয়। দেবী ধরিত্রী উঠে এসে সীতাকে নিয়ে পাতালে চলে যান। স্ত্রী চিরকালের মতন ছেড়ে যাবার পর, রামের চেতনা হয়। তখন রাম পুত্রদ্বয়ের হাতে শাসনভার ছেড়ে দিয়ে সরযূ নদীর উন্নয়নের জোয়ারে আত্মবিসর্জন করে বৈকুণ্ঠে ফিরে আসেন।

( বি.দ্র. - এটি একটি কাল্পনিক রচনা। ধর্মের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।)