Friday 26 February 2016

টেনিদার ছাত্র ঠ্যাঙানো


গতকাল সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার মুখুজ্যেদের রকে বসে হাবুল, প্যালা আর ক্যাবলা আড্ডা মারছিলো।

হাবুল = অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাইনি, চল না কোথাও ঘুরে আসি!

ক্যাবলা = দার্জিলিং যাবে?

প্যালা = তুই সত্যিই ক্যাবলা। জানিস না, দার্জিলিং-এর ওয়েদার এখন মোটেই ভালো নয়! প্রায়ই আকাশ 'গুরুং গুরুং' করছে। 'হড়কা' বানের সম্ভবনাও আছে।

হাবুল = ধুস্‌, ওসব কিস্যু হবে না। তবে দার্জিলিং অনেকবার ঘোরা। তাই ঠিক জমবে না! নতুন কোনো স্পট ভাব। তবে পাহাড় আর জঙ্গল থাকা চাই!

প্যালা = পাহাড়েই যখন যাবি, তাহলে ডেলোতেই চল। আফটার অল, পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র বলে কথা!

ক্যাবলা = তবে লোকে বলে ওটা নাকি অভিশপ্ত জায়গা! যে যায়, সেই জেলে ঢোকে!

হাবুল = দ্যাখ ক্যাবলা, আমাকে পুলিশের ভয় দ্যাখাস না। তুই জানিস, আমার বড়ো মামা পুলিশের বড়ো দারোগা! চোর থেকে চর সবাই ওঁকে স্যালুট ঠোকে।

( হঠাৎ পিছন থেকে টেনিদা এসে হাবুলের মাথায় একটা জোরে গাঁট্টা মারলো)

টেনিদা = কিরে, পুলিশ নিয়ে কিসের আলোচনা হচ্ছে হাবুল! কেই বা কাকে স্যালুট ঠুকছে, একটু শুনি!

প্যালা = টেনিদা, জানো হাবুলের মামা নাকি পুলিশের বড়ো অফিসার!

টেনিদা = তাতে কি! আমিও পুলিশে চাকরি করেছি কয়েক বছর।

হাবুল = খাইসে! তুমি আবার পুলিশে চাকরি করলা কবে!

প্যালা = টেনিদা, এটা চাপের হয়ে গেলো না!

ক্যাবলা = তা তুমি দারোগা ছিলে, নাকি হাবিলদার! তোমার পুলিশে চাকরির কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করো গুরু।

টেনিদা = আরে, তখন ব্রিটিশরা চলে গেলেও রানীর শাসন কিন্তু শেষ হয়নি। আমি সদ্য পুলিশের চাকরিতে ঢুকেছি। ধর্মতলায় কিছু উন্মত্ত ছাত্র রানীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। এক গোরাসাহেব এসে আমাকে বললেন ‘‘ওদের উচিত শিক্ষার ব্যবস্থা করুন।’’ আমি তো সোজা ফোর্স নিয়ে অকুস্থলে হাজির। তারপর, বেদম লাঠি চার্জ! সব কটাকে জাল গাড়িতে ভরে সোজা নিয়ে চললাম জেলে। কিন্তু, নিয়ে যাওয়ার পথেই ল্যাম্পপোস্টের ধাক্কায় একটা বিপ্লবী অক্কা পেয়ে গেলো! সুদীপ্ত না কি নাম ছিল ব্যাটার।

ক্যাবলা = সেকি! মেরে দিলে!

প্যালা = তারপর নিশ্চয়ই তোমার চাকরি চলে গিয়েছিল!

টেনিদা = ধুস! তারপরই তো আমার প্রোমোশন হয়েছিল।

প্যালা = বলো কি!

টেনিদা = থানার বড়ো কত্তা হিসাবে আমার পোস্টিং হলো যাদবপুরে।

হাবুল = তা যাদবপুরেও কি এমন কোনো দুঃসাহসিক কান্ড ঘটিয়েছিলে?

টেনিদা = আরে, বলছি বলছি। প্যালা, আগে তুই তাড়াতাড়ি এক ঠোঙা গরম আলুর চপ শালপাতা দিয়ে মুড়ে নিয়ে আয় তো। পেটটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে।

প্যালা = আরে, আনছি বাবা আনছি। আগে যাদবপুরের গল্পটা শুনে যাই।

টেনিদা = প্যালা, পেটে খিদে থাকলে কিন্তু আমি কথা বলতে পারি না।

(প্যালা দৌড়ে গিয়ে দোকান থেকে চারটে আলুর চপ আর চারটে বেগুনি নিয়ে এলো। আনতেই অন্য কেউ ধরার আগে টেনিদা তেলেভাজার ঠোঙাটা কেড়ে নিলো)

টেনিদা = এই নে হাবুল একটা আলুর চপ, ক্যাবলা তুই একটা বেগুনি নে। আর প্যালা, তোর আধখানার বেশি বেগুনি খাওয়া উচিত না।

প্যালা = এটা কেমন ভাগ হলো টেনিদা! এটা ঠিক নয়! আমাকে মাত্র আধখানা!

টেনিদা = আহা, পিলে রুগীর কথা শোনো! ব্যাটার কাঁচাজল খেলেই অম্বল হয়ে যায়, বলে কি না একটা গোটা আলুর চপ খাবে!

হাবুল = এই প্যালা, চুপ কর তো! টেনিদা তো ঠিকই বলেছে। টেনিদা, তুমি প্যালাকে ইগ্‌নোর করো। যাদবপুরের কেসটা বলো!

টেনিদা = হ্যাঁ, তখন আমার যাদবপুরে পোস্টিং, হঠাৎ একদিন ওখানকার লোকাল একটি স্কুলের কিছু ছাত্র রানীর মনোনীত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলো। আমার কাছে ওপর থেকে নির্দেশ এলো ছাত্রদের এই আন্দোলন কড়া হাতে দমন করতেই হবে। আমি বললাম, এতো এক আধটা ছেলে নয়, গোটা স্কুলই উত্তাল! ওপরমহল থেকে জানালো, আমাকে সাহায্য করার জন্য স্পেশাল লেঠেলবাহিনী পাঠানো হবে। (হঠাৎ ক্যাবলার পকেটের দিকে লক্ষ্য পড়তেই) ক্যাবলা, তোর প্যান্টের পকেট থেকে বাদামভাজার প্যাকেট উঁকি দিচ্ছে। ওটা এদিকে দে। ক্যাবলা কাঁচুমাচু মুখে প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো। হ্যাঁ, যেটা বলছিলুম, তারপর রানীর সেই লেঠেলবাহিনীর সাথে গোপন পরামর্শ করে ঠিক করা হলো রাতের অন্ধকারেরই আমাদের যৌথবাহিনী স্কুলে আক্রমণ চালাবে।

(বাদামভাজার প্যাকেটটা পুরোটা খালি করে, প্যাকেটটাকে মুড়ে টেনিদা ক্যারাম বোর্ডের স্ট্রাইকারটা ছুড়ে ফেললো প্রায় ২০হাত দুরে রাখা ডাস্টবিনে। হাবুল, ক্যাবলা, প্যালা তিনজনেই অবাক হয়ে তাকালো একবার ডাস্টবিনের দিকে, আর একবার টেনিদার মুখের দিকে।)

হাবুল = তারপর, কি হলো টেনিদা?

টেনিদা = তারপর, আবার কি, রাতের অন্ধকারেই কেলিয়ে দিলাম প্রতিবাদীগুলোকে।

ক্যাবলা = তোমার তো বিশাল সাহস টেনিদা। তুমি রাতের অন্ধকারেও এমন দুঃসাহসিক অভিযান করো!

টেনিদা = হা, হা, তোরা টেনি মুকুজ্যেকে কতোটাই বা চিনিস!

প্যালা = টেনিদা এরপর কি তোমার পদোন্নতি হয়েছিল!

টেনিদা = বলিস কি! দিন যত এগিয়েছে আমার উন্নতি তরতর করে হয়েছে। একটার পর একটা অভিযান, একটার পর একটা পদোন্নতি। নবান্ন, লালবাজার আরও কতো সব ঐতিহাসিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছে এই টেনি মুকুজ্যে, তা তোদের এই পটলডাঙার কটা লোকই বা জানে! আমার শেষ পোস্টিং ছিল ডি এস পি, বর্ধমান।

ক্যাবলা = ওখানেও কিছু দুঃসহসিক করেছিলে নাকি!

টেনিদা = বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অস্বচ্ছতার প্রতিবাদে যখন কিছু ছাত্রছাত্রী গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে, তখন আমি একাই ২৩ জনকে কাবু করে দিই।

ক্যাবলা = সেকি টেনিদা, ওদের মধ্যে অনেক ছাত্রীও তো ছিলো। তোমার সাথে তো কোনো মহিলা পুলিশ ছিলো না!

টেনিদা = লাঠি যখন চালাই, তখন সামনে মহিলা না পুরুষ, তা টেনি মুকুজ্যে কখনো বিচার করে না। এক একটাকে ধরি আর ক্যালাই।

প্যালা = সত্যিই তুমি গুরুদেব টেনিদা।

হাবুল = আচ্ছা টেনিদা শুনেছিলাম তোমার পোস্টিং ভবানীপুরেও হয়েছিল!


টেনিদা = হাবুল, তুই কিন্তু আবার গাঁট্টা খাবি!

No comments:

Post a Comment