Thursday 18 February 2016

নরেন মুদি ও কালীপিসির কেমিস্ট্রি


নরেন খুড়োর বিশাল বড়ো মুদির দোকান। প্রায় ৫৬ স্কোয়ার মিটার। পাড়ার অনিল, মুকেশ, রতন, আদিত্য সবাই খুড়োর দোকানে বাজার করে। লোক হিসাবে খুড়ো খুবই খিটখিটে, বিশেষ করে মুসলিম খরিদ্দার দোকানে এলেই চটে যান। ঐ অসহিষ্ণু আর কি!

তবে খুড়ো খুব ধার্মিক মানুষ, দোকানদারির এতো ব্যস্ততার মধ্যেও সময় পেলেই রামনাম জপ করেন। খুড়োর একটু শুচিবাই রোগও আছে। দোকানের সামনে নোংরা খুড়ো মোটেই দেখতে পারনে না। দিনে চার-পাঁচবার ঝাঁটা দিয়ে দোকান পরিষ্কার করেন। স্বচ্ছতা আরকি!

এই নরেন মুদির সাথেই আবার আমার কালীপিসির হেব্বি বাওয়াল। প্রতিদিন খুড়োর দোকানে বাজার করতে গেলে ঝগড়া হবেই হবে। এই তো সেদিন খুড়ো মুগের বদলে ভুল করে মুসুর ডাল দিয়েছিল, আর তাতেই পিসি ক্ষেপে গিয়ে বললো "এমন করলে তোমার কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরাবো"। 

মাঝে মাঝেই পিসি রেগে গিয়ে নরেন খুড়োকে 'ঝগড়াবাজ' বলেন। কিন্তু পাড়ার বয়স্করা বলেন, ওদের দুজনের মধ্যে একটা আলাদা কেমিস্ট্রি আছে। ওরা লোকদেখানো ঝগড়া করে। পাছে ওদের গোপন কেমিস্ট্রি জানতে পেরে গেরামের লোক কুমন্তব্য করে। লুকিয়ে লুকিয়ে দুজনে ঝালমুড়ি, লাড্ডু সবই খায়।

কদিন আগেই পাড়ার মাস্টারমশাই 'যোগেন্দ্র নাথ উপাধ্যায়' অর্থাৎ জেএনইউ-বাবুর কোচিং সেন্টারে নরেন খুড়োর দুই ছেলে গোলমাল পাকালো, আর দোষটা বেমালুম নরেন খুড়ো চাপিয়ে দিলো তার চিরশত্রু রামবাবুর ছেলে কানাইয়ের উপর। এমনকি, তাকে 'পাড়াদ্রোহী' তকমা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলো! শুধু তাই নয়, রামবাবুর বাড়ির নেমপ্লেটেও কালি লাগিয়ে নোংরা করলো ছেলে পাঠিয়ে। এই ঘটনায় গোটা গ্রামের লোক প্রতিবাদে মুখর হলেও আমার কালীপিসি কিন্তু স্পিক্‌টি নট। অন্যায় দেখলেই যে কালীপিসির ‘পোতিবাদ’-এর ভিসুভিয়াস জেগে ওঠে, সেই পিসি আজ আশ্চর্যজনকভাবে বজরঙবলীর কৃপায় একেবারে নীরব। নরেন খুড়োর এহেন আচরণে উনি অনশন বা মিছিল তো দুরের কথা, নিদেনপক্ষে একটা ‘পোতিবাদী’ টুইটও পর্যন্ত করলেন না!

পিসিকে কারণ জিজ্ঞেস করাতে পিসি ঝাঁজিয়ে উঠে বললো, ‘সাধে কি আমি চুপ করে আছি! পোতিবাদ করলেই তো আমাকে ঐ মুদি ব্যাটা ভয় দেখায়।’ আমি বললাম, ‘পিসি, তুমি তো গুন্ডা কন্ট্রোল করো, তোমার ভয় কিসের!’ 

পিসি আক্ষেপের সুরে বললো, ‘বড়ো মেয়ে সারদার বিয়ের সময় বেশ কিছু টাকা ধার করেছিলাম তোদের নরেন খুড়োর কাছ থেকে, সেটা এখনও শোধ করতে পারিনি। তাই মাঝে মাঝে সারদার বিয়ের টাকার কথা তুলে চমকায় আমাকে। বলে জেলে ঢোকাবে। আমার ভাগ্নে মদনা পোতিবাদ করেছিলো একবার। তাকে সেই যে জেলে ঢুকিয়েছে বেচারি এখনও হাজতে বসে বসে দিনরাত আমাকে আর নরেন মুদিকে খিস্তি করছে। তাই আমাকে ঐ নরেন খুড়োর সাথে আলগা পিরিত করেই চলতে হয়।’ 

আমি বললুম, ‘পিসি তুমি তো দারুণ ছবি আঁকো। তাহলে দু-চারটে ছবি এঁকে সেগুলি বিক্রি করে সারদার বিয়ের দেনা চুকিয়ে দিলেই তো পারো!’ 

পিসি করুণ হেসে বললো, ‘ওরে আমার কি আর সে জো আছে? ছবিগুলো কিনবে কে? যে কিনতো, সে ও তো আজ জেলে।’


( বি.দ্র. : সব চরিত্র কাল্পনিক )

No comments:

Post a Comment