Tuesday 21 February 2017

কালীপিসির কাজের লোক

                                   কালীপিসির কাজের লোক 
কালীপিসির বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই। রান্না করা, বাসন মাজা, জামাকাপড় কাচা, বাজার করা, জল আনা, ঘর মোছা, প্রতিটা কাজের জন‍্য কম করে ১০জন করে কর্মচারী আছে। এত কর্মচারী থাকলে যা হয় আরকি, পিসির প্রায় গুলিয়ে যায় কাকে কোন কাজের জন‍্য রেখেছে! তাই পিসি নিজের সুবিধার জন‍্য কর্মচারীদের বিভিন্ন জেলায় ভাগ করে দেন। যেমন রান্নার সাথে যুক্ত লোকেদের নিয়ে 'খাদ‍্যসাথী' জেলা, বাড়ির আশেপাশ পরিষ্কার করে যারা তাদের নিয়ে 'নির্মল গ্রাম' জেলা, জল আনে যারা তাদের নিয়ে 'জল ধর জল ভরো' জেলা, বাগান পরিচর্যা করে যারা তাদের নিয়ে 'সবুজ সাথী' জেলা।
রান্নার ডিপার্টমেন্টে একজন সব্জি কাটে, একজন সব্জি ধুয়ে দেয়, একজন বাটনা বাটে, একজন মশলার যোগান দেয়, একজন ভাত বসায়, একজন ভাত টিপে দ‍্যাখে, একজন ফ‍্যান ঝাড়ে, আরে কেবল গ‍্যাস জ্বালানোর জন‍্য একজন আছে। তবে এদের মধ‍্যে একমাত্র রান্নার ঠাকুর 'জ‍্যোতি'ই ওনার খুব 'প্রিয়'। তাই ওর চাকরিটা পার্মানেন্ট, বাকি গুলো সব কন্ট্রাকচুয়াল। গেটের সামনে যে সিকিউরিটি গার্ডকে গ্রামবাসী এতদিন বুকে পুলিশের ব‍্যাচ লাগাতে দেখতো, সেও এখন ভলেন্টিয়ারের ব‍্যাচ ঝোলাচ্ছে। তবে পিসি কিন্তু গ্রামের সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলে আমি না থাকলে গ্রামে কর্মসংস্থানই হতো না!
কিন্তু পিসির বাড়িতে কাজ করার সমস‍্যা আছে। পাড়ার অন‍্য বাড়ির কাজের লোকেরা মাস মাইনে ছাড়াও আরও কতো সুযোগ সুবিধা পায়। প্রতিদিন যাতায়াতের খরচ, টিফিন খরচ, পুজো পার্বনে বোনাস, আরও কতো কি! কালীপিসি ওসব তো দুর, মাস মাইনেটাও সবসময় টাইম মতন দেয়না। কাজের লোকেরা কিছু বললেই ন‍্যাকা কান্না কেঁদে বলে, আমার বাবার ৩৪ বছরের দেনা! আমি অতো টাকা পাবো কোথায়! পিসি যে টাকা প্রতিমাসে পাড়ার চন্ডি মন্ডপের উৎসবে আর ক্লাবে মোচ্ছবে খরচ করে, তার থেকে কিছুটা যদি বাড়ির কর্মচারীদের পিছনে করতো! কর্মচারীরা পঞ্চায়েতে অভিযোগও করেছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। পঞ্চায়েত বলেছে, ওসব পিসি দিতেও পারে! আবার নাও পারে! সবই পিসির ইচ্ছা।
তবে পিসি মাইনে, সুযোগ সুবিধা না দিতে পারলেও ছুটি দিয়ে সেই ঘাটতি পুসিয়ে দেয়। এই যেমন গত দুগ্গা পুজোতে এক্সট্রা ছুটি, দিওয়ালির পর ভাই ফোঁটাতে চারদিন ছুটি, ড্রাইভার আত্মা রাম একাই বিহারী তো কি হয়েছে! ছট পুজোর ছুটি বাড়ির সব জেলাতেই ঘোষণা করলেন। বাজার করেন রসুল চাচা, তার জন‍্যই ফতেয়ায় সবার ছুটির ফতেয়া দিলেন পিসি। পাড়ার অন‍্য বাড়ির কাজের মহিলারা কেবল মাতৃত্বকালীন ছুটি পেলেও, পিসির বাড়ির মহিলারা তো বটেই এমনকি পুরুষরাও পিতৃত্বকালীন ছুটি পায়। তবে পাড়ার অন‍্য বাড়ির কাজের লোকেরা যদি কোনো দাবীতে একদিন কর্ম বিরতির ডাক দেয় সেদিন কিন্তু পিসির বাড়ির কর্মচারীদের কামাই করা চলবে না। দরকারে পিসি অন‍্য একদিন ছুটি দিয়ে দেবে। আসলে পিসি বলে, অমন করলে নাকি কর্ম সংস্কৃতি নষ্ট হয়।
গতকাল যখন ভুটিয়া সিকিউরিটি গার্ডের জন‍্য বুদ্ধ পূর্ণিমাতে ছুটি ঘোষণা করল, তখন বাসন মাজতে মাজতে শান্তা বুড়ি বলল, শুধু পূর্ণিমা! আমি তো একাদশী করি।

No comments:

Post a Comment