Tuesday 21 February 2017

হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন

                                                           হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন

হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন দুই ভাই, বর্ধন এন্ড বর্ধন কোম্পানির মালিক। ভুবনেশ্বরে তাদের বিশাল কাঠের ব্যাবসা। সারা দেশে তো বটেই, এমনকি বিদেশেও প্রচুর নাম ডাক তাদের। গতকাল রাতে হর্ষবর্ধন তার ভাইকে বলল - বুঝলি গোবরা, চল কদিন কোলকাতায় ঘুরে আসি। তাছাড়া কালীঘাট থেকে ম্যাডাম ফোন করেছিল। বলে দরকার আছে, তাড়াতাড়ি একবার দ্যাখা করো। শুনে গোবর্ধন বলল - মনেহয় ভাইপোর বিয়ের ফার্নিচারের অর্ডার দেবে! হর্ষবর্ধন বিরক্ত হয়ে বলল, তোর মাথায় সত্যিই গোবর আছে গোবরা। আরে গতকাল ধিমানসভায় যে ভাংচুর হয়েছে, তার অর্ডার। গোবরা দাঁত বার করে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছ। তাছাড়া অনেকদিন হলো কোথাও যাওয়া হয়নি, আর আমদের উপর তো কোর্টের নিযেধাজ্ঞা নেই যে ভুবনেশ্বরেই পড়ে থাকতে হবে! সিবিআই-ও আমাদের ‘পোভাবশালী’ তকমা দেয়নি। তাই যেতে তো অসুবিধা নেই।
পাক্কা আধা ঘন্টা বিমান আকাশে চক্কর কাটার পর ল্যান্ড করতে গোবরা বলল, যাক বাবা তাহলে ষড়যন্ত্র নয়। এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে মিনিট কুড়ি ছোটাছুটি করে, খান কুড়ি নীলসাদা ‘নো-রিফিউজাল’ লেখা ট্যাক্সি দ্বারা রিফিউজ হয়ে শেষে গোবরা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ততক্ষণে দাদা তার জিও সিম লাগানো ফোন দিয়ে ওলা বুক করে ফেলেছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গাড়ি হাজির।
গাড়ি শহরে ঢোকার মুখেই জ্যামে পড়ল। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে জানলো, সামনে তৃণমূলের মিছিল। তবে কিসের জন্য মিছিল সেটা জানার পর গোবরার গাল হাঁ! কিছুদূর যেতে ধর্ষনের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ মিছিলও দেখা গেল। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার ধারে একটা জমায়েত চোখে পড়লো। স্টেজের পিছনের ব্যানারটা দ্যেখে হর্ষবর্ধন কেটে কেটে বলতে লাগল, ‘ভা ঙ ড় স ং হ তি ম ঞ্চ’। ব্যাপার কি জিজ্ঞেস করাতে, এবারে ড্রাইভার হাঁ! বলেন কি! আপনারা কিছুই জানেন না! গোবরা বলল জানি তো! উদয়ন তেল মেখেছে, মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছে, ঘন্টাখানেক ধরে চেষ্টা করে কষা হেগেছে!
লন্ডনের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে তারা নবান্নে পৌঁছে গেলো। নবান্নে গিয়ে ম‍্যাডামের কথা মতন মুখার্জী'দার সাথে দ‍্যাখা করতে দুই ভাই তার কেবিনে ঢুকলো। কি মুখার্জী বাবু, কেমন আছেন বলুন! মুখার্জী হর্ষবর্ধনকে দেখে একগাল হেসে বললেন, আরে আসুন আসুন! এই নিন কালিঘাটের সিঙাড়া খান, একদম গরম! এই বলে প্লেটে চারটে সিঙাড়া দিয়ে দুই ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। গোবর্ধন ইতস্তত করে বলল - দাদা, গোপন ক্যামেরা চালু থাকতে পারে কিন্তু! গোবরার কথায় হর্ষবর্ধনের মনে খটকা লাগলো! তাই হর্ষবর্ধন হেসে মুখার্জীকে বলল, গতবার আহারে বাংলায় সিঙাড়া খেয়ে আমার ডাইরিয়া হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে সিঙাড়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। গোবরাও তাল মেলাল, এক সপ্তাহ ধরে পায়খানা বমি জ্বর, ধর্ষনটা হতেহতে বেঁচে গিয়েছিল! অগত্যা মুখার্জী নিজেই চারটে সাবাড় করে দিয়ে বলল, চলুন এবারে তাহলে ধিমানসভায় যাওয়া যাক। আর হ্যাঁ, খরচটা ২% বাড়িয়ে বলবেন। ওটা আমার 'মিনিমাম' কমিশন। ঘর থেকে বেরানোর সময় গোবরা তার দাদাকে ফিসফিস করে বলল, এই লোকটা ধিমানসভায় ‘চোলি কে পিছে ক্যায়া হ্যায়’ চালিয়ে ঢুকেছিল না? হর্ষবর্ধন সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে চাপা গলায় বলল, দুবার চ্যাংদোলা করে ধিমানসভার বাইরে বার করে দেওয়া হয়েছিল।
ধিমানসভায় পৌঁছে দ্যাখে ম্যাডাম আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত। দুই ভাইকে দেখে ম্যাডাম বললেন - আসুন আসুন, ভালো করে দেখুন। এগুলো মেরামত করতে কতো খরচ হতে পারে? গোটা বিধানসভা ভালো করে দেখার পর হর্ষবর্ধন বলল, ফার্নিচার তো তেমন কিছু ভাঙেনি! গতবার এরচেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছিল। হর্ষবর্ধনের মুখে এই কথা শুনে উনি রেগে বললেন, যে ফার্নিচার গুলোর গায়ে একটু আঁচড় লেগেছে সেগুলোকেও পাল্টাতে হবে। সব ফার্নিচার চন্দন কাঠের বানাবেন। কাঠ স্টকে কম থাকলে আমাদের উইলক্লিনসের কাছ থেকে নিয়ে নেবেন। গোবরা বলল, চন্দন কাঠের ফার্নিচার তো ভালো হয়না! ম্যাডাম রেগে গিয়ে বলল, আমাকে কাঠ চেনাচ্ছ ছোঁড়া! গোটা জঙ্গলমহল আমার চষা! আর হ্যাঁ, পেমেন্টটা বিরোধীদের কাছ থেকে নিও। আমার এমনিতেই ৩৪বছরের দেনা!
হর্ষবর্ধন কিন্তু কিন্তু করে বলল, গতবারের পেমেন্টা কিন্তু পুরো কথাটা শেষ হলো না উনি হঠাৎ বাজখাই গলায় চিৎকার করে উঠলেন, মার্শাল! এই মার্শাল! ইধার এসো, এই দুটাকে এক্ষুনি ঘাড় ধক্কা দে কে বাহার নিকালো।

No comments:

Post a Comment