Wednesday 22 February 2017

অভিমানী মদন

                                      অভিমানী মদন

পাঁচ নম্বর বোতলটা শেষ হবার পর যখন ছ নম্বর বাংলার বোতলটা হারু খুললো, ততক্ষণে চাট শেষ। হারু কিন্তু কিন্তু করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল! তার আগেই মদন বলল, চাট শেষ তো কি হয়েছে! তুই ঢাল, আজ চাট ছাড়াই খাবো।

সকাল থেকেই আজ দাদার মুডটা অফ। সকালবেলায় দাদা হোয়াস অ্যাপে জেনেছে সিঙ্গুরের সোনালী ইতিহাস থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তখন অবশ‍্য ব‍্যাপারটা পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি! কেবলই মনে হয়েছে, দিদি এমন কাজ করতেই পারে না। তবে মনের মধ‍্যে একটু খচখচানি ছিল! তাই নাতি স্কুল থেকে ফিরতেই ইতিহাস বইটা খুলে দেখে দাদার চোখ স্থির, গাল হাঁ! বাড়ির সবাই ছুটে এলো, ভেবেছে আবার প‍্যানিক অ্যাটাক হয়েছে বুঝি! দাদার গাল হাঁ! এমনিতে দাদা দিনে দুবার মুখ খোলে, খেতে আর খিস্তি দিতে। ছেলে তো ফোন করে উডবার্ণের বেড বুক করে ফেলল। প্রায় দশ মিনিট পর দাদা করুনভাবে বলল, আমি বাদ!

অন‍্যদিনের মতন সন্ধ‍্যা থেকেই নয়! বিকাল থেকেই দাদা আজ 'অন' হয়ে গেছে। কালু আর হারু কাঁচা ছোলা, বাদাম ভাজা আর এক পেটি বাংলা নিয়ে দাদার ঘরে ঢুকেছে। আজ আর মিউজিক সিস্টেমে ভোজপুরি চলছে না! চলছে, 'ইয়ে দুনিয়া ইয়ে ম‍্যায়ফিল মেরে কাম কি নেহি'। দাদা অপলক দৃষ্টিতে সামনের দেওয়ালে টাঙানো পিয়ালীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা পেগ মেরে যাচ্ছেন। হারু কিছুট ভয় পেয়ে কালুকে বলল, গতিক ভালো না! দাদার যদি পার্থর মতন অবস্থা হয়! কালু দাদার অন‍্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে চট করে একটা পেগ মেরে গালে দুটো ছোলা ফেলে বলল, দাদার কুশপুতুল পোড়াবে কার এতো সাহস! হারু বলল, তোর নেশা হয়ে গেছে, আমি সাইকো পার্থর আত্মহত‍্যার কথা বলছিলুম!

দাদা কাঁদো কাঁদো গলায় পিয়ালীর ছবির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, তুমি তো সব জানো! বলো আমি কিনা করেছি সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়! ওনার অনুপ্রেরণায় আইটির ছেলেটাকে মঞ্চের পেছনে নিয়ে গিয়ে 1,2,3 করিয়েছি। ওনার জন‍্য ১০কিমি দুর থেকে চকলেট কিনে এনেছি! সারারাত মশার কামড় খেয়ে মঞ্চে শুয়ে থেকেছি! হারু বলল, ভাগ‍্যিস সোয়াই-ফ্লু হয়ে যায়নি!

পরের পেগটা হাতে নিয়ে আবার ছবির দিকে তাকিয়ে দাদা বলল, সবার নাম আছে আর আমার নামটাই বাদ! হারু এবার কালুকে বলল, ওরে নুর ভাবিকে একবার ফোন কর! এদিকে দাদা বলেই চলেছে, আমাকে জেলে একদিনও দেখতে আসেনি, এমনকি জেল থেকে ছাড়া পাবার পর একবারও নবান্নে বা কালীঘাটে ডাকেনি তাও আমার এতো দুঃখ হয়নি! কালু বলল, দাদা এবারে বুঝেছি কেন তোমার নাম দেয়নি! তুমি জেল খেটেছো বলে। দাদা এবার ছবি থেকে চোখ সরিয়ে কালুর দিকে কটমট করে লাল চোখে তাকিয়ে বলল, জেল তো সাইকেল চোরও খেটেছে! কালু বললো, তুমি তো এখন পোভাবশালী নও তাই হয়তো বাদ দিয়েছে! হারু পাশেই ছিল, সঙ্গে সঙ্গে একটা জোরে চাটা মারলো কালুর মাথায়।

নারদের ভিডিও গোটা রাজ‍্য দেখলো, ছেলে ঢুকাতে গিয়ে একজন জেলে গেলো, আরেক জন বিনে পয়সায় দেখিয়ে দিলো আর আমার বেলায় যত দোষ! হারু বলল, দাদা আমি সিওর, চক্রান্ত করে দিদি নামটা বাদ দিয়েছে! কালু বলল, চক্কান্ত তো সিপেম করে! হারু বলল, চিন্তা করো না দাদা, তোমার ইতিহাস ঐ অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীরা বুঝবে না! তোমার ইতিহাস ডিগ্রিকোর্সে পড়ানো হবে। কালু জল ছাড়াই শেষ পেগটা মেরে গেঞ্জীর কলারটা টেনে মুখটা মুছে বলল, আমরা এই দাবীতে কাল থেকে অনশনে বসবো!

( বি.দ্র. - এটি একটি কাল্পনিক গল্প। বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই। থাকলে সেটা কাকতালীয় )

No comments:

Post a Comment