যেদিন কালীঘাটের টালির ঘরে দেড়
হাজার কেজির বাচ্চা এলো,
সেদিন তো এলাকায় হই হই পড়ে গিয়েছিল! না, না,
নিজের নয়! কালীপিসির এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের বাচ্চা। সবার মুখে
একটাই কথা, 'এত্যো বড়ো বাচ্চা! সত্যি!' কেউ কেউ বললো, ‘এটা 'পরিবত্তন'-এর ফল।’ কেউ বললো 'কচি কেষ্টা',
কেউ বা বললো ঐ 'কচি পাত্তো'। আবার পাড়ার কচিকাঁচাগুলো 'ছোটা ভীম' বলে ডাকতে লাগলো! ওদিকে চাষার ব্যাটা মুচকি হেসে বললো, ‘‘হুঁ, হুঁ, বাব্বা, ত্যাখনই বোলেছিলুম! আমার হাইব্রিড থিওরি মিথ্যে নয়!’’
পিসি কিছুটা রাগ রাগ ভাব নিয়ে
বললো, ‘‘আ মোলো যা! এতে এতো অবাক হওয়ার কী আছে বুঝিনে বাপু! একটা সুস্থ স্বাভাবিক
বাচ্চার ওজন তো দেড় হাজার কিলোটন থুড়ি, দেড় হাজার কেজি হওয়াই
উচিত! সিপেম-এর আমলে তো যত বাচ্চা হয়েছে সবই আন্ডার ওয়েট!’’ গাছ-পালা-বাড়িঘর-সেতু-ইট-পাথর-গরু-ছাগল,
জগতের যাবতীয় জিনিসের নতুন করে নামকরণ আর নীল-সাদাকরণে কালীপিসির
বেজায় আনন্দ! স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুসারেই নিজের নামাঞ্জলি বইটা বার করে একটু
ঘাঁটাঘাঁটি করে পিসি বললো, ‘‘হলিউডের অনুপ্রেরণায় এই বাচ্চার
নাম রাখলুম 'ছোটা হাল্ক'।’’ সবাই হাততালি দিলো শুনে!
কিন্তু সমস্যা একটাই, কালীঘাটের ঐ
টালির ছোট্টো ঘর দেড় হাজার কেজির ছোট্টো বাচ্চা থাকার পক্ষে যথেষ্ট নয়! অগত্যা কী
আর করা, পিসি তার জন্য মিডল্যান্ড পার্কে সারদাখুড়োর ফ্ল্যাটে থাকার ব্যবস্থা
করলো! আর সবাইকে সকাল-সন্ধ্যা একবার করে দেখতে যাওয়ার হুকুম দিলো। সোহ্রাব চাচাকে
বাচ্চার ফলের দায়িত্ব দিলো। সোনালী মাসিকে আয়ার দায়িত্ব দিলো। ববি চাচার দায়িত্ব
পড়লো ফ্ল্যাট থেকে সমস্ত ইঁদুর-ছুঁচো মেরে তাড়ানোর। আসলে সুদীপ আঙ্কেল অনেকদিন হলো
ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিয়েছে। তবুও পিসির চিন্তার শেষ রইলো না! আসলে ঐ দিকটায় ইদানিং
মশার উৎপাত বেড়েছে। যদি মশার কামড়ে আবার বাচ্চার সোয়াইন-ফ্লু হয়! শেষে ভেটেরনারী
ডাক্তার নির্মল, কালীপিসিকে আশ্বস্থ করায় পিসি কিছুটা
নিশ্চিত হলেন।
পাত্তো মামা আর কানন মামা
পরেরদিন সকাল ১০টা নাগাদ এলো। সেদিন পাত্তো মামার প্রচুর কাজের চাপ, তাই এসেই পকেট
থেকে অনুদানের লিস্ট বার করে একে একে এস এম এস পাঠাতে লাগলো। এদিকে ছোট্টো হাল্ক
ততক্ষণে কানন মামার সাথে সুইমিং পুলে নেমে পড়েছে। দু’জনেরই জল খুব প্রিয়। ৩০মিনিট
স্নান করার পর, সোনালী মাসি যখন গা মোছানোর গামছা নিয়ে এলো
তখন বাচ্চাটি বলল, ‘‘আমি মামার তোয়ালেতেই গা মুছবো!’’
কানন এক গাল হেসে বলল, ‘‘সোন্টামনা!! এই বয়সেই
বাচ্চার এতো তোয়ালে প্রেম! ভাবা যায়!’’
এদিকে সারা দুপুর কাজ করে
ক্লান্ত হয়ে পাত্তোর একটু তন্দ্রা লেগেছে, তার মধ্যেই কখন ছোট্টো হাল্ক ঘরে ঢুকে
টেবিলের ওপর রাখা সেই অনুদানের লিস্টের কাগজটা মুড়ে চিবোতে লেগেছে। ঘরের ভিতর খুট্খাট্
শব্দে তন্দ্রা কেটে যাওয়ার পর টেবিলের ওপর তাকিয়ে দ্যাখে তালিকাটা নেই! তারপর
পাগলের মতন গোটা ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে যখন পাত্তো কাগজটা বাচ্চার মুখের ভিতর
আবিষ্কার করলো, ততক্ষণে তালিকার নাম আর ফোন নম্বরগুলোর দফারফা হয়ে গেছে। অগত্যা
পাত্তো আন্দাজেই এস এম এস পাঠাতে শুরু করলো।
বিকালের দিকে সুব্রত মামা গরম
গরম সিঙাড়া নিয়ে হাজির হলো! মুকুল মামা আর শিউলি মাসি আইনক্স থেকে 'রইস' দেখে ফেরার পথে একবার ঘুরে গেলো। রাতে মদন মামার থাকার ডিউটি পড়লো। মদন
মামা তো সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই চাটসহ চারটে বাংলার বোতল নিয়ে হাজির। ৮টার দিকে হঠাৎ
নুর আন্টি এসে হাজির। নুর আন্টি বাচ্চার গালটা টিপে ‘লুলু
ভুলু’ বলে আদর করেই পাশের রুমে মামাকে 'হুনু লুলু' আদর
করতে চলে গেল।
সকালবেলায় যখন অমিত দাদুকে নিয়ে
কালীপিসি ফ্ল্যাটে ঢুকলো তখনও মদনার হ্যাংওভার কাটেনি। গোটা ঘর বাংলার ভরপুর গন্ধে
ম ম করছে। পিসি তো রেগে কাঁই! ‘‘তোর স্বভাবটা পাল্টালোনা এখনও! ভেবেছিলাম শ্রীঘরে
গিয়ে একটু হয়তো শুধরাবি! নাহ, তোকে এখন গঙ্গার ওপাড়ে তো দূরের
কথা, এমনকি সিঙ্গুরের ইতিহাসেও রাখা যাবে না।’’
মদনা চলে যাওয়ার পর কালীপিসি
ছোট্টো হাল্ককে নিয়ে একটু আদর করে, দুটো সেলফি তুলে পোস্ট করল। ছোট্টো হাল্ক
তো ততক্ষণে অমিতদাদুর ধুতি ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে! কাছা দু’একবার খুলেও গেলো! ফেরার পথে কালীপিসিকে অমিতদাদু বলল, ‘‘এমন বাচ্চা যদি হতে থাকে তাহলে আমাদের ‘সবুজ সাথী’র সাইকেলগুলোর কি অবস্থা হবে!’’
No comments:
Post a Comment