Monday 29 August 2016

প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন



                                  প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন  
বাজারের ব্যাগটা বারান্দায় রেখেই স্ট্যান্ড ফ্যানটা অন করে চেয়ারে বসে হাঁপাতে লাগলো শুভ। এক ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে তাকে আজ প্রায় ১০মিনিটি হেঁটে বাজার থেকে বাড়ি আসতে হয়েছে। তার ওপর এই গুমোট গরমে বেচারা একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেছে। মা ফ্রিজ থেকে জলের বোতলটা নিয়ে গ্লাসে ঢেলে শুভকে দিতে যাচ্ছিল, শুভ তার মায়ের হাত থেকে জলের বোতলটা নিয়ে ঢগঢগ করে হাফটা শেষ করে দিলো। তারপর বাকি জলটার কিছুটা চোখে মুখে ছিটিয়ে ঠান্ডা করে অবশিষ্ট টুকু আবার গলায় ঢেলে দিলো। তারপর চেয়ারে বসে শুভ তার মাকে বললো 'একটা বাইক কিনে দাও নাহলে প্রতিদিন এই ভারী ব্যাগ নিয়ে এতোটা হেঁটে আসা যায় না'। শুভর মা এতক্ষণ ছেলের কান্ড-কারখানা দেখছিল, এবারে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে রওনা দিলো। রান্নাঘরের দরজার সামনে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো 'দানা মাঝিকে ১০কিলোমিটারের বেশি হাঁটতে হয়েছিল। আর বোঝা মনেহয় তোর থেকে অনেক ভারীই ছিলো"। শুভ মায়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে খালি জলের বোতলটা অজান্তেই আবার গালে তুলে দু'ফোঁটা ঢেলে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করলো।

দানা মাঝির ঘটনা যেদিন প্রথমে জানতে পারি সেদিন লোকটার অসহায়ত্বে করুনা হয়েছিল, শ্রদ্ধায় মাথা নত করেছিলাম স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দেখে। আজ শুনলাম দানা মাঝির এই করুণ বাস্তব সাগরপাড়ের মনেও কষ্ট দিয়েছে। আদিবাসী এই ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন বাহারিনের প্রধানমন্ত্রী খলিফা বিন সলমান আলি। খুশী হলাম এই ভেবে যে মানবিকতা এখনও মুছে যায়নি। অবাক হলাম বাহারিনের মতন এমন একটা দেশ থেকে সাহায্য আসায়। আর চীর কৃতজ্ঞ রইলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কারণ ডিজিটাল ইন্ডিয়া না করলে বাহারিনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দানা মাঝির কষ্টটা পৌঁছাতো না আর সাহায্যটাও আসতো না।
সকালবেলায় যখন দানা মাঝি তার স্ত্রীর মৃতদেহটা কাঁধে নিয়ে ছোট্টো মেয়েটিকে সাথে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে তখন হয়তো উনি ঘুম থেকে উঠে সলভাসন করে ক্লান্ত হয়ে তিরঙ্গায় ঘাম মুছে বেতের আরাম কেদারায় বসে উষ্ণ দার্জিলিংএ ঠোঁট ভিজিয়ে 'গুড মর্নিং সেলফি' তুলে পোস্ট করতে ব্যস্ত। গিনেস বুকে নাম তোলা পোশাকের হলোগ্রামের মাত্র একটা অক্ষর যদি ঐ আদিবাসীটির কপালে জুটতো তাহলে হয়তো কষ্টটা কিছুটা লাঘব হতো। যদি একবার আখলাকের মতন দানা মাঝির বাড়িতে কিছু লোক পাঠাতেন গো-মাংসের খোঁজে তাহলে হয়তো বুঝতে পারতেন ওদের ঘরে আপনার 'মেইক ইন ইন্ডিয়া'র বাতিটি কতোটা সুদিনের আলো ছড়াচ্ছে।
এমনিতেই আপনি বছরের বেশিরভাগ সময় এখন বিদেশে সেলফি তুলে কাটাচ্ছেন। আর বড়োলাটের ওয়ান্টেড তালিকাও তো আপনি গো-মুত্র দিয়ে শুদ্ধ করে দিয়েছেন। তাই এবারে যখন সিলিকন ভ্যালিতে যাবেন তখন গতবার লিখে আসা 'সত্য মেব জয়তে' ও 'অহিংসাই পরম ধর্ম' লাইন দুটির নিচে দানা মাঝির নামটা লিখে দিয়ে আসবেন। লোকটা সোসাল মিডিয়ার নাম কস্মীনকালে না শুনলেও, ওটার মাধ্যমে গোটা দেশবাসীকে (আপনাকে বাদে) যে থাপ্পড় মেরেছে সেটা আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি। তবে হ্যাঁ, আর্থিক সাহায্যের প্যাকেটটা কিন্তু বাহারিন থেকে আসছে। তাই নাগপুরের স্নিফার ডগ গুলোকে দিয়ে একটু প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন। বলাতো যায়না যদি প্যাকেটের মধ্যে দু-একপিস গো-মাংস থেকে যায়!

শুভ জন্মাষ্টমী

                                                                শুভ জন্মাষ্টমী 
আজ হতে ৫২৩৮ বছর পূর্বে ১৯শে জুলাই তারিখে ভাদ্রমাসের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেন বলে একে জন্মাষ্টমী বলা হয়। যদিও অনেকে এখন দাবী করছেন কৃষ্ণের জন্ম নাকি ২১শে জুলাই হয়েছিল। কংশের কারাগারে বসুদেব ও দেবকীর সংসারে তিনি জন্ম নেন। বাসুদেব কিন্তু কোনো চিটফান্ডের মালিক ছিলেন না! আসলে উন্নয়নপ্রেমী কংশকে কে ভগবান একদিন ওয়াসঅ্যাপ করে জানায় যে তার বোন দেবকীর অষ্টম সন্তান তাকে হত্যা করবে। তাই তিনি তার বোন ও ভগ্নিপতীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে বন্দি করে রাখেন। তারপর চক্রান্ত করে একের পর এক সাতটি সন্তানকে হত্যা করে আর বোনের কাছে এসে কুমিরের কান্না কেঁদে বোনে 'ছোট্টো ঘটনা' বলে সান্ত্বনা দেয়। এমনকি ক্ষতি পূরনের আশ্বাস দিয়ে রেটও ঠিক করে দেন।
অবশেষে এক গভীর রাতে কৃষ্ণের জন্ম হয়। জেলের ম্যাক্সিমাম কর্মীরা সন্ধ্যা থেকেই চটুল নাচের আসরে মদ মাংস খেয়েছিল। তাই তারা বেহুঁশ হয়ে ঘুমাচ্ছিল। আর জেলের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব কংশ যেদিন থেকে কোহরাবকে দিয়েছিল কোহরাব সেদিন থেকেই জেলের গারদের লোহা গুলি চুরি করা শুরু করেছিল। এখন গারদের দরজার কেবল ফ্রেমটাই আছে, মাঝের রড গুলি নেই। আসলে কংশ 'মিনিমাম' খেতে বললেও কোহরাব 'ম্যাক্সিমাম' খেয়েছিল। কংশ নিজেও একসপ্তাহ ধরে ডেঙ্গুতে সজ্জাসায়ী। তাই কৃষ্ণকে নিয়ে বাসুদেবের কারাগার থেকে পালাতে অসুবিধা হয়নি। তবে রাস্তায় বাসুদেবকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়ছিল। রাস্তা জলমগ্ন হওয়ায় তাকে ত্রিফলার খোলা তার বাঁচিয়ে সাবধানে হাঁটতে হচ্ছিলো। বাসুদেব জানতো গত মার্চেই ওভার-ব্রিজটা ভেঙে পড়েছিলো। তাই তিনি নদীটা সাঁতরে পার হবেন ঠিক করলেন। তবে কাজটা মোটেই সহজ ছিলো না। কারণ DVC চক্রান্ত করে প্রচুর জল ছাড়ায় নদী উত্তাল ছিল।
নদী পার হয়ে গোকুলের নন্দ-যশোদা দম্পতির কাছে কৃষ্ণকে রেখে আসেন।অন্যদিকে সেই দম্পতির সদ্য জন্মনেওয়া কন্যাসন্তানকে কারাগারে দেবকীর কোলে স্হান দেন। নিন্দুকের অনেকেই বলেন বাসুদেব নাকি কন্যাশ্রীর টাকা পাবার জন্য এমন করেন। ছোটবেলা থেকেই কৃষ্ণ দামাল প্রকৃতির ছিলো। আর চুরি করার জিনটা তো মাতুলকুল থেকেই পেয়েছিল। কংশ অনেক চেষ্টা করেছিল গোকুলের পুরসভা দখল করার, নন্দকে অর্থের প্রলোভনও দেখিয়েছিল। নন্দ ছিলো গো-পালক গোষ্ঠীর প্রধান। তাই কংশ, নন্দের বাড়ির ফ্রিজে গো-মাংস আছে বলে কুৎসা রটান। পরে তা মিথ্যা প্রমানিত হয়। এরপর থেকেই নন্দ গোকুলের সমস্ত গরুর আধার কার্ড করে দেন। কংশ কৃষ্ণকে মারতে পুতনাকে পাঠান। পুতনা গোকুলে গিয়ে হুমকি দিতে থাকে - ' কোথায় সেই বাচ্চা? তাড়াতাড়ি বলো, নাহলে আমি সবার বাচ্চা খসিয়ে দেব"। ছোট্টো কৃষ্ণ পুতনাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিল। পুতনাকে দিয়ে কাজ না হওয়াতে চাষার ব্যাটাকে দিয়ে কালিয়া নাগ পাঠায় কৃষ্ণকে হত্যা করতে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।
কৃষ্ণের মধ্যে যে কেবল মাতুল থেকে চুরির জিন এসেছিল তা নয়! কৃষ্ণের মধ্যে তার মদন মামার জিনও ছিলো। কৈশরেই রাধা নামের এক কিশোরীকে ফ্লাট করতো। ফেসবুকেই দুজনের পরিচয় হয়। প্রথমে চ্যাট তারপর যমুনার পাড়ে ডেটিং। কৃষ্ণের ইনবক্স খুলে দেখা যায় সে ১৬১০০ গোপিনীর সাথে চ্যাট করত প্রতিদিন। রাধার সঙ্গে যৌবনে মথুরায় প্রত্যাবর্তন করে কৃষ্ণ তাঁর মামা কংশের অনুগামীদের দ্বারা সংঘটিতবহু হত্যার ষড়যন্ত্র থেকে আত্মরক্ষা করে বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল খাটিয়ে কংশকে হত্যা করেন।
(বি.দ্র. - এটা একটা কাল্পনিক লেখা। পুরাণ বা ধর্মের সাথে এর কোনো সংযোগ নেই)

Wednesday 24 August 2016

কাল্পনিক বক্তৃতা

                                                                 কাল্পনিক বক্তৃতা
আজ কিশোর কুমারের জন্মদিন। উনি বেশ কিছু ভালো গান গেয়ে ছিলেন বটে, কিন্তু পোতিবাদী গান খুব বেশী গাননি। উনি ভার্সেটাইল গায়ক ছিলেন তবে আমার মতন ভার্সেটাইল শিল্পী ছিলেন না। আজ ওনার জন্মদিনে, ওনার সাথে কাটানো কিছু স্মৃতির কথা বারেবারে মনে পড়ছে। আমার জীবনের চলার পথে প্রতিটি পদক্ষেপে আমি ওনাকে খুঁজে পাই। এই! এই! এই! চোপ! চোপ! আমি কি বলছি মন দিয়ে শোনো!
ওনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় যোগমায়া দেবী কলেজের সোসালে। উনি স্টেজে তখন গান করছেন "রূপ তেরা মস্তানা", আর আমি তখন সামনের সারিতে বসে। সোসালের শেষে আমাদের কালিঘাটের বাড়িতেও আসেন। তোমরা জানো না, কালিঘাট খালের পাড়ে বসেই কিন্তু উনি প্রথম "চিংগারী কোয়ি ভড়কে" গানটি গেয়ে ছিলেন।

সুদীপ্তটাও বড়ো কিশোর পাগল ছিলো। আমার আজও মনে পড়ে ডেলোর বাংলোতে সেই রাতে, সবাই তখন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল, আমি আসতেই সুদীপ্ত গেয়ে উঠেছিল "রাত কলি এক খাওব ম্যায়ে আয়ি, অউর গলে কা হার হুয়ি"। আমি তো ওর গানে খুশি হয়ে আমার প্রিয় পেন্টিংটাই দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য ও দাম দিয়েছিল। বেচারা কিশোর প্রেমের জন্যই পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। দেবজানী কে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে কাশ্মীরের রাস্তায় দুজনে হাত ধরে " হাম দোনো দো প্রেমী, দুনিয়া ছোড় চলে" গাওয়ার কোনো দরকার ছিলো! এখন জেলে বসে "ইয়ে ক্যায়া হুয়া, ক্যায়সে হুয়া" শুনছে। তবে লোকজন টাকা টাকা করে যখন আমার পিছনে ছোটে তখন আমার ঐ গানটার কথাই মনে পড়ে "আদমি যো দে হ্যায়, আদমি যো লেতা হ্যায়, জিন্দেগি ভর ও সাজায়ে পিছা করতি হ্যায়।"
মাস খানেক আগে আলিপুর জেলের পাশ থেকে আসছিলাম, হটাৎ জেলের ভিতর থেকে দেখি কিশোরের কন্ঠ ভেসে আসছে - " বড়ি শুনি শুনি সি হ্যায়, জিন্দেগী ইয়ে জিন্দেগী"। ড্রাইভার বলল ওটা মদনার ঘরে বাজছে। নারদার ভিডিও প্রকাশ হবার পর সত্যিই খুব ভেঙে পড়েছিলাম। তখনও ওনার গান " কুচ তো লোগ ক্যাঁহেঙ্গে, লোগোকা কাম হ্যায় ক্যাঁহনা" আমাকে লড়াই করার শক্তি দিয়েছে। আর ৩৪ বছর ধরে কিশোরের গাওয়া " ইয়ে লাল রঙ, কব মুঝে ছোড়ে গা" গানটা আমি প্রতিদিন রাতে শুনতাম।
সিপিএম যখন কুৎসা করে, কন্যাশ্রী আমাদের প্রকল্প, সাইকেল আমরা চালু করেছি, তখন আমি কানে হেড ফোন লাগিয়ে শুনি " কো ই হোতা জিসকো আপনা, হাম আপনে ক্যাহেলেতে ইয়ারো"। আরে দল থেকে যখন ঐ চাষার ব্যাটাকে বহিষ্কার করলো, তখন তো আমিই আশ্রয় দিলাম। মন্ত্রী করার পর দেখি আমাকে বলছে " হামে অউর জিনে কি চাহত না হোতি, আগর তুম না হোতে"।
এই তো সেদিন নজরুল মঞ্চের গ্রীনরুমে দুজনে একটু গপ্প করছিলাম, হটাৎ ওনার মোবাইলটা গেয়ে উঠল "পল পল পল, দিল কে পাশ তুম .."। উনিও কিশোর ভক্ত সেটা সেদিনই জানলুম। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন 'তোমার রিংটোন কি'? আমিও আমার রিংটোনটা শুনিয়ে দিলাম " দিলবার মেরে কবতক মুঝে ইঁউহি তড়পায়ো গে"। উনি হেঁসে জানতে চাইলেন এমন রিংটোন সেট করেছি কেন? আমিও হেসে বলেছিলাম 'CBI এফেক্ট'। তারপর উনি বললেন, শেয়ার ইট খোলো আমি একটা ভালো গান পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওটাকে রিংটোন কোরো। তাই ওনার দেওয়া কিশোরের সেই গান আজ আমার রিংটোন। কানন, এই কানন! একটা মিসকল দাও তো! রিংটোনটা সবাইকে শোনাই।
কানন মিসকল দিতেই ওনার ফোনে কিশোরের কন্ঠ ভেসে উঠল - " কসমে ওয়াদে নিভায়েঙ্গে হাম ......."

Friday 19 August 2016

✍✍✍✍ রাখী উৎসব ✍✍✍✍



                                                     ✍ রাখী উৎসব 
রাখীর দিবসে প্রাতকাল হইতেই কালীঘাটে ভীড় উপছাইয়া পড়িতেছে। ক্ষণকাল পূর্বে ভাইপো বৈঠকখানায় আগমন পূর্বক সমবেত সভ্যগণকে(!) ক্ষণিকের জন্য অপেক্ষা করতে বলিয়াছেন। সমাবেত সভ্যগণ নিজ নিজ উপহার হস্তে লইয়া অধীর আগ্রহে বসিয়া রহিয়াছেন। উপস্হিত সভ্যেরা(!) নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপে ব্যস্ত, ইতিমধ্যে ভাইপো বৈঠকখানায় প্রবেশ করিয়া সবাইকে অবগত করিলেন যে 'উনি আসিতেছেন'। সভ্যগণ আকুল নয়নে দুয়ারের পানে চাহিয়া রহিলেন। সবার উদ্বেগের অবসান করিয়া, হাস্য বদনে, দন্ত বিকশিত করিয়া, সবার উদ্দেশ্যে হস্ত হেলন করিয়া উনি প্রবেশ করিলেন।
প্রথমেই রাখী লইয়া উনি ওনার স্নেহের কাননের নিকট উপস্হিত হইলেন। কাননকে রাখী পরাইতেই কানন একখানি মূল্যবান তোয়ালে ওনাকে উপহার দিয়া কহিলেন "ইহা বিদেশ হইতে আনিয়াছি"। নব্য তোয়ালেটি হস্তে লইয়া উনি কহিলেন "তোমার পুত্র নিশ্চয়ই ইহা আনিয়াছে! ইহা হইতে সোমরসের সুগন্ধ বাহির হইতেছে যে"! কানন দন্ত বিকশিত করিয়া সম্মতি জানাইলে। অতপর উনি অমিতের নিকট উপস্হিত হইলেন। রাখী পরাইবার পর অমিতকে জিজ্ঞাসিল " কি আনিয়াছ"? অমিত প্রত্যুত্তরে কহিলেন "মহার্ঘ্য ভাতা বকেয়া, পিতার ৩৪বৎসরের দেনা, তাই তিওয়ারীর লাড্ডু না লইয়া দাশুর লাড্ডু আনিয়াছি"। সুব্রত হাসিয়া কহিলেন "আমি কিন্তু শক্তিগড়ের ল্যাংচা আনিয়াছি"। খুশী হইয়া উনি কহিলেন "কেবল ল্যাংচা! আলুরচপ সিঙাড়া আনোনাই! সিঙাড়া তো তোমারও খুব প্রিয়"। পার্থের নিকট হইতে একখানি গীতাঞ্জলি উপহার পাইয়া উনি পার্থকে একখানি কথাঞ্জলী প্রত্যাউপহার (রিটার্ন গিফ্ট) করিলেন। ইতমধ্যে মুকুল তার প্রিয় পুষ্প 'শিউলী' ওনার চরনে দিয়া প্রণাম সারিয়া নিয়াছে।
কৃষক পুত্রের উপহারের মোড়কটি খুলিয়া ওনার চক্ষু কপালে উঠিয়া গেল! 'কেউটিয়া' নামক একটি বিষধর সর্প উপহার দিয়াছে। সর্পটি শান্ত দেখিয়া তাহার কারণ জানিতে চাহিলে, কৃষক পুত্র কহিলেন "বৈদেশীক তৈল উহার উপরে না ফেলিলে এ সর্প জাগ্রত হইবে না"। জ্যোতিপ্রিয় এক বস্তা গোবিন্দভোগ চাল আনিয়াছে দেখিয়া উনি কহিলেন "এই চালই তো আমি ২টাকা কেজি দরে বিতরণ করিতেছি"। অনুব্রত নিকটেই গুড় জল লইয়া দাঁড়িয়ে ছিল, ওনার কথা শুনিয়া তারস্বরে হাসিতে লাগিল। উনি ধমক দিয়া কহিলেন "অতো হাসিওনা কেষ্টা, বাড়িয়া যাইবে অক্সিজেন তেষ্টা"।
তাপসকে খুব দুঃখী দেখিয়া কহিলেন " চিন্তার কিছু নাই! শারদীয়ার পূর্বেই শ্যলক গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবে"। মন্টু সুন্দরবনের বাঘের দুগ্ধ, সাধন ইলিশ, গৌমত 'ডানকানে চা' আর অরুপ কিছু ডেঙ্গুর ভাইরাস লইয়া সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। উনি ওদের রাখী পরাতে যাইবেন এমন সময় পশ্চাত্ হইতে রবি তাঁর লম্বায়মান হস্ত এই বামনদিগের ওপর হইতে প্রসারিত করিলেন। হটাৎ গোলযোগ শুনিয়া উনি গৃহের এক কোনে চাহিয়া দেখিলেন, বিজন ও সমীর উপহার লইয়া এগিয়ে আসিতে চাহিছে কিন্তু দেবনারায়ণ উহাদের হস্ত পশ্চাতে টানিয়া কহিতেছে "না না না না না আমি প্রথমে রাখী পরিব"।
উপস্হিত সভ্যদের রাখী পরানো সম্পন্ন হইলে উনি ভাইপো ডাকিয়া তাহার হস্তে দুটি রাখী দিয়া কহিলেন "একটিকে দিল্লিতে পাঠাইবার ব্যবস্থা করো আর অপরটিকে আলিপুর সংশোধনাগারে"। সারাটা দিন উপস্হিত সভ্যগণ প্রচুর আনন্দ করিল। ভোজনের ও চটুল নৃত্যেরও আয়োজন হইয়াছিল। সবাই দারুণ উপভোগ করিল এই রাখী উৎসব। কেবল উনি গৃহে প্রবেশ করিতে নিষেধ করিয়াছেন বলিয়া আরাবুল আর কাইজার উপহার লইয়া সারাটা দিন বাহিরে অপেক্ষারত রহিলেন।

Tuesday 16 August 2016

স্বাদ-হীনতার বার্তা

 আজ ১৫ই আগস্ট, স্বাধীনতা দিবস। প্রায় ২০০ বছরের 'বিটিশ' অত্যাচার, খুন, ধর্ষন, লাশ গুম থেকে আজকের দিনেই ভারতবর্ষ মুক্তি পেয়েছিল। যদিও ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেলেও বাংলা স্বাধীনতা পায়নি! বাংলা ৩৪ বছর ধরে হার্মাদদের হাতে পরাধীন থাকার পর, আমার হাত ধরে ২০১১ সালে স্বাধীন হয়। তাই বাংলার মানুষের দুটো স্বাধীনতা দিবস পালন করে। ১৫ই আগস্ট সেন্ট্রাল স্বাধীনতা দিবস ও ২১শে জুলাই 'ইস্টেট' স্বাধীনতা দিবস। এই, এই, চোপ! চোপ! কথা বলোনা কেউ! মন দিয়ে শোনো!
'বিটিশ'রা প্রথমে এই বঙ্গে সিরাজের 'বিশ্ব বঙ্গ' সম্মেলনে এসে বলেছিল তারা এখানে বিনিয়োগ করতে চায়। সিরাজ অতো সাতপাঁচ না ভেবেই অনুমতি দেয়। পরে তারা কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখেনি। বেআইনি ভাবে তারা একেরপর এক রাজার জমি অধিগ্রহন করতে থাকে। শুরুতেই যদি সিরাজ, শের সাহের তৈরী জিটি রোডের উপর একটা অনশন মঞ্চ বেঁধে আমার মতন আন্দোলন শুরু করতো তাহলে হয়তো 'বিটিশ'রা এতোটা এগোতে সাহস পেতো না। তবে এটাও ঠিক যে মীরজাফর দলের ভিতরে এমন গোষ্ঠীদ্বন্দ চালাচ্ছিল যেটা সিরাজ কন্ট্রোল করতে পারেনি। আসলে সিরাজ জানতো না যে 'বিটিশ'রা তখন ভারতে নীল চাষ নিয়ে যে সিন্ডিকেট রাজ চালাচ্ছিলো, তার একটা ভাগ মীরজাফরও পেতো।
এই! এই! ওখানে কারা কথা বলছে! সিসিটিভি লাগানো আছে কিন্তু! আমি সব লক্ষ্য রাখছি! হ্যাঁ যে কথা বলছিলাম, সিপিএম মাত্রেই কিন্তু হার্মাদ নয়! যেমন এই চাষার ব্যাটা, দীপালি এদের সমস্ত পাপ এখন উন্নয়নের জোয়ারে ধুয়ে গেছে। ঠিক তেমনই 'বিটিশ' মাত্রেই খারাপ, এটা একপ্রকার কুৎসা, অপপ্রচার। রামমোহন বাবু যখন এমএলএ ছিলেন তখন বেন্টিং, রিপনের মতন 'বিটিশ'রা বিধানসভায় যথেষ্ট সহায়তা করতেন।
বঙ্গভঙ্গের সময় রবীন্দ্রনাথ আমার প্রিয় ঘাসফুল আর হলুদ সুতো দিয়েই রাখী তৈরি করেন। আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে হদুল সুতোর পরিবর্তে নীল-সাদা সুতো দেবে কিনা! আমি তেমন কোনো আপত্তি না করায় উনি হলুদ সুতো দিয়েই কাজ চালান। একবার তো গান্ধীজি অনশন আন্দোলন করার সময় হটাত অসুস্থ হয়ে পড়েন। হোয়াটস অ্যাপে খবরটা পেয়ে আমি দ্রুত রবি বাবুকে নিয়ে হাজির হই। ওনার হাতেই ফলের রস খেয়ে উনি অনশন ভাঙেন। আমি গান্ধীজিকে পরে অনেক বোঝাই যে - অনশন যদি করতেই হয় তাহলে আমার মতন চকলেট খেয়ে করুন। রবি বাবুও বকাবকি করেন। তবে আজ রবি বাবুর জন্য খুব দুঃখ হয়। ওনার নোবেলটা কে ঝেঁপে দিল সেটা আমি খুঁজে বার করবোই! আমার দলীয় কর্মীদের আছে আবেদন করছি, চলুন আজকে এই স্বাধীনতা দিবসে শপত নিই আমরা সবাই মিলে নোবেল খুঁজে বার করবোই। আমি নিশ্চিত দলীয় কর্মীরা সাহায্য করলে নোবেল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে!
এবারে পতাকা উত্তোলন হবে, 'ইন্দোনীল' একটা রবীন্দ্র সঙ্গীতের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বাকিরা যারা আছো, কচি নচি সবাই গলা মেলাও। এবারে আমি স্বাধীনতা 'ইস্পেশাল' একটা স্লোগান দেব। তোমরা সবাই আমার সাথে গলা মেলাবে ....
এই দিকে দিকে - তিনোমূল, এই জালিয়ানওয়ালাবাগে - তিনোমূল, এই নন্দীগ্রামে - তিনোমূল, এই বঙ্গভঙ্গে - তিনোমূল, এই আইন অমান্যে - তিনোমূল, এই চট্টগ্রামে - তিনোমূল, এই পিংলাতে - তিনোমূল, এই খগড়াগড়ে - তিনোমূল,
দাঁড়াও! দাঁড়াও! কেউ বাড়ি যাবেনা! আমাদের কেষ্টা সবার জন্য আজ গুড়জলের ব্যবস্হা করছে। সবাই খেয়ে যাবে।

Tuesday 9 August 2016

✍✍✍ NOবেল রহস্য ✍✍✍


সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। মাঝেমধ্যে ১০-১৫মি বিরতি, তারপর আবার শুরু। ফেলুদার এখন তেমন কাজের চাপ নেই। তাই জমিয়ে খিচুড়ি আর ইলিশ দিয়ে পেট পুজো করে দুপুরবেলা খাটেতে শুয়ে শুয়ে গতকাল রাতে ডাউনলোড করা 'প্রাক্তন' দেখতে ব্যস্ত। আমারও স্কুল বন্ধ তাই পাশের সোফাতে শুয়ে আমিও 'আজব ছড়া' বইটা নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। যদিও বইটি আমি ২১১ বার, না না ২১৩ বার পড়েছে, তবুও এটা পড়তে দারুণ লাগে। 

আসলে একেই বর্ষাকাল, বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। তার ওপর স্কুল ছুটি। আসলে বাবাই স্কুলে যেতে এখন নিষেধ করেছেন। সেদিন টিভিতে খবর দেখার পর বাবাই বললেন ' তোদের স্কুলের আশেপাশে প্রচুর ময়লা আবর্জনা, পুরোসভা স্কুলের কর্মচারী কেউই ঠিকমতো পরিষ্কার করেনা। স্কুলের পিছনে থানার গ্যারেজটা তো মশার আড়ত! আগে ওগুলো পরিষ্কার হোক, তারপর স্কুলে যাবি। নাহলে নির্ঘাত ডেঙ্গি হবে"। ফেলুদা অবশ্য সেদিন বাবার কথা শুনে হেসে বলেছিল ' তোপসে, তুই মনেহয় একমাসর ছুটি পেয়ে গেলি'

বিকেল ৫টা বাজতেই কলিংবেলটা 'টিংটং' করে বেজে উঠলো। ফেলুদা শুয়ে শুয়ে ট্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়ে চারমিনারে একটা টান দিয়ে বলল ' যা দরজা খোল, লালমোহন বাবু এসেছেন'। দরজা খুলে দেখি সত্যিই লালমোহন বাবু। আমি ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে ফেলুদার দিকে তাকাতেই, ফেলুদা শেষ হয়ে যাওয়া চারমিনারে সুখটান দিয়ে ফিল্টারটাকে ক্যারামের স্টাইকারের মতন জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে এক চান্সে বাইরে ফেলে বললেন ' ৪৪বছরের (৩৪+১০) পুরনো অ্যাম্বাসাডরের শব্দ চিনতে ফেলু মিত্তিরের ভুল হব'!

তারপর লালমোহন বাবুর সাথে ঝাড়া ৩ঘন্টা বাঙালি আড্ডা চলল চা সিঙাড়া তেলেভাজা সহযোগে। লালমোহন বাবুর তো কৌতূহলের শেষ নেই! আর ফেলুদাকে পেলে তো ভদ্রলোকের সময় সম্পর্কে আর কোনো হুঁশই থাকে না। বঙ্গপোসাগরে বিমান দুর্ঘটনা থেকে রাষ্ট্রপতির পাহাড় থেকে বেঁচে ফেরা। আবেশের খবর থেকে গোটা দেশের খবর। তবে গো-হত্যা নিষিদ্ধকরণের খবরটা মনেহয় জেনে বুঝেই চেপে গেলেন। হাজার হোক ব্রাহ্মণ তো! আড্ডা মোটামুটি শেষের পথে এমন সময় হটাৎ লালমোহন বাবু বললেন ' দেখেছেন মিত্তির মশাই গল্পে গল্পে আপনাকে আসল খবরটা দিতেই ভুলে গেছি! এই ভুলভুলাটিস রোগটা মনেহয় আর সারলো না! বলছি নোবেলের কেসটা শুনেছেন? আবার তদন্ত হবে! উনি নাকি নিজেই তদন্ত করবেন!

ফেলুদা আরেকটা চারমিনার ধরিয়ে বলল ' উনি যদি তদন্ত করেন তাহলে আপত্তি কিসের?' লালমোহন বাবু কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন ' যে কাজ সিবিআই পারলো না, সেটা উনি করবেন! তাহলে তো মিরাক্কেলিয়াস ব্যাপার হবে মশাই'। ফেলুদা হাওয়াতে একটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বলল ' আপনি ভুলে যাচ্ছেন লালমোহন বাবু, একটা চোরই কিন্তু একটা চোরকে ভালো চেনে"। লালমোহন বাবু কিন্তু কিন্তু করে বললেন ' তা আপনি ঠিকই বলেছেন, তবে গোয়েন্দাগিরি কি ওনার কম্ম'! ফেলুদা মুচকি হেসে বললেন "সেকি মশাই আপনি গোয়েন্দা গিন্নি দেখন না! উনি হলেন আমাদের গোয়েন্দা দিদি। সারাদিন উপন্যাস নিয়ে না পড়ে থেকে মাঝেমধ্যে একটু সিরিয়াল টিরিয়াল দেখুন। তবে হ্যাঁ এবারে পুজোর জন্য কিন্তু এটা ভালো উপন্যাস হতে পারে, মদন পেলো না বেল, দিদির হাতে নোবেল"।


গেট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতেই গাড়িটা ৩-৪বার ঘড়ঘড় করার পর স্টার্ট নিলো। লালমোহন বাবু একগাল হেসে বললেন 'এবারে দেখছি গাড়িটা পাল্টাতেই হবে'। ফেলুদাও হেসে বললেন ' আরে না না, শুধু নম্বর প্লেটটাই পাল্টে WB জায়গায় BG (বঙ্গ) করলেই হবে'