Thursday 22 September 2016

জমি আন্দোলনের নবজাগরণ

                              জমি আন্দোলনের নবজাগরণ
কালীপিসি সিঙ্গুরের ৪০০০ বর্গ ফুট চিতা থেকে ঘোষণা করলেন " কথা দিয়েছি, কথা রেখেছি"। অমনি 'হর্ষধ্বনি'তে ফেটে পড়েছিল কার্শিয়াং থেকে কালীঘাট। ৯৯৭ একরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্হিত ছিলেন বেশ কিছু লুপ্তপ্রায় প্রাণী। এরা যে বেঁচে আছে সেটা এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান নাহলে রাজ্যবাসী জানতেও পারতো না! জ্বলন্ত চিতায় দাঁড়িয়ে হুমকির সুরে শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করলেন, সাত দিন সময় দিলাম, এর মধ্যে জমি নিতে হয় নিন। আজ সাতদিন অতিক্রান্ত। কোনো শিল্পপতি ওনার হুঙ্কারের 'সনমান' জানিয়ে সাড়া দিয়েছে বলে কোনো খবর নেই। ওনার অপহরণ মন্ত্রীও জার্মানী থেকে BMW এর কর্মকর্তাদের অপহরণ করতে ব্যর্থ।

তবে উনি জমি আন্দোলনের নবজাগরণ ঘটিয়ে অনিচ্ছুক(!) কৃষকদের জমি ফেরত দিয়ে বাংলায় আবার 'সবুজ বিপ্লব' ঘটানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, তা কিন্তু আজ অন্য মাত্রা নিয়েছে। ওনার জমি আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় আজ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকেরা তাদের অধিগৃহিত জমি ফেরত পাবার স্বপ্ন নতুন করে দেখছে। তারা আজ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, সিঙ্গুরের কৃষক যদি টাকা নিয়েও জমি ফেরত পায় তাহলে আমরা পাবোনা কেন! শুভ কাজে মিষ্টি মুখ করতে হয়, তাই ল্যাংচা হাবের জমি দিয়েই এই কর্মসূচীর শুভ সূচনা হয়।

ক্রমে ডেঙ্গুর থেকেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই জমি ফেরত পাওয়ার আন্দোলন। পুরুলিয়ায় রঘুনাথপুর ১ ব্লকের দুরমুট মৌজায় শিল্পতালুকের জন্য অধিগৃহিত ১,৮৯৭ একর জমি এবারে ফেরত চাইছেন কৃষকেরা। আন্দোলনের জোয়ার শিলিগুড়িতে পৌঁছে গেছে, দু এক সপ্তাহের মধ্যেই পাহাড়ে পৌঁছে যাবে মনেহয়। আন্দোলন যে কেবল পাহাড়মুখী, তা কিন্তু নয়! কোলকাতামুখীও বটে। নিউটাউন রাজারহাটের কৃষকেরাও এই জমি আন্দোলনের কর্মযঞ্জে ইতিমধ্যেই সামিল হয়েছেন।

এরপর যদি এই ঐতিহাসিক আন্দোলন যদি সিলেবাসে ঢোকে তাহলে তো আর কথাই নেই! একেবারে খাপে খাপ, মান্নার বাপ! ইডেনের বাইশ গজও একদা উর্বর দোফসলা জমি ছিলো। তাই ক্লাব হাউসের নিচেই মঞ্চ বেঁধে অনশনের টেস্ট ম্যাচ শুরু হয়ে যাবে।
এরপর রাজ্যের যেখানে যত অধিগৃহিত সরকারি জমি আছে, সেখানে সেখানেই জমিদাতারা বিক্ষোভ করবেন জমি ফেরতের জন্য। কারণ আপনিই ওদের এইভাবে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে শিখিয়েছেন। তাই এই সমস্যার মুখোমুখি আপনাকে প্রতিনিয়ত হতেই হবে, তা আপনি 'ইচ্ছুক' হন বা 'অনিচ্ছুক'! অবশ্য এতো কিছুর পরেও আপনি স্বভাবসিদ্ধ ডোন্ট-কেয়ার অ্যাটিচিউডে, এসব 'ছোট্টো' সমস্যায় 'আমারা সবসময় রেডি থাকি রে' বলতেই পারেন!

কোনদিন সকালে কিছু কৃষককে যদি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে, তাদের খাল পাড়ের জমি ফেরত পাওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখেন তাহলে আশ্চর্য হবেন না! পিসি কি তখন ঐ অধিগৃহিত জমি ফেরত দেবে! নাকি পিসি কোনো 'অলৌকিক' শক্তিবলে অধিকৃত 'অবৈধ' জমিটিকে বৈধ্য করে নেবেন! আসলে দেবীরা (ঠাকুর) সবই পারেন .....

Monday 19 September 2016

বোতলের দৈত্য

                                     বোতলের দৈত্য 

নিমাই'দার বাংলার দোকান থেকে কেষ্ট'দা প্রতিদিনের মতন আজও একটা বাংলার বোতল কিনে বাড়ি ফিরল। আজ কেষ্ট'দার কি হলো, কে জানে! মাত্র একটা বোতলেই ফুল আউট! নেশার ঘোরে খালি বোতলটার গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে কি সব বলছিল যেন। হঠাৎ বোতলের মধ্যে থেকে ধোঁয়া বার হতে লাগল। তারপর সেই ধোঁয়ার ভিতর থেকে একটা দৈত্য বেরিয়ে এসে বলল " হুকুম করো আকা, আমি আপনার অনুগত দাস।" কেষ্ট'দা তো দেখে হ্যাঁ হয়ে গেলো!

পরবর্তী কথোপকথন .....

কেষ্টদা = তুমি কে বাওয়া???

দৈত্য = আমি বোতলের দৈত্য। আপনার অনুগত দাস।

কেষ্টদা = যাহঃ কেলো! এতদিন জানতুম প্রদীপ ঘসলে দৈত্য বার হয়। এখন দেখছি বোতল ঘসলেও দৈত্য আসে!

দৈত্য = এটা পরিবর্তনের যুগ। এখন সবই সম্ভব।

কেষ্টদা = তোর মুখটা কতোকটা মদনার মতন লাগছে! আচ্ছা আমি যা বলবো তুই সব শুনবি? কই দেখি আমার জন্য একটা বাংলার বোতল নিয়ে আয় দেখি!

দৈত্য = (পকেট থেকে একটা একটা বাংলার বোতল বার করে কেষ্টদার হাতে দিয়ে) চাট কিছু লাগবে স্যার!

কেষ্টদা = ছোলা ভাজা আর কাঁচালঙ্কা হলেই চলবে। অনেকদিনের ইচ্ছা বারে বসে গান শুনে শুনে মাল খাবো। জুট মিলটা লক আউট হওয়ার পর থেকেই হাতে আর একটিও পয়সা নেই! সখটা আর এ জন্মে পূরণ হলো না!

দৈত্য = আপনি চাইলেই এখুনি গানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি!

( সঙ্গে সঙ্গে মিউজিক সিস্টেম হাজির। ভোজপুরী গান চলতে লাগল। কেষ্টদা বোতলটা খুলে পেগ বানাতে যাবে এমন সময় দৈত্য কেষ্টদার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে নিলো)

দৈত্য = স্যার আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমিই পেগ বানাচ্ছি।

কেষ্টদা = (দৈত্যের পেগ বানানো দেখে) ভাই তুমি এত 'বিন্দু বিন্দু করে' মেপে মেপে পেগ বানাচ্ছো কেন?

দৈত্য = আমি সবাইকে বিন্দু বিন্দু করেই সিন্ধু দর্শন করাই স্যার। একটা অনুরোধ ছিল স্যার! আসলে আমার সামনে কেউ বাংলা খেলে আমার গলাটা কেমন শুকিয়ে যায়। তাই যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার সাথে আমিইও পেগ দুই মারি!

কেষ্টদা = এতে আবার পারমিশনের কি আছে! মদ সবসময় মিলে মিশে ভাগ করে খেতে হয়। এতে একটা 'উৎসবের' পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

(পেগ দুই খাবার পর আরও নেশা চড়ে গেলো কেষ্টদার)

কেষ্টদা = আমার দাদার সিন্ডিকেটের ব্যবসা, প্রচুর পয়সা। কিন্তু শালা লোকের কাছে কেঁদে বেড়ায়, বাপের '৩৪' লাখ দেনা শোধ করতেই নাকি ওর সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে!

দৈত্য = ( আক্ষেপের সুরে ) আমার দিদিও আমাকে আর দেখেনা। ২২মাস টানা বোতল বন্দি ছিলাম। একদিনও দেখা করতে আসেনি! সে যাই হোক আপনি চাইলে আপনারও একটা অফিস করে দিতে পারি মিডল্যান্ড পার্কে!

কেষ্টদা = জুট মিলের কাজটা যেদিন চলে গেলো, সেই সন্ধ্যায় বৌ তল্পিতল্পা বেঁধে মেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়ি গিয়ে উঠলো। তিন মাসে একটাও ফোন করলো না! পাশের বাড়ির চম্পা বৌদি আগে আমাকে দেখে কি ঢলানি মারতো! বৌকে লুকিয়ে কতো গিফ্ট কিনে দিয়েছি। যেদিন শুনলো আমার কাজটা নেই, একবারও আমার দিকে ফিরেও চাইলো না! ( হঠাৎ দৈত্যের চোখ ছলছল করে উঠলো ) কি হলো তুমি কাঁদছো কেন?

দৈত্য = না ও কিছু নয়! পিয়ালীর কথা মনে পড়ল।

কেষ্টদা = ওপাড়ার হারুদা, ছেলের বিয়ে দিলো ধুমধাম করে। কতো লোক খেলো! আমার ছেলেটার মেয়েটার যদি অমন যাঁকজমক করে বিয়ে দিতে পারতুম! শালা কন্যাশ্রীর টাকার পুরোটাই মেরে দিলো পঞ্চায়েত প্রধান!

দৈত্য = যদিও আমি এখন আর আগের মতন প্রভাবশালী নেই নেই! এখন একটু অভাবশালী তবুও চিন্তা করবেন না স্যার! আপনার মেয়ের বিয়েতে ২৫০০টাকার প্লেট হবে। (পকেট থেকে দুটো কাগজ বার করে ) এই নিন আপনার মেয়ের বিয়ের মেনুকার্ড আর ডেলোর বাংলোতে হানিমুনের টিকিট।

কেষ্টদা = মেয়ের বিয়ের জন্য যখন এতকিছু করলেন, তখন একটা ভালো সরকারি চাকুরে ওয়ালা ছেলে খুঁজে দিন না! রাজ্য সরকার নয়! কেন্দ্রীয় সরকার। DAএর জন্য সংসারে অশান্তি হোক আমি চাইনা। ঐ কেন্দ্রীয় সরকারের যেকোনো ডিপার্টমেন্ট হলেই হবে। আর সিবিআই হলে তো কোনো কথাই নেই! সোনার টুকরো জামাই হবে।

সিবিআই এর নাম শুনে দৈত্যের প্যানিক অ্যাটাক হলো। দৈত্য ধোঁয়া হয়ে আবার বোতলে ঢুকে গেলো।

বাবা বিশ্বকর্মার বঙ্গে পদার্পণ

                               বাবা বিশ্বকর্মার বঙ্গে পদার্পণ
স্বর্গ থেকে ফ্লাইটটা যখন দমদমে ল্যান্ড করলো তখন এয়ারপোর্ট সাংবাদিকে পুরো ঠাসা। বিতনু আবাপে লাইভ কমেন্ট্রি করছে " এই মাত্র স্বর্গের ফ্লাইট ল্যান্ড করল, হ্যাঁ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এক হাতে ঘুড়ি আর অন্য হাতে লাটাই নিয়ে নেমে আসছেন স্বয়ং বাবা বিশ্বকর্মা। হ্যাঁ সুমন, উনি এবারে নবান্নের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। হ্যাঁ উনি নবান্ন থেকে পাঠানো BMW তে উঠলেন।" নবান্ন আজ বিশ্বকর্মার আগমনে সেজে উঠেছে। সেখানেও সাংবাদিকদের উফছে পড়া ভিড়। নবান্নের অফিসিয়াল রির্পোটার নিরাশাবুল সেখান থেকে লাইভ কমেন্ট্রি দিচ্ছে " হ্যাঁ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বিশ্বকর্মাকে, আমাদের মাননীয়া অভ্যর্থনা করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থাই করে রেখেছেন। হ্যাঁ সুমন, এই মাত্র বিশ্বকর্মা নামলেন। চারিদিকে পুষ্প বৃষ্টি হচ্ছে। লাউড স্পিকারে বাজছে, যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে লাটাই তো আমার হাতে। মনেহয় এবারে সত্যিই রাজ্যে শিল্পের জোয়ার আসতে চলেছে। হ্যাঁ সুমন, উনি লিফ্টে উঠলেন ১৩ তলার উদ্দেশ্যে"।

বিশ্বকর্মা মাননীয়ার অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুড়ি ওড়াতে। প্রথমেই কোলকাতার কাছেই সল্টলেকে গেলেন। ঘুড়ি লাটাই নিয়ে গাড়ি থেকে বার হতেই সদ্য ছাড়া পাওয়া কাউন্সিলর হাজির। হুমকির সুরে বললেন " শুধু ঘুড়িই ওড়াবেন! আগে কিছু হাজারের পাত্তি ওড়ান!" বিশ্বকর্মা অবাক হয়ে বললেন "তুমি কে বাবা!" কাউন্সিলর তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিকে তাকিয়ে বললে " এ কে শান্তি গোপাল! ঘাটের মড়াটা আমার রেপুটেশান সম্পর্কে কিছুই জানেনা দেখছি!" তখন এক চ্যালা বলল " দাদার ফিক্স রেট, লোকালদের মিনিমাম আর ফরেনারদের ম্যাক্সিমাম। আপনি কোথাকার মাল?" বিশ্বকর্মা ঘুড়ি লাটাই গুড়িয়ে নিয়ে বলল " আমি দুটোর কোনোটিও নই।"

এরপর বিশ্বকর্মা নিউটাউনে গেলো। সেখানে ঘুড়ি বার করতেই ভজাই এসে বলল "ঘুড়ি যদি ওড়াতেই হয় তাহলে আমাদের সিন্ডিকেট থেকে ঘুড়ি কিনে ওড়াতে হবে। এটাই দাদার নির্দেশ।" বিশ্বকর্মা এবারে ঠিক করলেন গঙ্গার ধারে ঘুড়ি ওড়াবেন তাই তিনি বন্দর এলাকায় গেলেন। সেখানেও সমস্যা! লোকাল এক মন্ত্রীকে অনুরোধ করতে তিনি বললেন "আমি এসব ছোটো ব্যাপারে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করিনা।" কোথাও ঘুড়ি ওড়াতে না পেরে বাধ্য হয়ে বিশ্বকর্মা মাননীয়াকে সব কিছু ওয়াটস অ্যাপ করে জানালেন। মাননীয়ার রিপ্লাই দিলেন " আপিন জেলায় জেলায় ঘুরে চেষ্টা করুন। আমাদের ল্যান্ড ব্যাঙ্কের জমিতেও চেষ্টা করতে পারেন।" বিশ্বকর্মা মাননীয়ার নির্দেশে জেলা সফরে বেরিয়ে পড়লেন।

বীরভূমে গিয়ে শান্তিনিকেতনে শান্তিতে একটু ঘুড়ি ওড়াবেন ভাবলেন কিন্তু তা আর হলো কই! বীরভূমের বাতাসে তো অক্সিজন কম! বিশ্বকর্মার ঘুড়ি আবার কম অক্সিজেনে ওড়ে না। পুরুলিয়া বাকুড়ায় আবার মাওবাদী ফতেয়া। ঘুড়িতে AK47 এর ছবি থাকতে হবে। মালদার কালিয়াচকে তো ঘুড়ি টেস্ট করে দেখতে হবে ঘুড়িটা হিন্দু না মুসলিম! তারপর ওড়ানোর সিদ্ধান্ত। দার্জিলিং এর আকাশ তো হঠাৎ হঠাৎ গুরুং গুরুং করে। তাই ওখানেও ঘুড়ি ওড়ানো যাবেনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাঠে তো প্রচুর কেউটের উপদ্রব। তাও উনি চেষ্টা করলেন কিন্তু কোথা থেকে একটা এঁড়ে (বুল) এসে এমন গুঁতো মারল যে ঘুড়ি লাটাই সব লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। মুর্শিদাবাদে তো লাটাই এর মাঞ্জা দেওয়া সুতোর জন্য মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেলো! বলে কিনা এই ধারালো সুতো আসলে মানুষ খুন করার চক্রান্ত! শেষে মেদনীপুরে গিয়ে যদিও বা ঘুড়ি উড়ল, মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঘুড়িটা কে অপহরণ করে নিলো!

অবশেষে কোথাও ঘুড়ি ওড়াতে না পেরে বিশ্বকর্মা হতাশ হয়ে নবান্নে ফিরলে মাননীয়া হাসি মুখে বললেন "ঘুড়ি ওড়াতে গেলে জায়গা নিজেকই খুঁজে নিতে হবে। প্রয়োজনে জমির মালিকদের আদর করে বলুন, দাদা একটু ঘুড়ি ওড়াবো! আপনি খামোখা এতো ছোটাছুটি করলেন। সিঙ্গুরে গেলেই তো পারতেন! ওখানে প্রচুর জমি পড়ে আছে!" বিশ্বকর্মা হেসে বললেন " ওটা তো অবৈধ।"

উৎ'শব'-এর বার্তা

                                    উৎ'শব'-এর বার্তা 
আজ এই মহান প্রাগ-ঐতিহাসিক দিনে সমস্ত সিঙ্গুরবাসীকে জানাই শুভেচ্ছা অভিনন্দন পোনাম আদাব সেলাম। (গোটা স্টেজ জুড়ে লুকোচুরি খেলতে খেলতে) আমাদের মধ্যে আজ উপস্হিত রয়েছেন প্রতুল'দা থেকে শুরু করে, যোগেন'দা থেকে শুরু করে, শুভা'দা থেকে শুরু করে....(৩০টা 'দা' ২০টা 'দি')....তাপসীর পরিবার সহ আমার গরমেন্টের সমস্ত অফিসার। শুধু মদনা একাই আজ আসতে পারেনি। 

জমি হলো কৃষকের আশ্রয়, সেটা সিপিএম কেড়ে নিয়েছিল। ঠিক যেমন ইডি শুভাদার ফ্ল্যাট কেড়ে নিয়েছিল। জমি কেড়ে নিয়েই ওরা কৃষকদের অভাবশালী করে দিয়েছিল। ঠিক যেমন মদনাকে সিবিআই করছে। আজ আমি জমি ফেরত দিয়ে আমার কথা রেখেছি। তবে অনেক অনিচ্ছুক এখন আমার অনুপ্রেরণায় এই জমিতে উন্নয়নের জোয়ার আনতে চাইছেন। তাই টাটা বিএমডাবলিউ এর কম্মোকত্তাদের বলছি, আপনারা চাইলে এখানে এখন শিল্পো করতে পারেন। তবে একটাই শত্ত, আমাকে নিয়মিত তোলা দিতে হবে। দেশীয় শিল্পোপতি হলে মিনিমাম আর ফরেন হলে ম্যাক্সিমাম।

আমি আমার জীবন বাজি রেখে এই আন্দোলন করেছিলাম। এই এক্সপ্রেসওয়েকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলাম। ওরা তো মাত্র ধম্মোঘটের একদিন বন্ধ করেছিল। আমি আজও ভুলিনি, সেদিন আমাকে বিডিও অফিস থেকে পিটিয়ে বার করে দেওয়া হয়। তাই এখন আমি সুযোগ পেলেই চাবকাই। সেদিনে ওরা মেরে আমার রক্তক্ষরণ করেছিল। নিম্মল কই! নিম্মল! ওর দেওয়া ডায়ালিসের রিপোর্টটা আমি এখনও রেখে দিয়েছি। ভাবতে পারেন, ২৬দিন কেবল চকলেট খেয়ে কাটিয়ে ছিলাম! মনে রাখবেন, সিঙ্গুর নাহলে নন্দীগ্রাম হতো না! নন্দীগ্রাম নাহলে নেতাই হতো না! ঠিক যেমন সারদা নাহলে ডেলো হতো না! আর ডেলো নাহলে নেতা মন্ত্রীদের জেলও হতো না।

এই এই চ্যাঁচামেচি নয়! অ্যাম্বুলেন্সটাকে আস্তে আস্তে বার করে দাও। ডানদিকে যাও, ডানদিকে যাও, বামে একদম নয়! সাইরেন বন্ধ করো! আমি বক্তৃতা দিচ্ছি দেখতে পাচ্ছো না! এই দ্যাখো তো রুগী আছে নাকি! সিপিএম আবার চক্কান্ত করে এটাকে ঢুকিয়ে দেয়নি তো!

হ্যাঁ যেটা বলছিলুম, রাজ্যে ৬লক্ষ কম্মো সংস্থান হয়েছে। তেলেভাজা, মুড়ি, ল্যাংচা শিল্পে রাজ্য প্রথম সারিতে। তোলাবাজী ও সিন্ডিকেটেও জোর কদমে নিয়োগ চলছে। কাজে আরও গতি আনতে কাউন্সিলরকে আবার সল্টলেকে পোস্টিং করা হয়েছে। আজ টেটের রায় বেরিয়েছে। পাত্তো পাত্তো কোথায় গেলো! ওকে একটা মাইক্রোফোন দাও! হ্যাঁ দিদি আমরা অনলাইনে রেজাল্ট ছেড়ে দিয়েছি। একেই বলে এগিয়ে বাংলা, সিপিএম তুই ঠ্যালা সামলা। আমরা সবকিছু রেডি করে রাখি রে। প্রশিক্ষিতরা আগে সুযোগ পেলেও যারা আমাদের অনুদান দিয়েছেন তারা চিন্তা করবেন না। আপনারাও পাবেন। এবারে ইন্দোনীল একটা গানের পরিবেশ সৃষ্টি করো। আমরা সবাই গলা মেলাবো।

সামনে বিশ্বকম্মা পুজো, তারপর দুগ্গা পুজো, মনে আছে তো এক্সটা ছুটির কথা! তারপর লক্ষ্মী কালী কার্তিক জিশু সরস্বতী, একটার পর একটা উৎসব। সবাইকে আনন্দের সাথে পালন করতে হবে। আর এবার থেকে প্রতি বছর ২৫শে সেপ্টেম্বর আমরা পালন করবো "সিঙ্গুর উৎশব"।

(বাস্তবের সাথে এই রচনার মিল থাকলে সেটা কাকতালীয়)

Tuesday 13 September 2016

কালীপিসি এখন "ওয়ার্ল্ড ট্যুরে"

                              কালীপিসি এখন "ওয়ার্ল্ড ট্যুরে"
নরেন মুদির দোকানে গেলে মুদি কালীপিসিকে প্রায়ই দেশ বিদেশের নানান গল্প শোনায়, সেলফি দেখায়। পিসি অভিমানের সুরে বলে "আমার তো তোমার মতন কালোধন নেই, যাকে সম্বল করে দেশে দেশে ঘুরে সেলফি তুলে বেড়াবো!" এমনিতে পিসি বাংলা ছেড়ে কোথাও খুব একটা যাননা। মাঝেমধ্যে একটু টেনশনে থাকলে পুরী গিয়ে পুজো দিয়ে, সোনারতরীতে দুদিন কাটিয়ে আসেন। বহুকাল আগে একবার সিঙ্গাপুর আর বছর খানেক আগে লন্ডন ঘুরে এসেছিল বটে। আর বাংলাদেশ তো একরকম নিজের বাংলার মতন। ওটাকে পিসি 'ফরেন' তালিকায় রাখেন না। তাই এবারে ট্রাভেল এজেন্সিকে দিয়ে দুবাই, রোম আর জার্মানীর প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করেছেন।
পিসি দুবাইয়ে নেমেই সটান বুর্জ-আল-খলিফার মাথায় উঠে গেলেন। বলে কিনা ওখান থেকে ধর্মঘট মনিটরিং করতে সুবিধা হবে। সারাদিন বুর্জের মাথায় বসে থেকে সন্ধ্যাবেলায় যখন বললেন 'ধর্মঘট পুরোপুরি ব্যর্থ' তখন দুবাইয়ের মরুভূমির উঠ গুলোও দাঁত বার করে হাসছিলো। তারাও বুঝতে পেরেছে পিসি বুর্জ থেকে নেমে বুজরুকি দিচ্ছেন।
পরেরদিন রোমে গিয়ে সন্ধ্যাবেলায় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ত্রিফলার আলো দেখে পিসির স্নেহের ভাই কানন, পিসিকে বলল "এরাও দেখছি আমাদের মতন ত্রিফলা লাগিয়েছে!" পিসি হাসি মুখে বললেন " বাংলা আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এটাই তো বিশ্ব বাংলা! এগিয়ে বাংলা!" পাশে থাকা (আ)বাপের ব্যাটা, নিরাশাবুল বলল " দিদি, ত্রিফলার গায়ে তো কই নীল-সাদা সাপ নেই!" দিদি বলল "রোমের আর্থিক অবস্হা বাংলার থেকেও খারাপ। তাই আর খরচা বাড়ায়নি।" নিরাশাবুল কৌতূহল বশে জিজ্ঞাসা করিল "সিপিএম কি রোমেও ৩৪বছরের বেশি ক্ষমতায় ছিল?"
রাতে পিসি হঠাৎ বায়না জুড়ে দেয়,'মাদার' মানেই 'মা' আর তিনি তো 'মামাটিমানুষের' প্রতিষ্ঠাতা, তাই তাকেও মাদারের 'সন্ত উপাধি প্রদান' অনুষ্ঠানে দু-চার কথা বলতে দিতেই হবে। সেই মত বাসুকে দিয়ে পোপের কাছে আবেদনও করেন। কিন্তু পিসি যদি বলতে উঠে আবার স্লোগান দেওয়া শুরু করে! তাই চার্চ রিক্স নেয়নি। আর তাতেই পিসি চটে গেছেন। চেঁচিয়ে বলে, "আমি ২১৩ (বোনাস ২ সহ), আমাকে বলতে দেবেনা!" পিসি তো পোতিবাদে ভাটিকানের রাস্তায় একটা মঞ্চ বেঁধে অনশন শুরু করবেন ঠিক করেছিলেন। অবশেষে সবাই অনেক বোঝানোয় পিসি শান্ত হন। শেষে পিসি সবাইকে নিয়ে রোমের গলিতে গলিতে এর পোতিবাদে পোতিবাদী-গান করে বেড়ালেন - "আজ মাদার হবে সন্ত, ভাটিকানেও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র!"
জার্মানীতে নামতেই এয়ারপোর্টে কালীপিসিকে সন্দেহবশত কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে নিরাশাবুল তার মিডিয়া নেটওয়ার্ক থেকে জানতে পারেন যে ওরা নাকি নাৎসি বাহিনীর সাথে পিসির কি একটা লিঙ্ক খুঁজে পেয়েছিলেন। পিসি অবাক হয়ে বলে, " আমি সবাইকে চমকাই আর এরা কিনা আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসায়! এতো বড়ো সাহস! আগে জানলে অধিকারীকে নিয়ে আসতুম।"
গতবার সিঙ্গাপুরে থেকে ফিরে বায়না করেছিল ধর্মতলায় একটা বড়ো সিংহ-মূর্তির ফোয়ারা বসাবে, তার গাল থেকে নীল-সাদা জল বের হবে। অতি কষ্টে সেবারে বোঝানো গিয়েছিল পিসিকে, একেই বর্ষার জলে কোলকাতা জলকাতাতে পরিনত হয় ওটা বসালে সমস্যা আরও বাড়বে। আর এবারে মিউনিখে গিয়ে বায়না জুড়েছে, সিঙ্গুরের জমিতে BMWএর কারখানা করবে। তিন ঘন্টা রিসেপশানে বসে থাকার পর যখন BMW এর কর্মকর্তারা পিসিকে ডেকে জমি সমস্যার কথা বললেন, তখন তো পিসি রেগে আগুন তেলে বেগুন হয়ে বললেন, "ডোন্ট আন্ডার এস্টিমেট দ্যা পাওয়ার অফ 'অনিচ্ছুক কৃষক'। তারা টাটার মতন ভিখারী কম্পানি আর ন্যানোর মতন ছোট গাড়ির জন্য জমি দেয়না। কিন্তু বিএমডাবলিউ এর জন্য অবশ্যই জমি দেবে।"

পাগলা দাশু

                                      পাগলা দাশু 
রামপদ ধর্মঘটের দিন একহাঁড়ি বর্ধমানের মিহিদানা লইয়া স্কুলে আসিল। আমরা সকলেই মহা উৎসাহে সেগুলি ভাগ করিয়া খাইলাম। খাইল না কেবল দাশু। পাগলা দাশু যে মিহিদানা খাইতে ভালোবাসে না, তা নয়। কিন্তু রামপদকে সে একেবারেই পছন্দ করিত না,দুজনের মধ্যে প্রায়ই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলিত। আমরা রামপদকে বলিলাম, "দাশুকে কিছু দে।" রামপদ বলিল, "কি রে দাশু, খাবি নাকি ? দেখিস্‌, খাবার লোভ থাকে তো বল্‌ পরে আবার আমার নামে কুৎসা রটাস না!" এমন করিয়া বলিলে তো রাগ হইবারই কথা, কিন্তু দাশু কিছু না বলিয়া গম্ভীরভাবে হাত পাতিয়া মিহিদানা লইল, তারপর দারোয়ানের ছাগলটাকে ডাকিয়া সকলের সামনে তাহাকে সেই মিহিদানা খাওয়াইতে খাওয়াইতে বলিল, "নাতি বর্ধমানের মিহিদানা এনেছে, ভালো করে খাও। হাবের জমিও চলে যাচ্ছে, পরের বছর কপালে নাও জুটতে পারে!" রামপদ তো রেগে আগুন। আমি প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে হঠাৎ মনে পড়ল, রামপদর দাদুর নাম তো 'মদন'গোপাল। দাশু তারপর মুচকি মুচকি হাসিতে হাসিতে স্কুলের বাহিরে চলিয়া গেল ।
পণ্ডিত মহাশয়, পার্থবাবু মানুষটি সুবিধার নহেন। নামেই উচ্চ শিক্ষিত, পিএইচডি ডিগ্রিটা পুরো জালি। তবে পড়ার জন্য কখনও কোনো তাড়াহুড়ো করেন না। সেই কবে একবার পরীক্ষা নিয়েছিলো তার রেজাল্ট আজও দিলেন না। একবার তো বাসে পরীক্ষার প্রশ্ন ওনার ঝোলা থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল। রামপদ ওনার কোচিং এ পড়ে, ও বলে মোটা অনুদান দিলেই স্যার প্রশ্ন দিয়ে দেয়। এমনিতে শান্ত স্বভাবের তবে মাঝে মাঝে একটু বেশি গোল করিলে হঠাৎ সাংঘাতিক চটিয়া যান। সে সময়ে তাহার মেজাজটি আশ্চর্য রকম ধারাল হইয়া ওঠে। কেবল কুৎসা অপপ্রচার ষড়যন্ত্র বলে চেঁচামেচি করেন। দাশু বলে, এই রোগটা নাকি ওনার দিদিরও আছে।
পণ্ডিত মহাশয় চেয়ারে বসিয়াই সিলেবাসে নতুন যোগ হওয়া "সিঙ্গুর আন্দোলনের স্বার্থকতা আলোচনা কর" বলিয়া ঘুমাইয়া পড়িলেন। আমরা বই খুলিয়া হড়বড় করিয়া যা-তা খানিকটা বলিয়া গেলাম এবং তাহার উত্তরে, পণ্ডিত মহাশয়ের নাকের ভিতর হইতে অতি সুন্দর ঘড়্‌ঘড়্‌ শব্দ শুনিয়া বুঝিলাম, নিদ্রা বেশ গভীর হইয়াছে। কাজেই আমরাও শ্লেট লইয়া 'কাটকুট' আর 'দশপঁচিশ' খেলা শুরু করিলাম । রামপদ আর নবিন চাঁদ দেখি হঠাৎ তর্কাতর্কি শুরু করে দিলো। নবীন বলে,"শিল্প হলে অনেক কর্ম সংস্থান হতো"। রামপদ বলে," নামটাই তো ন্যানো, মানে ছোটো কারখানা। তাতে আর কটা লোকের কাজ মিলবে!" নবীন বলে,"বেশীরভাগ লোকই তো জমি দিতে রাজি ছিলো।" নবীন বলে " কম সংখ্যক লোক অনিচ্ছুক মানে তারা সংখ্যায় লঘু। আর সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।" দাশু তর্কের মাঝখানে রামপদর দিকে তাকিয়ে একবার ফুট কাটলো "মাছওয়ালার কি করে ছাদ ফেলা পাকা বাড়ি হলো!" রামপদ কাঁচা খিস্তি দিতে গিয়েও থেমে গেলো। নবীন বলল, "আইনটা পুরনো এবং কিছুটা নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে বটে। তবে উদ্দেশ্য কিন্তু সত্ ছিলো।" রামপদ বুক ফুলিয়ে বলে,"রাজ্যে একজনই সত্।" বিতর্ক শুনে এটুকু বোঝা যাচ্ছিল , রামপদ পার্থবাবুর কোচিং-এ খুব মন দিয়ে টপিকটা পড়েছে।
সকলে ওদের তর্কাতর্কি শুনতে মত্ত, কেবল দাশু এক কোনায় বসিয়া কি যেন করিতেছে, সেদিকে আমাদের খেয়াল নাই । একটু বাদে পণ্ডিত মহাশয়ের চেয়ারের তলায় তক্তার নিচ হইতে ফট্‌ করিয়া কি একটাআওয়াজ হইল । পণ্ডিত মহাশয় " হার্মাদ হার্মাদ" চেঁচাইয়া হাত পা ছুঁড়িয়া একলাফে টেবিল ডিঙ্গাইয়া, একেবারে ক্লাসের মাঝখানে ধড়্‌ফড় করিয়া পড়িয়া গেলেন । মিনিট পাঁচেক ভয়ানক আওয়াজের পর যখন সব ঠাণ্ডা হইয়া আসিল, তখন পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন, "কিসের শব্দ হইয়াছিল দেখ ।" দারোয়ানজি একটা লম্বা বাঁশ দিয়া অতি সাবধানে আস্তে আস্তে, তক্তার নিচ হইতে একটা হাঁড়ি ঠেলিয়া বাহির করিল- রামপদর সেই হাঁড়িটা, তখনও তাহার মুখের কাছে একটুখানি মিহিদানা লাগিয়াছিল ।
পণ্ডিত মহাশয়ভয়ানক ভ্রূকুটি করিয়া বলিলেন, "এ হাঁড়িটা কার ?" রামপদ বলিল, "আজ্ঞে আমার।" আর কোথা যায়- অমনি দুই কানে দুই পাক! "হাঁড়িতে কি রেখেছিলি!" রামপদ তখন বুঝিতে পারিল যে, সে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিতেছে। এমন সময় দাশু আমার শ্লেটখানা লইয়া পণ্ডিত মহাশয়কে দেখাইয়া বলিল,"এই দেখুন, আপনি যখন ঘুমোচ্ছিলেন, তখন ওরা শিক্ষক দিবসের অনুদানের ১০,০০০টাকার কে কতো ঝাড়বে তার হিসেব করছিল।" শ্লেটের উপর আমার নাম লেখা, পণ্ডিত মহাশয় আমার উপর প্রচণ্ড এক চড় তুলিয়াই হঠাৎ কেমন থতমত খাইয়া গেলেন । তারপরদাশুর দিকে কটমট করিয়া তাকাইয়া বলিলেন, "চোপ্‌ রও, কে বলেছে আমি ঘুমোচ্ছিলাম? গতকাল রাতে স্কুলে মশার কামড়ে ডেঙ্গুর ভয়ে ঘুমাতে পারিনি। তাই একটু চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।" দাশু খানিকক্ষণ হাঁ করিয়া বলিল, "তবে যে আপনার নাক ডাকছিল?" পণ্ডিত মহাশয় তাড়াতাড়ি কথাটা ঘুরাইয়া বলিলেন, "বটে ? ওরা সবখেলা কচ্ছিল ? আর তুমি কি কচ্ছিলে ?"দাশু অম্লানবদনে বলিল, "আমি পটকায় আগুন দিচ্ছিলাম ।" শুনিয়াই সকলের চক্ষুস্থির ! পন্ডিত মশাই বলিলেন,"তুমি জানো, স্কুলে পটকা ফাটানো অবৈধ!" দাশু বলিল, "আমার পট্‌কা, রামপদর হাঁড়ি । যদি আমার দোষ হয়, তা হলে রামপদরও দোষ হয়েছে। ব্যাস্‌ !"