Wednesday 23 March 2016

‘‘খাইসে, আবার নারদ আইসে’’

হোলির দিন সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার ক্লাবে জমিয়ে ফিস্ট হচ্ছে। প্যালা আর ক্যাবলা খাসির মাংস রান্না করছে। পার্ক সার্কাসে হাজী সাহেবের দোকান থেকে ভোরবেলা লাইনে দাঁড়িয়ে কিনে এনেছে হাবুল আর ক্যাবলা। একেবারে রেওয়াজী খাসি! হালকা করে মিউজিক সিস্টেম চালানো হয়েছে। কিন্তু হাবুলের যা অভ্যেস, নাগাড়ে টিভির রিমোট সার্ফ করে চলেছে। একটা খবরের চ্যানেল দেখে হঠাৎ হাবুল চিৎকার করে উঠলো, ‘‘খাইসে, আবার নারদ আইসে।’’ প্যালা আর ক্যাবলা রান্না ছেড়ে লাফ দিয়ে টিভির সামনে চলে এলো।

এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ক্লাবে প্রবেশ করলো টেনিদা। উপস্থিত সবাইকে ও স্টোভের উপর ফুটন্ত মাংসের কড়াটার দিকে চেয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বললো- ‘‘যাক্‌, তাহলে খাওয়া এখনো শুরু হয়নি।’’ হাবুল বললো, ‘‘জানো টেনিদা, আজ না আবার সেই নারদ আইছিল! পিসির সৎ ভাইপোটারে আনছিল, লগে লগে একটা মাইয়ালোকরেও দেখাইতাছিল।’’

টেনিদা টেবিলের উপর রাখা প্যালার বিড়ির প্যাকেট থেকে একটা বিড়ি বার করে কানের পাশে দুবার ঘুরিয়ে, মুখে ফু দিয়ে তারপর দেশলাই জ্বালালেন। তারপর বিড়ির প্যাকেটটা বেমালুম নিজের পকেট ঢুকিয়ে চেয়ারে পা মুড়ে বসে একটা লম্বা টান দিয়ে বললেন, ‘‘জানিস, আমিও এককালে এমন অনেক স্টিং অপারেশন করেছি।’’ প্যালা বললো, ‘‘গুরু! তুমি আর কি কি করেছ! একবার লিস্টিটা দাও না মাইরি!’’ হাবুল বললো, ‘‘চুপ কর প্যালা। জানস্‌ না, আমাগো টেনিদা একাই ১০০!’’ সঙ্গে সঙ্গে ক্যাবলা বললো, ‘‘১০০ নয়! নতুন থিওরি অনুযায়ী টেনিদা একাই ২৯৪।’’ টেনিদা পুলকিত হলেও মুখে বললো, ‘‘ক্যাবলা, তুই কিন্তু এবার গাঁট্টা খাবি।’’ হাবুল বললো, ‘‘টেনিদা, তুমি প্যালাটারে ইগ্‌নোর কইরা দাও। অখন তোমার গল্পখান আমাগো একবার শুনাও তো!’’

টেনিদাতো তাঁর গুলগল্প বলার জন্য মুখিয়েই ছিলেন। বলতে শুরু করলেন, ‘‘ সে প্রায় বছর দশেক আগেকার কথা হবে। তখন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে আমার নিত্য যাতায়াত। একদিন চা আর সিঙাড়াসহযোগে সান্ধ্য আড্ডা চলছে, তখন উনি...।’’ হঠাৎ প্যালা মাঝখানে ফুট্‌ কাটলো, ‘‘আচ্ছা, সুব্রতবাবুও ছিলেন? না, মানে সিঙাড়া ছিলো তো তাই...।’’ টেনিদা এবার সত্যিই প্যালার মাথায় কষিয়ে দিলেন তাঁর বিখ্যাত একটা ঝাল গাঁট্টা। প্যালায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তারপর আবার শুরু করলেন,‘‘...উনি আমাকে বললেন, ‘‘টেনি, তোমায় একটা দুঃসাহসিক কাজ করতে হবে! তোমাকে একটা স্টিং অপারেশন করতে হবে। গোটা রাজ্যজুড়ে কঙ্কাল খুঁজে বের করতে হবে।’ আমিও স্টিং অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হলাম। গোটা রাজ্য থেকে প্রায় ১০ হাজার কঙ্কাল উদ্ধার করলাম। সুশান্তবাবুর বাড়ির উঠান থেকেই ১হাজার কঙ্কাল পাওয়া গেল। সেই ফুটেজ এনে ওনাকে দিলাম।’’ ক্যাবলা বলল, ‘‘ফুটেজ দেখে উনি নিশ্চয়ই খুশিতে ডগমগ হয়ে গিয়েছিলেন!’’ টেনিদা মুচকি হেসে বললেন, ‘‘যা, আগে চারপিস কষা মাংস আমার জন্য নিয়ে আয়,  একটু টেস্ট করে দেখি। বাকিটা পরে বলছি।’’

অগত্যা নির্দেশ পালন। নিমেষে চারপিস কষা সাঁটিয়ে টেনিদা আবার শুরু করলেন, ‘‘এর বেশ কিছুদিন পর উনি একদিন হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, ‘টেনি, তোমাকে এবার নন্দীগ্রামে যেতে হবে। ভাইপো বঙ্কুকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাটা একেবারে অকর্মার ঢেঁকি! ইলিয়াসের একটা ফুটেজ ছাড়া আর অন্য কিছুই জোগাড় করতে পারেনি! এখন তুমিই আমার একমাত্র ভরসা।’ আমি ওনার কথামতন নন্দীগ্রাম গেলাম স্ট্রিং অপারেশনে। যুদ্ধের যা ফুটেজ আনলাম তা দেখে ওনার চক্ষু ত্রিফলার উপর উঠে গেলো। লালবাবু একাই হাতে এ কে ৪৭ নিয়ে গুলি চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকশো হার্মাদ সেই লাশগুলো তুলে জাহাজে ভর্তি করছে আর সেই জাহাজভর্তি লাশ বঙ্গোপোসাগরে পাড়ি দিচ্ছে।’’


প্যালা বলল, ‘‘কিন্তু টেনিদা, ভিডিওটা কোন্‌ টিউবে আপলোড করেছ? কই দেখতে পেলুম না তো!’’ টেনিদা বললেন, ‘‘অমন নেফিস্টোফিলিসের মতন কথা বলিস না প্যালা। জানিস না উনি কুৎসা পছন্দ করেন না! তাই ভিডিও-র ট্রান্সক্রিপশন কালীঘাটে টাইপ করে সব কাগজে আর টিভি চ্যানেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা যা বলেছি, যা পাঠিয়েছি, চ্যানেলগুলো সেটাই সম্প্রচার করেছে। কাগজেও তাই ছাপা হয়েছে। শুধু ভিডিওটাই যা দেখানো হয়নি!’’

3 comments:

  1. খুব ভালো লিখেছেন। ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  2. আপনার অনুমতি ছাড়াই আমি এই পোষ্টটা re-post করেছি। আপনার আপত্তি থাকলে জানাবেন, আমি remove করে নেবো। http://www.pagolerprolap.in/?p=1967

    ReplyDelete
  3. পি লে ব্র্যান্ডি নেফিস্টোফিলিস । মদ-on । মদ-off

    ReplyDelete