Saturday 26 March 2016

অনুদান কাহারে কয়?


জন্‌মেজয় কহিলেন, হে মহর্ষি! অনুদান কাহারে কয়? আপনি কহিলেন যে ‘পরিবর্তন’-এর যুগে সততার নামে এক প্রকার লুটেরার দল বাংলায় ক্ষমতায় আসিবেন। তাঁহারা কিভাবে অনুদান লইবেন এবং অনুদান লইবার পর ধরা পড়িলে কি রূপ আচরণ করিবেন তাহা শুনিতে বড় কৌতূহল জন্মিতেছে। আপনি অনুগ্রহ করিয়া সবিস্তারে বর্ণনা করুন।

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে নরবর! আমি সেই মহান অনুদান বিশ্লেষণ করিব, আপনি শ্রবণ করুন।। আমি সেই নারদ কর্তৃক দংশিত অনুদান বর্ণনা করিতেছি, আপনি শ্রবণ করুন। হে রাজন, যে অর্থ প্রত্যক্ষ ভাবে না লইয়া, শান্তি-রক্ষকের বেশে কিছু দালালের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়, তাহাকেই অনুদান কয়। যে অর্থ হস্তগত হইলে সুলতানও গোলামে পরিণত হয় তাহাকেই অনুদান কয়। সমাজের কিছু বহুরূপী সান্ধ্য জলযোগে সিঙাড়ার সহিত উদরস্থ করিয়া থাকেন।

হে রাজন, যে অর্থ গ্রহণ পশ্চাৎ শ্বেতশুভ্র খন্ডিত বস্ত্র কর্তৃক অতীব যত্নসহকারে আভরিত হইয়া রক্ষিত হইবে, তাহাই অনুদানরূপে সমাজ স্বীকৃত হইবে। নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিও ইহাকে আপন সিন্দুকে ভরিতে ভুল করিবে না। মনুষ্য অনুদান লওয়াকে নিম্নবর্গের প্রাণীহত্যার সহিত তুলনা করিলেও ইহাকে প্রত্যাখ্যান করিবার মতন মুর্খামি করবে না। শিক্ষিত ব্যক্তির হস্তে ইহা পড়িলে তিনি সাময়িক কুন্ঠা বোধ করিবেন বটে, তবে ইহার লোভ সংবরণ করিতে পারিবে না। নারীর সম্মুখে যদি ইহা সজ্জিত থাকে, তাহলে তিনি সহাস্য বদনে ইহা গ্রহণ করিবেন। কতিপয় বিলুপ্ত প্রজাতির মনুষ্য ইহার অংশীদারিত্ব চাহিয়া বসিবেন। এমনকি ক্রীড়ামোদী মনুষ্যও অনুদানের মোহে মোহগ্রস্ত হইয়া পড়িবেন।

মহারাজ, ‘পরিবর্তন’-এর যুগে অনুদানের নানান রূপ অর্থ হইবে। সিন্ডিকেট নামক শিল্পপ্রেমীদের নিকট ইহা উৎসাহবর্ধক রূপে পরিচিত হইবে। ‘তোলাবাজ’ নামক সমাজসেবীদের নিকট ইহা প্রাত্যহিক প্রণামী বুঝাইবে। ইহাই বেকারের চাকুরির নিশ্চয়তা প্রদান করিবে। অনুদানই হইবে ধর্ষিত নারীর সম্মানের পরিমাপক। দরিদ্রের নিকট হইতে বিন্দু বিন্দু করিয়া গৃহীত অর্থ যখন সিন্ধুতে পরিণত হয়, তখন তাহাকেই অনুদান কয়।

হে নরাধীপ! গরল পানপূর্বক মৃত্যু ঘটিলেও ইহা প্রদান করা হইবে। ইহাই গণবন্টন ব্যবস্থায় নিজ নিজ নাম নথিভুক্তকরণে সাহায্য করিবে। অনুদানই ব্যক্তির গলে ঝোলাইতে পারে ‘বি পি এল’ নামক  কামধেনু স্বর্ণহার। ইহাই পারে আপনার বার্ধক্য ভাতা বিধবা ভাতার মতন সরকারি নথিগুলির গতি ত্বরান্বিত করিতে।


বৈশম্পায়নের অমৃতবাণী শ্রবণপূর্বক জন্‌মেজয় কহিলেন, মুনিবর, আপনার দিব্যজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হইয়া অবগত হইলাম যে অনুদান ও উৎকোচ এক নহে। অনুদান লওয়া কোনো পাপ নহে। বরং অনুদান গ্রহণকারীরা গর্বের সহিত বলিতে পারে ‘‘আমরা সবাই অনুদান গ্রহণকারী’’।

5 comments:

  1. খুব ভালো লিখেছেন। ভালো লাগলো
    আপনার অনুমতি ছাড়াই আমি এই পোষ্টটা re-post করেছি। আপনার আপত্তি থাকলে জানাবেন, আমি remove করে নেবো। http://www.pagolerprolap.in/?p=2021

    ReplyDelete
  2. সখী, ঘুষ নেওয়া কাহারে বলে। সখী, অনুদান কাহারে বলে ।
    তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘অনুদান’ ‘অনুদান’—
    সখী, অনুদান কারে কয়! সে কি কেবলই নারদাময় ।
    সে কি কেবলই হাতের মল? সে কি কেবলই সিবিআই-র শ্বাস ?
    লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ ।
    আমার চোখে তো সকলেই শোভন,
    সকলেই মির্জা, সকলেই হাকিম, সুনীল আকাশ, শ্যামল মদন,
    বিশদ জোছনা, কুসুম কাকলী— সকলেই আমার মতো ।
    তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়, অনুদান লইয়া মরিতে চায়—
    না জানে বেতন, না পায় মদন, না জানে সাধের যাতনা যত ।
    টাকা সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, পুলিশ হাসিয়া মিলায়ে যায়,
    হাসিতে হাসিতে সূর্যসাগরে মানুষের ভোট হারায়ে যায় ।
    আমার মতন সুখী কে আছে। আয় সখী, আয় আমার কাছে—
    সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ ।
    প্রতিদিন যদি নারদ আসে একদিন নয় কাঁদিবি তোরা—
    একদিন নয় অনুদান লইয়া সকলে মিলিয়া জেলে যাবো মোরা।।

    ReplyDelete
  3. তারপর যেই উড়ালপুলের নাম দিয়েছে মা, ওমনি নবান্নে ভূমিকম্প হয়ে সব পড়ে টরে গেল

    ReplyDelete