পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের
জন্য এবছর ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’-এর অনুশীলন ক্যাম্প ইডেন গার্ডেনস্ থেকে
সরতে চলছে। ঐ সময় কলকাতায় দু’দফায় ভোট প্রক্রিয়া চলবে। তাই কলকাতা পুলিশের পর্যাপ্ত
বাহিনী থাকবে না। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে, জঙ্গলমহলের
ভোট যেহেতু আগে হয়ে যাচ্ছে, তাই মুখ্যমন্ত্রী নাইট রাইডার্স দলের মালিক তথা
রাজ্যের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ শাহরুখ খানকে অনুরোধ করেছেন তাঁদের অনুশীলন
শিবির জঙ্গলমহলে করতে। শাহরুখ তো এ প্রস্তাব শুনেই বলেছিলেন, ‘‘জঙ্গল মে আই পি এল
করনা, মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন
হ্যায়।’’
মাননীয়া আপ্রাণ চেষ্টা করে
বোঝালেন যে জঙ্গলমহল আর সেই আগের মতন নেই! জঙ্গল এখন সারাক্ষণই হাসছে, আর উন্নয়নের
জোয়ারে ভাসছে। অতি কষ্টে শাহরুখকে রাজি
করানো গেলেও বাধ সাজলো রাসেল, মরকেল, দুস্কাটে, নারিনের মতন কিছু বিদেশী প্লেয়ার। তাঁরা কিছুতেই জঙ্গলমহলে যেতে রাজি নয়।
কারণ, তাঁরা ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে ‘জঙ্গলমহল’ সার্চ দিয়ে মাওবাদীদের বেশ কিছু
কার্যকলাপ দেখে নিয়েছে। তাঁদেরকে মাননীয়া তাঁর মধুর ইংরেজীতে বোঝালেন, ‘‘টুডে ইন
বেঙ্গল, নো মাও ইন জঙ্গল। সাম বিকাম মাই ফ্রেন্ড অ্যান্ড ইন
মাই হ্যান্ড কিষেণজি দ্য এন্ড।’’ এরপরেও যখন খেলোয়াড়েরা দোনামোনা করছিলেন, তখন উনি
বললেন, ‘‘জঙ্গল থেকে যদি এবার তোমরা চ্যাম্পিয়ন হও, তাহলে আমি সোনার নয়, হীরের হার
দেবো!’’ ব্যাস্, তাতেই কেল্লা ফতে। সবাই রাজি হয়ে গেলো।
তাই এবছর আই পি এলে নাইট
রাইডার্স দল তাঁদের শিবির পাততে চলেছে ‘পুরুলিয়া স্পোর্ট আকাদেমি’-তে এবং নাইটদের
হোম গ্রাউন্ড হবে শালবনীতে সদ্য সমাপ্ত হওয়া আন্তর্জাতিক মানের ‘শালবনী স্টেডিয়াম’। মুখ্যমন্ত্রী আই পি এল
কমিটিকেও আশ্বস্ত করেছেন যে জঙ্গলমহলে আই পি এলের ম্যাচ আয়োজন করতে কোনো অসুবিধা
হবে না। টিকিট সেল নিয়েও কোনো চিন্তা করতে হবে না। কারণ, পরিবর্তনের সৌজন্যে এখন
জঙ্গলমহলের সবাই এখন ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছে, এছাড়া ইস্পাত, সিমেন্ট থেকে সার নানান
বড়ো ও মাঝারি শিল্প আজ জঙ্গলমহলের অলি-গলিতে। আর দলীয় কর্মী ও পঞ্চায়েত
প্রধানদের কথা ছেড়েই দিলুম। সবার হাতেই এখন প্রচুর টাকা। তবে লালগড়, নয়াগ্রাম,
শালবনীর সরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু স্টুডেন্ট কনসেসান
দিতে হবে। খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না! প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর
সাথে উনি ওনার দলীয় বাইক বাহিনী দিয়ে সাহায্য করবেন।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর
অনুপ্রেরণায় জঙ্গলমহলে আজ উন্নয়নের জোয়ার। সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি করা
হয়েছে পুরুলিয়ার স্পোর্টস্ আকাডেমি। গম্ভীর, পাঠান, রাসেলরা
ব্যবহার করতে পারবেন পুরুলিয়া ইন্ডোর স্টেডিয়ামও, যে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু করেছিল
বামেরা। কিন্তু সেই ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বমানে পৌঁছে দিয়েছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী।
মাল্টি জিম, সুইমিং পুল সবই আছে। প্লেয়ার, কোচ, সার্পোটিং স্টাফ সবার থাকার জন্য বুকিং করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর তৈরী ৫০টি
শয্যা বিশিষ্ট আটটি হোস্টেল। খেলা চলাকালীন বা প্র্যাক্টিসের সময় কোনো প্লেয়ার
গুরুতর আহত হলেও চিন্তার কিছু নেই, তাঁকে কলকাতায় চিকিৎসার
জন্য আনতে হবে না। কারণ লালগড়ের এ এন এম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সমস্ত খেলোয়াড়ের
মেডিক্যাল সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। রামগড়ের আই টি আই কলেজ থেকে সকল
ক্রীড়াপ্রেমী দর্শকরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রতিটি টিকিটের সঙ্গে
বিনামূল্যে দেওয়া হবে মাননীয়ার লেখা বই ‘আমার জঙ্গল’। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
ডহরবাবুর জন্য এক মিনিট শোক পালন করা হবে।
(বি.দ্র.= যদি কোনো ব্যক্তি খেলা
দেখতে গিয়ে স্টেডিয়াম,
আকাডেমি, হোস্টেল, আই টি
আই, কলেজ, এ এন এম কেন্দ্র কিছুই না দেখতে পান, তাহলে সত্বর হরিশ চ্যাটার্জি ধরনীতে যোগাযোগ করুন। সেখানে ডাঁই হয়ে থাকা ২০১১সালের
দলীয় ইস্তাহারে এবং জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিলিপিতে এর সবগুলিই তিনি
খুঁজে পাবেন! )
No comments:
Post a Comment