Monday 4 April 2016

বীর‘ইঞ্চি’ মাহাত্ম্য

সে অনেকদিন আগেকার কথা, কলকাতা তখন নবান্নের বিউটি পার্লারে গিয়ে ফেস- ওয়াশ করে লন্ডন হয়নি। রাস্তার ধারে ত্রিফলায় তখন নীল-সাদা সাপ পেঁচিয়ে থাকেনি। মন্টুদা আলুর চপ বিক্রি করে সল্টলেকে ফ্ল্যাট কেনেনি। ধনাদাও তেলেভাজা দোকান থেকে দশতলা বাড়ি বানাননি। বাংলার বাতাসে তখন এতো ‘শ্রী’ উড়ে বেড়ায়নি। বড়লাটের আপিসের কেরানি রতনদা বকেয়া ডিএ হাতে পেয়ে গিন্নিকে নিয়ে চৈত্র সেলে যায়নি। মানুষের হাসপাতালে তখন কুকুরের ডায়ালিসিস হতো না। তখন কালিঘাট মন্দিরের পাশে এক ঝুপড়িতে থাকতেন এক সাধুবাবা। নাম বিরিঞ্চিবাবা (বীর‘ইঞ্চি’ বাবা)। বাবার বিশাল খ্যাতি। বাবা ভুত-ভবিষ্যৎ সবই বলে দিতে পারেন। এমনকি ৪০০বছর পরে কী ঘটবে সবই নির্ভুল বলে দিতে পারেন।

হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ব্যানার্জিবাবু রোজই কালিঘাটে পুজো দিতে যেতেন। তাই অচিরেই তার কানে পৌঁছে গেলো বিরিঞ্চিবাবার মাহাত্ম্যতিনি একদিন তার মেয়েকে নিয়ে হাজির হলেন বাবার কাছে। বিরিঞ্চিবাবার কাছে জানতে চাইলেন তাঁর মেয়ের ভবিষ্যৎবাবা চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিট ভাবলেন, তারপর বললেন – ‘‘এ মেয়ে তো মেয়ে নয়! সাক্ষাৎ অগ্নিকন্যা। এর গুণকীর্তন সিঙ্গাপুর থেকে লন্ডন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। তবে মেয়ের মাথাটা বড্ড গরম। এই দৈব স্কেলটি রাখ্‌মেয়ে বড়ো হলে ওকে এটা দিয়ে বলবি যেন ‘ইঞ্চি’ মেপে পদক্ষেপ ফেলে।’’

তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। কালিঘাটের খাল দিয়ে যেমন অনেক জল বয়ে গেছে ঠিক তেমনই বঙ্গোপসাগর দিয়ে উন্নয়নের জোয়ার আজ বাংলার সুইজারল্যান্ডে পৌঁছে গেছে। সেদিনের ছোট্ট মেয়ে আজ পায়ে হাওয়াই চটি পরে হেলিকপ্টারে চড়ে বাংলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অ্যাপেলের আই-ফোন নিয়ে চা-শ্রমিকদের সাথে সেল্‌ফি তুলছে। মন্দারমণির আর পরিবর্তনের গোয়াতে গিয়ে উর্দু কবিতা লিখছে। তার অনুপ্রেরণায় হাইওয়ে থেকে শহরের রাজপথ, সরকারি দপ্তর থেকে শৌচালয়ের দেওয়াল সর্বত্র সততার চোদ্দ হাত হোর্ডিং জ্বলজ্বল করছে।

সেই বাবার দেওয়া দৈব স্কেলে ইঞ্চি ইঞ্চি করে আজ তিনি বাংলার উন্নয়ন মাপছেন। শুধু উন্নয়ন নয়! উনি সবকিছুই এখন ইঞ্চি মেপে করেন। উনি ইঞ্চি মেপে ১কোটি ৮৬লক্ষ টাকা দামের ছবি আঁকেন, ইঞ্চি মেপে পাহাড় জঙ্গলের হাসি মাপেন, ইঞ্চি মেপেই করেন শিলান্যাস, ইঞ্চি মেপেই উনি চাবকে লাল করেন, ইঞ্চি মেপেই বলে দিতে পারে কোনটে সাজানো, আর কোনটে ছোট্ট ঘটনা। ইঞ্চি মেপেই আজ ধর্ষিতা থেকে ব্রিজ চাপা পড়ে মৃতের রেট ঠিক করেন। তবে উনি যে একাই ইঞ্চি মাপেন তা নয়! পিসির স্কেল নিয়ে মাঝেমধ্যে ভাইপোরাও (অফিসিয়াল/আনঅফিসিয়াল) ইঞ্চি মাপেন। কদিন আগেই তো ভাইপো (অফিসিয়াল) জঙ্গলমহলে গিয়ে পিসির দৈব স্কেল দিয়ে বিরোধীদের ইঞ্চি মেপে এলেন। আরেক ভাইপো (আনঅফিসিয়াল) যে ইঞ্চি মেপে ‘হিস্‌সা’ বুঝে নেয়, তাকে শেষ দেখা গিয়েছিল সি বি আই-এর দপ্তরে বিস্কুট খেতে। পিসি অবশ্য তাকে এখন ত্যাজ্য ভাইপো করে দিয়েছে।


তবে আক্ষেপ একটাই ব্যানার্জিবাবু মেয়ের উন্নয়ন দেখে যেতে পারলেন না। মেয়ের মাও গত হয়েছেন কয়েক বছর হলো, মানুষও আর তার হেলিকাপ্টার দেখতে ভিড় জমাচ্ছে না। বিরিঞ্চিবাবা সাবধান করেছিলেন যে ২০১৬ সালে কিন্তু একটা বড়ো ফাঁড়া (বাঁশ) অপেক্ষা করছে। যে গ্রহ-নক্ষত্রের(স্টার) জোরে রাতারাতি এতো জনপ্রিয় হয়েছেন, সেই ‘স্টার’ কিন্তু রাহু(ল)-র গ্রাসে চলে যাবে। আর ওনার ৩৪ বছরের শত্রু জোট বেঁধে ওর নামে কূৎসা আর অপপ্রচার চালাবে। এমনকি স্বয়ং ভগবান নারদও ওর বিরুদ্ধে ‘চক্কান্ত’ করবে। আজ বাবার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। ধন্য সাধু বাবা। ধন্য বীর‘ইঞ্চি’ বাবা।

No comments:

Post a Comment