Wednesday 20 April 2016

কালীঘাটে কেলেঙ্কারি


গতকাল সন্ধ্যাবেলায় বৈঠকখানার ঘরে বসে ফেলুদা টিভিতে খবর দেখছে, আর আমি সোফাতে শুয়ে শুয়ে বন্ধুদের সাথে হোয়াটস্‌অ্যাপ-এ চ্যাট করছি। এমন সময় লালমোহনবাবু হাজির হলেন। হাতে একটা কাগজের তেল-জব্‌জবে ঠোঙা। আমি ঠোঙাটার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘‘নিমাইয়ের তেলেভাজা’’। লালমোহনবাবু বিগলিত হেসে বললেন, ‘‘ভাই তপেশ, তুমি তো দেখছি কদিন পরে গোয়েন্দাগিরিতে তোমার দাদাকেও হার মানিয়ে দেবে। চলো, এখন তাড়াতাড়ি এগুলোর সদ্‌ব্যবহার করা যাক।’’

ফেলুদা তখনও খবরের মধ্যে ডুবে আছেন দেখে লালমোহনবাবু আবার বললেন, ‘‘ও! মিত্তির মশাই! খবর পরে শুনবেন, আলুর চপ যে ঠান্ডা হয়ে যাবে মশাই!’’ ফেলুদা টিভির সামনে থেকে উঠে এসে আমার পাশে সোফায় বসলেন। লালমোহনবাবুর দিকে তাকিয়ে ফেলুদা স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘এই গরমে রোজ রোজ আলুর চপ না খেয়ে, মাঝেমধ্যে একটু গুড়-বাতাসার জল খান। শরীরটা ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল থাকবে।’’

লালমোহনবাবু একসাথে দুটো চপ মুখে পুরে গলাধঃকরণ করতে করতেই ফেলুদাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘‘তা মশায়, ভোটের হাওয়া কি বুঝছেন!’’ ফেলুদা ফস্‌ করে একটা চারমিনার ধরিয়ে, লম্বা একটা টান দিয়ে বললেন, ‘‘চড়াম্‌ চড়াম্‌’’। লালমোহনবাবু বললেন, ‘‘এটা কি ভূতুড়ে কান্ড মিত্তির মশাই! ভোট হয়ে যাওয়ার তিন চারদিন পরেও কি করে ভোটের হার বাড়ে!’’ ফেলুদা হেসে বললেন, ‘‘এটা ঐ বাংলা সিরিয়ালের ভূতুর কাজ। হাইলি সাস‘পিসি’আস!’’

এমন সময় টেবিলের উপর রাখা টেলিফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো। আমি ফোনটা রিসিভ করেই রীতিমতো স্ট্যাচু হয়ে গেলাম! ফেলুদার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম, ‘‘কা..কা..কালীঘাট থেকে পি..পি..সি।’’ ফেলুদা তড়াং করে লাফ উঠে গিয়ে ফোনটা আমার হাত থেকে প্রায় কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘‘হ্যাঁ বলুন, হুঁ! হুঁ! কখন? কখন? আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি আসছি।’’ ফোন রেখে ফেলুদা বললেন, ‘‘রেডি হওয়ার জন্য ফাইভ মিনিটস্‌ অনলি!’’ তড়িঘড়ি তিনজনে লালমোহনবাবুর নীল-সাদা অ্যাম্বাসাডরে চড়ে রওনা দিলাম কালীঘাটের উদ্দেশ্যে।

হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে ঢুকতেই ওনার ভাইপো আমাদেরকে গেস্টরুমে বসতে দিয়ে বললেন, ‘‘একটু অপেক্ষা করুন, পিসি এখুনি আসছে।’’ মিনিটপাঁচেক পরে তিনি হন্তদন্ত হয়ে গেস্টরুমে প্রবেশ করলেন। চোখ মুখ দেখে বোঝা গেলো, ব্যাপক চাপে আছেন। ফেলুদা ওনার সঙ্গে আমার আর লালমোহনবাবুর পরিচয় করিয়ে দিলেন। লালমোহনবাবু তো রীতিমতো উত্তেজিত! উৎসাহের আতিশয্যে তিনি বলেই ফেললেন, ‘‘ম্যাডাম! আমি আপনার আঁকা ছবির দারুণ ফ্যান! আপনি কেন হঠাৎ ছবি আঁকাটা ছেড়ে দিলেন বলুন তো?’’ মুখচোখ দেখে বোঝাই গেলো, এমন প্রশ্নে তিনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললেন, ‘‘আমিও আপনার উপন্যাসের একজন গুণমুগ্ধ পাঠক।’’ লালমোহনবাবু বললেন, ‘‘আপনি তো ভালো নামকরন করেন, যদি আপনি আমার আগামী উপন্যাসের নামকরণটা করে দেন তাহলে আমি নিশ্চিত ওটা বেস্ট সেলারের তালিকায় স্থান পাবে।’’ উনি মুচকি হেসে সম্মতি জানালেন। তারপর ফেলুদার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘মিত্তিরমশাই! আপনার সাথে আমার একটু প্রাইভেট কথা আছে, আপনি বরং আমার সাথে একটু ভেতরের কেবিনে আসুন।’’ ভাইপো দুটো ঠান্ডা স্প্রাইট এনে আমাকে আর লালমোহনবাবুকে দিল। আমার দিকে তাকিয়ে পিসি বললেন, ‘‘তোমরা ততক্ষণ ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল হও, আমরা এখুনি আসছি।’’ উনি ফেলুদাকে নিয়ে পাশের রুমে চলে গেলেন।

লালমোহনবাবু অবাক হয়ে রুমটা দেখতে দেখতে আমাকে বললেন, ‘‘ভাই তপেশ! টালির বাড়িতে সেন্ট্রালি এসি, ভাবা যায়! সবই সুদীপ্তের অনুপ্রেরণা।’’ আমি বুঝলাম এতক্ষণে স্প্রাইট তার কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। ‘‘সিধি বাত, নো বাকওয়াস।’’ একটুর বদলে প্রায় একঘন্টা পর ফেলুদা ফিরলেন। কি কথা হলো ফেলুদাকে জিজ্ঞেস করায় ফেলুদা শুধু একটু মুচকি হাসলেন।

চলে আসার সময় উনি লালমোহনবাবুকে মেমেন্টো হিসেবে একটা ‘কথাঞ্জলি’ গিফ্‌ট করলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে বিদায় জানাবার সময় উনি ফেলুদাকে অস্পষ্ট সুরে করুণভাবে বললেন, ‘‘মিত্তির মশাই! বাঁচার কি কোনও উপায় নাই!’’ ফেলুদা কথার কোনো উত্তর দিলেন না। তিনজনে গাড়িতে বসলাম। ড্রাইভার স্টার্ট দিলো একবার, দু’বার, তিনবার, তবুও কিছুতেই চালু হচ্ছে না। উনি দরজায় চৌকাঠে দাঁড়িয়ে ফেলুদাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘‘গাড়িটা খারাপ হয়ে গেলো নাকি মিত্তির মশাই!’’ ঠিক তখনই গাড়িটা চালু হলো। 

ফেলুদা জানালা দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, ‘‘আসলে এটা বাম আমলের গাড়ি তো! তাই মাঝেমধ্যে একটু সমস্যা করে।’’

2 comments:

  1. লেখককে ধন্যবাদ ।


    ReplyDelete
  2. Superb,aro ektu Boro hole aro bhalo lagto

    ReplyDelete