ভবানীপুরের
কালীপিসির প্রচুর ট্যালেন্ট! পিসি যেমন তিন আঁচড়ে কোটি টাকার ছবি আঁকেন, তেমনই হঠাৎ
আপন খেয়ালে হিং টিং ছট্ কবিতাও লেখেন। এমনকি পিসির মুড ভালো থাকলে, উর্দুতেও
দু-চার কলি লিখে ফেলেন। বাংলা সাহিত্যে অপরিসীম জ্ঞান। প্রচুর পুঁথি পড়েছেন। শুধু
পড়েই ক্ষান্ত হননি! নামকরণের ওপরে একটা আস্ত বইও লিখে ফেলেছেন।
পিসির
ভাইপোরাই পাড়ার সবাইকে বলে বেড়ায়, ‘জানিস, আমাদের পিসি ডক্টরেট! বিলেত থেকে বাক্সবন্দি করে
প্রচুর ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন।’ পিসি নিজেও দু-একবার নামের আগে ‘ডঃ’ লিখেছেন।
তবে পাড়ার লোকের মনে প্রথম দিন থেকেই খটকা লেগেছিল। হাটে বাজারে এই নিয়ে কানাঘুষো
চলতো, কিন্তু
পিসিকে সাহস করে জিজ্ঞেস করার মুরোদ কারো হয়নি। আসলে কালীপিসি বড্ড ‘রাফ এন্ড টাফ’, গুন্ডা
কন্ট্রোল করে। তার ওপর পিসির ‘বেচারা’ ভায়েরা যদি রাতে ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে
দেয়! তাই পাড়ার লোকেরা চুপ করে থাকতো।
তবে ঐ ধর্মের
কল বাতাসে নড়ে, আর ‘সততা’র জালি দেরিতে হলেও ধরা পড়ে। পিসির জালি সার্টিফিকেটের
কথা তাই বেশিদিন চাপা থাকলো না। আর যেই খবরটা বাইরে এলো অমনি খিল্লি শুরু হয়ে
গেলো। কালীপিসি রাতারাতি ‘জালিপিসি’ হয়ে গেলো।
তবে এমন
মহান কৃতিত্বের অধিকারী যে পিসি একা তা কিন্তু নয়! পিসির অনুপ্রেরণায় তার ‘বেচারা’ ভাই-ভাইপোরাও
এখন জাল সার্টিফিকেট বানাতে সিদ্ধহস্ত। পিসির এই মাথামোটা কোলাব্যাঙের মতন ভাইটা, ব্যাটা অকর্মার
ঢেঁকি। কোনো কাজই ঠিকঠাক করতে পারে না। পিসি ওকে তার কারখানা চালাতে দিয়েছিল, সেটা
সে লাটে তুলে দিতে বেশি দেরি করেনি। তারপর পিসি সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্কুলটা
চালাতে দিয়েছে, কিন্তু তাতেও প্রতিদিন যেভাবে নাকানি-চোবানি খাচ্ছে, পিসির
বিরক্তির একশেষ! পিসি তো এখন ওকে ‘ব্যর্থ’ বলেই ডাকে।
ওমা! সেই
ব্যর্থ ভাইটাও ডক্টরেট করার জন্য হঠাৎ খেপে উঠলো। অনেক খুঁজে খুঁজেও ইস্ট জর্জিয়া
নামে মার্কিন মুলুকে কোনো ইউনিভার্সিটির হদিশ না পেয়ে শেষমেষ উত্তরবঙ্গের এক
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুঁইমালির সাহায্যে ভুঁইফোড় জালি সার্টিফিকেট বের করে নিলো! তবে
পাপ বাপকেও ছাড়ে না! দিনদুয়েক আগে হঠাৎ টেলিগ্রাম এলো, ব্যাটা পি এইচ ডি -এর
থিসিসে দিব্যি নাকি অন্যের নোট কপি-পেস্ট করেছে। তবে পাড়ার লোক এতে আদৌ অবাক হয়নি।
তারা বলছেন- ‘‘সারাজীবন যে ছেলেটা টুকলি করেই পাশ করছে, সে কপি-পেস্ট
করবে না তো কি করবে!’’ লোকেদের কানাঘুষোতেই জানা গেলো, সত্তরের দশকে নিউ আলিপুর
কলেজে একা একটা ঘরে বইখাতা নিয়ে বসে পরীক্ষকদের ‘বদান্যতা’য় পরীক্ষা দিয়ে
গ্রাজুয়েশন করেছে কোলাভাই। সেই সার্টিফিকেট আর দাদাদের হাত মাথায় থাকার জোরে মস্ত
চাকরিও জুটিয়ে নিয়েছিল। তবে তাও না টেঁকায় দিদির শেল্টারেই এখন রয়েছে।
কালীপিসি
কিন্তু এসব কেয়ার করে না। তার কাছে যোগ্যতা এটাই। এমনকি, পিসির যার সঙ্গে
ইন্টুমিন্টুর কথা শোনা যায় সেই নরেন মুদির এক দুঃসম্পর্কের বোনেরও এমন কীর্তি আছে।
জাল সার্টিফিকেট বানিয়ে বিয়ে করে দিব্যি বৌমা হয়ে সংসার করছিলেন। কিন্তু যেদিন
বৌমা থেকে তিনি শাশুড়ি হলেন, সেদিন সন্দেহের বশে নিজের বৌমার সার্টিফিকেট পরীক্ষা করতে
গেলেন। কারণ ঐ একটাই ‘কিউ কি সাস ভি কভি বহু থি!’ কিন্তু মর্ডান বৌমা উল্টে শাশুড়িকেই
হিপনোটাইজ করে তার ‘স্মৃতি’-তে তল্লাশি চালিয়ে সব সত্যি বের করে নিলো।
পাড়ার
প্রবীণেরা বলাবলি করে,
‘‘পিসির পুরো বংশটাই জালি। এই রোগ সারবার নয়!’’ আর পাড়ার ছেলে-ছোকরাগুলোতো এখন
কালীপিসির কোলাভাইকে দেখলেই বলছে, ‘জালি পিসির জালি ভাই’।
দারুণ লিখেছো
ReplyDeleteকালীঘাটে টিনের চালা
ReplyDeleteঘুষ খাওয়ার ধর্মশালা
Darun
ReplyDeleteDarun
ReplyDelete