Tuesday 12 April 2016

তুমি মস্ত চোর (Tumi Mosto Chor)

ক্লাস এইটের ইতিহাস পরীক্ষায় ৪ নম্বরের টীকা ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে লৌহমানবের ভূমিকা’ লিখতে গিয়ে যখন পকেট থেকে মাইক্রো-জেরক্সটি বের করে, তখনই হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় নিজাম আলির ছোট ছেলে কোহ্‌রাব। হ্যাঁ, ওটাই ছিল কোহ্‌রাবের চুরিবিদ্যার হাতেখড়ি। এরপর মাধ্যমিকে আবার টুকলি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। না, না, ইতিহাস নয়! এবার ভৌতবিজ্ঞান। স্টেইনলেস স্টিলের কম্পোজিশন। যখন কলেজে পড়ে তখন বাবার পকেট থেকে ৫০০ টাকা চুরি করে বন্ধুদের নিয়ে কলেজ বাঙ্ক করে চলে যায় আইনক্সে সিনেমা দেখতে। ফার্স্ট ডে, ফার্স্ট শো। আয়রন ম্যান।

চুরিবিদ্যাটা ততদিনে ভালোরকমই রপ্ত করে নিয়েছে কোহ্‌রাব। আর লোহার প্রতি তার ভালোবাসা দিন দিন বেড়েই চলছে। পাড়ার লোক তাকে ‘চুম্বক’ বলেই ডাকে। পুকুরঘাটে কারোর লোহার বালতি বা অন্য কোনো বাসন হারিয়ে গেলে ডাক পড়তো কোহ্‌রাবের। সে একটা ডুব মেরেই নিমেষে তুলে আনতো হারিয়ে যাওয়া বাসন। তবে তার ছিঁচকে চোর বদনামের জন্য আশেপাশের পাড়ার লোক বাড়ির বাইরে লোহার জিনিসপত্র কোনদিনই ফেলে রাখতো না।

তারপর অনেকদিন হয়ে গেছে। দামোদর দিয়ে যেমন অনেক জল বয়ে গেছে, ঠিক তেমনই রানীগঞ্জে অনেক লোহা তৈরি হয়েছে। সেই কোহ্‌রাব এখন আর আগের কোহ্‌রাব নেই। সে অনেক বড় হয়ে গেছে। তার অনেক নাম ডাক হয়েছে। সে চোরেদের অ্যাসোসিয়েশন Tumi Mosto Chor-এ নাম লিখিয়েছে।

মস্ত বড়ো সেই অ্যাসোসিয়েশন। প্রচুর নামকরা চোরেরা সেই অ্যাসোসিয়েশন-এর মেম্বার। কেউ বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধু চুরি করে তো, কেউ গন্ধ শুঁকে চন্দন কাঠ চুরি করে। কেউ বদহজমের জন্য ত্রিফলা চুরি করে তো, কেউ সেবার নামে ত্রাণ চুরি করে। কেউ পরীক্ষার প্রশ্ন চুরি করে তো, কেউ নারীদের সম্মান চুরি করে। কেউ কৃষকের আশা চুরি করে তো, কেউ বেকারের স্বপ্ন চুরি করে। নিজেদের মধ্যেই যেন প্রতিযোগিতা চলছে কে কত বড়ো চোর তা প্রমাণ করার। কোহ্‌রাব এই অ্যাসোসিয়েশন Tumi Mosto Chor-এর মেম্বার। সেও কম যায় না! চুরি বিদ্যাতে সে ছোটবেলা থেকেই দক্ষ। আর লৌহ প্রেম তো তার রক্তেই ছিল। তাই তার প্রথম নজর যে ইন্ডিয়ান রেলওয়ের ওপর পড়বে, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।

এবারেও কোহ্‌রাব ধরা পড়ে গেলো। হলো দু’বছরের জেল। অ্যাসোসিয়েশন-এর তরফ থেকে তার জামিনের আবেদন করা হয়। অ্যাসোসিয়েশন -এর কর্ণধার মিসেস ব্যানার্জির অনুপ্রেরণায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। আদালতে জামিনও মঞ্জুর হয়। এরপর সংগঠনের পক্ষ থেকে মিসেস ব্যানার্জি ঘোষণা করেন, ‘‘বেচারা কোহ্‌রাব আজ ষড়যন্ত্রের শিকার। ওর মতন একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, দক্ষ চোর আমাদের সংগঠনের সম্পদ।’’

মিসেস ব্যানার্জি আরো বললেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে কোহ্‌রাব আপাতত কিছুদিন বিশ্রাম নেবে এবং তার পরিবর্তে কোহ্‌রাবের স্ত্রী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে সমস্ত কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কোহ্‌রাব, তার স্ত্রীকে সবরকমভাবে সাহায্য করবে। আমরা আশা রাখছি কোহ্‌রাবের স্ত্রী, তার স্বামীর যোগ্য উত্তরসুরীরূপে খুব শীঘ্রই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। জয়, মা-মাটি-চোরেদের জয়। জয়, Tumi Mosto Chor-এর জয়।’’


সংগঠনের নেত্রীর কথামতন কোহ্‌রাব তার স্ত্রীর হয়ে প্রাণপণ খাটতে লাগল। স্ত্রীর ছায়াসঙ্গী হয়ে ঘুরছে এখন কোহ্‌রাব। রানীগঞ্জের চোরেদের সাথে কোহ্‌রাবের বহুদিনের পরিচয়, তাই তাদেরকে বারবার ফোনে স্ত্রীর হয়ে প্রচার করার নির্দেশ দিতে লাগল। এমনকি পুলিশের সামনেই কোহ্‌রাব রানীগঞ্জের সাধারণ মানুষদের ধমকাতে লাগলো, ‘‘আপনারা যদি আপনাদের বাড়ির লোহার জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে আমার স্ত্রীকে সমর্থন করুন।’’ এখন দেখার রানীগঞ্জের মানুষ কি চোরের হাতে তাদের সিন্দুকের চাবি তুলে দেয় কিনা!

No comments:

Post a Comment