Wednesday 30 March 2016

জঙ্গলমহলে আই পি এল


পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এবছর ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’-এর অনুশীলন ক্যাম্প ইডেন গার্ডেনস্‌ থেকে সরতে চলছে। ঐ সময় কলকাতায় দু’দফায় ভোট প্রক্রিয়া চলবে। তাই কলকাতা পুলিশের পর্যাপ্ত বাহিনী থাকবে না। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে, জঙ্গলমহলের ভোট যেহেতু আগে হয়ে যাচ্ছে, তাই মুখ্যমন্ত্রী নাইট রাইডার্স দলের মালিক তথা রাজ্যের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ শাহরুখ খানকে অনুরোধ করেছেন তাঁদের অনুশীলন শিবির জঙ্গলমহলে করতে। শাহরুখ তো এ প্রস্তাব শুনেই বলেছিলেন, ‘‘জঙ্গল মে আই পি এল করনা, মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যায়।’’

মাননীয়া আপ্রাণ চেষ্টা করে বোঝালেন যে জঙ্গলমহল আর সেই আগের মতন নেই! জঙ্গল এখন সারাক্ষণই হাসছে, আর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। অতি কষ্টে শাহরুখকে  রাজি করানো গেলেও বাধ সাজলো রাসেল, মরকেল, দুস্‌কাটে, নারিনের মতন কিছু বিদেশী প্লেয়ার। তাঁরা কিছুতেই জঙ্গলমহলে যেতে রাজি নয়। কারণ, তাঁরা ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে ‘জঙ্গলমহল’ সার্চ দিয়ে মাওবাদীদের বেশ কিছু কার্যকলাপ দেখে নিয়েছে। তাঁদেরকে মাননীয়া তাঁর মধুর ইংরেজীতে বোঝালেন, ‘‘টুডে ইন বেঙ্গল, নো মাও ইন জঙ্গল। সাম বিকাম মাই ফ্রেন্ড অ্যান্ড ইন মাই হ্যান্ড কিষেণজি দ্য এন্ড।’’ এরপরেও যখন খেলোয়াড়েরা দোনামোনা করছিলেন, তখন উনি বললেন, ‘‘জঙ্গল থেকে যদি এবার তোমরা চ্যাম্পিয়ন হও, তাহলে আমি সোনার নয়, হীরের হার দেবো!’’ ব্যাস্‌, তাতেই কেল্লা ফতে। সবাই রাজি হয়ে গেলো।

তাই এবছর আই পি এলে নাইট রাইডার্স দল তাঁদের শিবির পাততে চলেছে ‘পুরুলিয়া স্পোর্ট আকাদেমি’-তে এবং নাইটদের হোম গ্রাউন্ড হবে শালবনীতে সদ্য সমাপ্ত হওয়া আন্তর্জাতিক মানের ‘শালবনী স্টেডিয়াম’মুখ্যমন্ত্রী আই পি এল কমিটিকেও আশ্বস্ত করেছেন যে জঙ্গলমহলে আই পি এলের ম্যাচ আয়োজন করতে কোনো অসুবিধা হবে না। টিকিট সেল নিয়েও কোনো চিন্তা করতে হবে না। কারণ, পরিবর্তনের সৌজন্যে এখন জঙ্গলমহলের সবাই এখন ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছে, এছাড়া ইস্পাত, সিমেন্ট থেকে সার নানান বড়ো ও মাঝারি শিল্প আজ জঙ্গলমহলের অলি-গলিতে আর দলীয় কর্মী ও পঞ্চায়েত প্রধানদের কথা ছেড়েই দিলুম। সবার হাতেই এখন প্রচুর টাকা। তবে লালগড়, নয়াগ্রাম, শালবনীর সরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু স্টুডেন্ট কনসেসান দিতে হবে। খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না! প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর সাথে উনি ওনার দলীয় বাইক বাহিনী দিয়ে সাহায্য করবেন।

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় জঙ্গলমহলে আজ উন্নয়নের জোয়ার। সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি করা হয়েছে পুরুলিয়ার স্পোর্টস্‌ আকাডেমি। গম্ভীর, পাঠান, রাসেলরা ব্যবহার করতে পারবেন পুরুলিয়া ইন্ডোর স্টেডিয়ামও, যে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু করেছিল বামেরা কিন্তু সেই ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই  বিশ্বমানে পৌঁছে দিয়েছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। মাল্টি জিম, সুইমিং পুল সবই আছে। প্লেয়ার, কোচ, সার্পোটিং স্টাফ সবার থাকার জন্য বুকিং করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর তৈরী ৫০টি শয্যা বিশিষ্ট আটটি হোস্টেল। খেলা চলাকালীন বা প্র্যাক্‌টিসের সময় কোনো প্লেয়ার গুরুতর আহত হলেও চিন্তার কিছু নেই, তাঁকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আনতে হবে না। কারণ লালগড়ের এ এন এম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সমস্ত খেলোয়াড়ের মেডিক্যাল সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। রামগড়ের আই টি আই কলেজ থেকে সকল ক্রীড়াপ্রেমী দর্শকরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রতিটি টিকিটের সঙ্গে বিনামূল্যে দেওয়া হবে মাননীয়ার লেখা বই ‘আমার জঙ্গল’তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডহরবাবুর জন্য এক মিনিট শোক পালন করা হবে।

(বি.দ্র.= যদি কোনো ব্যক্তি খেলা দেখতে গিয়ে স্টেডিয়াম, আকাডেমি, হোস্টেল, আই টি আই, কলেজ, এ এন এম কেন্দ্র কিছুই না দেখতে পান, তাহলে সত্বর হরিশ চ্যাটার্জি ধরনীতে যোগাযোগ করুনসেখানে ডাঁই হয়ে থাকা ২০১১সালের দলীয় ইস্তাহারে এবং জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিলিপিতে এর সবগুলিই তিনি খুঁজে পাবেন! )

Saturday 26 March 2016

অনুদান কাহারে কয়?


জন্‌মেজয় কহিলেন, হে মহর্ষি! অনুদান কাহারে কয়? আপনি কহিলেন যে ‘পরিবর্তন’-এর যুগে সততার নামে এক প্রকার লুটেরার দল বাংলায় ক্ষমতায় আসিবেন। তাঁহারা কিভাবে অনুদান লইবেন এবং অনুদান লইবার পর ধরা পড়িলে কি রূপ আচরণ করিবেন তাহা শুনিতে বড় কৌতূহল জন্মিতেছে। আপনি অনুগ্রহ করিয়া সবিস্তারে বর্ণনা করুন।

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে নরবর! আমি সেই মহান অনুদান বিশ্লেষণ করিব, আপনি শ্রবণ করুন।। আমি সেই নারদ কর্তৃক দংশিত অনুদান বর্ণনা করিতেছি, আপনি শ্রবণ করুন। হে রাজন, যে অর্থ প্রত্যক্ষ ভাবে না লইয়া, শান্তি-রক্ষকের বেশে কিছু দালালের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়, তাহাকেই অনুদান কয়। যে অর্থ হস্তগত হইলে সুলতানও গোলামে পরিণত হয় তাহাকেই অনুদান কয়। সমাজের কিছু বহুরূপী সান্ধ্য জলযোগে সিঙাড়ার সহিত উদরস্থ করিয়া থাকেন।

হে রাজন, যে অর্থ গ্রহণ পশ্চাৎ শ্বেতশুভ্র খন্ডিত বস্ত্র কর্তৃক অতীব যত্নসহকারে আভরিত হইয়া রক্ষিত হইবে, তাহাই অনুদানরূপে সমাজ স্বীকৃত হইবে। নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিও ইহাকে আপন সিন্দুকে ভরিতে ভুল করিবে না। মনুষ্য অনুদান লওয়াকে নিম্নবর্গের প্রাণীহত্যার সহিত তুলনা করিলেও ইহাকে প্রত্যাখ্যান করিবার মতন মুর্খামি করবে না। শিক্ষিত ব্যক্তির হস্তে ইহা পড়িলে তিনি সাময়িক কুন্ঠা বোধ করিবেন বটে, তবে ইহার লোভ সংবরণ করিতে পারিবে না। নারীর সম্মুখে যদি ইহা সজ্জিত থাকে, তাহলে তিনি সহাস্য বদনে ইহা গ্রহণ করিবেন। কতিপয় বিলুপ্ত প্রজাতির মনুষ্য ইহার অংশীদারিত্ব চাহিয়া বসিবেন। এমনকি ক্রীড়ামোদী মনুষ্যও অনুদানের মোহে মোহগ্রস্ত হইয়া পড়িবেন।

মহারাজ, ‘পরিবর্তন’-এর যুগে অনুদানের নানান রূপ অর্থ হইবে। সিন্ডিকেট নামক শিল্পপ্রেমীদের নিকট ইহা উৎসাহবর্ধক রূপে পরিচিত হইবে। ‘তোলাবাজ’ নামক সমাজসেবীদের নিকট ইহা প্রাত্যহিক প্রণামী বুঝাইবে। ইহাই বেকারের চাকুরির নিশ্চয়তা প্রদান করিবে। অনুদানই হইবে ধর্ষিত নারীর সম্মানের পরিমাপক। দরিদ্রের নিকট হইতে বিন্দু বিন্দু করিয়া গৃহীত অর্থ যখন সিন্ধুতে পরিণত হয়, তখন তাহাকেই অনুদান কয়।

হে নরাধীপ! গরল পানপূর্বক মৃত্যু ঘটিলেও ইহা প্রদান করা হইবে। ইহাই গণবন্টন ব্যবস্থায় নিজ নিজ নাম নথিভুক্তকরণে সাহায্য করিবে। অনুদানই ব্যক্তির গলে ঝোলাইতে পারে ‘বি পি এল’ নামক  কামধেনু স্বর্ণহার। ইহাই পারে আপনার বার্ধক্য ভাতা বিধবা ভাতার মতন সরকারি নথিগুলির গতি ত্বরান্বিত করিতে।


বৈশম্পায়নের অমৃতবাণী শ্রবণপূর্বক জন্‌মেজয় কহিলেন, মুনিবর, আপনার দিব্যজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হইয়া অবগত হইলাম যে অনুদান ও উৎকোচ এক নহে। অনুদান লওয়া কোনো পাপ নহে। বরং অনুদান গ্রহণকারীরা গর্বের সহিত বলিতে পারে ‘‘আমরা সবাই অনুদান গ্রহণকারী’’।

Wednesday 23 March 2016

‘‘খাইসে, আবার নারদ আইসে’’

হোলির দিন সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার ক্লাবে জমিয়ে ফিস্ট হচ্ছে। প্যালা আর ক্যাবলা খাসির মাংস রান্না করছে। পার্ক সার্কাসে হাজী সাহেবের দোকান থেকে ভোরবেলা লাইনে দাঁড়িয়ে কিনে এনেছে হাবুল আর ক্যাবলা। একেবারে রেওয়াজী খাসি! হালকা করে মিউজিক সিস্টেম চালানো হয়েছে। কিন্তু হাবুলের যা অভ্যেস, নাগাড়ে টিভির রিমোট সার্ফ করে চলেছে। একটা খবরের চ্যানেল দেখে হঠাৎ হাবুল চিৎকার করে উঠলো, ‘‘খাইসে, আবার নারদ আইসে।’’ প্যালা আর ক্যাবলা রান্না ছেড়ে লাফ দিয়ে টিভির সামনে চলে এলো।

এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ক্লাবে প্রবেশ করলো টেনিদা। উপস্থিত সবাইকে ও স্টোভের উপর ফুটন্ত মাংসের কড়াটার দিকে চেয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বললো- ‘‘যাক্‌, তাহলে খাওয়া এখনো শুরু হয়নি।’’ হাবুল বললো, ‘‘জানো টেনিদা, আজ না আবার সেই নারদ আইছিল! পিসির সৎ ভাইপোটারে আনছিল, লগে লগে একটা মাইয়ালোকরেও দেখাইতাছিল।’’

টেনিদা টেবিলের উপর রাখা প্যালার বিড়ির প্যাকেট থেকে একটা বিড়ি বার করে কানের পাশে দুবার ঘুরিয়ে, মুখে ফু দিয়ে তারপর দেশলাই জ্বালালেন। তারপর বিড়ির প্যাকেটটা বেমালুম নিজের পকেট ঢুকিয়ে চেয়ারে পা মুড়ে বসে একটা লম্বা টান দিয়ে বললেন, ‘‘জানিস, আমিও এককালে এমন অনেক স্টিং অপারেশন করেছি।’’ প্যালা বললো, ‘‘গুরু! তুমি আর কি কি করেছ! একবার লিস্টিটা দাও না মাইরি!’’ হাবুল বললো, ‘‘চুপ কর প্যালা। জানস্‌ না, আমাগো টেনিদা একাই ১০০!’’ সঙ্গে সঙ্গে ক্যাবলা বললো, ‘‘১০০ নয়! নতুন থিওরি অনুযায়ী টেনিদা একাই ২৯৪।’’ টেনিদা পুলকিত হলেও মুখে বললো, ‘‘ক্যাবলা, তুই কিন্তু এবার গাঁট্টা খাবি।’’ হাবুল বললো, ‘‘টেনিদা, তুমি প্যালাটারে ইগ্‌নোর কইরা দাও। অখন তোমার গল্পখান আমাগো একবার শুনাও তো!’’

টেনিদাতো তাঁর গুলগল্প বলার জন্য মুখিয়েই ছিলেন। বলতে শুরু করলেন, ‘‘ সে প্রায় বছর দশেক আগেকার কথা হবে। তখন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে আমার নিত্য যাতায়াত। একদিন চা আর সিঙাড়াসহযোগে সান্ধ্য আড্ডা চলছে, তখন উনি...।’’ হঠাৎ প্যালা মাঝখানে ফুট্‌ কাটলো, ‘‘আচ্ছা, সুব্রতবাবুও ছিলেন? না, মানে সিঙাড়া ছিলো তো তাই...।’’ টেনিদা এবার সত্যিই প্যালার মাথায় কষিয়ে দিলেন তাঁর বিখ্যাত একটা ঝাল গাঁট্টা। প্যালায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তারপর আবার শুরু করলেন,‘‘...উনি আমাকে বললেন, ‘‘টেনি, তোমায় একটা দুঃসাহসিক কাজ করতে হবে! তোমাকে একটা স্টিং অপারেশন করতে হবে। গোটা রাজ্যজুড়ে কঙ্কাল খুঁজে বের করতে হবে।’ আমিও স্টিং অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হলাম। গোটা রাজ্য থেকে প্রায় ১০ হাজার কঙ্কাল উদ্ধার করলাম। সুশান্তবাবুর বাড়ির উঠান থেকেই ১হাজার কঙ্কাল পাওয়া গেল। সেই ফুটেজ এনে ওনাকে দিলাম।’’ ক্যাবলা বলল, ‘‘ফুটেজ দেখে উনি নিশ্চয়ই খুশিতে ডগমগ হয়ে গিয়েছিলেন!’’ টেনিদা মুচকি হেসে বললেন, ‘‘যা, আগে চারপিস কষা মাংস আমার জন্য নিয়ে আয়,  একটু টেস্ট করে দেখি। বাকিটা পরে বলছি।’’

অগত্যা নির্দেশ পালন। নিমেষে চারপিস কষা সাঁটিয়ে টেনিদা আবার শুরু করলেন, ‘‘এর বেশ কিছুদিন পর উনি একদিন হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, ‘টেনি, তোমাকে এবার নন্দীগ্রামে যেতে হবে। ভাইপো বঙ্কুকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাটা একেবারে অকর্মার ঢেঁকি! ইলিয়াসের একটা ফুটেজ ছাড়া আর অন্য কিছুই জোগাড় করতে পারেনি! এখন তুমিই আমার একমাত্র ভরসা।’ আমি ওনার কথামতন নন্দীগ্রাম গেলাম স্ট্রিং অপারেশনে। যুদ্ধের যা ফুটেজ আনলাম তা দেখে ওনার চক্ষু ত্রিফলার উপর উঠে গেলো। লালবাবু একাই হাতে এ কে ৪৭ নিয়ে গুলি চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকশো হার্মাদ সেই লাশগুলো তুলে জাহাজে ভর্তি করছে আর সেই জাহাজভর্তি লাশ বঙ্গোপোসাগরে পাড়ি দিচ্ছে।’’


প্যালা বলল, ‘‘কিন্তু টেনিদা, ভিডিওটা কোন্‌ টিউবে আপলোড করেছ? কই দেখতে পেলুম না তো!’’ টেনিদা বললেন, ‘‘অমন নেফিস্টোফিলিসের মতন কথা বলিস না প্যালা। জানিস না উনি কুৎসা পছন্দ করেন না! তাই ভিডিও-র ট্রান্সক্রিপশন কালীঘাটে টাইপ করে সব কাগজে আর টিভি চ্যানেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা যা বলেছি, যা পাঠিয়েছি, চ্যানেলগুলো সেটাই সম্প্রচার করেছে। কাগজেও তাই ছাপা হয়েছে। শুধু ভিডিওটাই যা দেখানো হয়নি!’’

Saturday 19 March 2016

মাথার ব্যামো




পিসির মাথার ব্যামোটা আজকের নতুন নয়! এটা অনেকদিনের পুরনো অসুখ। আর গরম পড়লেই সেই ব্যামোটা আরও বাড়তে থাকে। তাই তো পিসি সবসময়ই ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল’ থাকতে চান। আরে পিসি মানে আমার নিজের পিসি নয়। আমাদের সার্বজনীন পিসি, আমাদের পাড়ার কালিপিসি। এবছর শীতটা দুম করে চলে গেলো, আর গরমটা হুট করে পড়ে গেলো। বসন্তটা মাঝখান থেকে ভ্যানিস হয়ে গেলো। আর গরম পড়তেই পিসির ব্যামোটা শুরু হয়ে গেল। যত দিন যাচ্ছে গরমও বাড়ছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিসির ব্যামোও চড়চড় করে বাড়ছে। তবে পাড়ার লোক পিসির এতে  আদৌ অতিষ্ঠ নয়। তারা তো জানেই যে পিসির মাথার ব্যামো আছে। তাই এটাকে জাস্ট এনজয় করছে। মাঝে মধ্যে পাড়ার বখাটে ছেলেগুলো একটু পিনিক্‌ দেয়, আর তাতেই পিসি সারাদিন উল্টোপাল্টা বকবক করতে থাকে।

কালিপিসির সাথে কংস-দার ব্রেক-আপ হয়েছে, তা প্রায় বছরখানেক হলোপিসির তিরিক্ষি আচরণই একপ্রকার কংসদাকে বাধ্য করেছিল সম্পর্ক ছেদ করতে। আসলে পিসির জীবনে তো শুধু কংসদা একাই আসেনি! আরও অনেকে এসেছিল। পটলখুড়োকে মনে আছে তো! পটলখুড়োর গেরুয়া মাফলারের প্রেমে ফিদা হয়ে গিয়েছিল তো পিসি। পটলখুড়ো তার আধবোজা-আধখোলা চোখের অ্যাডভান্টেজ নিয়ে সবার সামনেই পিসিকে চোখের ইশারা করতেন। কেউ বুঝতেই পারতো না। তবে পিসি কিন্তু সিগন্যালটা ঠিক ধরতে পারতেন। 

পটলখুড়োর ভাই নরেনখুড়োকেও পিসি ছাড়েনি। সেই যে বার নরেনখুড়ো যখন গুজরাট থেকে ফিরল, পিসিই তো তাকে এক তোড়া গোলাপ আর একটা ভ্যালেনটাইন কার্ড দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে ছিল। সেই থেকে পিসির সাথে ওনার গোপন কেমিস্ট্রি। তবে পিসি কারোর কাছে সে কথা স্বীকার করে না। ওপাড়ায় নরেনখুড়োর মুদির দোকানে প্রায়ই পিসির আনাগোনা। এই নরেনমুদির সাথে পিসি নজরুল মঞ্চে জলসা শুনতে গিয়ে একান্তে গল্প করেন। খুড়োও পিসির জন্য তেওরীর লাড্ডু নিয়ে আসেন। তবে প্রকাশ্যে কেউই স্বীকার করে না, তাদের মধ্যে গোপন বোঝাপড়ার কথাতবে পাড়ার লোক সবই বোঝে। পাড়ার বয়স্করা প্রায়ই বলে থাকেন, এই মেয়েটা যে আর কটা ছেলের মাথা খাবে কে জানে!

পাড়ার মহিলামহলে এখন আলোচনার বিষয় একটাই, কংসদা আর বামাচরণবাবুর মেয়ের কেমিস্ট্রি। দুজনের বন্ধুত্বের কথা, একে অপরের প্রতি সহানুভূতির কথা, দুজনে একসাথে মিলে কালিপিসির দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করার কথা আজ পাড়ার প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে। আর সেটাই হয়েছে পিসির কাল। এই তো সেদিন দুপুরবেলায় ঘন্টাখানেক ধরে সুমনদের বাড়িতে পাড়ায় মহিলাদের জটলায় কংসদা আর বামাচরণবাবুর মেয়ের প্রসঙ্গ নিয়েই চর্চা হচ্ছিলো। আচমকা পিসি সেখানে গিয়ে হাজির! সুমনের মা পিসিকে কংসদার কথা জিজ্ঞেস করতেই পিসি একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠলো ‘‘ওরা যা খুশি করে করুক। ওরা মিলেনিয়াম পার্কে যাক, বা ভিক্টোরিয়ায় যাক। ওরা চিনেবাদাম খাক, বা ফুচ্‌কা খাক, তাতে আমার কি! আমি ওদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’’ নিজের অতীতের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে পিসি বললো, ‘‘তবে ওদের এমন রাস্তায় রাস্তায় হাত ধরে ঘোরা কিন্তু মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। অবশ্য এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার আমি নাক গলাব না।’’

কিন্তু নাক গলাবো না বললেও রাগেক্ষোভে পিসির কথার তোড় ছুটতেই লাগলো। গজ্‌গজ্‌ করতে করতে বলেই চললো, ‘‘শুনলাম, দুজনে জুটি বেঁধে আজ মুর্শিদাবাদ তো কাল বর্ধমান, আজ শিলিগুড়ি তো কাল মেদিনীপুর ছোটাছুটি করছে। তবে আমি ওদের এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। কংস ভুলে গেলো কি করে বামাচরণবাবুর সব কথা! সব আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে শেষে কিনা ঐ মেয়ের হাত ধরল! আর বলিহারি মেয়েটাকে, তোর বাপকে যে এককালে এতো গালাগালি দিয়েছিল, আজ তুই কিনা তার হাত ধরেই ড্যাং ড্যাং করে রাস্তায় ঘুরছিস! ওরা সাবালক, আমি ওদের ব্যাপারে কেন মন্তব্য করতে যাব! তবে এককালে কংস আমার খুব ক্লোজ ছিল, তাই কংসর জন্য খুব কষ্ট হয়। কংসর ভালোর জন্যেই বলছি ওর অবিলম্বে এই সম্পর্ক ব্রেক করা দরকার। ও জানে না বামাচরণবাবুর মেয়ে ওর কতো ক্ষতি করতে পারে! মরুকগে ওরা, আমি কেন বারণ করবো!


আরও দু-চারটে খিস্তি দিয়ে পিসি সুমনদের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় বিড়বিড় করে একটাই কথা বলতে লাগলো, ‘‘পাড়ার সবার কাছে ভালোমানুষ সাজা! দাঁড়াও, আমার নামও কালি, ওদের মুখ মুখোশ দুটোই খুলে দেব।’’ 

পিসি বেরিয়ে যাবার পর সুমনের মা যখন বলল, ‘‘ওরে, রাঁচিতে বুকিং কর! পিসি বুঝি এবারে না সত্যিই পাগল হয়ে যায়!’’ উপস্থিত বাকি মহিলারা হো হো করে হেসে উঠলো।

Tuesday 15 March 2016

চোরের মায়ের বড়ো গলা


স্বর্গের দেবতাদের কাছে দেবাদিদেব মহাদেবের জরুরী তলব গিয়েছে অবিলম্বে কৈলাসে আসার জন্য। সব দেবতারা হাজির হবার পর মহাদেব বললেন- ‘‘আজ আমরা ঘোর সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। মর্তে কেউ আর আমাদের পূজা করছে না। সবাই এখন ৫৬ফুট সততার মূর্তির পূজায় ব্যস্ত। জনসাধারণকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে ঐ নারী ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ। তাই মানুষের মোহ কাটাতে আমাদের অবিলম্বে কিছু একটা করতে হবে।’’ দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর নারায়ণ সিদ্ধান্ত জানালেন – ‘‘আমরা ঠিক করেছি, সততার পর্দা এবার উন্মোচন করবোই। তাই নারদকে আমরা মর্তে স্টিং অপারেশনের জন্য পাঠাচ্ছি।’’

ব্রহ্মান্ডের প্রথম সাংবাদিক নারদ তো এই প্রাইম অ্যাসাইনমেন্ট পেয়ে যারপরনাই উৎফুল্ল। এমনিতেই লোকের হাঁড়ির খবর নেওয়া তাঁর চিরকালের অভ্যেস। শুধু খবর নেওয়াই নয়, সেই খবর অন্য লোকের কাছে চালান করা বা কান ভাঙানোতেও তিনি রীতিমত সুনাম(!) কুড়িয়েছেন। এবারও তিনি কামাল করে দেওয়ার লক্ষ্যে অল্প সময়ের মধ্যেই যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে নিলেন। অতঃপর বাহন ঢেঁকিতে চড়ে তিনি স্বর্গলোক থেকে মর্তে রওনা হলেন তাঁর স্টিং অপারেশনের লক্ষ্যে। সবার প্রথমেই গেলেন সততার পালের অন্যতম গোদা নকুলের বাড়িতে। সাতসকালে গিয়ে দরজার বেল বাজালেন। দরজা খুলতেই বাতাসে সন্দেহজনক শিউলির গন্ধ পেলেন। একটু ইতিউতি ভালো করে দেখে নিয়ে তবে নকুলের ঘরে ঢুকলেন। নকুল তো নারদকে দেখে বেজায় খুশি। কারণ, নারদ যখনই আসেন, তখন এটা ওটা সঙ্গে নিয়ে আসেন।  

কথাবার্তা এরকম এগোতে থাকলো:
নারদ = ভাই নকুল, স্বর্গে তো আর ব্যবসা তেমন চলছে না। তাই ভাবছিলাম, তোমাদের বাংলায় যদি একটু আমাকে ব্যবসা করতে দাও!
নকুল = অবশ্যই করতে দেব। আমাদের দিদির অনুপ্রেরণায় তো আমরা সব ব্যবসায়ীকেই সব ব্যবসা করার সমস্ত রকম ছাড়পত্র দিচ্ছি। তা কী ব্যবসা করবেন, দাদা? চিট ফান্ড! ওটার কিন্তু এখানে হেব্বি ডিমান্ড। তবে ওটার রেট অনেক বেশি।
নারদ = আরে না না। আমার অতো পুঁজি নেই ভাই।
নকুল = তাহলে বোমা শিল্প করুন। সামনেই ভোট, তাই বাজার খুব গরম। তাছাড়া সারা বছর আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই, মানে বিভিন্ন গোষ্ঠী সামলানোর জন্য ওটার ডিমান্ড প্রচুর।
নারদ = আমি ভাবছিলুম একটা ল্যাংচা হাব বানাবোইমপেক্স ল্যাংচা হাব। তাই যদি একটু ব্যাপারটা দেখ! মানে জমি সমস্যা তো আছেই....
নকুল = ঠিক আছে, ঠিক আছে। কোনো চিন্তা করবেন না। আমি সব সাল্‌টে নেব। তবে ২০ লাখ দিতে হবে।
নারদ = সেকি, একেবারে ২০ লাখ!!!!
নকুল = হ্যাঁ। আমার ২০ লাখ, আর বাকিদের ৫লাখ করে দিলেই হবে। আসলে আমারটার মধ্যে সততা দেবীর ভাগটাও ধরা আছে তো! আর একটা কথা, সততা দেবীর মতই আমিও নিজের হাতে এখন টাকা নিই না। তাছাড়া এখন একটু সি বি আই, আর এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের চাপে আছি।
নারদ= হ্যাঁ, আমি কিছু কিছু শুনেছি।
নকুল= সেই জন্য টাকাটা আপনি আমার বিশ্বস্ত দালাল মীরজাফরকে দিয়ে দিন। বাকি কথা পরে আমার এলগিন রোডের অফিসে আসুন, ওখানেই হবে। আজ আমি একটু ব্যস্ত আছি। কথা পাক্কা হয়ে রইলো। টাকাটা কিন্তু আজই দিয়ে দেবেন।

নকুলের বাড়ি থেকে ঢেঁকি চড়ে নারদ চললেন বর্ধমানে মীরজাফরের বাড়িতে। মীরজাফর আগেই নকুলের হোয়াটস্‌অ্যাপ্‌ মেসেজ পেয়ে গিয়েছিল। তাই সে নারদকে খুশি মনেই স্বাগত জানালো। তাছাড়া, সকালবেলাতেই আমদানি কার না ভালো লাগে!
মীরজাফর = আরে নারদ ভাইসাব, আসুন, আসুন! আমি সুবাসাম এতো আল্লাকে ডাকি তবুও তাঁর দেখা মেলে না। আর আপনাকে না ডাকতেই আপনি চলে এলেন।
নারদ = আসলে নকুলবাবু আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছে।
মীরজাফর = হ্যাঁ, হ্যাঁ, জানি। ওঁর সাথে কথা হয়েছে। আসলে লেনদেনটা আমিই ডিল করি তো। তবে আমার ৫লাখ কিন্তু আলাদা।
নারদ= সে আমি জানি! এক্সট্রাটা সঙ্গেই এনেছি। পুরো পঁচিশ লাখ আছে।

মীরজাফরকে টাকা মিটিয়ে নারদ চললেন বিখ্যাত কবি হাকিমের বাড়ি। তিনি বর্তমানে সততার ঘনিষ্ঠতম সাঙাৎদের একজন। নকুলের থেকেও তাঁকেই এখন বেশি ভরসা করেন তিনি।
জাহাজপাড়ায় হাকিমের বাড়ি পৌঁছে গেলেন জলদি। বাড়ি তো নয়, প্যালেস একটা! নিজের চেম্বারের রিভলভিং চেয়ারে খোলামেলা অবস্থায় দোল খাচ্ছিলেন হাকিম...
নারদ = আসলে হাকিম সাহেব, আমি বাংলায় একটা ল্যাংচা হাব খুলতে চাই, আপনি যদি একটু সাহায্য করেন আর কি!!
হাকিম = কেন করবো না! উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেলে নিশ্চয়ই করবো। তবে প্রথমেই বলে রাখি, আমি কিন্তু ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করি না! ৫লাখের একটা টাকাও কম আমি নিই না।
নারদ = ঠিক আছে, ঠিক আছে, তাই হবে। তবে পরে কোনো সমস্যা হবে না তো!
হাকিম = আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আর হ্যাঁ, টাকাটা নীচে আমার লোক আছে, ওকে দিয়ে দিন। পরে গুনে নেবো।
নারদ নিচে গিয়ে হাকিমের লোকের হাতে টাকা তুলে দিলেন। ছেলেটা একটু ফচ্‌কে টাইপের। নারদ কোথায় থাকেন জানতে চাইছিল। কায়দা করে এড়িয়ে গেলেন তিনি।

নারদ তারপর চললেন অশোভন বাবুর অফিসে। সেখানে গিয়ে দেখলেন অশোভন বাবু এসি চালিয়ে বন্ধ কেবিনে দিব্যি সিগারেট টানছেন---
নারদ = অশোভন বাবু, আমার ল্যাংচাটা যদি একটু দেখেন!
অশোভন = নিশ্চয়ই দেখব। তবে তার আগে আপনি আমার ল্যাংচাটা  দেখুন! রসেবশে না থাকলে তো শুকিয়ে লাট হয়ে যাচ্ছে মাইরি!
নারদ = এই নিন, রসের জোগান দিয়ে দিলাম। ভালো করে গার্টার লাগিয়ে দিয়েছি। যাতে পড়ে না যায়!
অশোভন = আমি এই সততার শালে মুড়ে রেখে দিলুম, এবার আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আরে, আমিই আপনাকে ওনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। মাসখানেক বাদে আসুন। তবে আসার সময় কিছু নিয়ে আসবেন। বুঝতেই তো পারছেন!
দেঁতো হাসি হেসে নারদ রওনা নেক্সট্‌ টারগেটের দিকে।

নারদের পরবর্তী গন্তব্য দক্ষিণ কলকাতায় তরমুজের বাড়ি। তরমুজ নারদের পুরনো খদ্দের, বহুদিনের আলাপ। একসময় লাল-নীল জল ছাড়া তাঁদের দোস্তি জমতো না। তবে এবারে স্টিং অপারেশনের চাপ। তাই তরমুজের সাথে সিঙাড়া-টিঙারা খেয়ে খোশমেজাজে গল্প-গাছা করে, তাঁকে তাঁর পাওনা মিটিয়ে দিয়ে খুশি করলেন। পরে ঝড়ের গতিতে একে একে বাকি কাজ সারলেন নারদ। শেফালির ক্লায়েন্ট চিনতে প্রথমে একটু অসুবিধা হয়েছিল বটে, কিন্তু পরে ৫লাখ পেয়ে আনন্দে মন ভরে যায়। অধ্যাপকবাবু এতোগুলো টাকা হাতে পেয়ে হিপনোটাইজ্‌ হয়ে গেলেন। রসুনবাবু টাকা হাতে পেয়ে ওডাফার থেকেও বেশি খুশি হলেন। যেন আই এস এল নয়, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার চান্স পেয়ে গেছেন। আর মাতালটা তো নেশায় চুর হয়ে আছে। উঠে টাকা নেবে সে ক্ষমতাও নেই।
নবাব আর তাঁর ভাইসাহেবও টাকা পেয়ে খুবই খুশি। সবাই নারদকে সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন।

সফলভাবে স্টিং অপারেশন সমাপ্ত করার পর নারদ কৈলাসে ফিরে গেলেন। সততার টিমের প্রায় গোটাটাই তিনি ৫২ঘন্টা ফুটেজে ধরে ফেলেছেন। তাতে পর্দা তুলতে কোনো অসুবিধা হবে না। কৈলাসে তখন সমস্ত দেবতারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে সবাই তো অবাক! তাহলে সততার টিমের এটাই আসল চেহারা! মহাদেব নন্দী-ভৃঙ্গীকে অর্ডার দিলেন-‘‘এখুনি নেট চালাও, ওয়াই-ফাই অন করো। ইউ টিউবে ভিডিওটাকে আপলোড করে দাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা যেন ভাইরাল হয়’’। মহাদেবের আদেশ পেয়ে নন্দী-ভৃঙ্গী তুরন্ত ভিডিও আপলোড করে দিলেন। তক্ষুনি সমস্ত দেবতাই প্রায় একসঙ্গে ফেসবুকে শেয়ার করলেন ভিডিওটা। মূহুর্তে মর্তলোকে হই হই রব পড়ে গেলো। সততা দেবী তখন কৈলাস পাহাড়ের কোলেই একটা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন। তাই তাঁর  চিৎকারই সবচেয়ে জোরে ভেসে আসতে লাগলো– ‘‘ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্র। কুৎসা, কুৎসা, কুৎসা’’


মহাদেব মুচকি এসে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বললেন – ‘‘ঐ দেখ! চোরের মায়ের বড়ো গলা।’’

Thursday 10 March 2016

KBC: গেম ইজ ওভার!


হাকিম সাহেব গিয়েছেন KBC-তে -----

অমিতাভ = হাকিম সাহেব, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের জন্য সময় বের করার জন্য।

হাকিম সাহেব = তা এখন চাপে আছি বইকি! প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর যা সব শুরু হয়েছে!

অমিতাভ = হাকিম সাহেব, ৫০০০ টাকার প্রথম প্রশ্ন, এই আপনার স্ক্রিনে -------

হাকিম সাহেব = আরে থামুন, থামুন!! এত কম টাকার খেলা আমরা খেলি না। আমাদের সততার রেপুটেশন জানেন না!!

অমিতাভ = কিন্তু হাকিম সাহেব, এটা তো KBC- নিয়ম।

হাকিম সাহেব = লাখ থেকে শুরু করলে করুন, না হলে আমি চললাম---

অমিতাভ = আচ্ছা, ঠিক আছে, তবে তাই হোক।
১লাখ টাকার প্রথম প্রশ্ন, এই আপনার স্ক্রিনে -----
ক্ষুদিরামের যমজ ভাইয়ের নাম কি?
a. দুখীরাম b. সুখীরাম c. বলরাম d. ভগৎ

হাকিম সাহেব = প্রশ্নের উত্তর তো সবাই জানে। আমাদের দিদির অনুপ্রেরণায় তো বাংলার রাস্তায় রাস্তায় ছবি দেওয়া আছে ওনার। আরে অপশন d. ভগৎ।

অমিতাভ = কম্পিউটারজী, অপশন d. কো লক্‌ কিয়া যায়ে।
হ্যাঁ, একেবারে সঠিক উত্তর।
হাকিম সাহেব, ৫লাখ টাকার পরবর্তী প্রশ্ন এই আপনার স্ক্রিনে ------
‘চাষার ব্যাটা’ বড়ো হয়ে কি হয়?
a. কৃষি বিজ্ঞানী b. কৃষি মন্ত্রী c. বেদে d. ভাগচাষী

হাকিম সাহেব = এই তো সদ্য ক্যানিং-এর এক চাষার ব্যাটাকে কেউটে ধরতে দেখলাম। তাই মনে হয় চাষার ব্যাটা বড় হয়ে বেদেই হবে।

অমিতাভ = কম্পিউটারজী, অপশন c. বেদে পর তালা লাগাইয়ে।
হাকিম সাহেব, আপনি এবারেও সঠিক উত্তর দিয়েছেন।
১০ লাখ টাকার পরবর্তী প্রশ্ন এই আপনার স্ক্রিনে ---
গীতাঞ্জলীর স্রষ্ট্রা কে?
a. রবীন্দ্রনাথ b. মমতাজ c. নজরুল d. শেক্সপিয়ার

হাকিম সাহেব = কথাঞ্জলী, নামাঞ্জলী সব অঞ্জলি যখন আমাদের মমতাজ বেগমেরই সৃষ্টি তখন গীতাঞ্জলীও ওনার সৃষ্টি হবে।

অমিতাভ = কম্পিউটারজী, অপশন b. মমতাজ কো লক্‌ কিয়া যায়ে।
হাকিম সাহেব, একেবারে সঠিক উত্তর।
২০লাখ টাকার পরবর্তী প্রশ্ন এই আপনার স্ক্রিনে ----
২০১৫-তে টেটের রেট কতো ছিলো?
a. ৫লাখ b. ৮লাখ c. ১০লাখ d. ১২লাখ

হাকিম সাহেব = এটা বড্ড শক্ত প্রশ্ন হয়ে গেল। আসলে যে যেমন পেরেছে তেমন টাকা নিয়েছে। তবে ৫লাখ মোটেই নয়। অতো কম টাকা আমাদের লোকেরা নেয় না। ২০১৩তে ৮লাখ রেট ছিলো। তাই মনে হয় ১০ বা ১২লাখের মধ্যে কোনো একটা হবে। আসলে পাবলিক টাকা দিয়েছে তো, তাই আমি অডিয়েন্স পোল নেব।

অমিতাভ = হাকিম সাহেব, অডিয়েন্স পোল বলছে ১২লাখ। আপনি কি জনগণের সাথে যাবেন?

হাকিম সাহেব = অবশ্যই। আমরা তো ঘটি-বাটি-মানুষের লোক।

অমিতাভ = কম্পিউটারজী, অপশন d.  পর তালা লাগায়া যায়ে।
একেবারে সঠিক উত্তর হাকিম সাহেব।
৪০লাখ টাকার পরবর্তী প্রশ্ন এই আপনার স্ক্রিনে ----
কলকাতা এখন কিসে পরিণত হয়েছে?
a. আফগানিস্তান b. সুইজারল্যান্ড c. লন্ডন d. ভেনিস

হাকিম সাহেব = এতো সবাই জানে, ওনার অনুপ্রেরণায় কলকাতা এখন লন্ডনে পরিণত।

অমিতাভ = কম্পিউটার জি অপশন c. কো লক্‌ কিয়া যায়ে। হাকিম সাহেব, এটা ভুল উত্তর। সঠিক উত্তর অপশন a. আফগানিস্তান। কিছুদিন আগেই সে কথা পান্ডেজী সবাইকে বলেছেন। তবে চিন্তা করবেন না, আপনার একটা লাইফলাইন আছে।

হাকিম সাহেব = সে কি! এই দুর্দিনেও আমার কপালে লাইফলাইন!

অমিতাভ = কিসের ব্যবসা করলে প্রচুর বিদেশী গাড়ির মালিক হওয়া যায়?
a. আলুরচপ b. ল্যাংচা c. মুড়ি d. ফল

হাকিম সাহেব = আমি 50/50 অপশন নেব।

অমিতাভ = ঠিক আছে। অপশন b আর c মুছে দেওয়া হলো।

হাকিম সাহেব = আলুর চপ ব্যবসায় ফ্ল্যাট আর গাড়ি হয় কিন্তু মনে হয় বিদেশি গাড়ি হয় না। তবে মেছুয়ায় আমার এক ফল ব্যবসায়ী বন্ধুর কিন্তু প্রচুর বিদেশি গাড়ি আছে। তাই অপশন d. হবে।

অমিতাভ = কম্পিউটারজী, লক্‌ কিয়া যায়ে। আপনার বন্ধুই আপনাকে বাঁচিয়ে দিলো। একেবারে সঠিক উত্তর।
৮০লাখ টাকার পরবর্তী প্রশ্ন----
'লি রোডের' বর্তমান নাম কি?
a. সত্যজিৎ রায় সরণি b. সত্যজিৎ রায় ধরণী c. সত্যজিৎ রায় মরণি d. সত্যজিৎ রায় করণি

হাকিম সাহেব = আমি যতদুর জানি সত্যজিৎ রায় ধরণী। কিন্তু আমি সিওর নই আসলে উনার ঘনঘন নাম বদলানোর বাতিক আছে তো! তাই আমি রিক্স নেবো না। আমি ফোন ফ্রেন্ড’ নেব। কালিঘাটে কাজলাদিদিকে ফোন করবো।

অমিতাভ = কম্পিউটারজী, কালিঘাটে ফোন লাগাইয়ে প্লিজ-----
হ্যালো, আমি KBC থেকে অমিতাভ বলছি ----

কাজলাদিদি = KBC! সেটা আবার কি! নতুন কোনো চিট ফান্ড নাকি!!!!

অমিতাভ = আরে না  না। কৌন বনেগা কড়োরপতি। হাকিম সাহেব, আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চায়। হাকিম সাহেব, আপনার সময় শুরু হচ্ছে এখন -----

হাকিম সাহেব = দিদি, লি রোডের বর্তমান নাম কি?

কাজলাদিদি = দু’দিন আগেই তো নাম পাল্টে আমি সত্যজিৎ রায় ধরণী করলাম। কেন, লোকে কি খারাপ কিছু বলছে! তাহলে বল, সি পি এম-র চক্রান্ত!

হাকিম সাহেব = আরে না না। সবাই তো সাধু সাধু বলছে। আমি শুধু কনফার্ম হলাম যে তুমি আবার নাম পাল্টেছ কিনা তা জানতে!

কাজলাদিদি = সেই যখন ওখানে গেছিস একটু ভোটের প্রচার করে আসিস কিন্তু।

হাকিম সাহেব = অবশ্যই দিদি।

অমিতাভ = আপনার সময় শেষ, হাকিম সাহেব। এবার উত্তরটা বলুন।

হাকিম সাহেব = আমি দলীয় শৃঙ্খলা মেনে আমার দিদির সাথেই যাবো। আমার উত্তর অপশন b.

অমিতাভ = কম্পিউটারজী, অপশন b কো লক্‌ কিয়া যায়ে। একেবারে সঠিক উত্তর। এবারে একটু ভেবে খেলবেন হাকিম সাহেব। আপনার জন্য ১কোটি টাকার প্রশ্ন এই আপনার স্ক্রিনে ---
এবারে বিধানসভা ভোটে কে জিতবে?
a. গণতান্ত্রিক জোট b. সিপিএম c. বিজেমূল d. তৃণমূল

হাকিম সাহেব = এতো ভারী ফ্যাসাদে ফেললেন। সঠিক উত্তর দিলে ১কোটি পাবো। কিন্তু তাহলে তো আবার দল থেকে এক্ষুনি বহিষ্কৃত হবো। আর ভুল উত্তর দিলে ১কোটি হারাবো। তার চেয়ে বরং এখানেই কুইট করি, অন্তত ৮০লাখ তো পাবো।


অমিতাভ = গেম ইজ ওভার। হাকিম সাহেব এই প্রশ্ন শুনে এখানেই খেলা ছাড়লেন।