Monday 11 December 2017

চারমূর্তি

শীত পড়তেই এবছর কোথায় পিকনিক করতে যাওয়া হবে সেই নিয়ে জোর ঝামেলা হাবুল আর প‍্যালার মধ‍্যে। হাবুলের ইচ্ছা বোলপুরে তাই হাবুল বলল, বোলপুর হলো 'কবিগুড়ি'র দ‍্যাশ। ছাতিম গাছের তলে বইস‍্যা কচি পাঁঠার ঝোল আর ভাত, ভাবলেই জিভে জল চইলা আ্যাইসে। তাছাড়া আমাগো মামা হইচে বীরভূমের ডিএসপি, সবাই তাকে দেইখ‍্যা সমীহ কইর‍্যা চলে। প‍্যালা এই শুনে বলল, থাক হাবুল, কেষ্টার হুমকি শুনে তোর মামার যে প‍্যান্ট ভিজে গিয়েছিল সেটা আমরা সবাই দেখেছি। তারচেয়ে বরং কোলকাতার কাছাকাছি নিউটাউন রাজারহাটের আশেপাশে কোথাও একটা করলে হয়। হাবুল বলল, আর জায়গা পেলিনা, মাংসের ঝোল কড়ায় ফুটবে আর হঠাৎ বিশ্ব বাংলার বল গড়িয়ে এসে সব উল্টেপাল্টে দিক আরকি!

এমন সময় ক‍্যাবলা বলল, ঐ তো টেনিদা আসছে। প‍্যালা পিছনের দিকে একবার তাকিয়েই তাড়াতাড়ি চানাচুরের ঠোঙাটা উল্টে পুরোটা গালের মধ‍্যে ঢেলে দিলো। টেনিদা এসে মাথায় চাঁটি মারতেই প‍্যালার মুখ দিয়ে চানাচুর বেরিয়ে পড়লো। টেনি মুখুজ‍্যেকে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নয়! যা এখুনি আমার জন‍্য ঝালমুড়ি নিয়ে আয়। অগত্যা প‍্যালা ঝালমুড়ি আনতে চলল। টেনিদা তারপর হাবুল আর প‍্যালার সব যুক্তি শুনে বলল, পিকনিক করতে হয় এমন এক জায়গায় যেখানে পাড়াহ থাকবে, সমুদ্র থাকবে, ঘন জঙ্গল থাকবে, তা নাহলে অ্যাডভেঞ্চার হয় নাকি! হাবুল বলল, এতো ডেলো, মন্দারমনি আর জঙ্গলমহলের ককটেল, এমন জায়গা বাংলায় কোথাও আছে বলে শুনিনি! ক‍্যাবলা এতক্ষণ সব শুনছিল, এবারে সে বলল, আচ্ছা টেনিদা পিকনিকটা লিলুয়ায় করলে কেমন হয়? টেনিদা গাঁট্টা মেরে বলল, বাংলা, বিশ্ব বাংলায় পরিনত হয়ে গেল আর তুই এখনও লিলুয়ার মায়া ছাড়তে পারলি না!

এমন সময় প‍্যালা বলল, আজকে হাবুলের পিসি ডি-লিট পাওয়ার খুশিতে খাওয়াবে বলেছিল না? টেনিদা প‍্যালার মাথায় একটা জোরে গাঁট্টা মেরে বলল, হতচ্ছাড়া এতক্ষনে মনে পড়লো! আমি তাই এসে থেকে ভাবছি আজ কোথায় যেন একটা খাওয়া আছে। চল তাড়াতাড়ি চল, খিদেটা হঠাৎ আবার বেড়ে গেল। হাবুল বলল, কিন্তু আমাদের পিকনিক কোথায় হবে সেটা তো ঠিক হলো না! টেনিদা এবার রেগে গিয়ে বলল, মেফিস্টোফিলিসের মতন কথা বলিস না হাবুল, খালি পেটে হাজার চেষ্টা করলেও আমার পিকনিকের স্পটের নাম মনে পড়বে না।

হাবুলের বাড়িতে চারমূর্তি হাজির হতেই পিসি গরম গরম আলুরচপ আর বেগুনি খেতে দিলো। যথারীতি টেনিদা বাকিদের একটা করে দিয়ে নিজে সবটাই উদরস্ত করলো। তারপর জল খেয়ে একটা ঢেকুর তুলে বলল, কে বলে বাংলার শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয়! পিসি হেসে বলল, তোমরা একটু বোসো আমি বাকি খাবারের জোগাড় একটু সেরে নিই! হাবুল বাকিদের নিয়ে তখন পিসির স্টাডিরুম ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো। দেওয়ালে সব পিসির আঁকা ঐতিহাসিক ছবি। হঠাৎ ক‍্যাবলা বলল, এই হাবুল সেই অ্যাটম বোম বিষ্ফোরণের ছবিটা দেখছি না! হাবুল বলল, ওটা কদিন আগে পিসি রাষ্ট্রপতিকে উপহার দিয়েছে। প‍্যালা টেবিল থেকে একটা বই হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো, 'এপাং ওপাং ঝপাং'। এটা শুনেই টেনিদা বলল, এদিকে খিদেতে আমার পেট চুঁই চুঁই করছে আর তোরা হরলিক্সের আ্যাড শোনাচ্ছিস! প‍্যালা বলল, আরে এটা অ্যাড নয়, এটা পিসির লেখা কবিতা!

এমন সময় পিসির ঢাক শুনে সবাই ছুটে গিয়ে রান্নাঘরে হাজির হলো। মাজ, মাংস, মিস্টি, এলাহি ব‍্যাপার। প‍্যালা দেখে বলল, এতো 'আহারে বাংলার' স্টল! টেনিদা রেগে গিয়ে বলল, প‍্যালা, তুই একদম বেশি খাবিনা। ব‍্যাটা পিলে রুগী, কাঁচা জল খেলে অম্বল হয়। তারপর টেনিদা নিজেই যথারীতি সিংহভাগ খাবার সাবাড় করে দিলো। এতে বাকিদের যথারীতি খুব রাগ হলো। তাই খাবার শেষে পিসি টেনিদাকে মিস্টি করে ধমক দিয়ে বলল, টেনি ম‍্যাক্সিমাম খেও না, মিনিমাম খাও। টেনিদা হেঁসে বলল, জিআই তকমা পাওয়ার পর নবীন ময়রার রসগোল্লার স্বাদ দ্বিগুণ ভালো হয়ে গেছে।
(পুরোটাই কাল্পনিক গল্প, বাস্তবের সাথে মিল থাকলে কাকতলীয়)

Wednesday 15 November 2017

রসগোল্লা রহস্য

আজ রবিবার, তোপসের টিউশন পড়তে যাওয়া নেই। তাই বিকালবেলা সোফায় শুয়ে শুয়ে ইনস্টাগ্রামে সদ‍্য শুরু হওয়া ফ্লিম ফেস্টিভ্যালের ছবি দেখছে। শাহরুখ আর পিসির ছবি দেখে তার হঠাৎ 'করন অর্জুন' সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল। ব‍্যাকগ্রাউন্ডে মনে হলো গান বাজছে, বন্ধন ইয়ে, প‍্যার কা বন্ধন হ‍্যায়। তোপসের চোখে অটমেটিক জল এসে গেলো। তোপসে দেখল পাশে বসে ফেলুদা তখন টিভিতে খবর দেখছে, কেষ্টা প্রকাশ‍্যে হুমকি দিচ্ছে। এমন হুমকি তো মাফিয়া গুন্ডারা দেয়, তোপসের মুখে এই কথা শুনে ফেলুদা বলল, সাধে কি আর উনি বলেছেন, আমি গুন্ডা কন্ট্রোল করি।

এমন সময় কলিং বেজ বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই লালমোহন বাবু রেগেমেগে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলো। তারপর সোফাতে ধপাস করে বসে বলল, হরেন্ডাস ব‍্যাপার মশাই! কি ব‍্যাপার ফেলুদা জিঞ্জেস করাতে লালমোহন বাবু বললেন, দিব‍্যি আপনার বাড়িতে আসছিলাম। নিউ টাউনের সিগন‍্যালে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ গাড়ির পিছনে জোর ধাক্কা। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো গাড়ি এসে ঠুকলো বুঝি! কিন্তু নেমে দেখি হরেন্ডাস ব‍্যাপার, গাড়ি না! আমাদের গরমেন্টের তৈরি বিশ্ব বাংলার বল। ব‍্যাক লাইটটা ভেঙে গুড়ো হয়ে গেলো! ফেলুদা মুচকি হেসে বললেন, ওটা ভাইপোর বল। তোপসে অবাক হয়ে বলল, ওটা তো সরকারি বল! ফেলুদা বলল, বল গড়াগড়ি খাওয়ার আগে পর্যন্ত সবাই সেটাই জানতো।

লালমোহন বাবু ফেলুদাকে বলল, তা এবারে শীতে কোথায় যাওয়া হবে ঠিক করলেন কিছু? ফেলুদা একটা চারমিনার ধরিয়ে দুটো রিঙ ছেড়ে বললেন, গ‍্যাং বা ড‍্যাং তো যাওয়া যাবেনা! পাহাড় খুব জোর হাসছে। লালমোহন বাবু উত্তেজিত হয়ে বললেন, তাহলে রাজস্থানেই যাওয়া হোক। সেই কবে সোনারকেল্লা দেখেছিলাম, আপনার মনে আছে? ফেলুদা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। লালমোহন বাবু বললেন, ছোট্টো ছেলে মুকুলটা তো ভয়ে আমার কোলের ভিতর ঢুকে পড়েছিল। আচ্ছা মিত্তির মশাই, মুকুল অনেক বড়ো হয়ে গেছে না! এখনও কি ভয় পায়? ফেলুদা চারমিনারে আরেকটা টান দিয়ে বলল, হ‍্যাঁ ভয় পায়। তবে সিবিআইয়ের, তাইতো সে এখন পদ্ম বনে লুকায়। লালমোহন বাবু ফেলুদার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে না পেরে তোপসের মুখের দিকে তাকায়। তারপর ফেলুদাকে উদ‍্যেশ‍্য করে বলেন, মুকুল সম্বন্ধে আরেকটি প্রশ্ন করতে পারি? ফেলুদা ঘাড় নাড়তে লালমোহন বাবু বললেন, মুকুল কি কাঁটা বেছে পদ্ম বনে ঢুকেছে?

ফেলুদা চারমিনারের শেষটা অ্যাসট্রেতে গুঁজে লালমোহন বাবুকে বললেন, রহস্য উপন্যাসের জন‍্য রাজস্থানে না গিয়ে দেগঙ্গা বা ভাঙড়ে যেতে পারেন। প্রতিদিনই মার্ডার হচ্ছে, সবাই জানে খুনি কে, কিন্তু কেউ মুখ খুলছে না। লালমোহন বাবু অবাক হয়ে, বলেন কি মশাই! কেন কেউ মুখ খুলছে না? ফেলুদা হেসে বলেন, ওটাই তো রহস্য। তোপসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, তুমি কি ডেঙ্গুর কথা বলছো! ফেলুদা তোপসের পিঠ চাপড়ে বলে, সাবাস! আস্তে আস্তে তুই আমার অ্যাসিসেন্ট হওয়ার যোগ‍্য হচ্ছিস। লালমোহন বাবু অবাক হয়ে বলেন, ডেঙ্গু তো বাংলায় নেই! ওরা তো ভিনদেশী। ফেলুদা লালমোহন বাবুকে বলল, বুঝলেন গাঙ্গুলী বাবু ডেঙ্গু নিয়ে লিখলে একটা সমস‍্যা আছে। উপন্যাস আপনি প্রকাশ করতে পারবেন না। তার চেয়ে বরং আপনি রসগোল্লা নিয়ে একটা উপন্যাস লিখুন। সদ‍্য ওড়িশা থেকে যুদ্ধ জয় করে ফিরেছে। মার্কেটে ভালো খাচ্ছে সবাই। দুদিনেই জুকেরবার্গের সুগার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। লালমোহন বাবু হেসে বললেন, এটা দারুণ বলেছেন। তাছাড়া রসগোল্লার ওপর আমার দুর্বলতা রয়েছে অনেকদিন থেকেই। কিন্তু উপন্যাসের নাম কি দেব? লালমোহন বাবু মাথা চুলকাতে লাগলেন।

বাড়ি ফেরার সময় গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠলেন, পেয়েছি! পেয়েছি! তারপর গদগদ মুখে ফেলুদার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার পরবর্তী উপন্যাসের নাম 'রসগোল্লা রহস্য'। ফেলুদা প্রত‍্যুতরে হেসে বললেন, এবারে আপনার ডি-লিট পাওয়া আর কেউ আটকাতে পারবে না...

Thursday 19 October 2017

ভূত চতুর্দশীর গল্প

ভূত চতুর্দশীর রাতে কালীঘাট শশ্মানে বেশকিছু বিখ‍্যাত ভূত জমায়েত হয়েছেন। সবাই মিলে রবি'দাকে, মানে রবি ঠাকুরকে সভার সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। সভাপতির চেয়ারে বসে...

রবি ঠাকুর - যাক ছ-বছর ট্রাফিক সিগন‍্যালে ঝোলার পর আজ অন্তত একটু বসতে পারলুম। যা দিনকাল পড়েছে এখন তো রাস্তাঘাটে বেরোতে ভয় লাগে। সেদিন এসবিআই ব‍্যাঙ্কে গিয়েছিলাম একটা দরকারে। ক‍্যাশ কাউন্টারের নতুন ছোকরাটা আমাকে চিনতেই পারলো না! যখন বললাম, আমি রবীন্দ্রনাথ তখন গম্ভীরভাবে বলল, ওহ আপনিই আমাদের কোচবিহারের এক স্টাফকে শুয়োরের বাচ্চা বলেছিলেন তাই না! অবস্থা বেগতিক দেখে আমি সেখান থেকে কেটে পড়লুম।

সিরাজউদ্দৌলা - যাই বলেন, পরিবর্তনের থেকে ব্রিটিশ পিরিয়ড অনেক বেটার ছিল। ওদের বড়লাটকে খাজনা দিলেই মিটে যেত। এখন তো কচিনেতা, বড়নেতা, মিনিমাম ম‍্যাক্সিমাম হাজার ঝামেলা। নীলকর সাহেরাও এদের তোলাবাজী সিন্ডিকেট দেখে লজ্জা পেত।

নেতাজি - হ‍্যাঁ, যাস্ট ভাবা যাচ্ছে না! আমার বাড়ি মেরামতি হবে সেখানেও সিন্ডিকেট ঢুকে পড়েছে! আমার পাত্তা দিস না ঠিক আছে, নাতি তো তোদের দলই করে। তার মুখ চেয়ে অন্তত ছাড় দিতে পারতো!

চিত্তরঞ্জন- তুই একবার ভেবে দেখ সুভাষ, আমরা যে ঘরে বসে কর্পোরেশন চালিয়ে ছিলাম, সেই ঘরে সিবিআই ঘুষখোরটা কিভাবে ঘুষ নিয়েছে সেটার তদন্ত করার জন‍্য যাচ্ছে।

নজরুল - আমিই বৃথাই লিখেছিলাম, কারার ই লৌহ কপাট, ভেঙে ফ‍্যাল... ব্রিটিশ পিরিয়ডে উনি থাকলে, কারাগার ভাঙার কোনো দরকারই পড়তো না। উনি থানায় গিয়ে ভাঙচুর করে, চমকিয়ে ধমকিয়ে ছাড়িয়ে আনতেন।

সত‍্যেন্দ্রনাথ দত্ত - 'আজব ছড়া' বইটা পড়ার পর বুঝেছি, কবিতার ছন্দ কিভাবে মেলাতে হয়।

অবনীন্দ্রনাথ - আমি এখনও ভেবে উঠতে পারিনি ঐ ছবিটার দাম কিরে ১কোটি ৮৬লক্ষ হলো! তবে কন‍্যাশ্রী পুরষ্কার নেওয়ার সময় ও যে ছবিটা উপহার দিয়েছিল, সেটা যে ব‍্যাঙের পৌস্টিকতন্ত্রের সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল।

বিদ‍্যাসাগর - জালি সার্টিফিকেটধারীদের নিয়ে কি আর বলবো! তবে ওদের সবার উচিত একবার করে বর্ণপরিচয় পড়া। ফ্লেক্সে যা বানান ভুল করে!

শ‍্যামা প্রসাদ - উনি কেবল উন্নয়নের জোয়ার আনেননি, উনি এ রাজ‍্যে আরএসএসের জোয়ারও এনেছেন। দাঙ্গা দাঙ্গা খেলায় উনি আমাদের মতন সমান পারদর্শী। আর হবে নাই বা কেন, উনি যে সাক্ষাৎ 'দুর্গা'।

রামকৃষ্ণ - আমার স্ত্রী'র ওপর থেকে আমার বিশ্বাস উনিই তুলে দিয়েছেন। আমার নয়, ওনার অনুপ্রেরণায় প্রোমোটাররা মানুষের মধ্যে 'টাকা মাটি মাটি টাকা' এই বানী বেশ ভাল ছড়িয়েছে।

বিবেকানন্দ - ওনার বড়দা তো আমার শিকাগো বক্তৃতার পাঞ্চ লাইনটা, 'আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা' ঝেপে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলো। ঐ ভাষনের শুরুতেই বলে তো, মেরে প‍্যায়ারে ভাইয়ো ওউর ব‍্যাহেনো...

সত‍্যজিৎ - ওনার কৃপায় আমি মারা গিয়েও কিন্তু এখনও'ধরনী'তেই আছি। বেঁচে থাকলে ফেলুদা সিরিজে আর কয়েটা অ্যাড করতে পারতুম। এই যেমন ডেলোতে কেলো, পাতলেবাস সরগরম, জঙ্গলের হাসির রহস্য। তবে মুকুলের জন‍্য আজ খুব কষ্ট হয়। বেচারা আজও দুষ্টু লোক চিনতে শিখলো না।

সত‍্যেন্দ্রনাথ বসু - আমি শুধু ভাবি, ব‍্যাটা কেষ্টা, কেমিস্ট্রির ক জানেনা। কিন্তু বোমার মশলার মাপ কি করে এত নিখুঁত করে!

রামমোহন - আমি কোন বিধানসভা থেকে ভোটে জিতে এমএলএ হয়েছিলাম সেটা আজও খুঁজছি।

জগদীশ চন্দ্র - আমি গাছের প্রাণ আছে বলেছিলাম। আর এরা তাতেই বার খেয়ে সিঙ্গুরের কংক্রিটের জমিতে সর্সে চাষ করলো! এবারও ভেবে দেখলনা গাছ গুলো বাঁচবে কি করে!

ভূত চতুর্দশীর সভা বেশ ভালোই চলছিলো। হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে আর একটা বাচ্চা মেয়ে খেলতে খেলতে সেখানে চলে আসে। এতরাতে দুটো বাচ্চাকে শ্মশানে খেলতে দেখে সবাই হকচকিয়ে যায়। তারা কোথা থেকে এখানে কিভাবে এসেছে তা জিঞ্জেস করাতে। বাচ্চা ছেলেটি জানালো, দিন চারেক আগে তাদের দুই ভাইবোনের একসাথে ডেঙ্গু হয়। শুনে বাকিরা সবাই চুপ হয়ে যায়। কেবল একে অপরের মুখের দিকে দেখতে থাকে। তখন তার ছোট বোনটি বলল, না না আমাদের ডেঙ্গু হয়নি। আমরা অজনা জ্বরে মারা গিয়েছি।

(কাল্পনিক গল্প, বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই)

Thursday 5 October 2017

কার্নিভাল কাহিনী

দুর্গা= কৈ রে, বলি তোদের সাজুগুজু করা হলো! তাড়াতাড়ি নে, তোদের পিসি রেড রোডে অপেক্ষা করছে তো। 

সরস্বতী = মা, এই স্কার্টটা কেমন? এটা পরেই ভাবছি এবারে ক‍্যাট ওয়ার্ক করবো! 

দুর্গা = তুই কি পাগল নাকি! এই টাইট মিনিস্কার্ট পরে ওখানে কেউ হাঁটে নাকি! যদি হঠাৎ জ্বর বমি হয়ে যায়! 

সরস্বতী = আরে চিন্তা করছো কেন! আঙ্কেল তো এবারের কার্নিভালে নেই, ভুবনেশ্বরে আছে। তাই কোনো চিন্তা নেই!

দুর্গা = ওরে আঙ্কেল নেই তো কি হয়েছে, আঙ্কেলের ছেলেরা তো আছে। যদি ফস করে ঢুকে পড়ে! তাছাড়া আশেপাশে অনেক দুষ্টু দামালরা থাকবে। বিদায় বেলায় যদি একটা ছোট্টো ঘটনা ঘটে যায়! তোর পিসি তো ক্ষতিপূরণ ঘোষনা করেই খালাস হয়ে যাবে।

সরস্বতী = তাহলে কি পরবো? দিদি নম্বর ওয়ানে জেতা শাড়িটা? নাকি এবছরের লেটেস্ট, বাহুবলী চুড়িদার?

দুর্গা = চুড়িদারটাই পর। বাহুবলী নামটার মধ্যে একটা ইয়ে আছে...

লক্ষী = মা, আমার কন‍্যাশ্রীর বালা দুটো খুঁজেই পাচ্ছি না! পিসি বারবার করে বলে দিয়েছে ও দুটো পরে আসতে। 

দুর্গা = থাক মা, ও দুটো আর পরে কাজ নেই। ওখানে ছিঁচকে চোর থেকে ডাকাত, তোলাবাজ থেকে গুন্ডা সবাই আছে।

লক্ষী = পিসি তো গুন্ডা কন্ট্রোল করে, তাহলে ভয় কিসের?

দুর্গা = সেটা যেমন ঠিক, তেমন তোর পিসি মিলেমিশে ভাগ করে খেতেও বলে।

কার্তিক = মা, আমি ভাবছি, ময়ূরে করে না গিয়ে এবারে সবুজ সাথীর সাইকেলে করে কার্নিভালে যাবো।

দুর্গা = ঐ তো সাইকেলের হাল! দেখিস মাঝপথে ভেঙে যায়!

গনেশ = (সিঙাড়া খেতে খেতে এসে ) মা আমি তাহলে দাদার ময়ূরে চড়ে যাবো?

দুর্গা = না বাবা গনশা, তোমার চাপে যদি ময়ূর মাঝপথে কেঁদে ফেলে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে! আর তুমি এভাবে সিঙাড়া খেতে খেতে বাইরে বেরিও না, সিবিআই ইডির চোখে একবার পড়লে আর রক্ষে থাকবে না!

মহিষাসুর = মা, আমি কি গতবারের মতন মুখ গামছা দিয়ে ঢেকে যাবো?

দুর্গা = ওটা ব‍্যাকডেটেড, পিসি কেসটা অনেকদিন আগেই শেষ করে দিয়েছে।

মহিষাসুর = তাহলে কি ফ্রেঞ্জকাট দাড়ি নিয়ে হাতে ক্রিকেট ব‍্যাট নিয়ে হাঁটবো?

দুর্গা = এটা যদিও টাকটা কেস, তবে আমার মনেহয় তুই একটা রঙিন জহরকোট পরে মাথায় একটা পাহাড়ি টুপি পরে নে। আর হ‍্যাঁ, হাঁটার সময় চোখ দুটো ছোট করে খুলবি।

কলা বৌ = মা, পিসি গতবছর বলেছিলো, পরেরবার বিএমডব্লিউ আর ভলবো করে কার্নিভালে নিয়ে যাবে। তা কই এবারে তো কিছু পাঠালো না!

দুর্গা = বলিহারি বৌমা তোমার আশা, যে বন‍্যা ত্রানে হেলিকপ্টার পাঠায় না, সে আমাদের জন্য ভলবো বিএমডব্লিউ পাঠাবে! খোলা ট্রাকে করে হাওয়া খেতে চলো।

( দুর্গার স্বপরিবারে কার্নিভালে প্রবেশ)

পিসি = আরে গৌরী, নীলসাদা শাড়িতে তোমাকে দারুণ লাগছে! গলায় উজ্জ্বল মুক্তোর হারটা দেখে মনে হচ্ছে ওটা ত্রিফলার গায়ে পেঁছিয়ে থাকা আলো। আমার তো দেখেই অটোমেটিক কবিতা পাচ্ছে..

(এই কথা শোনা মাত্রই সরস্বতী আর লক্ষী কানে হেডফোন গুঁজে দিয়েছে)

দুর্গা = দয়াকরে আমাকে গৌরী নামে ডাকবেন না। আসলে ঐ নামে ডাকলেই মনেহয় কেউ আমাকে এখুনি গূলি করবে।

পিসি = হ‍্যাঁরে গনশ, তোকে কতো করে বলেছি ডায়েট কন্ট্রোল কর। তোর মধ‍্যপ্রদেশ তো পাত্তোকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এই ভুড়ি নিয়ে ক‍্যাট ওয়ার্ক হয়! এবারে যাওয়ার সময় এক পেটি সিঙ্গুর সরিষার তেল নিয়ে যাবি। একেবারে কোলেস্টেরল ফ্রী। আর তোর বৌ-টা তো শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে আহারে বাংলা বা ইলিশ উৎসবে নিয়ে এসে ভালোমন্দ খাওয়া। 

(কার্তিককে ডিএসএলআর-এ ছবি তুলতে দেখে পিসি রেগে গিয়ে)

পিসি = এই! এই কাতু! ওটা ব‍্যাগে ঢোকা আগে। চালাকি পায়া হ‍্যায়! কার্নিভালে এসে ম‍্যাথুর মতন স্টিং করতা হ‍্যায়!

কার্তিক = আরে না না! আমি ফেসবুকে দেব বলে ছবি তুলছি। 

পিসি = ওসব আমি নেহি জানতা হ‍্যায়! ক‍্যামেরা দেখলেই আমার স্নেহের ভাই গুলো ভয় পায়! আসলে, গোয়াল বার্নিং কাউ ফিয়ার সিঁদুরে ক্লাউড, আরকি!

(কার্তিক ক‍্যামেরা ব‍্যাগে ঢুকিয়ে আবার তীর ধনুক নিয়ে পোজ দিতে শুরু করলো)

পিসি = তুই কি রে কাতু! এখনো তীর ধনুকেই পড়ে আছিস! ওরে কেস্টা ওকে দু-চারটে পেটো অন্তত দে।

(লক্ষীর দিকে তাকিয়ে)
পিসি = তোকে কতোবার ফোন করে বিশ্ব ব‍্যাঙ্গ সম্মেলনে আসতে বললাম, তাও একবারও এলি না! আগে তো প্রায় সুদীপ কাকুর সাথে অ্যাম্বুলেন্সে চড়েও আসতিস! 

(সরস্বতী নোটপ্যাড নিয়ে ব‍্যস্ত। তার দিকে তাকিয়ে খানিকটা রেগে গিয়ে)

পিসি = যতই খুটুর পুটুর করো না কেন, ভুলে যেও না , ইন্টারনেট ব‍্যালেন্স আমার গরমেন্টই ভরে। 

মহিষাসুর = পিসি আমাদের ত্রিপাক্ষিক চুক্তিটার কি হলো?

পিসি = আমি তোর সাথে একটাও কথা বলবো না। আমাকে মা বোলতা হ‍্যায়। ওউর হামার বিরুদ্ধে চক্কান্ত করতা হ‍্যায়!

দুর্গা = পিসি এবারে অন্তত বিদায় দিন। আমার ভোলেবাবা হয়তো আমাকে ভুলেই গেছে..

পিসি = চিন্তা করিস না! যেতে দেরি হবে সেটা আমি হোয়াটস অ্যাপ করে দিয়েছি। আর হ‍্যাঁ, ভোলেবাবা যাতে একাএকা বোরিং না হয় তাই মদনাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।

গান্ধী স্মরণে কালীপিসি

আজ গান্ধীজির জম্মোদিন। আমার সাথে ওনার জীবনের যথেষ্ট মিল আছে। দুজনকেই অনেক লড়াই করতে হয়েছে। অবশ‍্য আমাকে ওনার থেকে একটু বেশীই লড়তে হয়েছে। ওনার সময় তো বিটিশরা কুৎসা অপপোচার করতো না। আমাকে যেমন সবাই অগ্নিকন‍্যা বলে ডাকে, ঠিক তেমনই ওনাকে সবাই বাপুজি বলে ডাকতো। তোমরা যে এখন বাপুজি কেক খাও ঐ কেকের কারখানা উনিই করেছিলেন। আমি যেমন হাওয়াই চটি আর ছাপাশাড়ি পরে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াই উনিও তেমনই সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। ওনার সময়ে যদি মোবাইল থাকতো তাহলে উনিও একটা আইফোন কিনে অহিংসাই পরম ধম্মো লিখে, টুইট করতেন। ডান্ডি মার্চ ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করতেন। উনি সত‍্যাগ্রহে বিশ্বাসী ছিলেন, আর আমি সততার পোতীক। যদিও ইদানিং আমার তেরো হাত কাটআউট একটু কম জনপিয়। 

উনি আমার মতন আন্দোলন করার সময় মাঝেমধ্যেই অনশন করতেন। রবীন্দোনাথ একবার ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙান, সেটা আগেই তোমাদেরকে বলেছি। আমি অবশ্য চকলেট খেয়েই অনশন করতাম। আমাকে যেমন সবাই কন‍্যাশ্রীর জননী বলে, ওনাকেও লোকে জাতীর জনক বলে। উনিও আমার মতন আইন নিয়ে পড়েছিলেন। আমাদের খোকাবাবু যেখানে চাঁদের পাহাড়ের সুটিং করেছিল সেই আফ্রিকায়। তবে ওনার কলেজের বাইরে সিপেম স্টেনগান নিয়ে অপেক্ষা করতো না। তবে ওনাকে আমার মতন সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানি ঘুরে বিনিয়োগ আনার ঝামেলা পোয়াতে হয়নি। আমি যেমন গলায় 'আমরা সবাই চোর' লিখে মহানগর মার্চ করেছিলাম, সিঙ্গুরে সর্ষে চাষের দাবী নিয়ে আন্দোলন করেছিলাম। উনিও ঠিক তেমনই ডান্ডি মার্চ করেছিলেন। 

আমি যেমন ২০১১ আগে প্রায় প্রতি মাসেই দুচারটে বনধ ঢেকে, হাইওয়ে অবরোধ করে সরকারের সাথে অসহযোগিতা করেছিলাম, উনিও ঠিক তেমনই অসহযোগ আন্দোলন করেছিলেন বিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে। আমি যেমন ডেলোতে গোলটেবিল বৈঠক করছি, উনিও তেমনই বিটিশদের সাথে গোলটেবিল বৈঠক করেছিলেন। আমি যেমন ডাক দিয়েছি, সিপেম ভারত ছাড়ো। উনিও ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলন করেছেন। 

এই এই চোপ! চোপ! কেউ কথা বলবে না! তবে এতোকিছু মিল থাকার স্বত্ত্বেও বেশকিছু অমিলও আছে। উনি কিন্তু আমার মতন, কবিতা লিখতে, গান লিখতে, কোটি টাকার ছবি আঁকতে পারতেন না। উনি অহিংসায় বিশ্বাসী আর আমি, বদল নয় বদলা চাই। আমি ওনার থেকে অনেক বেশি রাফ এন্ড টাফ, গুন্ডা কন্টোল করি। চৌরিচৌরায় আগুন লাগলে উনি আন্দোলন থামিয়ে দেন আর আমি বিধানসভা ভাঙচুর করে আন্দোলন শুরু করি। 

হঠাৎ সামনে থেকে উঠে এক দামাল বলল- পিসি, এবারে আমরা বুঝেছি আপনার অনুপ্রেরণা না থাকলে উনি এতকিছু করতেই পারতেন না! পিসি মুচকি হেসে বলল, দুষ্টু। ওনার জন্মদিনে, আমার বড়দাও আজ ওনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ওনাকে স্মরণ করেছেন। যদিও কিছু লোকে কুৎসা করে, বড়দার বড়দা নাকি ওনাকে গুলি করেছিল। যাই হোক সেসব পুরোনো কথা ভুলে গিয়ে আমরা সবাই মোহনভগবত, সরি! সরি! মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে শোদ্ধার সাথে স্মরণ করি চলুন...
ইন্দোনীল একটা গান করে অনুষ্ঠান শেষ করো...

Tuesday 19 September 2017

মহিষাসুরমর্দিনী

প্রতি বছরই মা কৈলাস থেকে ফ্লাইট ধরে দার্জিলিং-এ ল‍্যান্ড করেন। তারপর দার্জিলিং থেকে কোলকাতায়। এবছর দার্জিলিংয়ের আবহাওয়া ভালো নয়। আকাশ 'গুরুং, গুরুং' করছে। 'হড়কা' বানের সম্ভবনাও আছে। মা তো ক্ষেপে ব‍্যোম! সরাসরি গঙ্গাপাড়ের বাড়িতে ফোন, বলি পাহাড় এতো হাসলে আমি ল‍্যান্ড করবো কি করে? আর কতদিন লাগবে হাসি থামাতে? ওপার থেকে পিসি, না মানে ওরা কোন ট্র‍্যাকে খেলতে চাইছে সেটা ধরে ফেলেছি। আর মাত্র কয়েকটি দিন। দেবী রেগে গিয়ে, তোমরা কেমন খেলছো সেটা বাইচুং-কে দেখেই বুঝতে পারছি! লক্ষী বলল, মা এবারে তাহলে পাতলেবাসে যাওয়া হবেনা? দেবী গম্ভীরভাবে বললে, এবারে শুধু বাসেই যেতে হবে বোধহয়।

গনেশ এতক্ষণ খবর দেখছিল। সে হঠাৎ ছুটে এসে বলল, মা এবারে অন্ডালে ল‍্যান্ড করি চলো। ওখান থেকে 'বুলেটপ্রুফ' ট্রেনে কোলকাতায় যাওয়া যাবে। দেবী অবাক হয়ে বলল, বলিস কিরে গনশা! তোর পিসি বুলেটপ্রুফ ট্রেন চালু করে দিয়েছে! ভালো করে খোঁজ নিয়ে দ‍্যাখ ঢপ দেয়নি তো! হ‍্যাঁরে সর, তুই কিছু শুনেছিস? সরস্বতী ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলল, পিসি কন‍্যাশ্রীর পুরস্কার পাওয়ার প্রচার ছাড়া আর কিছু করছে বলে শুনিনি। অতপর দোনামোনা ক‍রে অন্ডালেই মা ল‍্যান্ড করলেন। তারপর বুলেটপ্রুফ ট্রেন না পেয়ে মা পুরো খচে ব‍্যোম! অনেক কষ্টে কার্তিক শান্ত করে। নারদ কাকুকে হোয়াটস অ্যাপ করতে, উনি ওলা নিয়ে হাজির হন। লং জার্নিতে এমনিতেই ক্লান্ত, খিদেও পেয়েছে তাই ল‍্যাঙচা আর শিঙাড়া কিনে নিয়ে ওলাতে চাপলো সবাই। ল‍্যাঙচাটা জঘন্য খেতে। তবে সিঙাড়াটা দারুণ। কার্তিক হেসে বলল, জানতাম এটা ভালো হবে। দোকানের ওপরে তো সুব্রত কাকুর হোল্ডিং ঝুলছে দেখেছি।

দীর্ঘ জার্নি শেষ করে অবশেষে তারা গঙ্গা পাড়ের বাড়িতে পৌঁছায়। বাড়ির নীচে নারদকে আটকে দিলো সিকিউরিটি। দেবী জিজ্ঞেস করাতে সিকিউরিটি বলল, ম‍্যাডামের নিষেধ আছে। যদি আবার স্টিং ফিং কিছু করে বসে। তারপর লিফ্টে করে চোদ্দ তলায় পৌঁছালেন দেবী। দেবী বললেন, এতো কড়া সিকিউরিটি! এতোগুলো কুকুর পাহারায়! কার্তিক বলল, আমাদের দেখে ঘেউঘেউ করেই চলেছে। পিসি হেসে বলল, নারে কাতু, তোদের দেখে নয়! ওরা ডিএ-র জন‍্য চ‍্যাঁচাচ্ছে। তারপর পিসি দেবীকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললেন, এত লাগেজ নিয়ে একা একা কেউ আসে! নন্দী ভিঙ্গীকে সাথে করে আনতে পারতে তো! দেবী আক্ষেপের সুরে বললেন, নিয়ে আসবো তো ঠিকই ছিল, তারপর হঠাৎ কোথা থেকে খবর পেল যে অষ্টমী থেকে টানা পাঁচদিন জল বন্ধ। ব‍্যাস, আর আসতে চাইলো না। পিসি হেসে বললে, আরে ধুর, ওটা তো নামেই বন্ধ। আসলে যারা ব্ল‍্যাকে বেচে তাদেরকেও তো দেখতে হবে নাকি! ওরা আবার প্রচুর অনুদান দেয়। এরপর পিসি হাসি মুখে সবার খোঁজ নিতে লাগলো, তা সর, কন‍্যাশ্রীর টাকা পেয়েছ তো? লক্ষী মা, সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়েছো? গনেশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, ওমা! ১৫০০ কেজির বাচ্চাটা কতো বড়ো হয়ে গেছে! ওমা, কাতুটাকে কি সুন্দর লাগছে! তুই বাংলা সিনেমা কর। আরে চিন্তা করিসনা, আমি ছবি ট‍্যাক্স ফ্রি করিয়ে দেব।

আরও এটা সেটা কথার পর দেবী বললেন, তা এবারে কোন অসুরটাকে মারবো? বয়স হয়েছে আমার তাই বেশি ছোটাছুটি করতে পারবো না। একটা ভালো দেখে অসুর বেছে দাও, আমি তার ফোনে ব্লু হোয়েল ইনস্টল করে দেব ব‍্যাস। পিসি বললেন, এবারে আর কাউকে মেরোনা! এমনিতেই সিবিআইয়ের চাপে বড়ো বড়ো অসুরগুলো সব আধমরা হয়ে আছে। চাপ সবাই নিতে পারছে না। দেবী বললেন, সেকি! অসুর না মেরেই ফিরে যাবো! সেটা কি করে হয়! এত খরচা করে স্বপরিবারে এলাম! পিসি বলল, তাতে কি হয়েছে! আমিও তো দলবল নিয়ে সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানি ঘুরি। আমি কি বিনিয়োগ আনি নাকি!

দেবী বলল, অসুর যখন মারা হবে না তাহলে এবছর দশমীর দিন সকালেই ফ্লাইট ধরে ফিরবো। পিসি হেসে বলল, আসা পঞ্জিকা মতে, কিন্তু যাওয়া আমার ইচ্ছায়। রেড রোডে ফ‍্যামিলি প‍্যারেড না করেই চলে যাবে, ওটি হচ্ছে না। দেবী অবাক হয়ে বলল, মানে! আমাকে আরও দুদিন থাকতে হবে! কার্তিক খুব খুশি। আচ্ছা পিসি, এবারের কার্নিভালটা ব্রাজিলিয়ান স্টাইলে করলে হয়না! ইওয় ভয়েস উইথ বেঙ্গা বয়েস! পিসি হেসে বলল, দুষ্টু...

Thursday 3 August 2017

ভাইপোর লিপস নড়ছে না

কালীপিসির মনটা খুব বিচলিত। সন্তানসম ভাইপোটা কিছুই খাচ্ছেনা। দিব‍্যি আলুরচপ মুড়ি খেতে খেতে সন্ধাবেলায় 'টাইমস নাও'এ খবর দেখছিল। তারপর হঠাৎ কি হলো কিছুই বুঝতে পারছেনা পিসি। কিছুতেই মুখে কিছু তুলছে না! ছোট্টো নাতনি ঘরে খেলছিল। সে কালীপিসিকে কেবল বলছে, পিসিদিদা পিসিদিদা, পাপা লিপ উন্ড। নাতনির কথা শুনে কালীপিসি ভাবলো বর্ষাকাল, ঠান্ডা লেগে ভাইপোর ঠোটে হয়তো ব‍্যাথা হয়েছে। কিন্তু এমনকি হয়েছে যে ভাইপো কথা বলছে না! পিসি কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।

এমন সময় মদনার ফোন। একটু ইতস্ততঃ করে রিসিভ করতেই মদনার জড়ানো গলা ভেসে এলো, আমি পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছিলাম বলে আমাকে শহীদ দিবসে স্টেজে উঠতে দাওনি। জুলিকে নিয়ে রাস্তায় বসে আমাকে সেদিন পোগ্গাম দেখতে হয়েছিল। দিদি, তোমার অভি লিপস এন্ড বাউন্ডসের জন‍্য মুদীর কাছ থেকে ১.১৫কোটি টাকা নিয়েছে। এবারে দেখবো তুমি তোমার ভাইপোকে স্টেজে চান্স দাও কিনা?

এতক্ষণে পিসির কাছে স্পষ্ট হলো নাতনির 'লিপ উন্ড' আসলে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস। রেগে গিয়ে ভাইপোকে ধিক্কার জানিয়ে বলল, ছিঃ অভি ছিঃ! শেষে কিনা মুদীজির কাছ থেকে টাকা নিলি! বড়দার সাথে তুই এমন করবি আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। উনি আমাদের ভোটের সময় কতো সাহায্য করেন, উনি না থাকলে এত সিট জিততে পারতিস! উনি সাহায‍্য না করলে আমাকে ক‍্যাবিনেট মিটিং জেলে বসেই করতে হতো। তুই কি ভেবেছিস তোর সুদীপদা সত‍্যিই বীর! আরে বড়দা না থাকলে ওকেও ভুবনেশ্বরে বসে ডায়েরী লিখতে হতো। তোর ছেলে ঢোকানো দাদা, যে এখন নিজেই ঢুকে আছে। সে যে জেলের মধ‍্যে দুবেলা ফ্রায়েড রাইস চিলিচিকেন গিলছে, সেটাও বড়দার দয়ায়। আর যে বড়দা আমাদের জন্যে এতকিছু করে তুই কিনা তার কাছ থেকে..... ছিঃ...

পিসির মুখে ভৎসনা শুনে এবারে ভাইপো হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, পিসি আমি টাকা নিয়েছি মুদীর কাছ থেকে ঠিকই কিন্তু আমি তোমার বড়দাকে ঠকাইনি, বড়দার কাছ থেকে টাকা নিইনি। পিসির এবারে খটকা লাগলো, মুদীর কাছ থেকে নিয়েছে অথচ বড়দাকে ঠকায়নি! ভাইপোর দিকে কটমট করে তাকিয়ে পিসি বলল, কি ব‍্যাপার খুলে বলো অভি। ভাইপো কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমি বি....শ্বাস করো পি.....সি আমি তোমার বড়...দার থেকে টা....কা নিইনি। আমি কিশোর কাকু্র কাছ থেকে নিয়েছি। পিসি এবারে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আগে বলবি তো এটা দ্রাপর যুগের নয়, বৈদিক যুগের টাকা। আর আমিও ঐ মাতালটার ফোন পেয়ে সাত পাঁচ না ভেবে কতো কিছু বললাম তোকে।

ভাইপো এবারে করুনভাবে জিঞ্জেস করলো, আচ্ছা পিসি সবাই তো সব জেনে গেছে, ওদের হাতে প্রমাণও আছে, যদি সিবিআই আমাকে জেলে ভরে দেয়? পিসি একগাল হেসে বলল, ধুর পাগলা আমি কি উলের কম্বলটা এমনি এমনি পাঠিয়েছি। সিবিআই ইডি সবাই ওটা চাপা দিয়ে শীতঘুমে চলে যাবে। এতক্ষণে ভাইপোর মুখে হাসি ফুটলো। কৌতূহলবশত ভাইপো পিসিকে জিঞ্জেস করলো, আচ্ছা আমি তো ১.১৫কোটি নিয়েছি তাহলে এস বি আই নিশ্চয়ই আমাকে ৪%সুদ দেবে, তাই না পিসি? কালীপিসি হেসে বলল, দুষ্টু একটা...

(বি.দ্র. - এটি একটি কাল্পনিক গল্প। বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই। থাকলে কাকতলীয়)

Tuesday 6 June 2017

পরিবেশ সচেতন কালীপিসি

আজ ৫জুন, 'আনতোরজাতিক পোরিবেশ' দিবস। এই পোসঙ্গে আমি দু-চারটে কথা বলবো, সবাই মন দিয়ে শোনো। পোরিবেশ মানে জীব জগত, আকাশ, বাতাস, মাটি। আর মাটি মানেই তো তোমারা জানো, মামাটি! সুতরাং পোরিবেশ রক্ষা মানে, মামাটিকে রক্ষা করা। আর পোরিবেশ নিয়ে আন্দোলন মানে, মামাটির আন্দোলন!

বত্তোমান সময়ে গোটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা পোরিবেশ দূষণ। চারিদিকে এতো কলকারখানা, এতো শিল্পো, প্রতিদিন দূষণ ঘটাচ্ছে। আমাদের গরমেন্ট পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। তাই আমরা কারখানা ধ্বংস করে সেখানে সর্ষে চাষ করে বাংলাকে পোরিবেশ বান্ধব গড়ে তুলেছি। হাইওয়ের পাশে আমার চকলেট অনশন, আসলে পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলন। এটা চিপকো আন্দোলনের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। আমরা ইতিমধ্যে সেই আন্দোলনের কথা ইতিহাসের সিলেবাসে দিয়েছি। ওনার সাথে কথা হয়েছে! উনি বলেছেন, এটা আইসিএসসি আর সিবিএসসি-র সিলেবাসে চালু করে দেবেন।

আমাদের গরমেন্ট কেবল এদেশের শিল্পো নয়, বিদেশ থেকেও শিল্পো আনতে চায় না! সিঙ্গাপুর, লন্ডন থেকে কতো বিনিয়োগ আসতে চেয়ে ছিল! কতো কারখানা করবে বলেছিল! জাম্মানি তো কালীঘাটের খাল পাড়ে বিএমডাবলিউ কারখানা খুলবে বলে উঠেপড়ে লেগেছিল! আমি সবাইকে না করে দিয়েছি! বলে দিয়েছি, বাংলার পোরিবেশ আমি নষ্ট হতে দেব না!

আমাদের গরমেন্ট পোথোম দিন থেকেই পোরিবেশ সচেতন। আমরা কোনো বন্ধ কারখানা খোলার উদ‍্যোগ নিইনি, বরঞ্চ অনেকগুলো চালু কারখানা বন্ধ করে দিয়েছি। এই যে চা শোমিকরা পোতিদিন গাছের পাতা আর কুঁড়ি ছিঁড়ে ক্ষতি করে! এর জন‍্য বাংলার বাতাসে অক্সিজেন কম হয়! আরে আমি মহেশের মতন মুখ্যু নই! আমি ইস্ট জজিয়া! সেই জন্যই আমি মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে চা বাগান গুলো না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হাইওয়ে থেকে শহর যত বুড়ো গাছ আছে আমি সব কেটে ফেলছি। আসলে ওগুলো সব বাম আমলের গাছ। আমাদের উইলকিনসন তো কবে থেকেই চন্দন গাছ কাটা শুরু করেছে! আয়লার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা পাথর বসিয়ে বা কংকিটের নদী বাঁধ বানাই নি, কারণ এতে পানীদের বাস্তুতন্ত্রের ওপর পোভাব পড়ে।

এই, এই, চোপ! চোপ! আমি কি বলছি শোনো!পোরিবেশ দূষনের অন‍্যতম কারণ হলো প্লাস্টিক। আমাদের মামাটি গরমেন্টের কেউ প্লাস্টিক ব‍্যবহার করেনা, সেটা আপনারা সবাই জানেন। আমদের পোতিনিধিরা তোয়ালে, খবরের কাগজ, কাপড়ের ব‍্যাগ ব‍্যবহার করে। আমাদের গরমেন্টের কেউ পানী (ছুঁচো) হত‍্যা করে না! আমরা কেবল জল ধরো জল ভরো করি না! আমরা বৃক্ষরোপণও করি! আরে আমাদের গরমেন্টের পোতিনিধিরা, গোলাপ চাষ করে জেলে গিয়েছে।

সিপেম আমলে মানে গত চৌত্রিশ বছরে বাংলার পোরিবেশের কোনো উন্নতি হয়নি! ওরা পোরিবেশ নিয়ে আদৌ সচেতন ছিলো না! বরঞ্চ ওদের সময়ে আমরা বেশী পোরিবেশ নিয়ে সক্রিয় ছিলাম। কতোগুলো ধম্মোঘট ডেকেছিলাম মনেকরে দেখুন! যত কম গাড়ি চলবে তত কম দূষণ হবে। ওরা এই ছ-বছরে কটা ধম্মোঘট ডেকেছে! সিপেম কোনোদিন বাংলায় হেলিকপ্টারে করে ভোট পোচার করার কথা চিন্তাই করতে পারেনি। মাত্তো একটা যান, দূষণ মিনিমাম।

পোরিবেশ নিয়ে আজ অনেক তথ‍্যই তোমাদের দিলাম। সাংবাদিক বন্ধুরা, সবাই টিফিন পেয়েছো তো! আমি আমার লেখা একটা কবিতা দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি..
এ সোনার বাংলাকে শিশুদের
বাসযোগ্য করে যাবো আমি,
যেখানে বিস্কুটের পেটিতে শুয়ে
শিশুরা একে অপরকে খাবে হামি!

(এটি কাল্পনিক রচনা। বাস্তবের সাথে কোনো মিল থাকলে কাকতালীয় )

Friday 2 June 2017

মহেশ

জৈষ্ঠ্যের দুপুরে মাটির ঘরের বারান্দায় বসে একহাতে তালপাতা দিয়ে বাতাস খাচ্ছিল আর অন‍্য হাতে গামছা দিয়ে ঘাম মুছছিল গফুর। উঠানে কিছু শুকনো চিবাচ্ছিল মহেশ। এমনসময় সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তর্করত্ন। গফুরকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে, 'গফুর বাড়ি আছো নাকি!' বলে হাঁক দিয়ে রাস্তা ছেড়ে গফুরের বাড়ির দিকে এগোলো...

- একি গফুর, তুমি মাতার আজকাল খেয়াল রাখছো না! গরমে নিজে হাওয়া খাচ্ছো আর মাতাকে হাওয়া দিচ্ছ না!

(গফুর তর্করত্নের মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল)

- আমার মুখের দিকে না দেখে মাতার ডায়েটের দিকে লক্ষ্য দাও! এমন শুকনো খড় খাওয়ালে ২২ নয়, ১২ক‍্যারেটের সোনা পাবে চোনা তে!

(মহেশ একবার হাম্বা করে ডেকে উঠলো। তর্করত্ন ভাবলো মহেশ তার কথার সম্মতি জানালো।)

- (অবক হয়ে) মাতা কে? আমার আম্মা তো কবেই মারা গিয়েছে!

- ওরে গাধা মাতা মানে গো-মাতা! সেটাও জানিস না! আরে ৩৩কোটি দেবতা মিলেমিশে ককটেল হয়ে আছে তোর মহেশের মধ‍্যে। আর তুই কিনা ৩৩কোটি দেবতাকে মানে মহেশকে এই ভাবে রোদে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস! যদি জমিদারের গো-রক্ষক বাহিনীর চোখে পড়ে তাহলে তোকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে। যদি মাতা সানস্টোক হয়ে মারা যায় তাহলে তোর কি অবস্থা হবে জানিস!

- আজ্ঞে, সামনেই চাষের সিজন। মহেশ মারা গেলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।

- আরে মহেশ মারা যাওয়া মানে ৩৩কোটি দেবতা মারা যাওয়া। তুই শুধু চাষের কথা ভাবছিস! এই যে গরমে মাঠ ঘাট সব আগুন হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তোর খড়ের ঘরের চালার তলাটা ঠান্ডা সেটা মহেশের জন‍্য!

- তাই নাকি?

- আরে মহেশই তো, সমস্ত কসমিক রে, তেজস্ক্রিয় আলো, সব নিজের শিং দিয়ে শোষণ করে নিচ্ছে। তোর মেয়ে প্রতিদিন ঘরের মাটির দেওয়ালে গোবর লেপে দেয় বলেই তো তোর ঘরটা এতো ঠান্ডা। এই যে তুই এতো বিড়ি খাস, তাও তোর ক‍্যানসার হয়নি। কারণ তুই রোজ দুধ খাস। আর গোমূত্র তো অমৃত! তুই এতদিনে যত পাপ করেছিস, এমনকি পূর্বজন্মের পাপও সব ধুয়ে যাবে গো-মূত্র খেলে।

- বলো কি পন্ডিত! যদি পেট খারাপ হয়!

- ধুর! পেট খারাপ, ওলাওঠা সব সেরে যাবে! প্রতিদিন সকালে এক চামচ করে গোবর খাবি। তাছাড়া এই যে মহেশ প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা তোর বাড়িতে হাম্বা হাম্বা করে ঢাকছে, এতেই আশেপাশের সমস্ত জীবানু মরে যাবে। আরে মহেশ ঘরে আছে মানেই তোর ঘর আর ঘর নেই! জানবি ওটা নার্সিংহোম।

(মহেশ একবার শিং নাড়িয়ে হাম্বা করে ঢেকে উঠলো)

- (অবাক হয়ে) বলো কি পন্ডিত! মহেশের এতো গুণ!

- এই যে তুই মাঠে থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে বারান্দায় বসে বুক ভরে দম নিতে পারছিস, সেটাও মহেশের জন‍্য। মহেশই তো তোকে অক্সিজেন সাপ্লাই দিচ্ছে।

(ইস্কুল থেকে ফিরে আমিনা এতক্ষণ তর্করত্নের পিছনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো শুনছিল। এবারে আমিনা তর্করত্নের কথা ধরলো..)

- কেবলমাত্র গাছ অক্সিজেন দেয়। আর কিছু নিন্ম শ্রেণীর প্রাণী।

(তর্করন্ত পিছন ফিরে আমিনাকে দেখে)

- ইস্কুল থেকে ফিরলে বুঝি!

- বলছিলাম গরু কোনোদিন অক্সিজেন দিতে পারে না। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।

- (হাসি মুখে) আমার কোনো ভুল হয়নি! আসলে এসব তথ‍্য তোমাদের ইস্কুলের বিজ্ঞানের স‍্যারেরাও জানেন না! তাই তোমাদের শেখাতে পারেনি! আরে গো-মূত্র খেলে যে লিভার ভালো থাকে, শ্বেত রক্ত কনিকা লাফায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, দুধে কেরেটিন প্রোটিন থাকে, ভিটামিন-এ সংশ্লেষ হয়! এসব তথ‍্য ওনারা কিছুই জানেন না। আর গরুর এতো গুণ আছে বলেই না কদিন পরেই গরু আমাদের জাতীয় পশু হবে! সে খবর তুমি রাখো!

- জাতীয় পশু তো বাঘ। তা হঠাৎ বাঘকে সরিয়ে গরু কেন?

- বাঘেরা এখন সংখ‍্যালঘু। আর সংখ‍্যালঘুরা কোনোদিন দেশের প্রতীক হতে পারে!

- তাহলে তো ময়ূরকে সরিয়ে কাককে জাতীয় পাখি করা উচিত! ময়ূরের থেকে কাকের সংখ্যা তো অনেক বেশী। তাছাড়া কাককে জাতীয় পাখি করলে স্বচ্ছ ভারত অভিযানটাও খানিকটা গতি পাবে!

- না না, ওটা হচ্ছে না! গরু জাতীয় পশু আর কাক জাতীয় পাখি হলে তো গেরুয়া সবুজ জোটটা সবাই বুঝতে পেরে যাবে! তাছাড়া ময়ূর
ওরা তো সঙ্গম করে না! ওরা ব্রম্ভচর্য পালন করে।

- তাহলে ময়ূরের বাচ্ছা হয় কি করে?

- ময়ূর বর্ষাকালে আকাশ ডাকলে ভয়ে কাঁদে, তখন ময়ূরী ছুটে আসে আর ময়ূরের চোখের জল খেয়ে নেয়। ওরা তো আর আমাদের মতন রুমাল দিয়ে মুছে দিতে পারে না। ময়ূরের সেই চোখের জল খেয়েই ময়ূরী গর্ভবতী হয়।

- মোটেই না। বাজে কথা। ওরা সঙ্গম করে।

- মেয়ের সাহস তো কম নয়! তক্করত্নের মুখের ওপর তক্ক করে! জানিস তুই, সাত গেরামের সবাই আমার কথা মান‍্যি করে!

- আমি স্কুলে আমার বন্ধুদের মোবাইলে ইউটিউবে দেখেছি ময়ূর ময়ূরী সঙ্গম করে।

- ঐ দ‍্যাখ গফুর, তোর মেয়ে আজকাল ইস্কুলে গিয়ে কিসব দেখছে! পই পই করে বলেছিলুম, মেয়েকে ইস্কুলে পাঠাস নে! এখন বুঝলি তো! আজ আমার বিরূদ্ধে কথা বলছে, কাল জমিদারের বিরুদ্ধে বলবে, পরশু দ‍্যাশের বিরুদ্ধে বলবে! তোর মেয়ে শীঘ্রই দেশদ্রোহী হয়ে যাবে! কথাটা মিলিয়ে নিস....

তর্করত্ন আমিনার কাছে যোগ‍্য জবাব পেয়ে নিজের লাইনে ফিরে গেল, মানে ঐ উঠান টপকে যে পথে এসেছিল সেই পথ দিয়ে ধুতি গুটিয়ে জোরে পা চালালো। মুখে তার একটাই কথা- মেয়ের মুখের কি ভাষা! রাম! রাম!

আমিনা পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল, রাম রাম নয়! জয় শ্রীরাম বলুন পন্ডিতমশাই!

(শরৎচন্দ্রের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী

জামাইষষ্ঠী স্পেশাল

জামাইষষ্ঠীর দিন সন্ধ‍্যাবেলায় সমস্ত ভাইয়েরা হরিশ চ‍্যাটারর্জি স্ট্রিটে হাজির। কালিপিসি সবার খোঁজ খবর নিচ্ছে কে কেমন জামাইষষ্ঠী কাটালো...

- কিরে কানন, টিভিতে দেখলাম ইলিশ, চিংড়ি, মটন বেশ জম্পেশ করে সাটাচ্ছিস!

- (একগাল হেসে) শাশুড়ি আদর করে দিলে না খেয়ে থাকা যায়! তাছাড়া তুমি তো জানোই, খাওয়ার সময় আমার ম‍্যাক্সিমাম মিনিমামের কথা মাথায় থাকে না!

- তোয়ালেটা তো পুরো হলুদ করে ফেলেছিস! আর কতোবার তোকে বারং করেছি, ক‍্যামেরার সামনে খাবি না!

- না না ওরা হুল ফোটায় না! ওরা এগিয়ে রাখে! তাই ভাবলুম আজকের দিনে যদি বাকি জামাইদের থেকে একটু এগিয়ে থাকা যায়! যদি সন্ধ‍্যাবেলায় শালা শালিরা আমাকে নিয়ে 'ঘন্টাখানেক' হই হুল্লোড় করে! তাই আরকি!

- তা শমিত দা, শাশুড়ির জন‍্য কি নিয়ে গেলে?

- ঐ একটা ছাপা শাড়ী।

- ছাপা কেন? জামদানি, ঢাকাই, ধনেখালী কিছুই পেলে না!

- আজ্ঞে, ঐ ধনই তো এখন খালি! একেই ৩৪ বছরের দেনা, তার ওপর এতবার বাজার থেকে ধার করেছি শশুর বাড়ির লোকজন আমাকে এখন 'ধারালো জামাই' বলে।

- তা অধিকারী, তোমার কি খবর? শশুরবাড়ি গিয়েছিলে?

- আমাকে তো আমার শাশুড়ি একদিন আগেই অপহরণ করে নিয়ে যায়! যদি দিনের দিন খুঁজে না পায়!

- কিরে পাত্তো, তোকে শাশুড়ি কি দিলো?

- গিন্নি আগে থেকেই শাশুড়িকে বলে রেখেছিল, টেট হোক বা জামাইষষ্ঠীর ভেট, জামাইয়ের ফিক্সড রেট। ১২লাখের কম দামি কোনো গিফ্ট নেয় না।

- প্রদীপ'দা, তুমি কি হাসপাতালেই এবারে ষষ্ঠী খেলে?

- ডাক্তার রিচ খেতে মানা করেছে। তাই শাশুড়ি জিরেবাটা, কাঁচকলা, পেঁপে দিয়ে কচি পাঁঠার ঝোল করেছিল। শালাবাবু সাইকেলে করে হাসপাতালে দিয়ে গেছে।

- নকুল'দার কেমন কাটলো জামাইষষ্ঠী?

- আমার তো দু-জায়গা থেকে ডাক এসেছিল। সত‍্যি, শিউলীর মায়ের হাতের রান্না ভজহরি মান্নাকেও হার মানায়।

- তা বেচা, তোমার তো হাই প্রেসার! তেলের রান্না তো খাওয়া বারং! শাশুড়ি কি স‍্যুপ করেছিল?

- না না! শাশুড়ি সিঙ্গুর সরিষার তেল দিয়ে রান্না করেছিল। একেবারে কোলেস্টেরল ফ্রি!

- ঐ দ‍্যাখো আরেকজন আসা থেকেই ঢুলছে। হ‍্যাঁরে মদনা, দুবছর জেল খেটে জামাইষষ্ঠী গেলি, কেমন খাওয়ালো? কি কি মাছ হয়েছিল? খাসিটাকি রেওয়াজি?

- (ঢুলতে ঢুলতে) ওসব আমার কিছুই মনে নেই! শাশুড়ি মাংস কষছিল, আমি বাটি নিয়ে গিয়ে বললাম, দুপিস কষা দাও। তারপর ঐ দুপিস কষা দিয়েই একটা পুরো বাংলা টেনে দিলাম। স্যাট করে মাথায় লেগে গেল। তারপর শালী এসে দুটো মিস্টি খাওয়াতেই ফুল আউট! বৌ, শালি এমনকি শশুর বাড়ির কাজের মেয়ে, যাকেই দেখি যেন পিয়ালী বলে মনে হয়!

(হঠাৎ হাকিম বেরিয়ে গেল)

- কি হলো হাকিম সাহেব? কোথায় চললেন?

- আমার রোজা চলছে। এইসময় বসে বসে এমন সব খাবারের নাম কতক্ষণ শোনা যায়!

(দরজার দিকে তাকিয়ে)
- কি খোকাবাবু মনখারাপ করে দাঁড়িয়ে কেন?

- 'আ...মি কবে জা...মাইছটি যাব! সবাই এ....নজয় করছে, আমি কবে করবো! আমার কি আদৌ বি....ইয়ে হবে না!'

- (খোকাবাবুর দিকে তাকিয়ে মদনা) আমার তো খেলে কথা জড়ায়, তোর তো সারাক্ষণ জড়ায়। তোকে কে বিয়ে করবে!

- (কালিপিসি মদনাকে ধমক দিয়ে খোকাবাবুর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে) চিন্তা করিস না, তোর জন্য আমি গরমেন্ট থেকে পাত্রীচাই বিজ্ঞাপন দেব। আগামী বছর থেকে গরমেন্ট জামাইশ্রী দেওয়া শুরু করবে। আর হ‍্যাঁ, আগামী বছর থেকে জামাইষষ্ঠী উৎসবে সমস্ত সরকারি অফিস 'পুন্ন' দিবস ছুটি থাকবে।

(সব চরিত্র কাল্পনিক)

Wednesday 26 April 2017

গরুর রচনা

নরেন স্কুলে প্রতিদিন একটি রচনাই মুখস্থ করে যায়। আর সেটা দিয়েই সব রচনা দিব‍্যি চালিয়ে দেয়। আসলে এই গুণটা তার জিন সূত্রে পাওয়া। সেই ঘটনাটা মনে আছে তো যেখানে একটা ছেলে স্কুলে কেবল কুমীরের রচনা মুখস্ত করে যেত। আর শিক্ষক তাকে যে রচনাই লিখতে দিতো, সে ঘুরে ফিরে সেই কুমিরেই এসে শেষ করতো। নরেন তার নাতির ছেলে। 'চারটে জেনারেশন' ধরে সেই একই ট্র‍্যাডিশন চলছে। কেবল কুমীর পাল্টে কখনও হয়েছে হনুমান, কখনও বা পাঁঠা। এই ফোর্থ জেনারেশনে এসে হয়েছে গরু। হ‍্যাঁ সেই কুমীরখ‍্যাত ভদ্রলোকের পোপৌত্র, নরেন স্কুলে কেবল একটি রচনাই মুখস্ত করে যায়। গরুর রচনা। গরু গৃহপালিত প্রানী। গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ..... গরু গোবর দেয়। গোবর থেকে ঘুটে ও গোবর গ‍্যাস তৈরী হয়। এই গোবর গ‍্যাসই সমস্ত শক্তির উৎস। এই গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

একেবারে ঝড়ঝড়ে ২০০টি শব্দের গরুর রচনা মুখস্ত করে নরেন স্কুলে হাজির। বাংলার শিক্ষক এসে, 'একটি গাছ, একটি প্রাণ' রচনা বলতে বললে নরেন শুরু করলো - গাছ খুব উপকারি, গাছ সালোকসংশ্লেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে আমাদের অক্সিজেন দেয়। তবে এই কাজ যে গাছ একা পারে তা কিন্তু নয়! গরুও পারে পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে অক্সিজেন ছাড়তে। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত। পরেরদিন শিক্ষক মশাই নরেনকে, 'জাতীয় সুরক্ষা' নিয়ে রচনা বলতে বললেন। নরেন যথারিতী শুরু করলো - জাতীয় সুরক্ষা দেশের পক্ষে খুব জরুরি। দেশে শক্তিশালী জল, স্থল ও আকাশ বাহিনী আছে। এছাড়া রয়েছে গো-রক্ষা বাহিনী। এরা গরুদের সুরক্ষা প্রদান করে। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

শিক্ষক মশাই দেখলো ভারি মুসকিল! নরেনকে যাই রচনা জিজ্ঞেস করে সে ঘুরে ফিরে গরুতেই এসে শেষ করে। পরেরদিন শিক্ষক মশাই একটু শক্ত রচনা দিলেন, 'অলিম্পিকে ভারত'। মনেমনে শিক্ষক মশাই ভাবতে লাগলেন, দ‍্যেখি অলিম্পিকে কি করে নরেন গরু ঢোকায়! নরেন একটু ভেবে শুরু করলো - অলিম্পিক বিশাল বড়ো খেলার আসর। ভারত এবারের অলিম্পিকে এতো কষ্ট করেও একটাও সোনা পায়নি। তবে সোনা কিন্তু সহজেই গো-মূত্রে পাওয়া যায়। গরুই আপনাকে দিতে পারে সোনা। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত। শিক্ষক মশাই রেগে আগুন তেলে বেগুন। পরেরদিন এসেই নরেনকে বলল, আজকের রচনা 'গ্লোবাল ওয়ার্মিং'। দ‍্যেখি এতে গরু ঢোকা! নরেন শুরু করলো - গ্লোবাল ওয়ার্মিং মানে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এটার জন‍্য দায়ী গ্রীনহাউস গ‍্যাস। যার মধ‍্যে থাকে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ( সি এফ সি )। এই গ‍্যাস রেফ্রিজেরেটরে ব‍্যবহার করা হয়। আর ওর ভিতরেই আকলাখ গো-মাংস লুকিয়ে রেখেছিল। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

আজ শিক্ষক মশাই কোনো কথা বলছে না, একেবারে গম্ভীর। ভিতরে ভিতরে রাগে ফুঁসছে। ক্লাসে ঢুকেই নরেনকে ডেকে বলল, আজ 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া' নিয়ে বল। দেখি এটার মধ‍্যে তুই কি করে গরু আনিস! হাতে বেতের ছড়িটা নিয়ে শিক্ষক স‍্যাডো প্র‍্যাক্টিস করতে শুরু করলেন।নরেন আজ বিখ‍্যাত উক্তি কোট করে শুরু করলো - 'পরে হবে ভাত ডাল, আগে হোক ডিজিটাল'। আমাদের দেশে এখন সুদিন, দেশ এখন ডিজিটাল। দেশ এখন ক‍্যাসলেস। দেশ এখন কার্ড নির্ভর। প‍্যানকার্ড, এটিএম কার্ড, আঁধার কার্ড। আঁধার কার্ডের সুবিধা এবার থেকে গরুরাও পাবে। গরুও এখন থেকে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শরিক। আর এই গরুর দুটো শিং, চারটে পা, একটা লেজ.... গরুই আমাদের মাতা, ঘুটে আমাদের ভিত্তি আর গোবর আমাদের ভবিষ‍্যত।

শেষে হতাশ হয়ে ও রেগে গিয়ে শিক্ষক মশাই চিৎকার করে বলতে লাগলো, গরুর আঁধার কার্ড হবে, গরু গোয়ালে না থেকে ইন্দিরা আবাসের ঘরে থাকবে, গরুর জনধন যোজনায় অ্যাকাউন্ট হবে, গরু এবার থেকে ভোটাধিকারও পাবে। নরেন মুচকি হেসে বলল, স‍্যার গরু জিওর সিমও তুলতে পারবে।

Thursday 20 April 2017

কালীপিসির পুরী ভ্রমণ

অনেকদিন ধরেই পিসি ভাবছে পুরী গিয়ে পুজো দিয়ে আসবে কিন্তু লন্ডন জার্মানি একটার পর একটা ট‍্যুর, বিশ্ব ব‍্যাঙ্গ সম্মেলন, আহারে বাহারে নানা উৎসব আর কাজের মধ‍্যে সময় হয়নি। তাই উনি ঠিক করেছেন, হার্মাদের দেশে যাবার আগে এবারে পুজোটা দিয়েই যাবেন। তাছাড়া পুরীর কাছেই ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে পিসির দুই ভাই, দীপ আর মাল, পা ভেঙে ভর্তি আছে। তাদের সাথে দ‍্যাখাও করবে। গোলাপী উপত‍্যাকায় ট্রেকিং করতে গিয়ে পা ভাঙে। কয়েক মাস হলো ভর্তি আছে। পিসি ভাইয়েদের দেখতে যায়নি বলে তারা খুব দুঃখু পেয়েছে। দীপ হাসপাতালে পিসিকে দেখেই,' দিদি গো..' বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো! পিসি দীপের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আহারে বাছা একেবারে শুকিয়ে গেছে! জিম না করেই ১৫-২০কিলো ওজন কমিয়ে ফেলেছে! দীপ বরাবরই সাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করে, তাই পিসি ভেবেছিল সবুজ সাথীর সাইকেল একটা দিয়ে আসবে। কিন্তু পা তো ভাঙা, চালাবে কি করে! তাই একটা ডায়েরি দিয়ে বলে এসেছে, এটাতে গান কবিতা যা মনে আসে লেখ, ছবি আঁকো। আমি বই মেলাতে এটাকে প্রকাশ করবো। নাম হবে, 'হাসপাতালের ডায়েরি'। 'মাল'টার সাথে পিসি আর দ‍্যাখা করেনি। পিসি খোঁজ নিয়ে দেখেছে, 'মাল'টা হাসপাতালে প্রতিদিন ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন খেয়ে দিব‍্যি আছে।


এদিকে হয়েছে আরেক বিপত্তি। গতবছর পিসির এক ভাই কৃষ্ণ দাস মানে কেডিভাই পিসির বাড়িতে নারায়ণ পাঠিয়ে ছিলেন পুজো করার জন‍্য। পিসির আরেক ভাই 'বাল'এশ্বর দায়িত্ব নিয়ে পুজো করিয়ে সবাইকে প্রসাদ দেয়। পিসির বেশকিছু ভাই, ভাইপো, ভাইঝি পুজোর প্রসাদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। খবরটা গোটা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকেই তারা মাঝে মধ‍্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তো। বেলভিউতে ভর্তিও করতে হয়েছে কয়েকবার। পিসি তার নিজের ডায়গনস্টিক সেন্টারে সবাইকে ফ্রিতে পরীক্ষা করবে বলেছিল। সেটা বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর টেনশানে আর করে উঠতে পারেনি। তবে জনস্বার্থে, এই অসুখ ছোঁয়াচে কিনা জানার জন‍্য স‍্যাম্পেল দিল্লীর ল‍্যাবে পাঠানো হয়েছিল। প্রসাদ প্রায় সবাই খেয়েছিল। কেউ তোয়ালে মুড়ে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল, তো কেউ খবরের কাগজ মুড়ে নিয়ে গিয়েছিল! কেউ আবার ব‍্যাগে করে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল! পিসির নকুল ভাই তো সবারচেয়ে বেশী প্রসাদ খেয়েছিল। এক ভাই জলখাবারে সিঙাড়া দিয়েই খেয়েছিল আর মাতাল ভাইটা তো পুজোর ফলকে চাট বানিয়ে পেগ মারতে মারতে খেয়েছিল। ভাইপোর ফিজিক্সের প্রাইভেট টিউটর, ফুটবল কোচ সবাই খেয়েছিল। পিসির ফ‍্যামেলি ফিজিসিয়ন মিতালী আর হাকিম সাহেবও খেয়েছিল। এমনকি বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডও খেয়েছিল। এটা নিশ্চিত, প্রসাদ আরও অনেকে খেয়েছিল। তবে বাকিদের অবস্থা দেখে আর কেউ মুখ খুলছে না! পাড়ার লোকজনের মুখে একটাই কথা, পিসির বাড়ির নাযরাণ পুজো আর পিসি প্রসাদ পায়নি! এটা হতেই পারে না।

দিল্লীর ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ১৩জনের ইনফেকশনের রিপোর্ট এসেছে। মনেহয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। উডবার্নে রেখে চিকিৎসা করলে রোগ সারবে না তাই ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হবে। সেটা পিসি ভালো ভাবেই জানেন। খুব শীঘ্রই আরও জনা পোনেরোর রিপোর্ট পাঠাবে জানিয়েছে দিল্লী থেকে। তাই ভাইয়েদের হাসপাতালে থাকতে যাতে কোনো অসুবিধা নাহয় সেটাই তদারকি করতে উনি এসেছেন। অবশ‍্য সেকথা পিসি স্বিকার করেনা। বলে, আমি পুজো দিতে এসেছি।

একটার পর একটা টেনশানে পিসি যখন জর্জরিত তখন ভাবলেন পুরীর সমুদ্রে জয় জগন্নাথ বলে একটা ঢুব দিয়ে মন্দিরে একবার মাথা ঠেকিয়ে আসি। কিন্তু সমস‍্যা যেন পিসির পিছু ছাড়ছে না! এক পান্ডা হুমকি দিয়েছে, পিসিকে পুজো দিতে দেবেনা। এতো আর সাংবাদিক পান্ডা নয়, যে পিসির চাবকানির ভয়ে চুপ করে যাবে! এ আই এস আই ছাপ যুক্ত বিশুদ্ধ হিন্দু পান্ডা। পিসির রাফ এন্ড টাফ মেজাজকে তোড়াই কেয়ার করে! পান্ডাটা নিশ্চয়ই পিসিকে হিজাব পরে টিভিতে দেখেছে। অনেক কষ্টে নিজেকে 'পোকিতো হিন্দু পোমান' করে পিসি পুজো দিতে পেরেছে।

এতো ঝামেলার চাপে পড়ে কাকাতুয়া থেকে ভাইপোর জন‍্য জিভেগজা কিনবে সেটাও ভুলে গিয়েছে। জিভেগজা যে ভাইপোর ফেবারিট। বারবার করে পিসিকে জিভেগজা আনতে বলেছে ভাইপো। তাই পিসি সোনার তরী থেকে বার হবার সময় হোটেলের ম‍্যানেজারকে ২০০০এর একটা নোট দিয়ে বললো, কাউকে দিয়ে খাজা এনে দিন তো। ম‍্যানেজার মুচকি হেসে বলল, নিতে হবেনা ম‍্যাডাম! কদিন বাদেই তো ছোটোবাবু এখানে আসবে। তখন প্রতিদিন খাজা খাবে।

বি.দ্র. - বাস্তবের সাথে এই গল্পের কোনো মিল নেই। থাকলে কাকতালীয়।

Friday 7 April 2017

মিনিটখানেক সঙ্গে চুমন

                              মিনিটখানেক সঙ্গে চুমন
চুমন = কেমন আছেন পিসি? না মানে এখন তো সুস্থ মানুষও হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে! তার ওপর আপনার ওপর তো গোটা রাজ‍্যের চাপ।

পিসি = তা যা বলেছ! এই তো ইকবাল আর কানন দিব‍্যি সুস্হ ছিল, হঠাৎ করে অসুস্থ‍্য হয়ে পড়ল।

চুমন = স্বাস্থ‍্যের কথা বললে এখন সবচেয়ে হট টপিক, গুন্ডা কন্ট্রোলের মতন বেসরকারি হাসপাতাল গুলোকেও কন্ট্রোল করতে শুরু করেছেন কি?

পিসি = তোর কি মনেহয়, পৃথাকে আমি ঘর সংসারের গল্প করতে ডেকেছিলাম! সবাই যদি বেসরকারিতে ছোটে তাহলে আমি যে সুপারস্পেশালিটির নামে নীলসাদা বাড়ি গুলো বানিয়েছি সেগুলোর কি হবে! ন‍্যায‍্য মূল‍্যের ব‍্যবসাটাও তো বন্ধ হয়ে যাবে!

চুমন = আচ্ছা পিসি, আপনি এখন আর ছবি আঁকেন না?

পিসি = কিনবে কে? যে কিনতো সে তো জেলে। তাই আর আঁকি না! সবাই তো এইসবের কদর বোঝে না!

চুমন = আচ্ছা সরকারি কর্মচারিদের ডিএ কবে বাড়বে? টেটে দূর্নিতীর অভিযোগ করছে বিরোধীরা। আপনি কি বলছেন?

পিসি = দ‍্যাখো বাপু, ভাতা হলো সরকারি অনুদান। আমি দিতেও পারি, নাও পারি। তাছাড়া অতো হুটোপাটা করলে চলবে! আমি দেব না, সে কথা তো একবারও বলিনি! এই তো আমার বিধায়করা বাইরে খাওয়া খায়ি করছে দেখে চক্ষু লজ্জায় ওদের ভাতা বাড়িয়ে দিলাম। বামেরা প্রত‍্যাখান করেছে সেটা আলাদা ব্যাপার। আর টেটের নিয়োগ ম‍্যক্সিমাম মিনিমাম থিওরি মেনেই স্বচ্ছভাবে হয়েছে।

চুমন = আচ্ছা শিশু চুরি প্রসঙ্গে কিছু বলুন? মেডিক‍্যালের মেয়েটা কিন্তু সবুজ শাড়ি পরেছিল? জুহি নাহয় অন‍্য দলের, চন্দনা তো আপনার দলের?

পিসি = দ‍্যাখো বাপু, চক্কান্ত কুৎসা আর অপপোচার করে চিটফান্ড ব‍্যবসাটা লাটে তুলে দিয়েছ! কিছু করে তো খেতে হবে নাকি! আর সবুজ শাড়ির কথায় বলি, সবুজ কিন্তু উন্নয়নের পোতিক। এটা হলো কেন্দ্র-রাজ‍্য যৌথ পোকল্প।

চুমন = সুদীপ তাপস কেমন আছে? কোনো যোগাযোগ আছে? নাকি মদনের মতন ওদেরও বয়কট করেছেন?

পিসি = দিব‍্যি আছে! তাপস তো চিলি চিকেন পিৎসার ছবি হোয়াটসঅ্যাপ করে পাঠায়। ওদের বলেছি, পুরীতে নতুন পার্টি অফিস খুলেছি। ওরা জেলে বসে আপাতত সেটার তদারকি করুক।

চুমন = অনেক প্রশ্ন হলো, এবারে আসল প্রশ্নে আসা যাক! নারদা নিয়ে কি ভাবছেন? আপনি তো বলেছিলেন আগে জানলে টিকিট দিতাম না! এখন কি করবেন? ম‍্যাথু বলেছে কেডি নাকি সমস্থ টাকা দিয়েছে। সুপ্রিম কর্টের রায় যদি বিপক্ষে যায় তাহলে আপনি কি করবেন?

পিসি = (রেগে গিয়ে ) সুপিম কোট যদি চক্কান্ত করে তাহলে আমি ইন্টারন‍্যাশান‍্যাল কোট হেগে যাবো। খচ্চার চিন্তা করি না! পাবলিকের করের টাকায় যাবো। বলেদিলুম...
তবে মনেহয় যেতে হবে না! একমাস সময় পেয়েছি তো! ঠিক ম‍্যানেজ করে নেবো। মণিপুর দিয়েই খেলা শুরু করে দিয়েছি। তবে কেডির ওপর আমি খুব খচে আছি। ওকে বুদ্ধবাবুর পাশে দেখে মনে হয়েছিল সত ব‍্যক্তি, এখন দেখছি পুরো জালি!

চুমন = তাহলে আপনি স্বিকার করছেন বুদ্ধবাবু সত? আচ্ছা আইপিএস অফিসারও আপনার পার্টির জন‍্য অনুদান নেয়?

পিসি = অনুদান যে কেউ নিতে পারে। আমার কাছে ভাগ আসলেই হলো! মদনকে নিয়ে আমার চিন্তা নেই! ওর জেল খাটা অভ‍্যেস আছে। বাকিদের নিয়ে আমার একটু চিন্তা আছে বটে। তবে জেল হলেও আমার চারটে প্রজন্ম রেডি আছে! তবে চিন্তা একটাই, নারদের অসম্পাদিত ফুটেজে যে ভাইপো আছে...
(হাসি মুখে) ও হ‍্যাঁ, আদবানী বাবু, সুসমা'জি আমার খুব প্রিয়। ওদের মধ‍্যে কাউকে আমি পরবর্তি রাষ্ট্রপতি হিসাবে দেখতে চাই।

চুমন = একটা শেষ প্রশ্ন, আপনি আগের মতন এখনও ব‍্যাগে টফি, চকলেট নিয়ে ঘোরেন?

পিসি = (এক গাল হাসি নিয়ে ) ওরে দুষ্টু, এখন কি হাইওয়ের পাশে মাচা বেঁধে আর অনশন করি! ওটা ইতিহাস....

চুমন = ধন‍্যবাদ পিসি। আমাদের চ‍্যানেলে সময় বার করে আসার জন‍্য।

পিসি = আমি কি সাধে এসেছি! জ্বালায় এসেছি!

চুমন = আপনার এতক্ষণ দেখছিলেন, মিনিটখানেক সঙ্গে চুমন। হেগে থাকে, হেগে রাখে।

ডিজিটাল রামায়ণ

                                    ডিজিটাল রামায়ণ
আদিকাণ্ড :-
দশরথ ছিলেন কোশল রাজ্যের রাজা। তখনকার দিনে রাজাদের বহুবিবাহ ছিল নিতান্তই 'ছোট্ট ঘটনা'। তাঁর তিন মহিষী: কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন নামে দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়। একদা ঋষি বিশ্বামিত্র দশরথের সভায় উপস্থিত হয়ে তাঁর আশ্রমে উপদ্রব সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করতে রাজার সহায়তা প্রার্থনা করেন। তিনি এই কাজের জন্য রাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে যান এবং শিফুজির স্পেশাল কমান্ডো ট্রেনিং ও রামদেব বাবার যোগ সাধনা করান। দুজনে সার্জিক‍্যাল স্টাইক করে আশ্রমে উপদ্রব সৃষ্টিকারী সকল সন্ত্রাসবাদীদের হত্যা করেন। এর ভিডিও ফুটেজ যদিও পাওয়া যায়নি! তবে হয়েছিল বটে!

এই সময়ে মিথিলার রাজা জনক তাঁর বিবাহযোগ্যা কন‍্যার জন্য স্বয়ম্বরের আয়োজন করেন। শিব রাজা জনককে একটা ধনুক গিফ্ট দিয়েছিলেন। রাজা গোঁ ধরেন, যে এই ধনুকে গুণ সংযোজন করতে পারবে, তাকেই অপরূপা সীতা পতিত্বে বরণ করবে। ঋষি বিশ্বামিত্র সীতার ফেসবুক পেজে এই খবর দেখে রাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে সেই স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত হলেন। রাম সেই ধনুকে গুণ পরালেন এবং বার খেয়ে সেটা ভেঙেও দিলেন। রামের সঙ্গে সীতার বিবাহ হল। শুধু তাই নয়, ডিমনিটাইজেশনের জন‍্য খরচ বাঁচাতে দশরথের অন্যান্য পুত্রদের সঙ্গে জনকে অন্যান্য কন্যা ও ভাগিনেয়ীদের বিবাহ সম্পন্ন হল।

অযোধ্যাকাণ্ড :-
রাম ও সীতার বিবাহের বারো বছরের বিবাহ বার্ষিকিতে বৃদ্ধ রাজা দশরথ রামকে একটা দশলাখি কোর্ট গিফ্ট করলেন এবং যুবরাজ হিসাবে অভিষিক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। পিসি মন্থরার কুমন্ত্রণায় কৈকেয়ী রাজার কাছে দাবি করেন যে রামকে চৌত্রিশ বছরের জন্য বনবাসে পাঠাতে হবে এবং তাঁর স্থলে ভরতকে যুবরাজ হিসাবে অভিষিক্ত করতে হবে। রানীর সব কিছুতেই চৌত্রিশ, এই নিয়ে পরে সবাই যখন সমালোচনা করতে শুরু করলো তখন উনি কমিয়ে চোদ্দ বছর করেন।

রাম পিতাকে আশ্বস্থ করে বলেছিল, চিন্তা করো না! কোনো ভয় নেই! জঙ্গলমহল এখন হাসছে! লক্ষ্মণও নিজের ক‍্যারিয়ার বিষর্জন দিয়ে, বৌ ছেড়ে দাদা বৌদির সাথে চলল। রাম চলে যাবার পর পুত্রশোকে দশরথের স্টোক হয়। এই ঘটনার সময় ভরত ছিলেন তাঁর মাতুলালয় নন্দীগ্রামে। সব শুনে ভরত সত্বর অযোধ্যায় ফিরে এলেন। রামকে খুঁজতে ভরতও জঙ্গলমহলে গেলো। তিনি রামকে অযোধ্যায় ফিরে রাজপদ গ্রহণের অনুরোধ জানাল। কিন্তু রাম রাজি না হলে, ভরত তখন রামের হাওয়াই চটি চেয়ে নিয়ে বললেন, এই হাওয়াই চটিই আপাতত রাজ‍্য চালাবে।

অরণ্যকাণ্ড:-
রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ, কোনো কালেই ওরা কখনও বামে যাননি তাই দক্ষিনে যাত্রা করেন। গোদাবরী নদীর তীরে আম্বানীর লিজে নেওয়া জমির পাশে পঞ্চবটী বনে কুটির নির্মাণ করে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন তাঁরা। একদিন রাবণের বোন সুর্পনখা রামকে দেখে প্রোপোজ করলো। রাম তারপর প্রোপজটা ভাই লক্ষণকে ফরয়ার্ড করলো। লক্ষণ এক ছোবলেই ছবি বানিয়ে দিলো।

রাবণ এই সংবাদ পেয়ে ভগিনীর অপমানের প্রতিশোধ নিতে অধিকারীর সাথে পরামর্শ করে সীতাকে অপহরণ করলেন। তিনি ঋষির ছদ্মবেশে এসে সীতার নিকট পতঞ্জলীর প্রোডাক্ট বিক্রি করতে এলেন। কসমেটিক দেখেই সীতা গন্ডির বাইরে বেরিয়ে এলো। আর তখনই রাবন তাকে নিয়ে পারসোনাল চাটার্ড ফ্লাইটে সোজা লঙ্কা।
রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় অশোক কানন নজরবন্দী করে একদল সন্ত্রাসবাদীর তত্ত্বাবধানে রাখলেন। তিনি সীতাকে প্রোপজও করলেন। সীতা তো এখন রামের অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডে জানাতেও পারবে না! অপমান সহ‍্য করা ছাড়া সীতার কিছু করার নেই।

কিষ্কিন্ধাকাণ্ড :-
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বানরবীর তথা সুগ্রীবের লবি হনুমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল রাম ও লক্ষ্মণের। সুগ্রীব ছিলেন কিষ্কিন্ধার নির্বাসিত এক রাজপদপ্রার্থী। ইভিএম-এ জালিয়াতি করে তাকে ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়। রাম সুগ্রীবের লবিতেযোগ দিলেন। রাম এবং সুগ্রীব, বালীকে চক্রান্ত করে হত্যা করলেন। রামের সহায়তায় সুগ্রীব নিজভ্রাতা বালীকে হত্যা করে কিষ্কিন্ধার সিংহাসনে আরোহণ করলেন।

সুন্দরকাণ্ড :-
হনুমান প্রদ‍্যুম্ন ভল্ট দিয়ে এক লাফে সাগর পার হয়ে লঙ্কায় উপস্থিত হলেন। লঙ্কায় এসে তিনি সীতাকে রামের দেওয়া জিও সিম লাগানো ফোরজি সেটটা দিলেন। সেটা দিয়েই সীতা প্রতিদিন রামকে মন কি বাত শোনাতো। হনুমান সীতাকে নিয়ে যেতে চাইলে সীতা বায়না ধরে, রামকে এসেই নিয়ে যেতে হবে। অতঃপর হনুমান রামের স্বচ্ছতার প্রোপাগান্ডা গুলি মেরে, নিজেই পাকামি মেরে লঙ্কায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালালেন। তারপর লেজে আগুন লাগিয়ে লঙ্কা পুড়িয়ে, নিজের মুখ পুড়িয়ে ফিরে আসে।

লঙ্কাকাণ্ড :-
সীতার হোয়সঅ্যাপ ম‍্যাসেজ পেয়ে রাম ও লক্ষ্মণ বানর সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। সমুদ্রতীরে রাবণের ভ্রাতা রেজ্জাকের সাথে দেখা হয়। তিনিও মন্ত্রীত্ব লাভের আশায় উন্নয়নের জোয়ারে সামিল হলেন। অঙ্গদ, জাম্বুবান প্রমুখ বানরেরা আর্কিমিডিসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাথর জলে ভাসিয়ে সমুদ্রের উপর একটি সেতু করলেন। সেই সেতুপথে রাম সসৈন্যে লঙ্কায় প্রবেশ করলেন। লঙ্কায় রাম ও রাবণের মধ্যে এক দীর্ঘ যুদ্ধ সংঘটিত হল। যুদ্ধান্তে রাবণ নিহত করে লঙ্কায় হিন্দু রাজ‍্য প্রতিষ্ঠা করলেন। সীতা ফিরে এলো কিন্তু রামের মন থেকে খচখচানি গেলো না! দীর্ঘদিন সন্ত্রাসবাদীদের সাথে সীতা ছিল। যদি কিছু ... তাই সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সতীত্ব প্রমাণ করতে বললেন রাম। সীতাও আর পাঁচটা গৃহবধূর মতন মেনেও নিলো।

উত্তরকাণ্ড :-
রাজা হওয়ার পর রাম অনেক কাল সীতাকে নিয়ে সুখে সংসার করেন। এদিকে অগ্নিপরীক্ষিতা হওয়া সত্ত্বেও সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় নানান কুৎসা অপপোচার ছড়াতে শুরু করে। এই সব বিচলিত হয়ে রাম সীতাকে নির্বাসনে পাঠান। প্রেগন‍্যান্ট সীতা রামের জননী সুরক্ষা যোজনার সুবিধা না পেয়ে আশ্রয় নেন ঋষি বাল্মীকির আশ্রমে। সেখানেই তাঁর যমজ পুত্রসন্তান লব ও কুশের জন্ম হয়। সীতা দুই শিশুকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আসলে বেশকিছু রামভক্ত যে শিশুপাচারে যুক্ত সেটা তিনি জানতেন।

বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও - এর প্রচারে লব ও কুশ রামের সভায় উপস্থিত হন। লব ও কুশের কথা শুনে রামের মনটা নস্টালজিক হয়ে পড়ে। তখন বাল্মীকি সীতাকে নিয়ে আসেন রামের সম্মুখে। কিন্তু রাম তো বাঙালী তাই অভ‍্যেসটা একই রয়ে গেছে। সকলের সম্মুখে সীতাকে পুনরায় অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার আবদার করে বসে। অপমানিতা সীতা স্বামীর এই নারীনির্যাতন সহ‍্য না করতে পেরে, মাতা ধরিত্রীকে আহ্বান জানান। মাটি বিদীর্ণ হয়। দেবী ধরিত্রী উঠে এসে সীতাকে নিয়ে পাতালে চলে যান। স্ত্রী চিরকালের মতন ছেড়ে যাবার পর, রামের চেতনা হয়। তখন রাম পুত্রদ্বয়ের হাতে শাসনভার ছেড়ে দিয়ে সরযূ নদীর উন্নয়নের জোয়ারে আত্মবিসর্জন করে বৈকুণ্ঠে ফিরে আসেন।

( বি.দ্র. - এটি একটি কাল্পনিক রচনা। ধর্মের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।)

Wednesday 22 March 2017

কালীপিসির কবিতা পাঠ

                               কালীপিসির কবিতা পাঠ
গতকাল বিশ্ব কবিতা দিবস ছিল। কিন্তু ঐ নারদ মামলার জন‍্য ওটা আর সেলিব্রেশন করা হয়নি। বুঝতেই তো পারছো কতো চাপে রয়েছি। 'সুপিম কোট' একমাস সময় দিয়েছে, তাই একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম। একমাসের ভিতর ঠিক ম‍্যানেজ করে নেব। যাক সে কথা! শুনলুম এদিকে নাকি 'শিজাত' আমার 'মাকেট' ডাউন করে দিয়েছে! কি দুলাইন লিখে সব টিআরপি কেড়ে নিয়েছে! 

'শিজাত' যদি 'তিশূল' নিয়ে কবিতা লিখতে পারে তাহলে আমিও 'তিফলা' নিয়ে ওর থেকেও হাজার গুন ভালো 'পোতিবাদী' কবিতা লিখতে পারি!
"শুক্ততে লাগে কাঁচকলা/ঐ দ‍্যাখো জ্বলছে তিফলা/খেতে ভালোবাসতো অভীর বাপ/তিফলার গায়ে নীলসাদা সাপ/শুক্ত বড়োই প্রিয় আমার/রাজ‍্যে উন্নয়নের জোয়ার"। কেমন হলো বল! একি, হাততালি কই!

হতে পারে ও 'শিজাত', কবিতা জিনিটা কিন্তু আমার সহজাত। ভেতর থেকে অটোমেটিক চলে আসে। এই যেমন ধরো, আমি পাহাড়ে সভা করতে যাচ্ছি, হঠাৎ ঝন্না দেখে দুলাইন লিখে ফেললুম। 'ঝন্না ঝন্না ঝন্না/পাহাড়ে আনবো উন্নয়নের বন‍্যা/ হাইওয়েতে ধন্না/আমিই অগ্নিকন‍্যা"। যখন মন্দারমনিতে সান্ধ‍্য 'ভোমোনে' বেরিয়ে 'সূয্যাস্তের' আলোয় রোজভ‍্যালির হোটেলটাকে দেখতাম, ঠিক যেন তাজমহল মনে হত। নিজের অজান্তেই লিখে ফেলতাম,'রোজভ‍্যালি রোজভ‍্যালি/হাততালি হাততালি/কালিঘাটে আছে কালী/আমি হবো তোমার মালি'। আবার যখন জঙ্গলমহলে 'ছত্তধরের' সাথে সভা করতে যেতাম তখন শাল পলাশের 'পেমে' পড়ে দুলাই লিখে ফেলতাম,' ওরে আমার শাল/ওরে আমার পলাশ/তোদের মাঝেই পড়ে আছে সালুক সোরেনের লাশ'। আমি বিদেশ 'ভোমোন' করে এসে একটা 'আন্তোজাতিক' মানের কবিতা লিখেছিলাম, ' লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুর/বিনিয়োগ অনেক দুর/ কোনদিনই আসবে না মানি/ বিএমডাবলিউ দেবেনা 'জাম্মানি'।'

সামনে বসা ভিড়ের মধ‍্যে থেকে একজন বলল, পিসি বিশ্ব বাংলা নিয়ে দুলাইন। পেছনের দিক থেকে একজন বলল, বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে একটা হয়ে যাক! পাশ থেকে একজন বলল, পিসি শিশুদের জন‍্য শিশুচুরি নিয়ে একটা ছড়া হোক। কালীপিসি হাত তুলে বলল, ঠিক আছে সব হব। কবিতা শুনে জোরে হাততালি দিতে হবে কিন্তু!" বিশ্ব বাংলা, আহারে বাংলা/খাচ্ছে দ‍্যাখো যেন হ‍্যাংলা/ এতকিছু কি করে গেলো/ভুলেও যেও না অ্যাপেলো"। এবারে শিশুচুরি ছড়া," ইশ্বর আল্লা জিশু/জুহি চন্দনা শিশু/প‍্যান্টে করে হিসু/এটা ঐতিহাসিক ইসু।"

ভিড়ের মধ‍্যে থেকে 'পিসি পিসি' বলে আবদার এলো, নরেন মুদিকে নিয়ে একটা রোমান্টিক কবিতা বলতে হবে। শুনেই তো পিসির গাল লজ্জায় গেরুয়া হয়ে গেলো। তারপর পিসি কবিতা শুরু করলো,' তুমি লাড্ডু, আমি ল‍্যাংচা/ তুমি পদ্ম, আমি ঘাস/ তুমি দিতেই পারো না আমায় বাঁশ/এটা আমার অন্তরের বিশ্বাস'।

তবে এই বিশ্ব কবিতা দিবসে আমি মামাটির জন‍্য একটা 'ইস্পেশাল' কবিতা লিখেছি সেটা বলেই আজকের সভা শেষ করবো।
এই আমরা কারা - তিনোমূল
যাচ্ছে কারা - তিনোমূল
এই রাজপথেতে - তিনোমূল
এই বুক চিতিয়ে - তিনোমূল

(হঠাৎ ভিড়ের মাঝে থেকে একজন বলে উঠলো) পিসি এটা তো এসএফআই-এর স্লোগান!

এই কে বললি রে? কেষ্টা, ভিড়ের মধ‍্যে থেকে মালটাকে বার করে নিয়ে স্টেজের পিছনে আন তো...

Wednesday 8 March 2017

একটি কাল্পনিক বক্তৃতা

                                 একটি কাল্পনিক বক্তৃতা 
এই, এই, চোপ! চোপ! আজ 'আনতোরজাতিক' নারী উৎসব। তাই এই উপলক্ষে আমি দু-চার কথা বলতে চাই। সবাই মন দিয়ে শোনো। নারী মানেই পিসি। পিসি মানে কেবল অভিষেকের নয়! সমস্ত দুষ্টু দামালদের পিসি! নারী মানেই দিদি। দিদি মানেই যে গণতন্ত্রের শেষ কথা সে আর আপনাদের নতুন করে বলতে হবে না! সব্বোপরি নারী মানে মা। আর মা মানেই 'মামাটি'। আর গত ছবছরে এই মামাটির সরকার নারীদের জন‍্য কি করেছে সে তো আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন।

সিপেম ৩৪বছরে রাজ‍্যকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছিল। আমার নেতৃত্বে এই মামাটি সরকার বাংলাকে নারী নির্যাতনে দেশের শীর্যে তুলে এনেছে। এখন লোককে মালদা কিসের জন‍্য বিখ‍্যাত জিঞ্জেস করলে বলে না আমের জন‍্য! এখন বলে নারী নির্যাতনের জন‍্য। এই পরিবর্তন নিয়ে এসেছে আমাদের মামাটির সরকার। ধর্ষনের জন‍্য আমাদের গরমেন্ট আলাদা আলাদা রেট ঠিক করে দিয়েছে। তবুও বিরোধীরা কুৎসা করে, অপোপোচার করে যে আমরা কিছুই করিনা!

তোমরা সবাই আমাকে অগ্নিকন‍্যা বলে ডাকো কিন্তু তোমার জানো কি দেশের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় সংঘঠন আমাকে দুগ্গা বলে ডাকে! এতো দিন আমি জহ্লাদ বাহিনী বানিয়েছি, ভৈরব বাহিনী বানিয়েছি, বাইক বাহিনী বানিয়েছি, এবারে আমি ওদের দুগ্গা বাহিনীর অনুপ্রেরণায় নারীদের নিয়ে একটা কালী বাহিনী বানাবো ঠিক করেছি। এরাই টুম্পা মৌসুমীদের মতন মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। ছাত্রী থেকে শুরু করে কিশোরী, যুবতী থেকে শুরু করে গৃহবধূ, সবাই এই বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। আর হ‍্যাঁ, যে সমস্ত বেকার যুবতীরা টেটে পরীক্ষা ভালো করে দিয়েও কেবল অনুদানের অভাবে চাকরি পাননি, তারা বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

আমি এখুনি এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকেই একটা কমিটি গঠন করে দায়িত্ব ভাগ করে দিচ্ছি। সোনালী, সোনালী কোথায় গেল! ও ঐ তো পাত্তোর পাশে বসে! সোনালী এই বাহিনীর সদস‍্যদের শেখাবে, কিভাবে বাচ্চা খসাতে হয়! অর্পিতা কোথায়! ঐ তো, অর্পিতা শেখাবে কিভাবে 'প্রেক্ষিত' বিচার করে লড়তে হয়। কাকলী তোমাদের খরিদ্দার চিনতে শেখাবে। জয়া কোথায় গেল আবার! ঐ তো! বক্সিদার সাথে গপ্পো করছে! জয়া এদিকে এসো, জয়া শেখাবে, আমার দিকে কেউ আঙুল তুললে কিভাবে কেটে ফেলতে হয়। তাছাড়া কেষ্টা বোমা বাঁধা, ইদ্রিশ আগুন জ্বালানো, শোভন সাঁতার, শুভেন্দু অপহরণ এগুলো শিখিয়ে দেবে। তোমরা নিশ্চিন্তে এই বাহিনীর শিক্ষা শিবিরে যোগ দিতে পারো!

শরীর খারাপ বা টেনিং এর সময় চোট পেলে মাঝি কাকু আছে তো! মাল বাবু নেই তো কি হয়েছে, তোমাদের সুরক্ষার জন‍্য মাল বাবুর ছেলেরা তো আছে। ঐ দ‍্যাখো, সবাই আবার দেব, দেব বলে চ‍্যাঁচাচ্ছে কেন! আচ্ছা, আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি, খোকাবাবু মাঝে মাঝে গিয়ে পাগলু নেচে তোমাদের খুশি করে আসবে! গৃহবধূদের বলছি, আপনাদের যদি বাচ্চা থাকে তাহলে অযথা চিন্তা করবেন না! বাচ্চাদের নিয়েই এই শিবিরে যোগ দিতে পারেন। চন্দনা মাসি বাচ্চাদের দেখাশুনার দায়িত্বে আছেন। তাহলে অফিসিয়াল ভাবে আমি কালী বাহিনী গঠন করে দিলুম, কার কি দায়িত্ব সেটাও বলে দিলুম।

এই, এই, দাঁড়াও! দাঁড়াও! যাচ্ছো কোথায় তোমরা! এখনও আমার স্লোগান দেওয়া বাকি আছে তো! আমি পোথম লাইন বলবো তারপর তোমরা সবাই মিলে একসাথে বলবে!

এই নারী নির্যাতনে - তিনোমূল, এই ধর্ষনেতে - তিনোমূল, এই দিকে দিকে - তিনোমূল, এই পার্ক স্ট্রিটেতে, এই কামদুনীতে, এই কাকদ্বীপেতে, এই কাটোয়াতে, এই ধুপগুড়িতে, এই মধ‍্যমগ্রামে, এই বারাসাতে, এই সোনারপুরে, এই রানাঘাটেতে, এই লাভপুরেতে, এই গড়বেতাতে...
( স্লোগান একঘন্টা ধরে চলল, তাই সমস্ত নাম বলা সম্ভব হলো না। )

( বি.দ্র. - এটি একটি কাল্পনিক বক্তৃতা, বাস্তবের সাথে কোনো মিল থাকলে সেটা কাকতালীয় )

Tuesday 28 February 2017

কৈলাসের কেলেঙ্কারি

                               কৈলাসের কেলেঙ্কারি 
ফেলুদা নিউজ চ‍্যানেল গুলো পাল্টে পাল্টে দেখছে। একটা ন‍্যাশান‍্যাল চ‍্যানেলে ব্রেকিং নিউজ বলে দেখাচ্ছে.... গুলমেহের দিল্লী ছাড়লেন, এমন সময় তোপসে এসে বলল, লালমোহন বাবু এসেছেন। ফেলুদা টিভিটা বন্ধ করে বলল, যাক হনুমান গুলো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো! চল দ‍্যেখি, একসপ্তাহ পর এসেছেন। প্রশ্নের নিশ্চয়ই পাহাড় নিয়ে এসেছেন! বৈঠকখানার ঘরে ঢুকে ফেলুদা বলল, তা কি খবর! মশাইয়ের কোনো পাত্তা নেই যে! লালমোহন বাবু বললেন, এক সপ্তাহ পর মাকে অ্যাপেলো থেকে গতকাল বাড়িতে নিয়ে এলাম। ফেলুদা পকেট থেকে একটা চারমিনার বার করতে করতে বলল, পুরো টাকাটা পেমেন্ট করেছিলেন তো? লালমোহন বাবু জিভ কেটে বলল, কি যে বলেন!

তারপর লালমোহন বাবু কৌতূহল নিয়ে বললো, মিত্তির মশাইয়ের হাতে কি এখন কোনো কেস আছে? না মানে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়নি তো! তাই ভাবছিলুম যদি একটু পোল‍্যান্ড ঘুরে আসা যেত! তোপসে বলল - ফেলুদা সাবধান! পোল‍্যান্ডে যদি আবার প্লেন ল‍্যান্ড করতে দেরি হয় তাহলে কিন্তু লালমোহন বাবু 'চক্কান্ত, চক্কান্ত' বলে চিৎকার করতে পারে! ফেলুদা চানমিনারে একটা সুখটান দিয়ে অবশেষটা অ্যাশট্রেতে গুঁজে বলল, পরিবর্তনের বাংলায় কি কেসের অভাব আছে! কদিন ধরে উত্তরবঙ্গের শিশু পাচার কেসটা নিয়ে ভাবছি!

লালমোহন বাবু উত্তেজিত হয়ে বলল, অতো ভাবার কি আছে মশাই! এতো জলের মতন পরিস্কার! এই চক্রের সাথে মামাটির যোগ তো ত্রিফলার মতন জ্বলজ্বল করছে। তাছাড়া ঐ সঞ্চালক ছোকরা তো নিজে মুখেই স্বিকার করছে যে ও কার অনুপ্রেরণায় করেছে! তোপসে লালমোহন বাবুর হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, সাবধান! ওমনভাবে আঙুল তুলে কথা বললে কিন্তু জয়াদি আঙুল কেটে নেবে!

ফেলুদা আরেকটা চারমিনার ধরিয়ে বলল- জুহি ম‍্যাডামের অন্তর্ধান রহস‍্য, নর্থ ব্লকে সান্ধ‍্য ভ্রমণ, এমনকি দ্রৌপদীও বস্ত্রদান করে কিছু একটা চাপা দিতে চেষ্টা করছে!গন্ধটা বড়ো সন্দেহজনক! লালমোহন বাবু বললেন দেশপ্রেমিকরা কোনো দিন শিশুপাচারের মতন জঘন‍্য কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারেনা! আনপসিবেল! ফেলুদা বলল, ISI স্ট‍্যাম্প মারা দেশপ্রেমিকরা কি কি পাচার করে সেটার তালিকা কৃশানুর কাছে পেয়ে যাবেন! আর কথাটা আনপসিবেল নয়! ইমপসিবেল। লালমোহন বাবু কিছুটা জিভ কেটে বললেন, মিসটেক! তাহলে রামভক্তরা এখন ঘেসো গুলোর শিশুপাচারের জোট সঙ্গী? জোট তো অনেকদিন ধরেই চলছে, না না অফিসিয়ালি কোথাও ঘোষনা করেনি! তবে মোষটা একবার হাম্বা করে সম্মতি জানিয়েছিল। লালমোহন বাবু ফেলুদার কথার ভাঁজ বুঝতে না পেরে করুনভাবে তোপসের দিকে তাকালো। তোপসে হেসে বলল, এটা টুইটের নতুন ট্রেন্ড।

বাইরে বারন্দায় রাখা পোষা চন্দনা পাখিটি অনেক্ষণ ধরেই বলে চলেছে, 'কৈলাসে কেলেঙ্কারি'। ফেলুদা প্রথমে ভেবেছিল কথাটি লালমোহন বাবুকে দেখে বলছে। আসলে কেউ কিছু বললে সেটা ও খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করে ফেলে। এবারে অ্যাসট্রেটা ভরে গেছে বলে সিগারেটের অবশেষটা বাইরে ফেলতে বারান্দায় গিয়ে হঠাৎ খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো! মিনিট পাঁচেক মন দিয়ে চন্দনার বুলি শুনলো! তারপর মনেমনে হাসতে লাগলো! দেরি হচ্ছে দেখে তোপসে আর লালমোহন বাবু দুজনে বারান্দায় হাজির হয়ে দেখলো, ফেলুদা খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে পাখিটাকে ছোলা খাওয়াচ্ছে। কাছে যেতেই ফেলুদা বলল, চন্দনা কি বলছে শুনুন! এবারে পরিষ্কার ভাবে শোনা গেল চন্দনার বুলি... ' কৈলাসের কেলেঙ্কারি'

Wednesday 22 February 2017

অভিমানী মদন

                                      অভিমানী মদন

পাঁচ নম্বর বোতলটা শেষ হবার পর যখন ছ নম্বর বাংলার বোতলটা হারু খুললো, ততক্ষণে চাট শেষ। হারু কিন্তু কিন্তু করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল! তার আগেই মদন বলল, চাট শেষ তো কি হয়েছে! তুই ঢাল, আজ চাট ছাড়াই খাবো।

সকাল থেকেই আজ দাদার মুডটা অফ। সকালবেলায় দাদা হোয়াস অ্যাপে জেনেছে সিঙ্গুরের সোনালী ইতিহাস থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তখন অবশ‍্য ব‍্যাপারটা পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি! কেবলই মনে হয়েছে, দিদি এমন কাজ করতেই পারে না। তবে মনের মধ‍্যে একটু খচখচানি ছিল! তাই নাতি স্কুল থেকে ফিরতেই ইতিহাস বইটা খুলে দেখে দাদার চোখ স্থির, গাল হাঁ! বাড়ির সবাই ছুটে এলো, ভেবেছে আবার প‍্যানিক অ্যাটাক হয়েছে বুঝি! দাদার গাল হাঁ! এমনিতে দাদা দিনে দুবার মুখ খোলে, খেতে আর খিস্তি দিতে। ছেলে তো ফোন করে উডবার্ণের বেড বুক করে ফেলল। প্রায় দশ মিনিট পর দাদা করুনভাবে বলল, আমি বাদ!

অন‍্যদিনের মতন সন্ধ‍্যা থেকেই নয়! বিকাল থেকেই দাদা আজ 'অন' হয়ে গেছে। কালু আর হারু কাঁচা ছোলা, বাদাম ভাজা আর এক পেটি বাংলা নিয়ে দাদার ঘরে ঢুকেছে। আজ আর মিউজিক সিস্টেমে ভোজপুরি চলছে না! চলছে, 'ইয়ে দুনিয়া ইয়ে ম‍্যায়ফিল মেরে কাম কি নেহি'। দাদা অপলক দৃষ্টিতে সামনের দেওয়ালে টাঙানো পিয়ালীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা পেগ মেরে যাচ্ছেন। হারু কিছুট ভয় পেয়ে কালুকে বলল, গতিক ভালো না! দাদার যদি পার্থর মতন অবস্থা হয়! কালু দাদার অন‍্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে চট করে একটা পেগ মেরে গালে দুটো ছোলা ফেলে বলল, দাদার কুশপুতুল পোড়াবে কার এতো সাহস! হারু বলল, তোর নেশা হয়ে গেছে, আমি সাইকো পার্থর আত্মহত‍্যার কথা বলছিলুম!

দাদা কাঁদো কাঁদো গলায় পিয়ালীর ছবির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, তুমি তো সব জানো! বলো আমি কিনা করেছি সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়! ওনার অনুপ্রেরণায় আইটির ছেলেটাকে মঞ্চের পেছনে নিয়ে গিয়ে 1,2,3 করিয়েছি। ওনার জন‍্য ১০কিমি দুর থেকে চকলেট কিনে এনেছি! সারারাত মশার কামড় খেয়ে মঞ্চে শুয়ে থেকেছি! হারু বলল, ভাগ‍্যিস সোয়াই-ফ্লু হয়ে যায়নি!

পরের পেগটা হাতে নিয়ে আবার ছবির দিকে তাকিয়ে দাদা বলল, সবার নাম আছে আর আমার নামটাই বাদ! হারু এবার কালুকে বলল, ওরে নুর ভাবিকে একবার ফোন কর! এদিকে দাদা বলেই চলেছে, আমাকে জেলে একদিনও দেখতে আসেনি, এমনকি জেল থেকে ছাড়া পাবার পর একবারও নবান্নে বা কালীঘাটে ডাকেনি তাও আমার এতো দুঃখ হয়নি! কালু বলল, দাদা এবারে বুঝেছি কেন তোমার নাম দেয়নি! তুমি জেল খেটেছো বলে। দাদা এবার ছবি থেকে চোখ সরিয়ে কালুর দিকে কটমট করে লাল চোখে তাকিয়ে বলল, জেল তো সাইকেল চোরও খেটেছে! কালু বললো, তুমি তো এখন পোভাবশালী নও তাই হয়তো বাদ দিয়েছে! হারু পাশেই ছিল, সঙ্গে সঙ্গে একটা জোরে চাটা মারলো কালুর মাথায়।

নারদের ভিডিও গোটা রাজ‍্য দেখলো, ছেলে ঢুকাতে গিয়ে একজন জেলে গেলো, আরেক জন বিনে পয়সায় দেখিয়ে দিলো আর আমার বেলায় যত দোষ! হারু বলল, দাদা আমি সিওর, চক্রান্ত করে দিদি নামটা বাদ দিয়েছে! কালু বলল, চক্কান্ত তো সিপেম করে! হারু বলল, চিন্তা করো না দাদা, তোমার ইতিহাস ঐ অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীরা বুঝবে না! তোমার ইতিহাস ডিগ্রিকোর্সে পড়ানো হবে। কালু জল ছাড়াই শেষ পেগটা মেরে গেঞ্জীর কলারটা টেনে মুখটা মুছে বলল, আমরা এই দাবীতে কাল থেকে অনশনে বসবো!

( বি.দ্র. - এটি একটি কাল্পনিক গল্প। বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই। থাকলে সেটা কাকতালীয় )