Tuesday 13 December 2016

♨♨♨♨ অমল ও চাওআলা ♨♨♨♨

রবি ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে ...
                                                         অমল ও চাওআলা 
চাওআলা = চায়ে― চায়ে― লিকার চায়ে, দুধ চায়ে!
অমল = চাওআলা, চাওআলা, ও চাওআলা!
চাওআলা = ডাকছ কেন? চা খাবে?
অমল = কেমন করে খাবো! আমার তো খুচরো পয়সা নেই! একটাই ২০০০এর নোট। তুমি খুচরো দেবে?
চাওআলা = কেমন ছেলে তুমি। খুচরো নেই তো আমার বেলা বইয়ে দাও কেন?
অমল = আমি যদি সবার মতন এটিএম আর ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিতে পারতুম!
চাওআলা = আচ্ছা তোমার কাছে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড আছে? তোমার পেটিএম নেই! তাহলে একটা দুধ চায়ের সাথে এক ভাঁড় লিকার ফ্রী পেতে!
অমল = একটা পুরনো ৫০০টাকার নোট আছে, ওটা নেবে?
চাওআলা = না বাবু ওটা কালোধন। ওটা নিতে পারবো না।
অমল = তুমি যে কত দূর থেকে হাঁকতে হাঁকতে চলে যাচ্ছ শুনে আমার মন কেমন করছে। ঠিক যেন তুমি আমার 'মন কি বাত' বলে যাচ্ছো।
চাওআলা = (চায়ের চুলা সহ কেটলি নামাইয়া) , মিত্রোঁ.., তুমি এখানে বসে কী করছ?
অমল = কবিরাজ আমাকে বেরোতে বারণ করেছে, বলেছে সুদিন এলে তবেই বের হবি। তাই আমি সারাদিন এইখেনেই বসে থাকি।
চাওআলা = আহা মিত্রোঁ, তোমার কী হয়েছে? কোন ডাক্তারি পরীক্ষা করাওনি?
অমল = আমি জানি নে। আমি তো ফোটোশপ শিখি নি, তাই আমি এক্স-রে রিপোর্ট দেখে বুঝতে পারি নে আমার কী হয়েছে। চাওআলা, তুমি কোথা থেকে আসছ?
চাওআলা = আমাদের গ্রাম থেকে আসছি।
অমল = তোমাদের গ্রাম? অনে―ক দূরে তোমাদের গ্রাম?
চাওআলা = দিল্লিতে আমার একটা ঘর আছে বটে, তবে সেখানে এখন যাইনা। আমাদের আদি গ্রাম সেই গুজরাটে। সবরমতি নদীর ধারে।
অমল = গুজরাটের গ্রাম ― সবরমতি নদী― কী জানি,হয়তো তোমাদের গ্রাম দেখেছি― কবে সে আমার মনে পড়ে না।
চাওআলা = তুমি দেখেছ? গুজরাটে গিয়েছিলে নাকি?
অমল = না, কোনোদিন যাই নি। টিভিতে আমি দেখেছি। তোমাদের গ্রামে গডসের মন্দির আছে না?
চাওআলা = ঠিক বলেছ বাবা।
অমল = তোমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে ট্রেন লাইন গেছে না? একবার ট্রেনে কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।
চাওআলা = কী আশ্চর্য! ঠিক বলছ।
অমল = তোমাদের গ্রামের লোকেদের মধ্যে একবার দাঙ্গা লেগেছিল না?
চাওআলা = বা! বা! ঠিক কথা। তুমি নিশ্চয় কোনোদিন সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলে!
অমল = সত্যি বলছি চাওআলা, আমি একদিনও যাই নি। কবিরাজ যেদিন আমাকে বাইরে যেতে বলবে সেদিন তুমি নিয়ে যাবে তোমাদের গ্রামে?
চাওআলা = যাব বই কি বাবা, খুব নিয়ে যাব! তবে আমি তো বেশিরভাগ সময় বিদেশে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করি, তাই গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না!
অমল = আমাকে তোমার মতো ঐরকম চা বেচতে শিখিয়ে দিয়ো। আমিও দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করবো।
চাওআলা = মরে যাই! চা বেচতে যাবে কেন বাবা। এত এত পুঁথি পড়ে তুমি পণ্ডিত হয়ে উঠবে।
অমল = না, না, আমি কক্‌খনো পণ্ডিত হব না। আমি তোমার মতন দূর দূর দেশে গিয়ে চা বিক্রি করে বেড়াবো! কী রকম করে তুমি বল, মিত্রোঁ....চায়ে চায়ে গরম চায়ে। আমাকে সুরটা শিখিয়ে দাও।
চাওআলা = ওরে পাগল! এ সুরও শেখা অতো সহজ নয়! এর জন্য ৫৬ইন্চি ছাতি দরকার।
অমল = না, না, ও আমার শুনতে খুব ভালো লাগে। ঐ রাস্তার মোড় থেকে ঐ গাছের সারির মধ্যে দিয়ে যখন তোমার ডাক আসছিল, আমার মন তোলপাড় হচ্ছিল― যেন মনের মধ্যে সার্জিক্যাল স্টাইক হচ্ছিল!
চাওআলা = বাবা, এক ভাঁড় লিকার চা তুমি খাও।
অমল = আমার তো পয়সা নেই।
চাওআলা = না না না না― পয়সার কথা বোলো না। তুমি তো আমার মিত্রোঁ! আর আমি মিত্রোঁদের কাছে থেকে পয়সা নিই না। আমার কতো মিত্রোঁকে তো আমি হাজার হাজার কোটি টাকার চা বিনে পয়সায় খাওয়াই।
অমল = তোমার কি অনেক দেরি হয়ে গেল?
চাওআলা = কিচ্ছু দেরি হননি মিত্রোঁ, আমার কোনো লোকসান হয় নি। আমি এর দাম ঠিক অন্যদের ঘাড় থেকে তুলে নেব। এখন একটু জানালার কাছে এসো তো!
অমল = জানালার কাছে কেন?
চাওয়ালা = চায়ের কাপ হাতে তোমার সাথে একটা সেলফি তুলবো। আর ছবিতে যেহেতু জানালা থাকবে তাই এটাকে 'উইনডো-শপিং' বলে দিব্যি বাজারে চালাতে পারবো।

Tuesday 25 October 2016

✍✍✍✍✍ আহা'রের নামকরণ ✍✍✍✍✍

 আহা'রের নামকরণ 
'আহারে বাংলা'র খাবারের নামকরণ পিসির মোটেই পছন্দ হয়নি। মেনু লিস্ট পিসি রেগে চিৎকার করে বললেন, 'পরিবত্তন চাই'! তারপর একটা নামাঞ্জলী হাতে নিয়ে প্রতিটি স্টল ঘুরে ঘুরে নতুন নামকরণ করতে লাগলেন। ...
(ভেজ স্টলে গিয়ে)
পিসি = এটা কি?
বয় = আজ্ঞে লাল শাক!
পিসি = মোচ্ছব আমার, আর শাক কিনা লাল! এখুনি এই আইটেম সরিয়ে ফেল। সবুজ শাক নিয়ে আসো। নাম দাও 'সবুজ সাথী'।
বয় = এটা পালং পনির।
পিসি = ওটা তো কমন নাম হয়ে গেলো! নামটা পাল্টে 'পিংলা পনির' করে দাও! ফাটাফাটি সেল হবে!
বয় = পিসি, এটা ওলের ডালনা! অপূর্ব স্বাদ!
পিসি = স্বাদটা ভালো, তবে গলাটা একটু কুটকুট করছে! এটার নাম দাও 'ওলের স্টিং'।
(নন-ভেজ স্টলে গিয়ে )
বয় = এটা টেস্ট করুন, চিংড়ি কচুর ঘন্ট।
পিসি = দারুণ খেতে তো! তবে এটার নাম করে দাও 'চিংড়ি কচুর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব'।
বয় = পিসি, এটা পার্শের ঝাল।
পিসি = দারুণ চাট হবে কিন্তু! মদনার তো খুব প্রিয়। এটার নাম করে দাও 'প্যানিক পার্শে'।
বয় = এটা কাঁচালঙ্কা, ক্যপসিকাম দিয়ে তৈরী 'চিলি তেলাপিয়া'।
পিসি = দারুণ টেস্ট! একবার খেলে 'বারবার চাইতে হবে'। তাই এটার নাম দাও 'তেলাপিয়ার তোলাবাজি'।
বয় = এটা ভেটকির পাতুরি, মুখে দিলেই 'ভ্যানিস'!
পিসি = এটা মুকুলের খুব 'পিয়ো'। তবে এটার নাম করে দাও 'ভ্যনিস ভেটকি'।
বয় = সরষে ইলিশ আর দই কাতলা। একটা করে পেটি টেস্ট করে দেখুন।
পিসি = পেটি বরাবরই মদনার খুব প্রিয়। তা সে কাতলার হোক বা পিয়ালীর! আর সদ্য সিঙ্গুরে সরষে ছড়িয়ে এসেছি। তাই নাম দুটো পাল্টে 'কাতলা কেলেঙ্কারি' 'সিঙ্গুর সরষে ইলিশ' করে দাও।
বয় = চিংড়ির মালাইকারিও আছে। মহিলাদের এটা খুব প্রিয়!
পিসি = গত কয়েক বছর ধরেই এরাজ্যে মহিলাদের প্রায়ই 'জ্বর বমি' হচ্ছে! ঠিকমতো খেতে পাচ্ছেনা। তাই এই আইটেমটার নাম থাক 'চিংডির চিৎকার'।
বয় = পিসি, একটু কোয়েল বিরিয়ানি টেস্ট করে দেখুন।
পিসি = স্বাদ মন্দ নয়! তবে এই নাম রাখলে মল্লিক মশাই 'চাবকাবে'! বরং নাম পাল্টে 'রঞ্জিত বিরিয়ানি' করে দাও। তাহলে মল্লিক মশাইও খুশি আর ঘোষ'দারও স্মৃতিচারণ হয়ে যাবে।
বয় = পিসি, এটা স্পেশাল মটন বিরিয়ানি।
পিসি = না না এই নাম তো ফুটপাতের দোকান থেকে বড়ো রেস্টুরেন্ট সব জায়গায় লেখা থাকে। এটা আগে পাল্টাও! পাল্টে 'মদন বিরিয়ান' করে দাও।
বয় = এটা রোস্টেড ডাক, অপূর্ব স্বাদ।
পিসি = এটা ইদ্রিসের খুব প্রিয়! আগুনে পোড়া জিনিস ও খুব ভালো বাসে। তাই এটার নাম পাল্টে ' ইদ্রিশীয় হাঁস' করে দাও।
বয় = টার্কি, খরগোশ, এমুর আইটেমও আছে।
পিসি = এমু তো বিদেশি পাখি! এটার নাম দাও 'বিদেশি বিনিয়োগ'।
(মিষ্টির স্টলে গিয়ে )
বয় = পিসি নলেন গুড়ের সন্দেস তালশাঁস, কাঁচাগোল্লা আছে।
পিসি = গুড়ের সমস্ত মিষ্টি কেষ্টার নাম দিয়েই করতে হবে। নাহলে ও আবার স্টলে বোমা মারবে। যেমন 'কেষ্টার তালবোম' 'শ্রীকৃষ্ণের গোল্লা'।
বয় = দুধের মিষ্টিও আছে। রসমালাই, চমচম, রাবড়ি।
পিসি = দুধটা কি আমুলের! তাহলে চলবে না! স্টলে যেকোনো মূহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! মিষ্টির ট্রে গুলো পাল্টি খেতে পারে!
বয় = না না! সবই মাদার ডেয়ারীর দুধে তৈরী।
পিসি = 'মাদার' ডেয়ারীর যখন, তাহলে তো এগুলো সব অলৌকিক মিষ্টি। হ্যাঁরে, ল্যাংচার স্টল নেই কেন?
বয় = আজ্ঞে জমি সমস্যা! মানে স্টল দেবার জায়গা নেই!
ঐ যে বড়ো জলের ট্যাঙ্কের গায়ে লেখা আছে ''Drinking Water', ওটা মুছে ওখানে লিখে দাও 'উন্নয়নের জোয়ার '। আর যারা খেতে আসবে তাদেরকে একটার বেশি পানীয় জলের বোতল দেবে না। জল শেষ হয়ে গেলে ওদেরকে উন্নয়নের জোয়ারের ট্যাঙ্ক দেখিয়ে বলবে, 'জল ধরো, জল ভরো'। জল ভরতে যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য আরাবুলকে একটা জলের মগ নিয়ে দাঁড়াতে বলো।

✍✍✍✍ চক্কান্তের গন্ধ ✍✍✍✍

                                  ✍ চক্কান্তের গন্ধ 
মা মারা যাবার পর ভাইপো ছাড়া কালীপিসির সাত কুলে আপন বলে কেউ নেই! রক্তের সম্পর্কের ভাই কার্তিক গনশা আছে বটে, তবে তাদেরকে পিসি বেশি পাত্তা দেয়না। পিসি জানে তারা সারাক্ষণ পিসির সম্পত্তি হাতানোর জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। পিসি তার ভাইয়েদের কান্ড দেখে তার চিটফান্ডের টাকা থেকে ছবি বিক্রির টাকা, সোনার তরী হোটেল, কবিতার বইয়ের ল্যয়ালিটি স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি এমনকি নতুন আইফোন-৭ টাও ভাইপোর নামে উইল করে দিয়েছে। কদিন আগে পিসির ভিক্ষা-মা মারা গেলেন। তারপর থেকে পিসি আরও একা হয়ে পড়েছে। তাই সারাক্ষণ পিসি তার ভাইপোকে আগলে রাখেন।

ছোটবেলা থেকেই ভাইপোও পিসি ন্যাওটা। সারাদিন পিসির নীল-সাদা আঁচল ধরে গোটা পাড়া ঘুরে বেড়াতো। পাড়ার কেউ ভাইপোর নামে অভিযোগ করলে পিসি তার বাড়ি গিয়ে ঝগড়া করে আসে। রীতিমতো পাড়ার সবাইকে হুমকি দিয়ে রেখেছে, ' যদি কেউ ভাইপোর নামে কোনো কুৎসা অপপ্রচার করে আমি কিন্তু চাবকে লাল করে দেব।' এমনিতেই পাড়ার লোকজন জানে কালীপিসি গুন্ডা কন্ট্রোল করেন, তাই পিসির সাথে কেউ ঝামেলায় যায়না। একবার বে-পাড়ার একটা ছোকরার সাথে ভাইপোর কথা-কাটাকাটি হচ্ছিলো। হঠাৎ ছোকরাটি ভাইপোকে সপাটে চড় মারাতে পিসির গুন্ডারা সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে দিয়েছিল।

দুদিন আগে ভাইপো জুলফির সিনেমা দেখে তার এক বন্ধুর সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিল। রাস্তার উল্টোদিক থেকে আসা এক গোয়ালার সাইকেলের সাথে হঠাৎ ধাক্কা! গোয়ালার সাইকেলের ক্যারিয়ারে দুটো দুধ ভর্তি জার থাকায় ভাইপোদের সাইকেলটা ধাক্কা মেরেই পাল্টি খেল। চোট বিশেষ হয়নি! চোখের কোলে একটু ছিলে গেছে আর হাতটা মুচড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার কিছু লোকে ভাইপোকে নিয়ে বেলতলার পীর বাবার কাছে নিয়ে ছুটলো। মুহূর্তের মধ্যেই খবরটা ছড়িয়ে পড়তে গোটা পাড়া বেলতলায় জড়ো হলো। পিসিও পড়ি মরি করে বেলতলায় ছুটে এলেন। পীর বাবা যখন পিসিকে বলল যে, চিন্তার তেমন কিছু নেই! তখন পিসি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। তারপর দুটো বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস নিয়ে উপস্হিত পাড়ার সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, গন্ধটা বড়ো সন্দেহ জনক!

এমনিতেই পিসির সন্দেহের শুচিবাই জিনটা বেশ প্রখর! লোকে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পার্ক সার্কাসের পচা গন্ধ পায় না। কিন্তু উনি কালীঘাট থেকে কালিংপঙের চক্কান্তের গন্ধ পান। পোলার বিয়ারও পিসির কাছে শিশু। তবে হ্যাঁ, উনি কেবল 'চক্কান্ত'এর গন্ধই পান। অন্য কোনো গন্ধে পিসির অলফ্যাক্টরি লোব কাজ করেনা। পিসি গম্ভীর ( গৌতম নয় ) ভাবে বলল, তদন্ত করে দেখতে হবে এটা ম্যান-মেড দুর্ঘটনা কিনা! সঙ্গে সঙ্গে পিসির এক অপহরণ স্পেশালিস্ট সাগরেদ বলল, দিদি বলেন তো গোয়ালা মালটাকে তুলে আনি! পিসি প্রথমে খোঁজ নিলেন, গোয়ালাটা কি লাল পোশাক পরেছিল? যদি না পরে থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে দ্যাখো দুর্ঘটনার দিন ওর চৌত্রিশ গুষ্টির কেউ লাল পোশাক পরেছিল কিনা? এই কেষ্টা, যে ছোকরাটি ভাইপোকে সাইকেলে করে নিয়ে আসছিল ওর মুখটা শুঁকে দ্যাখ তো! গুড়জলের গন্ধ বার হচ্ছে কিনা? কেউ নিশ্চয়ই ওকে 'চক্কান্ত' করে কিছু খাইয়ে দিয়েছে! কিন্তু পিসির কোনো প্রেডিকশানই মিলল না!

পিসির এই পাগলামো দেখে হাসতে হাসতে পাড়ার লোকজন যে যার কাজে ফিরে গেলেও কালীপিসি কিন্তু তখনও বেলতলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এ সি পি প্রদ্যুম্নের মতন হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলতে লাগলো, কুচ তো গড়বড় হ্যায় ! চক্কান্ত ! চক্কান্ত !
পীর বাবা, পিসির দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইপোর অসুখের ঔষধ আমার কাছে আছে, কিন্তু পিসির রোগের ঔষধ আমার কাছে নেই ...

✍✍✍✍ চারমূর্তী ✍✍✍✍

                                 ✍ চারমূর্তী 
পটলডাঙার চারমূর্তী চলল মিলন মেলায় 'আহারে বাংলা' উৎসবে। 
(ট্রেনে যেতে যেতে। অ্যাক্সিডেন্টের ভয়ে প্রাইভেট গাড়ি আর ভাড়া করেনি ) 

প্যালা = খাবারের মোচ্ছব, ভাবা যায়!

হাবুল = এমন একখান আইডিয়া কেবল আমাগো দিদির মাথা থ্যাইকাই বার হতে পারে।

প্যালা = আচ্ছা টেনিদা, খানে আলুরচপ বেগুনি পিঁয়াজী ডালবড়া পাওয়া যাবে?

টেনিদা = (জানালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেগে গিয়ে ) অমন মোফিস্টোফিলিসের মতন কথা বলিস না প্যালা। আমি এতক্ষণ ভালো ভালো খাবারের কথা ভাবছিলুম আর ব্যাটা দুম করে আলুরচপ নিয়ে হাজির হলো! তোর মাথাটা সত্যিই আলু থাসাতেই ভর্তি।

( মিলন মেলাতে চারমূর্তীর প্রবেশ )

ক্যাবলা = আরিব্বাস! এতো খাবারের দোকান!

টেনিদা = গাল বন্ধ কর ক্যাবলা। মাছি ঢুকে যাবে। আয় আমার পিছনে পিছনে আয়। প্রথমে মাছ দিয়েই শুরু করা যাক! কি বলিস হাবুল?

হাবুল = তাই হোক। তবে আমি আগে একটু জলের বোতলটা ভরে নিই। খেতে খেতে যদি বিশম লাগে!

টেনিদা = হ্যাঁ এটা ঠিক বলেছিস, খাবার আগে 'জল ধর, জল ভর'।

( মাছের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে )

টেনিদা = ইলিশ ভাপা, সরষে পাবদা, ভেটকির পাতুরি, তোপসের ফ্রাই, তেলকই, চিতলের মুইঠ্যা, চিলি পমপ্লেট , দই কাতলা আর তিনটে ফিস ফিঙ্গার।

চারজনে টেবিলে বসে আছে। টেনিদার অর্ডার শুনেই প্যালার মুখ থেকে জল টপে পড়ছিল। ওয়েটার পদ গুলি দিয়ে যেতেই হাবুল ক্যাবলা আর প্যালার প্লেটে একটা করে ফিস ফিঙ্গার তুলে দিয়েই বাকি প্লেট গুলো নিজের দিকে টেনে নিলেন।

প্যালা = এটা কি হলো টেনিদা! তুমি একা এতগুলো পদ খাবে আর আমাদের কপালে মাত্র একটা ফিস ফিঙ্গার!

টেনিদা = (ভেটকির পাতুরিটা গালে দিয়ে ) কতোবার তোকে বলেছি, সবসময় 'মিনিমাম' খাবি। আমার মতন 'ম্যাক্সিমাম' খেলে হজম করতে পারবি না।

হাবুল = (প্যালাকে উদ্দেশ্য করে) টেনিদা তো ঠিক কইসে, তাছাড়া একটা আস্ত ফিস ফিঙ্গার কি কম খাওয়া! (ফিসফিস করে) চেপে যা প্যালা, নাহলে ঝাল গাঁট্টা খেতে হবে।

টেনিদা = ( সবগুলো প্লেট খালি করে ) এই রে! মাছ খাবার পর হঠাৎ খিদেটা বেড়ে গেলো মনে হচ্ছে! চল ক্যাবলা একটু মাংসের আইটেম গুলো টেস্ট করে দেখি!

ক্যাবলা = বলছিলুম কি টেনিদা, একটু চাইনিজ খেলে হতো না?

টেনিদা = না একদম নয়! উরি হামলায় আমার দেশপ্রেম জাগ্রত হবার পর থেকেই আমি সমস্ত চাইনিজ খাবার বর্জন করেছি। তোরা যদি খাস তাহলে তোরা দেশদ্রোহী হয়ে যাবি।

হাবুল = তাহলে চাইনিজ খাইয়া আর কাম নাই! চল অন্য কিছু খাই!

প্যালা = আচ্ছা টেনিদা, থাই ইটালিয়ান বা কন্টিনেন্টাল খাবর তো খাওয়া যেতেই পারে। ওটাতে তো কোনো আপত্তি নাই!

টেনিদা = ব্যাটা পিলে রুগী, গুড়জল খেলে অম্বল হয়। তাও দ্যাখো খাই খাই, বলে কি না খাবে থাই!

( মাংসের স্টলের সামনে গিয়ে )

টেনিদা = কি কি আইটেম আছে?

ওয়েটার = কোয়েল বিরিয়ানি, টার্কি গন্ধরাজ, তন্দুরি কোয়েল, রোস্টেড ডাক, এমু, পর্ক, খরগোশ। কি খাবেন বলুন?

ক্যাবলা = দাদা এটা ফুডস্টল নাকি চিড়িয়াখানা?

টেনিদা = কচি পাঁঠার ঝোল পাওয়া যাবে?

ওয়েটার = সরি স্যার! পাঁঠার আইটেমের জন্য একটা পাঁঠা আমরা রেখেছিলাম বটে কিন্তু কদিন আগেই তাকে কোর্টের নির্দেশে ছেড়ে দিতে হয়।

টেনিদা = তাহলে ঐ কোয়েল বিরিয়ানি চারপ্লেট আর একটা রোস্টেড ডাক দিয়ে দাও।

ক্যাবলা = আচ্ছা টেনিদা, কোয়েল বিরিয়ানি আর পটলডাঙার কাউয়া বিরিয়ানি কি একই!

টেনিদা = দ্যাখ ক্যাবলা, আর একবার যদি এমন অপপ্রচার করিস তাহলে তোর কান টেনে কালীঘাটে পাঠিয়ে দেব কিন্তু!

( বিরিয়ানি খেতে খেতে)

প্যালা = বিরিয়ানির স্বাদটা যেন কেমন! মনেহয় ২টাকা কেজি চাল দিয়ে বানিয়েছে।

টেনিদা = দ্যাখ প্যালা, খেতে না ভালো লাগে আমার প্লেটে দিয়ে দে। কিন্তু কুৎসা করবি না! সমস্ত রান্না পতঞ্জলীর খাঁটি আয়ুর্বেদীক মাল দিয়েই করা হয়েছে। এমনকি সরষের তেলটাও বিশুদ্ধ 'সিঙ্গুর সরষের তেল' ব্যবহার করা হয়েছে। ওরে হাবুল আমি আর উঠতে পারছি না। তুই মিস্টির স্টল থেকে গোটা কুড়ি ল্যাংচা নিয়ে আয় তো!

( হাবুল ২০টা ল্যাংচা নিয়ে এলো)

প্যালা = এর পরেও ২০টা ল্যাংচা খাবে!

টেনিদা = ( মিষ্টির প্লেটটা থেকে শেষ ল্যাংচাটা গালে পুরে আঙুল চুসতে চুসতে ) আমি একটু বেশি খাই বলে তোদের হিংসে হয়, তাই না রে!

হাবুল = আরে না না! তুমি আর এমনকি বেশি খাও! পরের বছর আবার সবাই মিলে খেতে আসা হবে। আর আমি যেহেতু এত বছর পর টেটে পাশ করেছি তাই পরের বছর সব খরচ আমার।

টেনিদা = (চিৎকার করে ) লা গ্ল্যান্ডি ... ইয়াক ইয়াক।

Friday 14 October 2016

বিজয়ার পেন্নাম

                             ✍ বিজয়ার পেন্নাম 
দশমীর দুদিন পরে হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটে একটু ভিড় হালকা হতেই সন্ধ্যাবেলায় বিজয়ার প্রণাম করতে হাজির মদনা আর মৃনাল। বৈঠকখানার ঘরে দুজনেই বসে অপেক্ষা করতে লাগল দিদিমনির। 

মৃনাল = যাক বাবা, অবশেষে জেলের বাইরে পুজো কাটালুম। ভেবিছিলুম এজম্মে বুঝি আর পুজো দেখা হবে না!

মদনা = তা যা বলেছিস ভাই! আমি তো ভেবিছিলুম এবছরের নবমীতেই বোধহয় বলি দিয়ে দেবে আমাকে!

মৃনাল = অনেকদিন পর পুজোটা চুটিয়ে এনজয় করলুম। অনেকগুলো প্যান্ডেল ঘুরে দেখলুম।

মদনা = আমি তো ভাই ভবানীপুর ছেড়ে বেরুতে পারলুম কই! তবে জেলের থেকে ঢের ভালো। তা হ্যাঁরে, শুনলুম তোর জামিন নাকি মাত্র ২লাখেই হয়ে গেছে? আমার বেলায় ৩১লাখ নিলো কেন তাহলে?

মৃনাল = তুই তো 'পোভাবশালী' তাই তোর স্পেশাল রেট। আমার রেটটা ঐ বিষ মদ, ক্লাব অনুদান, শহীদ স্মরণের মতন গড়পত্তা আরকি! তাছাড়া আমি তো শুধু টাকাই খেয়েছি। তুই তো টাকাও খেয়েছিস আবার এনজয়ও করেছিস।

মদনা = বাজে কথা বলিস না! আমি বেশি খাইনি!

মৃনাল = সে তুই বিন্দু বিন্দু করে কতটা খেয়েছিস সেটা সবাই জানে। আসলে খাওয়ার সময় তোর কোনো হুঁশ থাকেনা আর খাওয়ার পর আর উঠে দাঁড়াতে পারিস না।

মদনা = তোর কাছে কোনো প্রমাণ আছে? শুধু শুধু কেন কুৎসা করছিস আমার নামে!

মৃনাল = দ্যাখ ভাই! আর মুখ খোলাস না! খাওয়ার পর তোর কি অবস্হা হয় সেটা নারদার ভিডিওতে সবাই দেখেছে।

( এমন সময় দিদিমনি বৈঠকখানার ঘরে প্রবেশ করলেন। দুজনেই এক সঙ্গে 'দিদি গো' বলে পায়ের উপর লুটিয়ে পড়ল। দিদি দুজনের মাথায় স্বস্নেহে তার মমতাময়ী হাত দুটো রাখলেন। )

দিদিমনি = ওরে হয়েছে, হয়েছে! এবারে ওঠ!

মৃনাল = দিদি, আমি তোমার জন্য তোমার প্রিয় ল্যাংচা এনেছি।

দিদিমনি = (একটা ল্যাংচা তুলে কামড় দিয়ে ) আহা! কদ্দিন এমন ল্যাংচা খেতে পারবো কে জানে! হাবটা বোধহয় আর করা হবেনা!

মদনা = দিদি, আমি তো এখন 'অভাবশালী' তাই নতুন গুড়ের বাতাসা এনেছি।

দিদিমনি = তুই যে গুড়ের কিছু এনেছিস সেটা আমি ঘরে ঢুকেই বুঝতে পেরেছি। আর 'পোনাম' করে যখন উঠলি তখন বুঝলাম গুড়জল খেয়েও এসেছিস।
(মদনা লজ্জায় মাথা নিচু করে ব্যাপারটা চাপতে গেল অমনি একটা ঢেকুরের সাথে গোটা ঘর দিশির গন্ধে ভরে গেল।)

মদনা = (অভিমানের সুরে) তুমি আমাকে একটুও ভালোবাস না! এতদিন ধরে জেলে ফেলে রেখে দিলে! কতো কষ্ট হয়েছে আমার তুমি জানো!

মৃনাল = তুই কদিন বা জেলে কাটিয়েছিস! সারাক্ষণ তো উডবার্ণেই শুয়েই কাটিয়ে দিলি। জেলে আবার তোর জন্য মিউজিক সিস্টেম থেকে রঙীন জল, রাজকীয় আয়োজন ছিল। আমার অবস্হাটা ভাব! আমি তো ভেবিছিলুম দিদি আমাকে ভুলেই গেছ! তাই তো অভিমানে দু-চারটে কথা বলেছিলুম।

দিদিমনি = ওরে আমি তোদের সব কষ্ট বুঝি! CIB কে সামলানো কি 'চাড্ডি'খানি কথা! কতোবার এজন্য দিল্লি যেতে হয়েছে জানিস! দুটো আসন কুরবানী দিতে হয়েছে। তারপর আবার নারদের ঝামেলা। ওটাকে আগে না সামলালে আমার পুরো মন্ত্রীসভাই তো এতদিন জেলে পুজো সেলিব্রেশন করতো!

মৃনাল = দিদি, কোনো পদ খালি নেই? আমরা কি না খেতে পেয়ে মারা যাবো!

মদনা = মাইরি বলছি, তোমার দিব্যি! এবার থেকে মিনিমামই খাবো, আর ম্যাক্সিমাম নয়!

দিদিমনি = মরণ! তোর যা অবস্হা তাতে মিনিমাম খেলেও প্যানিক অ্যাটাক হবে।

মদনা = তুমি মিছিমিছি আমাদের দূরে সরিয়ে রাখছ! আজ রেড রোডে তো আমাদের দুজনের জন্য দুটো আসনের ব্যবস্থা করতে পারতে! কি সুন্দর সিঁদুর খেলা হচ্ছিলো!

দিদিমনি = সামনে বছর মহালয়া থেকেই সব প্যান্ডেল চালু করে দেব। আর ৭৫ টা ক্লাবকে ডাকবো। তার পরের বছর ২১৪টা ক্লাবকে ডাকবো। 'প্যান্ডেলশ্রী' 'পোতিমাশ্রী' পুরস্কার দেব। তখন তোদেরকে নিশ্চয়ই ডাকবো!

মৃনাল = ওরে মদনা, এবারে তো স্বভাবটা পাল্টা!

দিদিমনি = শোন দুদিন বাদেই দেবজানীরও জামিন হয়ে যাবে। আর মাসখানেকের মধ্যেই দীপ্তটার জামিন হয়ে গেলেই, আবার সবাই মিলে ডেলো ঘুরতে যাবো। (উদাস হয়ে) কতদিন হয়ে গেলো আমার একটাও পেন্টিং আর বিক্রি হয়নি....

বেরোনোর সময় দিদিকে আবার দুজনে প্রণাম করে, মদনার এক চ্যালার মোটর বাইকে চাপাচাপি করে তিনজনে বসল। কারোর মাথায় হেলমেট নেই! দিদি বলল, সাবধানে যাস! বাইক স্টার্ট নিয়ে টলমল করে এগোতেই মদনা হাত তুলে বলল, সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফ।

(এটি কাল্পনিক কথপোকথন। বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল থাকলে সেটা কাকতালীয়)

Wednesday 5 October 2016

কালো এটিএম কার্ড

                                                      কালো এটিএম কার্ড
আজ সকালে কার্তিক'দার মোবাইলে SBI থেকে ম্যাসেজ এলো,' Your SBI AC BPJ420 is credited by Rs 15,00,000'. কার্তিক'দা তো দেখে হাঁ! প্রথমে ভাবলো মনেহয় পুজোর আগে বকেয়া DA-টা বুঝি ঢুকলো! তারপর ভালো করে আবার কটা শূন্য আছে গুনলো। নাহ এতোটা DA তো বকেয়া নেই! তাহলে কি ভুল করে অন্য কারোর অ্যাকাউন্টের টাকা চলে এলো!

প্রথমে ঠিক করেছিল ব্যাঙ্কে যাবেনা। পরে মনটা খচখচ করতে লাগলো, হাজার হোক এতো গুলো টাকা! তাই একটু খোঁজখবর নিতে দুপুর ১টা নাগাদ খাওয়া দাওয়া করে মোহনের দোকান থেকে একটা পান গালে পুরে চিবাতে চিবাতে গুটি গুটি পায়ে ব্যাঙ্কের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখলেন হুলস্থূল কান্ড! প্রচুর লোক হাজির। সবারই অ্যাকাউন্টে নাকি টাকা ঢুকেছে। ব্যাপারটা কি সেটা বুঝতে ভিড় থেকে পাশ কাটিয়ে ম্যানেজারের ঘরে ঢুকলেন। ম্যানেজারের সাথে কথা বলে তো কার্তিক'দা একেবারে হাঁ হয়ে গেলো!

ম্যানেজার বলল, বিদেশ থেকে ৬৫ হাজার ২৫০ কোটি কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে। এটা তারই একটা অংশ। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মনে নেই! কার্তিক'দা বলল, হরেন'দা, হাবুলের মা, ওরাও তাহলে টাকা পেয়েছে? ম্যানেজার মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। কার্তিক'দা ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে বাইরে কাউন্টারের সামনে বাগদী পাড়ার লোকগুলো হল্লা করছে কেন? রহিম চাচাকেও দেখলুম ওদের সাথে! ম্যানেজার ফিসফিস করে বলল, 'মশাই চেপে যান! আসলে দলিত আর সংখ্যালঘুদের ১৫০০টাকা করে দেওয়া হয়েছে।'

তারপর ম্যানেজার একটা কুচকুচে কালো ATM কার্ড বার করে কার্তিক'দাকে দিয়ে বললেন, 'এটা রাখুন, এই টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করতে হলে এটা লাগবে। এটা ছাড়া টাকা তোলাও যাবেনা, খরচও করা যাবেনা!' কার্তিক'দা কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখল পিছনে একটা গরুর ছবিও আছে। কার্তিক'দা অবাক হয়ে গরুটির ছবি দেখছে দেখে ম্যানেজার বলল, 'মশাই ওটা ফোটোশপ, আসল গরু নয়!' 'আচ্ছা এটার পাসওয়ার্ড কি?' বলাতে ম্যানেজার জানালেন এটা ভয়েস কোডে খোলে। আপনার ভয়েসটা আমরা এটার মধ্যে সেট করে দেব। আপনি শুধু কার্ডটা পাঞ্চ করে তিনবার 'জয় শ্রীরাম' বলবেন। তাহলেই টাকা বেরিয়ে আসবে।

এবারে ম্যানেজার কার্তিক'দাকে বোঝাতে লাগলেন যে এই ATM কার্ডে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় এটি ব্যবহার করা যাবেনা। এই কার্ডটি ব্যবহার করে পতঞ্জলীর যেকোনো প্রোডাক্ট কিনলে আপনি ফ্ল্যাট ৫০% ছাড় পেতে পারেন। এই কার্ডটি ব্যবহার করে কোনো চায়নিজ প্রোডাক্ট কেনা যাবেনা। পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী মিউজিক অ্যালবামও কিনতে পারবেন না। এটিকে যেকোনো পোশাকের দোকানে ব্যবহার করতে পারেন। ৬-৬০ যেকোনো বয়সের ছেলেদের হাফ প্যান্টে আপটু ৫৬% পর্যন্ত ডিসকাউন্ড। তবে মেয়েদের স্বল্প কাপড়ের পোশাক এটাতে কেনা যাবে না। আপনি দশ সন্তান পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ও হাসপাতালের সমস্ত খরচের উপরেও ছাড় পেতে পারেন এই কার্ড ব্যবহার করে। তবে কন্যা সন্তানের জন্ম হলে কিন্তু ছাড় পাবেন না! এই কার্ডটি আপিন ব্যবহার করে যেকোনো রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। কার্তিক'দা জিজ্ঞেস করল ' মোক্যাম্বোতেও?' হ্যাঁ যেকোনো, তবে কোনো বিফ বা পর্ক আইটেম খাওয়া যাবেনা। আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ যদি কোনো যোগা অনুশীলন কেন্দ্রের সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে তার মাসিক পেমেন্টটাও এই কার্ডের মাধ্যমে করতে পারেন।

তবে কার্ডটিকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মানে স্বচ্ছ রাখবেন আর রিনিউ করার জন্য ব্যাঙ্কে আসার দরকার নেই! কাছাকাছি কোনো মন্দিরের পুরোহিতের কাছে শনি মঙ্গলবারের রিনিউ করালেই হবে। আর প্রতিবার কিছু কেনাকাটা করলে সেই দোকানের মালিকের সাথে এই কার্ডটি হাতে নিয়ে কিন্তু অবশ্যই একটা সেলফি তুলে রাখবেন।

Tuesday 4 October 2016

দেবীর আগমন

                                      দেবীর আগমন
দেবী আগে থেকেই হোয়াটস অ্যাপে খবরটা পেয়ে গিয়েছিল যে এবারে পুজোর ছুটি পঞ্চমী থেকেই, তাই আগে থেকেই প্যাকিং শুরু করে দিয়েছিল। কার্তিকের কলেজ এমনিতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ আর গণেশের স্কুল তো ডেঙ্গুর জন্য একমাস ধরে ছুটি। সরস্বতী খুব খুশী, এবারে টেট পরীক্ষায় পাশ করেছে। তবে দেবীর একটাই আফসোস, নেশা খোর বাপটা যদি টাকা পয়সা গুলো চিটফান্ডের পিছনে না ওড়াতো তাহলে হয়তো কিছু টাকা অনুদান দিয়ে মেয়ের চাকরির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যেত। তবে লক্ষ্মীর মনটা খারাপ! আই ফোন সেভেন কিনবে ঠিক করে রেখেছিল। তখন কি জানতো যে শিল্প চাষ দুটোরই ! ওর আসার একদম ইচ্ছে নেই!
পোলাপান নিয়ে দেবী পাহাড়ে ল্যান্ড করতেই বুঝতে পারলেন আবহাওয়া ভালো নয়! আকাশ গুরুং গুরুং করছে। মনে মনে নারদকে দুটো কাঁচা খিস্তি দিয়ে বললেন, 'হতচ্ছাড়াটা বলল কোনো সমস্যা হবেনা! পাহাড় জঙ্গল সবই এখন দাঁত ক্যেলিয়ে হাসছে। চারিদিকে কেবল উন্নয়নের জোয়ার! ব্যাটা ঢপবাজ। এখন বুঝলাম ব্যাটা ভুঁইয়ার সাথে কেন এতো ফেসবুকে চ্যাট করতো!" বাধ্য হয়েই একরাত ডেলোতে কাটিয়ে পরেরদিন রওনা হবেন স্থির করলেন।
সকালে উঠে আবার আরেক ঝামেলা! লক্ষ্মী আর সরস্বতী দুই বোনে ঝগড়া লেগে গেছে। লক্ষ্মী বলছে BMW তে যাব, আর সরস্বতীর বায়না VOLVO। দুর্গা যখন দুই বোনের ঝগড়া সামলাতে ব্যস্ত, তখন কার্তিক তার রয়্যাল এনফিন্ড স্টাট দিয়ে গণশাকে পিছনে নিয়ে বলল, ' তোমাদের ঝগড়া শেষ হলে তোমরা এসো! আমরা এগোলাম"। অনেক কষ্টে দুই বোনকে বুঝিয়ে শেষে OLA বুক করে দেবী রওনা দিলেন। মাঝ পথে হঠাৎ কার্তিকের ফোন, " মা, বাইকের তেল শেষ! পাম্পের লোক বলছে হেলমেট না থাকলে তেল মিলবে না! আমি আমাজনে একটা হেলমেট বুক করেছি। ওটা আসলেই তেল ভরে বেরিয়ে পড়বো। দেরি হলে চিন্তা করো না!"
দূর্গা কোলকাতা পৌঁছে জানলো যে তার আসতে দেরী হচ্ছে দেখে দিদি প্যান্ডেল উদ্বোধন করা শুরু করে দিয়েছে। দূর্গা রেগে গিয়ে তখন নবান্নে ফোন লাগালেন, 'কি ব্যাপার কি! আমি আসার আগেই উদ্বোধন হয়ে গেলো!" ওপার থেকে উত্তর এলো,'আমাকে এবছর ২১৪টা (২১১+বোনাস ৩) প্যান্ডেল উদ্বোধন করতে হবে। তাছাড়া আমরা কোনো কাজ ফেলে রাখা মোটেই পছন্দ করিনা। আমরা সবসময় রেডি থাকি রে"! দেবী মনে মনে ভাবলো, স্বর্গ থেকে মর্তে আসতে আমার কি তাহলে ৩০০বছর লেগে গেলো! তারপর দেবী বলল,'আমার পুজো, আমারই পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন হলো না! এটা কিন্তু অন্যায়।" ওপার থেকে উত্তর, 'কুৎসা করবেন না! রাজ্যে গণতন্ত্র আছে! আইন আছে! আইন আইনের পথে চলে! ৩৪ বছর আপনি আপনার ইচ্ছে মতন চলেছেন, আর নয়! ভুলে যাবেন না আমিও শীঘ্রই সেন্ট উপাধি পেতে চলেছি!"
হতাশ হয়ে এবারে দুর্গা বলল,' কোন অসুরটাকে মারবো সেটা তুমিই তাহলে ঠিক করো! একটা যদিও বা জেলে বন্দি ছিল সেটাকেও জামিন করিয়ে দিলে! আরেকটার তো এমনিতেই অক্সিজেন কম যায়! ও ব্যাটা তো লড়তেও পারবে না! আবার নতুন নিয়ম করেছ, সিন্ডিকেট থেকে যে অসুর নিয়ে কাজ চালিয়ে তাতেও হাজার ঝামেলা! কোন মালটা মিনিমাম আর কোনটা ম্যাক্সিমাম সেটা বুঝতেই তো বছর ঘুরে যাবে!' ওপার থেকে, " আপনাকে বেশি চাপ নিতে হবেনা! আমি অধিকারীকে বলে দিয়েছি, ও অটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে অসুর অপহরণ করতে। পেলেই ফোন করবে।"

Thursday 22 September 2016

জমি আন্দোলনের নবজাগরণ

                              জমি আন্দোলনের নবজাগরণ
কালীপিসি সিঙ্গুরের ৪০০০ বর্গ ফুট চিতা থেকে ঘোষণা করলেন " কথা দিয়েছি, কথা রেখেছি"। অমনি 'হর্ষধ্বনি'তে ফেটে পড়েছিল কার্শিয়াং থেকে কালীঘাট। ৯৯৭ একরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্হিত ছিলেন বেশ কিছু লুপ্তপ্রায় প্রাণী। এরা যে বেঁচে আছে সেটা এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান নাহলে রাজ্যবাসী জানতেও পারতো না! জ্বলন্ত চিতায় দাঁড়িয়ে হুমকির সুরে শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করলেন, সাত দিন সময় দিলাম, এর মধ্যে জমি নিতে হয় নিন। আজ সাতদিন অতিক্রান্ত। কোনো শিল্পপতি ওনার হুঙ্কারের 'সনমান' জানিয়ে সাড়া দিয়েছে বলে কোনো খবর নেই। ওনার অপহরণ মন্ত্রীও জার্মানী থেকে BMW এর কর্মকর্তাদের অপহরণ করতে ব্যর্থ।

তবে উনি জমি আন্দোলনের নবজাগরণ ঘটিয়ে অনিচ্ছুক(!) কৃষকদের জমি ফেরত দিয়ে বাংলায় আবার 'সবুজ বিপ্লব' ঘটানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, তা কিন্তু আজ অন্য মাত্রা নিয়েছে। ওনার জমি আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় আজ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকেরা তাদের অধিগৃহিত জমি ফেরত পাবার স্বপ্ন নতুন করে দেখছে। তারা আজ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, সিঙ্গুরের কৃষক যদি টাকা নিয়েও জমি ফেরত পায় তাহলে আমরা পাবোনা কেন! শুভ কাজে মিষ্টি মুখ করতে হয়, তাই ল্যাংচা হাবের জমি দিয়েই এই কর্মসূচীর শুভ সূচনা হয়।

ক্রমে ডেঙ্গুর থেকেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই জমি ফেরত পাওয়ার আন্দোলন। পুরুলিয়ায় রঘুনাথপুর ১ ব্লকের দুরমুট মৌজায় শিল্পতালুকের জন্য অধিগৃহিত ১,৮৯৭ একর জমি এবারে ফেরত চাইছেন কৃষকেরা। আন্দোলনের জোয়ার শিলিগুড়িতে পৌঁছে গেছে, দু এক সপ্তাহের মধ্যেই পাহাড়ে পৌঁছে যাবে মনেহয়। আন্দোলন যে কেবল পাহাড়মুখী, তা কিন্তু নয়! কোলকাতামুখীও বটে। নিউটাউন রাজারহাটের কৃষকেরাও এই জমি আন্দোলনের কর্মযঞ্জে ইতিমধ্যেই সামিল হয়েছেন।

এরপর যদি এই ঐতিহাসিক আন্দোলন যদি সিলেবাসে ঢোকে তাহলে তো আর কথাই নেই! একেবারে খাপে খাপ, মান্নার বাপ! ইডেনের বাইশ গজও একদা উর্বর দোফসলা জমি ছিলো। তাই ক্লাব হাউসের নিচেই মঞ্চ বেঁধে অনশনের টেস্ট ম্যাচ শুরু হয়ে যাবে।
এরপর রাজ্যের যেখানে যত অধিগৃহিত সরকারি জমি আছে, সেখানে সেখানেই জমিদাতারা বিক্ষোভ করবেন জমি ফেরতের জন্য। কারণ আপনিই ওদের এইভাবে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে শিখিয়েছেন। তাই এই সমস্যার মুখোমুখি আপনাকে প্রতিনিয়ত হতেই হবে, তা আপনি 'ইচ্ছুক' হন বা 'অনিচ্ছুক'! অবশ্য এতো কিছুর পরেও আপনি স্বভাবসিদ্ধ ডোন্ট-কেয়ার অ্যাটিচিউডে, এসব 'ছোট্টো' সমস্যায় 'আমারা সবসময় রেডি থাকি রে' বলতেই পারেন!

কোনদিন সকালে কিছু কৃষককে যদি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে, তাদের খাল পাড়ের জমি ফেরত পাওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখেন তাহলে আশ্চর্য হবেন না! পিসি কি তখন ঐ অধিগৃহিত জমি ফেরত দেবে! নাকি পিসি কোনো 'অলৌকিক' শক্তিবলে অধিকৃত 'অবৈধ' জমিটিকে বৈধ্য করে নেবেন! আসলে দেবীরা (ঠাকুর) সবই পারেন .....

Monday 19 September 2016

বোতলের দৈত্য

                                     বোতলের দৈত্য 

নিমাই'দার বাংলার দোকান থেকে কেষ্ট'দা প্রতিদিনের মতন আজও একটা বাংলার বোতল কিনে বাড়ি ফিরল। আজ কেষ্ট'দার কি হলো, কে জানে! মাত্র একটা বোতলেই ফুল আউট! নেশার ঘোরে খালি বোতলটার গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে কি সব বলছিল যেন। হঠাৎ বোতলের মধ্যে থেকে ধোঁয়া বার হতে লাগল। তারপর সেই ধোঁয়ার ভিতর থেকে একটা দৈত্য বেরিয়ে এসে বলল " হুকুম করো আকা, আমি আপনার অনুগত দাস।" কেষ্ট'দা তো দেখে হ্যাঁ হয়ে গেলো!

পরবর্তী কথোপকথন .....

কেষ্টদা = তুমি কে বাওয়া???

দৈত্য = আমি বোতলের দৈত্য। আপনার অনুগত দাস।

কেষ্টদা = যাহঃ কেলো! এতদিন জানতুম প্রদীপ ঘসলে দৈত্য বার হয়। এখন দেখছি বোতল ঘসলেও দৈত্য আসে!

দৈত্য = এটা পরিবর্তনের যুগ। এখন সবই সম্ভব।

কেষ্টদা = তোর মুখটা কতোকটা মদনার মতন লাগছে! আচ্ছা আমি যা বলবো তুই সব শুনবি? কই দেখি আমার জন্য একটা বাংলার বোতল নিয়ে আয় দেখি!

দৈত্য = (পকেট থেকে একটা একটা বাংলার বোতল বার করে কেষ্টদার হাতে দিয়ে) চাট কিছু লাগবে স্যার!

কেষ্টদা = ছোলা ভাজা আর কাঁচালঙ্কা হলেই চলবে। অনেকদিনের ইচ্ছা বারে বসে গান শুনে শুনে মাল খাবো। জুট মিলটা লক আউট হওয়ার পর থেকেই হাতে আর একটিও পয়সা নেই! সখটা আর এ জন্মে পূরণ হলো না!

দৈত্য = আপনি চাইলেই এখুনি গানের ব্যবস্থা করে দিতে পারি!

( সঙ্গে সঙ্গে মিউজিক সিস্টেম হাজির। ভোজপুরী গান চলতে লাগল। কেষ্টদা বোতলটা খুলে পেগ বানাতে যাবে এমন সময় দৈত্য কেষ্টদার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে নিলো)

দৈত্য = স্যার আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমিই পেগ বানাচ্ছি।

কেষ্টদা = (দৈত্যের পেগ বানানো দেখে) ভাই তুমি এত 'বিন্দু বিন্দু করে' মেপে মেপে পেগ বানাচ্ছো কেন?

দৈত্য = আমি সবাইকে বিন্দু বিন্দু করেই সিন্ধু দর্শন করাই স্যার। একটা অনুরোধ ছিল স্যার! আসলে আমার সামনে কেউ বাংলা খেলে আমার গলাটা কেমন শুকিয়ে যায়। তাই যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার সাথে আমিইও পেগ দুই মারি!

কেষ্টদা = এতে আবার পারমিশনের কি আছে! মদ সবসময় মিলে মিশে ভাগ করে খেতে হয়। এতে একটা 'উৎসবের' পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

(পেগ দুই খাবার পর আরও নেশা চড়ে গেলো কেষ্টদার)

কেষ্টদা = আমার দাদার সিন্ডিকেটের ব্যবসা, প্রচুর পয়সা। কিন্তু শালা লোকের কাছে কেঁদে বেড়ায়, বাপের '৩৪' লাখ দেনা শোধ করতেই নাকি ওর সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে!

দৈত্য = ( আক্ষেপের সুরে ) আমার দিদিও আমাকে আর দেখেনা। ২২মাস টানা বোতল বন্দি ছিলাম। একদিনও দেখা করতে আসেনি! সে যাই হোক আপনি চাইলে আপনারও একটা অফিস করে দিতে পারি মিডল্যান্ড পার্কে!

কেষ্টদা = জুট মিলের কাজটা যেদিন চলে গেলো, সেই সন্ধ্যায় বৌ তল্পিতল্পা বেঁধে মেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়ি গিয়ে উঠলো। তিন মাসে একটাও ফোন করলো না! পাশের বাড়ির চম্পা বৌদি আগে আমাকে দেখে কি ঢলানি মারতো! বৌকে লুকিয়ে কতো গিফ্ট কিনে দিয়েছি। যেদিন শুনলো আমার কাজটা নেই, একবারও আমার দিকে ফিরেও চাইলো না! ( হঠাৎ দৈত্যের চোখ ছলছল করে উঠলো ) কি হলো তুমি কাঁদছো কেন?

দৈত্য = না ও কিছু নয়! পিয়ালীর কথা মনে পড়ল।

কেষ্টদা = ওপাড়ার হারুদা, ছেলের বিয়ে দিলো ধুমধাম করে। কতো লোক খেলো! আমার ছেলেটার মেয়েটার যদি অমন যাঁকজমক করে বিয়ে দিতে পারতুম! শালা কন্যাশ্রীর টাকার পুরোটাই মেরে দিলো পঞ্চায়েত প্রধান!

দৈত্য = যদিও আমি এখন আর আগের মতন প্রভাবশালী নেই নেই! এখন একটু অভাবশালী তবুও চিন্তা করবেন না স্যার! আপনার মেয়ের বিয়েতে ২৫০০টাকার প্লেট হবে। (পকেট থেকে দুটো কাগজ বার করে ) এই নিন আপনার মেয়ের বিয়ের মেনুকার্ড আর ডেলোর বাংলোতে হানিমুনের টিকিট।

কেষ্টদা = মেয়ের বিয়ের জন্য যখন এতকিছু করলেন, তখন একটা ভালো সরকারি চাকুরে ওয়ালা ছেলে খুঁজে দিন না! রাজ্য সরকার নয়! কেন্দ্রীয় সরকার। DAএর জন্য সংসারে অশান্তি হোক আমি চাইনা। ঐ কেন্দ্রীয় সরকারের যেকোনো ডিপার্টমেন্ট হলেই হবে। আর সিবিআই হলে তো কোনো কথাই নেই! সোনার টুকরো জামাই হবে।

সিবিআই এর নাম শুনে দৈত্যের প্যানিক অ্যাটাক হলো। দৈত্য ধোঁয়া হয়ে আবার বোতলে ঢুকে গেলো।

বাবা বিশ্বকর্মার বঙ্গে পদার্পণ

                               বাবা বিশ্বকর্মার বঙ্গে পদার্পণ
স্বর্গ থেকে ফ্লাইটটা যখন দমদমে ল্যান্ড করলো তখন এয়ারপোর্ট সাংবাদিকে পুরো ঠাসা। বিতনু আবাপে লাইভ কমেন্ট্রি করছে " এই মাত্র স্বর্গের ফ্লাইট ল্যান্ড করল, হ্যাঁ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এক হাতে ঘুড়ি আর অন্য হাতে লাটাই নিয়ে নেমে আসছেন স্বয়ং বাবা বিশ্বকর্মা। হ্যাঁ সুমন, উনি এবারে নবান্নের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। হ্যাঁ উনি নবান্ন থেকে পাঠানো BMW তে উঠলেন।" নবান্ন আজ বিশ্বকর্মার আগমনে সেজে উঠেছে। সেখানেও সাংবাদিকদের উফছে পড়া ভিড়। নবান্নের অফিসিয়াল রির্পোটার নিরাশাবুল সেখান থেকে লাইভ কমেন্ট্রি দিচ্ছে " হ্যাঁ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বিশ্বকর্মাকে, আমাদের মাননীয়া অভ্যর্থনা করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থাই করে রেখেছেন। হ্যাঁ সুমন, এই মাত্র বিশ্বকর্মা নামলেন। চারিদিকে পুষ্প বৃষ্টি হচ্ছে। লাউড স্পিকারে বাজছে, যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে লাটাই তো আমার হাতে। মনেহয় এবারে সত্যিই রাজ্যে শিল্পের জোয়ার আসতে চলেছে। হ্যাঁ সুমন, উনি লিফ্টে উঠলেন ১৩ তলার উদ্দেশ্যে"।

বিশ্বকর্মা মাননীয়ার অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুড়ি ওড়াতে। প্রথমেই কোলকাতার কাছেই সল্টলেকে গেলেন। ঘুড়ি লাটাই নিয়ে গাড়ি থেকে বার হতেই সদ্য ছাড়া পাওয়া কাউন্সিলর হাজির। হুমকির সুরে বললেন " শুধু ঘুড়িই ওড়াবেন! আগে কিছু হাজারের পাত্তি ওড়ান!" বিশ্বকর্মা অবাক হয়ে বললেন "তুমি কে বাবা!" কাউন্সিলর তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিকে তাকিয়ে বললে " এ কে শান্তি গোপাল! ঘাটের মড়াটা আমার রেপুটেশান সম্পর্কে কিছুই জানেনা দেখছি!" তখন এক চ্যালা বলল " দাদার ফিক্স রেট, লোকালদের মিনিমাম আর ফরেনারদের ম্যাক্সিমাম। আপনি কোথাকার মাল?" বিশ্বকর্মা ঘুড়ি লাটাই গুড়িয়ে নিয়ে বলল " আমি দুটোর কোনোটিও নই।"

এরপর বিশ্বকর্মা নিউটাউনে গেলো। সেখানে ঘুড়ি বার করতেই ভজাই এসে বলল "ঘুড়ি যদি ওড়াতেই হয় তাহলে আমাদের সিন্ডিকেট থেকে ঘুড়ি কিনে ওড়াতে হবে। এটাই দাদার নির্দেশ।" বিশ্বকর্মা এবারে ঠিক করলেন গঙ্গার ধারে ঘুড়ি ওড়াবেন তাই তিনি বন্দর এলাকায় গেলেন। সেখানেও সমস্যা! লোকাল এক মন্ত্রীকে অনুরোধ করতে তিনি বললেন "আমি এসব ছোটো ব্যাপারে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করিনা।" কোথাও ঘুড়ি ওড়াতে না পেরে বাধ্য হয়ে বিশ্বকর্মা মাননীয়াকে সব কিছু ওয়াটস অ্যাপ করে জানালেন। মাননীয়ার রিপ্লাই দিলেন " আপিন জেলায় জেলায় ঘুরে চেষ্টা করুন। আমাদের ল্যান্ড ব্যাঙ্কের জমিতেও চেষ্টা করতে পারেন।" বিশ্বকর্মা মাননীয়ার নির্দেশে জেলা সফরে বেরিয়ে পড়লেন।

বীরভূমে গিয়ে শান্তিনিকেতনে শান্তিতে একটু ঘুড়ি ওড়াবেন ভাবলেন কিন্তু তা আর হলো কই! বীরভূমের বাতাসে তো অক্সিজন কম! বিশ্বকর্মার ঘুড়ি আবার কম অক্সিজেনে ওড়ে না। পুরুলিয়া বাকুড়ায় আবার মাওবাদী ফতেয়া। ঘুড়িতে AK47 এর ছবি থাকতে হবে। মালদার কালিয়াচকে তো ঘুড়ি টেস্ট করে দেখতে হবে ঘুড়িটা হিন্দু না মুসলিম! তারপর ওড়ানোর সিদ্ধান্ত। দার্জিলিং এর আকাশ তো হঠাৎ হঠাৎ গুরুং গুরুং করে। তাই ওখানেও ঘুড়ি ওড়ানো যাবেনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাঠে তো প্রচুর কেউটের উপদ্রব। তাও উনি চেষ্টা করলেন কিন্তু কোথা থেকে একটা এঁড়ে (বুল) এসে এমন গুঁতো মারল যে ঘুড়ি লাটাই সব লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। মুর্শিদাবাদে তো লাটাই এর মাঞ্জা দেওয়া সুতোর জন্য মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেলো! বলে কিনা এই ধারালো সুতো আসলে মানুষ খুন করার চক্রান্ত! শেষে মেদনীপুরে গিয়ে যদিও বা ঘুড়ি উড়ল, মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঘুড়িটা কে অপহরণ করে নিলো!

অবশেষে কোথাও ঘুড়ি ওড়াতে না পেরে বিশ্বকর্মা হতাশ হয়ে নবান্নে ফিরলে মাননীয়া হাসি মুখে বললেন "ঘুড়ি ওড়াতে গেলে জায়গা নিজেকই খুঁজে নিতে হবে। প্রয়োজনে জমির মালিকদের আদর করে বলুন, দাদা একটু ঘুড়ি ওড়াবো! আপনি খামোখা এতো ছোটাছুটি করলেন। সিঙ্গুরে গেলেই তো পারতেন! ওখানে প্রচুর জমি পড়ে আছে!" বিশ্বকর্মা হেসে বললেন " ওটা তো অবৈধ।"

উৎ'শব'-এর বার্তা

                                    উৎ'শব'-এর বার্তা 
আজ এই মহান প্রাগ-ঐতিহাসিক দিনে সমস্ত সিঙ্গুরবাসীকে জানাই শুভেচ্ছা অভিনন্দন পোনাম আদাব সেলাম। (গোটা স্টেজ জুড়ে লুকোচুরি খেলতে খেলতে) আমাদের মধ্যে আজ উপস্হিত রয়েছেন প্রতুল'দা থেকে শুরু করে, যোগেন'দা থেকে শুরু করে, শুভা'দা থেকে শুরু করে....(৩০টা 'দা' ২০টা 'দি')....তাপসীর পরিবার সহ আমার গরমেন্টের সমস্ত অফিসার। শুধু মদনা একাই আজ আসতে পারেনি। 

জমি হলো কৃষকের আশ্রয়, সেটা সিপিএম কেড়ে নিয়েছিল। ঠিক যেমন ইডি শুভাদার ফ্ল্যাট কেড়ে নিয়েছিল। জমি কেড়ে নিয়েই ওরা কৃষকদের অভাবশালী করে দিয়েছিল। ঠিক যেমন মদনাকে সিবিআই করছে। আজ আমি জমি ফেরত দিয়ে আমার কথা রেখেছি। তবে অনেক অনিচ্ছুক এখন আমার অনুপ্রেরণায় এই জমিতে উন্নয়নের জোয়ার আনতে চাইছেন। তাই টাটা বিএমডাবলিউ এর কম্মোকত্তাদের বলছি, আপনারা চাইলে এখানে এখন শিল্পো করতে পারেন। তবে একটাই শত্ত, আমাকে নিয়মিত তোলা দিতে হবে। দেশীয় শিল্পোপতি হলে মিনিমাম আর ফরেন হলে ম্যাক্সিমাম।

আমি আমার জীবন বাজি রেখে এই আন্দোলন করেছিলাম। এই এক্সপ্রেসওয়েকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলাম। ওরা তো মাত্র ধম্মোঘটের একদিন বন্ধ করেছিল। আমি আজও ভুলিনি, সেদিন আমাকে বিডিও অফিস থেকে পিটিয়ে বার করে দেওয়া হয়। তাই এখন আমি সুযোগ পেলেই চাবকাই। সেদিনে ওরা মেরে আমার রক্তক্ষরণ করেছিল। নিম্মল কই! নিম্মল! ওর দেওয়া ডায়ালিসের রিপোর্টটা আমি এখনও রেখে দিয়েছি। ভাবতে পারেন, ২৬দিন কেবল চকলেট খেয়ে কাটিয়ে ছিলাম! মনে রাখবেন, সিঙ্গুর নাহলে নন্দীগ্রাম হতো না! নন্দীগ্রাম নাহলে নেতাই হতো না! ঠিক যেমন সারদা নাহলে ডেলো হতো না! আর ডেলো নাহলে নেতা মন্ত্রীদের জেলও হতো না।

এই এই চ্যাঁচামেচি নয়! অ্যাম্বুলেন্সটাকে আস্তে আস্তে বার করে দাও। ডানদিকে যাও, ডানদিকে যাও, বামে একদম নয়! সাইরেন বন্ধ করো! আমি বক্তৃতা দিচ্ছি দেখতে পাচ্ছো না! এই দ্যাখো তো রুগী আছে নাকি! সিপিএম আবার চক্কান্ত করে এটাকে ঢুকিয়ে দেয়নি তো!

হ্যাঁ যেটা বলছিলুম, রাজ্যে ৬লক্ষ কম্মো সংস্থান হয়েছে। তেলেভাজা, মুড়ি, ল্যাংচা শিল্পে রাজ্য প্রথম সারিতে। তোলাবাজী ও সিন্ডিকেটেও জোর কদমে নিয়োগ চলছে। কাজে আরও গতি আনতে কাউন্সিলরকে আবার সল্টলেকে পোস্টিং করা হয়েছে। আজ টেটের রায় বেরিয়েছে। পাত্তো পাত্তো কোথায় গেলো! ওকে একটা মাইক্রোফোন দাও! হ্যাঁ দিদি আমরা অনলাইনে রেজাল্ট ছেড়ে দিয়েছি। একেই বলে এগিয়ে বাংলা, সিপিএম তুই ঠ্যালা সামলা। আমরা সবকিছু রেডি করে রাখি রে। প্রশিক্ষিতরা আগে সুযোগ পেলেও যারা আমাদের অনুদান দিয়েছেন তারা চিন্তা করবেন না। আপনারাও পাবেন। এবারে ইন্দোনীল একটা গানের পরিবেশ সৃষ্টি করো। আমরা সবাই গলা মেলাবো।

সামনে বিশ্বকম্মা পুজো, তারপর দুগ্গা পুজো, মনে আছে তো এক্সটা ছুটির কথা! তারপর লক্ষ্মী কালী কার্তিক জিশু সরস্বতী, একটার পর একটা উৎসব। সবাইকে আনন্দের সাথে পালন করতে হবে। আর এবার থেকে প্রতি বছর ২৫শে সেপ্টেম্বর আমরা পালন করবো "সিঙ্গুর উৎশব"।

(বাস্তবের সাথে এই রচনার মিল থাকলে সেটা কাকতালীয়)

Tuesday 13 September 2016

কালীপিসি এখন "ওয়ার্ল্ড ট্যুরে"

                              কালীপিসি এখন "ওয়ার্ল্ড ট্যুরে"
নরেন মুদির দোকানে গেলে মুদি কালীপিসিকে প্রায়ই দেশ বিদেশের নানান গল্প শোনায়, সেলফি দেখায়। পিসি অভিমানের সুরে বলে "আমার তো তোমার মতন কালোধন নেই, যাকে সম্বল করে দেশে দেশে ঘুরে সেলফি তুলে বেড়াবো!" এমনিতে পিসি বাংলা ছেড়ে কোথাও খুব একটা যাননা। মাঝেমধ্যে একটু টেনশনে থাকলে পুরী গিয়ে পুজো দিয়ে, সোনারতরীতে দুদিন কাটিয়ে আসেন। বহুকাল আগে একবার সিঙ্গাপুর আর বছর খানেক আগে লন্ডন ঘুরে এসেছিল বটে। আর বাংলাদেশ তো একরকম নিজের বাংলার মতন। ওটাকে পিসি 'ফরেন' তালিকায় রাখেন না। তাই এবারে ট্রাভেল এজেন্সিকে দিয়ে দুবাই, রোম আর জার্মানীর প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করেছেন।
পিসি দুবাইয়ে নেমেই সটান বুর্জ-আল-খলিফার মাথায় উঠে গেলেন। বলে কিনা ওখান থেকে ধর্মঘট মনিটরিং করতে সুবিধা হবে। সারাদিন বুর্জের মাথায় বসে থেকে সন্ধ্যাবেলায় যখন বললেন 'ধর্মঘট পুরোপুরি ব্যর্থ' তখন দুবাইয়ের মরুভূমির উঠ গুলোও দাঁত বার করে হাসছিলো। তারাও বুঝতে পেরেছে পিসি বুর্জ থেকে নেমে বুজরুকি দিচ্ছেন।
পরেরদিন রোমে গিয়ে সন্ধ্যাবেলায় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ত্রিফলার আলো দেখে পিসির স্নেহের ভাই কানন, পিসিকে বলল "এরাও দেখছি আমাদের মতন ত্রিফলা লাগিয়েছে!" পিসি হাসি মুখে বললেন " বাংলা আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এটাই তো বিশ্ব বাংলা! এগিয়ে বাংলা!" পাশে থাকা (আ)বাপের ব্যাটা, নিরাশাবুল বলল " দিদি, ত্রিফলার গায়ে তো কই নীল-সাদা সাপ নেই!" দিদি বলল "রোমের আর্থিক অবস্হা বাংলার থেকেও খারাপ। তাই আর খরচা বাড়ায়নি।" নিরাশাবুল কৌতূহল বশে জিজ্ঞাসা করিল "সিপিএম কি রোমেও ৩৪বছরের বেশি ক্ষমতায় ছিল?"
রাতে পিসি হঠাৎ বায়না জুড়ে দেয়,'মাদার' মানেই 'মা' আর তিনি তো 'মামাটিমানুষের' প্রতিষ্ঠাতা, তাই তাকেও মাদারের 'সন্ত উপাধি প্রদান' অনুষ্ঠানে দু-চার কথা বলতে দিতেই হবে। সেই মত বাসুকে দিয়ে পোপের কাছে আবেদনও করেন। কিন্তু পিসি যদি বলতে উঠে আবার স্লোগান দেওয়া শুরু করে! তাই চার্চ রিক্স নেয়নি। আর তাতেই পিসি চটে গেছেন। চেঁচিয়ে বলে, "আমি ২১৩ (বোনাস ২ সহ), আমাকে বলতে দেবেনা!" পিসি তো পোতিবাদে ভাটিকানের রাস্তায় একটা মঞ্চ বেঁধে অনশন শুরু করবেন ঠিক করেছিলেন। অবশেষে সবাই অনেক বোঝানোয় পিসি শান্ত হন। শেষে পিসি সবাইকে নিয়ে রোমের গলিতে গলিতে এর পোতিবাদে পোতিবাদী-গান করে বেড়ালেন - "আজ মাদার হবে সন্ত, ভাটিকানেও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র!"
জার্মানীতে নামতেই এয়ারপোর্টে কালীপিসিকে সন্দেহবশত কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে নিরাশাবুল তার মিডিয়া নেটওয়ার্ক থেকে জানতে পারেন যে ওরা নাকি নাৎসি বাহিনীর সাথে পিসির কি একটা লিঙ্ক খুঁজে পেয়েছিলেন। পিসি অবাক হয়ে বলে, " আমি সবাইকে চমকাই আর এরা কিনা আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসায়! এতো বড়ো সাহস! আগে জানলে অধিকারীকে নিয়ে আসতুম।"
গতবার সিঙ্গাপুরে থেকে ফিরে বায়না করেছিল ধর্মতলায় একটা বড়ো সিংহ-মূর্তির ফোয়ারা বসাবে, তার গাল থেকে নীল-সাদা জল বের হবে। অতি কষ্টে সেবারে বোঝানো গিয়েছিল পিসিকে, একেই বর্ষার জলে কোলকাতা জলকাতাতে পরিনত হয় ওটা বসালে সমস্যা আরও বাড়বে। আর এবারে মিউনিখে গিয়ে বায়না জুড়েছে, সিঙ্গুরের জমিতে BMWএর কারখানা করবে। তিন ঘন্টা রিসেপশানে বসে থাকার পর যখন BMW এর কর্মকর্তারা পিসিকে ডেকে জমি সমস্যার কথা বললেন, তখন তো পিসি রেগে আগুন তেলে বেগুন হয়ে বললেন, "ডোন্ট আন্ডার এস্টিমেট দ্যা পাওয়ার অফ 'অনিচ্ছুক কৃষক'। তারা টাটার মতন ভিখারী কম্পানি আর ন্যানোর মতন ছোট গাড়ির জন্য জমি দেয়না। কিন্তু বিএমডাবলিউ এর জন্য অবশ্যই জমি দেবে।"

পাগলা দাশু

                                      পাগলা দাশু 
রামপদ ধর্মঘটের দিন একহাঁড়ি বর্ধমানের মিহিদানা লইয়া স্কুলে আসিল। আমরা সকলেই মহা উৎসাহে সেগুলি ভাগ করিয়া খাইলাম। খাইল না কেবল দাশু। পাগলা দাশু যে মিহিদানা খাইতে ভালোবাসে না, তা নয়। কিন্তু রামপদকে সে একেবারেই পছন্দ করিত না,দুজনের মধ্যে প্রায়ই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলিত। আমরা রামপদকে বলিলাম, "দাশুকে কিছু দে।" রামপদ বলিল, "কি রে দাশু, খাবি নাকি ? দেখিস্‌, খাবার লোভ থাকে তো বল্‌ পরে আবার আমার নামে কুৎসা রটাস না!" এমন করিয়া বলিলে তো রাগ হইবারই কথা, কিন্তু দাশু কিছু না বলিয়া গম্ভীরভাবে হাত পাতিয়া মিহিদানা লইল, তারপর দারোয়ানের ছাগলটাকে ডাকিয়া সকলের সামনে তাহাকে সেই মিহিদানা খাওয়াইতে খাওয়াইতে বলিল, "নাতি বর্ধমানের মিহিদানা এনেছে, ভালো করে খাও। হাবের জমিও চলে যাচ্ছে, পরের বছর কপালে নাও জুটতে পারে!" রামপদ তো রেগে আগুন। আমি প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে হঠাৎ মনে পড়ল, রামপদর দাদুর নাম তো 'মদন'গোপাল। দাশু তারপর মুচকি মুচকি হাসিতে হাসিতে স্কুলের বাহিরে চলিয়া গেল ।
পণ্ডিত মহাশয়, পার্থবাবু মানুষটি সুবিধার নহেন। নামেই উচ্চ শিক্ষিত, পিএইচডি ডিগ্রিটা পুরো জালি। তবে পড়ার জন্য কখনও কোনো তাড়াহুড়ো করেন না। সেই কবে একবার পরীক্ষা নিয়েছিলো তার রেজাল্ট আজও দিলেন না। একবার তো বাসে পরীক্ষার প্রশ্ন ওনার ঝোলা থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল। রামপদ ওনার কোচিং এ পড়ে, ও বলে মোটা অনুদান দিলেই স্যার প্রশ্ন দিয়ে দেয়। এমনিতে শান্ত স্বভাবের তবে মাঝে মাঝে একটু বেশি গোল করিলে হঠাৎ সাংঘাতিক চটিয়া যান। সে সময়ে তাহার মেজাজটি আশ্চর্য রকম ধারাল হইয়া ওঠে। কেবল কুৎসা অপপ্রচার ষড়যন্ত্র বলে চেঁচামেচি করেন। দাশু বলে, এই রোগটা নাকি ওনার দিদিরও আছে।
পণ্ডিত মহাশয় চেয়ারে বসিয়াই সিলেবাসে নতুন যোগ হওয়া "সিঙ্গুর আন্দোলনের স্বার্থকতা আলোচনা কর" বলিয়া ঘুমাইয়া পড়িলেন। আমরা বই খুলিয়া হড়বড় করিয়া যা-তা খানিকটা বলিয়া গেলাম এবং তাহার উত্তরে, পণ্ডিত মহাশয়ের নাকের ভিতর হইতে অতি সুন্দর ঘড়্‌ঘড়্‌ শব্দ শুনিয়া বুঝিলাম, নিদ্রা বেশ গভীর হইয়াছে। কাজেই আমরাও শ্লেট লইয়া 'কাটকুট' আর 'দশপঁচিশ' খেলা শুরু করিলাম । রামপদ আর নবিন চাঁদ দেখি হঠাৎ তর্কাতর্কি শুরু করে দিলো। নবীন বলে,"শিল্প হলে অনেক কর্ম সংস্থান হতো"। রামপদ বলে," নামটাই তো ন্যানো, মানে ছোটো কারখানা। তাতে আর কটা লোকের কাজ মিলবে!" নবীন বলে,"বেশীরভাগ লোকই তো জমি দিতে রাজি ছিলো।" নবীন বলে " কম সংখ্যক লোক অনিচ্ছুক মানে তারা সংখ্যায় লঘু। আর সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।" দাশু তর্কের মাঝখানে রামপদর দিকে তাকিয়ে একবার ফুট কাটলো "মাছওয়ালার কি করে ছাদ ফেলা পাকা বাড়ি হলো!" রামপদ কাঁচা খিস্তি দিতে গিয়েও থেমে গেলো। নবীন বলল, "আইনটা পুরনো এবং কিছুটা নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে বটে। তবে উদ্দেশ্য কিন্তু সত্ ছিলো।" রামপদ বুক ফুলিয়ে বলে,"রাজ্যে একজনই সত্।" বিতর্ক শুনে এটুকু বোঝা যাচ্ছিল , রামপদ পার্থবাবুর কোচিং-এ খুব মন দিয়ে টপিকটা পড়েছে।
সকলে ওদের তর্কাতর্কি শুনতে মত্ত, কেবল দাশু এক কোনায় বসিয়া কি যেন করিতেছে, সেদিকে আমাদের খেয়াল নাই । একটু বাদে পণ্ডিত মহাশয়ের চেয়ারের তলায় তক্তার নিচ হইতে ফট্‌ করিয়া কি একটাআওয়াজ হইল । পণ্ডিত মহাশয় " হার্মাদ হার্মাদ" চেঁচাইয়া হাত পা ছুঁড়িয়া একলাফে টেবিল ডিঙ্গাইয়া, একেবারে ক্লাসের মাঝখানে ধড়্‌ফড় করিয়া পড়িয়া গেলেন । মিনিট পাঁচেক ভয়ানক আওয়াজের পর যখন সব ঠাণ্ডা হইয়া আসিল, তখন পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন, "কিসের শব্দ হইয়াছিল দেখ ।" দারোয়ানজি একটা লম্বা বাঁশ দিয়া অতি সাবধানে আস্তে আস্তে, তক্তার নিচ হইতে একটা হাঁড়ি ঠেলিয়া বাহির করিল- রামপদর সেই হাঁড়িটা, তখনও তাহার মুখের কাছে একটুখানি মিহিদানা লাগিয়াছিল ।
পণ্ডিত মহাশয়ভয়ানক ভ্রূকুটি করিয়া বলিলেন, "এ হাঁড়িটা কার ?" রামপদ বলিল, "আজ্ঞে আমার।" আর কোথা যায়- অমনি দুই কানে দুই পাক! "হাঁড়িতে কি রেখেছিলি!" রামপদ তখন বুঝিতে পারিল যে, সে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিতেছে। এমন সময় দাশু আমার শ্লেটখানা লইয়া পণ্ডিত মহাশয়কে দেখাইয়া বলিল,"এই দেখুন, আপনি যখন ঘুমোচ্ছিলেন, তখন ওরা শিক্ষক দিবসের অনুদানের ১০,০০০টাকার কে কতো ঝাড়বে তার হিসেব করছিল।" শ্লেটের উপর আমার নাম লেখা, পণ্ডিত মহাশয় আমার উপর প্রচণ্ড এক চড় তুলিয়াই হঠাৎ কেমন থতমত খাইয়া গেলেন । তারপরদাশুর দিকে কটমট করিয়া তাকাইয়া বলিলেন, "চোপ্‌ রও, কে বলেছে আমি ঘুমোচ্ছিলাম? গতকাল রাতে স্কুলে মশার কামড়ে ডেঙ্গুর ভয়ে ঘুমাতে পারিনি। তাই একটু চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।" দাশু খানিকক্ষণ হাঁ করিয়া বলিল, "তবে যে আপনার নাক ডাকছিল?" পণ্ডিত মহাশয় তাড়াতাড়ি কথাটা ঘুরাইয়া বলিলেন, "বটে ? ওরা সবখেলা কচ্ছিল ? আর তুমি কি কচ্ছিলে ?"দাশু অম্লানবদনে বলিল, "আমি পটকায় আগুন দিচ্ছিলাম ।" শুনিয়াই সকলের চক্ষুস্থির ! পন্ডিত মশাই বলিলেন,"তুমি জানো, স্কুলে পটকা ফাটানো অবৈধ!" দাশু বলিল, "আমার পট্‌কা, রামপদর হাঁড়ি । যদি আমার দোষ হয়, তা হলে রামপদরও দোষ হয়েছে। ব্যাস্‌ !"

Monday 29 August 2016

প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন



                                  প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন  
বাজারের ব্যাগটা বারান্দায় রেখেই স্ট্যান্ড ফ্যানটা অন করে চেয়ারে বসে হাঁপাতে লাগলো শুভ। এক ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে তাকে আজ প্রায় ১০মিনিটি হেঁটে বাজার থেকে বাড়ি আসতে হয়েছে। তার ওপর এই গুমোট গরমে বেচারা একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেছে। মা ফ্রিজ থেকে জলের বোতলটা নিয়ে গ্লাসে ঢেলে শুভকে দিতে যাচ্ছিল, শুভ তার মায়ের হাত থেকে জলের বোতলটা নিয়ে ঢগঢগ করে হাফটা শেষ করে দিলো। তারপর বাকি জলটার কিছুটা চোখে মুখে ছিটিয়ে ঠান্ডা করে অবশিষ্ট টুকু আবার গলায় ঢেলে দিলো। তারপর চেয়ারে বসে শুভ তার মাকে বললো 'একটা বাইক কিনে দাও নাহলে প্রতিদিন এই ভারী ব্যাগ নিয়ে এতোটা হেঁটে আসা যায় না'। শুভর মা এতক্ষণ ছেলের কান্ড-কারখানা দেখছিল, এবারে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে রওনা দিলো। রান্নাঘরের দরজার সামনে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো 'দানা মাঝিকে ১০কিলোমিটারের বেশি হাঁটতে হয়েছিল। আর বোঝা মনেহয় তোর থেকে অনেক ভারীই ছিলো"। শুভ মায়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে খালি জলের বোতলটা অজান্তেই আবার গালে তুলে দু'ফোঁটা ঢেলে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করলো।

দানা মাঝির ঘটনা যেদিন প্রথমে জানতে পারি সেদিন লোকটার অসহায়ত্বে করুনা হয়েছিল, শ্রদ্ধায় মাথা নত করেছিলাম স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দেখে। আজ শুনলাম দানা মাঝির এই করুণ বাস্তব সাগরপাড়ের মনেও কষ্ট দিয়েছে। আদিবাসী এই ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন বাহারিনের প্রধানমন্ত্রী খলিফা বিন সলমান আলি। খুশী হলাম এই ভেবে যে মানবিকতা এখনও মুছে যায়নি। অবাক হলাম বাহারিনের মতন এমন একটা দেশ থেকে সাহায্য আসায়। আর চীর কৃতজ্ঞ রইলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কারণ ডিজিটাল ইন্ডিয়া না করলে বাহারিনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দানা মাঝির কষ্টটা পৌঁছাতো না আর সাহায্যটাও আসতো না।
সকালবেলায় যখন দানা মাঝি তার স্ত্রীর মৃতদেহটা কাঁধে নিয়ে ছোট্টো মেয়েটিকে সাথে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে তখন হয়তো উনি ঘুম থেকে উঠে সলভাসন করে ক্লান্ত হয়ে তিরঙ্গায় ঘাম মুছে বেতের আরাম কেদারায় বসে উষ্ণ দার্জিলিংএ ঠোঁট ভিজিয়ে 'গুড মর্নিং সেলফি' তুলে পোস্ট করতে ব্যস্ত। গিনেস বুকে নাম তোলা পোশাকের হলোগ্রামের মাত্র একটা অক্ষর যদি ঐ আদিবাসীটির কপালে জুটতো তাহলে হয়তো কষ্টটা কিছুটা লাঘব হতো। যদি একবার আখলাকের মতন দানা মাঝির বাড়িতে কিছু লোক পাঠাতেন গো-মাংসের খোঁজে তাহলে হয়তো বুঝতে পারতেন ওদের ঘরে আপনার 'মেইক ইন ইন্ডিয়া'র বাতিটি কতোটা সুদিনের আলো ছড়াচ্ছে।
এমনিতেই আপনি বছরের বেশিরভাগ সময় এখন বিদেশে সেলফি তুলে কাটাচ্ছেন। আর বড়োলাটের ওয়ান্টেড তালিকাও তো আপনি গো-মুত্র দিয়ে শুদ্ধ করে দিয়েছেন। তাই এবারে যখন সিলিকন ভ্যালিতে যাবেন তখন গতবার লিখে আসা 'সত্য মেব জয়তে' ও 'অহিংসাই পরম ধর্ম' লাইন দুটির নিচে দানা মাঝির নামটা লিখে দিয়ে আসবেন। লোকটা সোসাল মিডিয়ার নাম কস্মীনকালে না শুনলেও, ওটার মাধ্যমে গোটা দেশবাসীকে (আপনাকে বাদে) যে থাপ্পড় মেরেছে সেটা আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি। তবে হ্যাঁ, আর্থিক সাহায্যের প্যাকেটটা কিন্তু বাহারিন থেকে আসছে। তাই নাগপুরের স্নিফার ডগ গুলোকে দিয়ে একটু প্যাকেটটা শুঁকিয়ে নেবেন। বলাতো যায়না যদি প্যাকেটের মধ্যে দু-একপিস গো-মাংস থেকে যায়!

শুভ জন্মাষ্টমী

                                                                শুভ জন্মাষ্টমী 
আজ হতে ৫২৩৮ বছর পূর্বে ১৯শে জুলাই তারিখে ভাদ্রমাসের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেন বলে একে জন্মাষ্টমী বলা হয়। যদিও অনেকে এখন দাবী করছেন কৃষ্ণের জন্ম নাকি ২১শে জুলাই হয়েছিল। কংশের কারাগারে বসুদেব ও দেবকীর সংসারে তিনি জন্ম নেন। বাসুদেব কিন্তু কোনো চিটফান্ডের মালিক ছিলেন না! আসলে উন্নয়নপ্রেমী কংশকে কে ভগবান একদিন ওয়াসঅ্যাপ করে জানায় যে তার বোন দেবকীর অষ্টম সন্তান তাকে হত্যা করবে। তাই তিনি তার বোন ও ভগ্নিপতীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে বন্দি করে রাখেন। তারপর চক্রান্ত করে একের পর এক সাতটি সন্তানকে হত্যা করে আর বোনের কাছে এসে কুমিরের কান্না কেঁদে বোনে 'ছোট্টো ঘটনা' বলে সান্ত্বনা দেয়। এমনকি ক্ষতি পূরনের আশ্বাস দিয়ে রেটও ঠিক করে দেন।
অবশেষে এক গভীর রাতে কৃষ্ণের জন্ম হয়। জেলের ম্যাক্সিমাম কর্মীরা সন্ধ্যা থেকেই চটুল নাচের আসরে মদ মাংস খেয়েছিল। তাই তারা বেহুঁশ হয়ে ঘুমাচ্ছিল। আর জেলের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব কংশ যেদিন থেকে কোহরাবকে দিয়েছিল কোহরাব সেদিন থেকেই জেলের গারদের লোহা গুলি চুরি করা শুরু করেছিল। এখন গারদের দরজার কেবল ফ্রেমটাই আছে, মাঝের রড গুলি নেই। আসলে কংশ 'মিনিমাম' খেতে বললেও কোহরাব 'ম্যাক্সিমাম' খেয়েছিল। কংশ নিজেও একসপ্তাহ ধরে ডেঙ্গুতে সজ্জাসায়ী। তাই কৃষ্ণকে নিয়ে বাসুদেবের কারাগার থেকে পালাতে অসুবিধা হয়নি। তবে রাস্তায় বাসুদেবকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়ছিল। রাস্তা জলমগ্ন হওয়ায় তাকে ত্রিফলার খোলা তার বাঁচিয়ে সাবধানে হাঁটতে হচ্ছিলো। বাসুদেব জানতো গত মার্চেই ওভার-ব্রিজটা ভেঙে পড়েছিলো। তাই তিনি নদীটা সাঁতরে পার হবেন ঠিক করলেন। তবে কাজটা মোটেই সহজ ছিলো না। কারণ DVC চক্রান্ত করে প্রচুর জল ছাড়ায় নদী উত্তাল ছিল।
নদী পার হয়ে গোকুলের নন্দ-যশোদা দম্পতির কাছে কৃষ্ণকে রেখে আসেন।অন্যদিকে সেই দম্পতির সদ্য জন্মনেওয়া কন্যাসন্তানকে কারাগারে দেবকীর কোলে স্হান দেন। নিন্দুকের অনেকেই বলেন বাসুদেব নাকি কন্যাশ্রীর টাকা পাবার জন্য এমন করেন। ছোটবেলা থেকেই কৃষ্ণ দামাল প্রকৃতির ছিলো। আর চুরি করার জিনটা তো মাতুলকুল থেকেই পেয়েছিল। কংশ অনেক চেষ্টা করেছিল গোকুলের পুরসভা দখল করার, নন্দকে অর্থের প্রলোভনও দেখিয়েছিল। নন্দ ছিলো গো-পালক গোষ্ঠীর প্রধান। তাই কংশ, নন্দের বাড়ির ফ্রিজে গো-মাংস আছে বলে কুৎসা রটান। পরে তা মিথ্যা প্রমানিত হয়। এরপর থেকেই নন্দ গোকুলের সমস্ত গরুর আধার কার্ড করে দেন। কংশ কৃষ্ণকে মারতে পুতনাকে পাঠান। পুতনা গোকুলে গিয়ে হুমকি দিতে থাকে - ' কোথায় সেই বাচ্চা? তাড়াতাড়ি বলো, নাহলে আমি সবার বাচ্চা খসিয়ে দেব"। ছোট্টো কৃষ্ণ পুতনাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিল। পুতনাকে দিয়ে কাজ না হওয়াতে চাষার ব্যাটাকে দিয়ে কালিয়া নাগ পাঠায় কৃষ্ণকে হত্যা করতে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।
কৃষ্ণের মধ্যে যে কেবল মাতুল থেকে চুরির জিন এসেছিল তা নয়! কৃষ্ণের মধ্যে তার মদন মামার জিনও ছিলো। কৈশরেই রাধা নামের এক কিশোরীকে ফ্লাট করতো। ফেসবুকেই দুজনের পরিচয় হয়। প্রথমে চ্যাট তারপর যমুনার পাড়ে ডেটিং। কৃষ্ণের ইনবক্স খুলে দেখা যায় সে ১৬১০০ গোপিনীর সাথে চ্যাট করত প্রতিদিন। রাধার সঙ্গে যৌবনে মথুরায় প্রত্যাবর্তন করে কৃষ্ণ তাঁর মামা কংশের অনুগামীদের দ্বারা সংঘটিতবহু হত্যার ষড়যন্ত্র থেকে আত্মরক্ষা করে বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল খাটিয়ে কংশকে হত্যা করেন।
(বি.দ্র. - এটা একটা কাল্পনিক লেখা। পুরাণ বা ধর্মের সাথে এর কোনো সংযোগ নেই)

Wednesday 24 August 2016

কাল্পনিক বক্তৃতা

                                                                 কাল্পনিক বক্তৃতা
আজ কিশোর কুমারের জন্মদিন। উনি বেশ কিছু ভালো গান গেয়ে ছিলেন বটে, কিন্তু পোতিবাদী গান খুব বেশী গাননি। উনি ভার্সেটাইল গায়ক ছিলেন তবে আমার মতন ভার্সেটাইল শিল্পী ছিলেন না। আজ ওনার জন্মদিনে, ওনার সাথে কাটানো কিছু স্মৃতির কথা বারেবারে মনে পড়ছে। আমার জীবনের চলার পথে প্রতিটি পদক্ষেপে আমি ওনাকে খুঁজে পাই। এই! এই! এই! চোপ! চোপ! আমি কি বলছি মন দিয়ে শোনো!
ওনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় যোগমায়া দেবী কলেজের সোসালে। উনি স্টেজে তখন গান করছেন "রূপ তেরা মস্তানা", আর আমি তখন সামনের সারিতে বসে। সোসালের শেষে আমাদের কালিঘাটের বাড়িতেও আসেন। তোমরা জানো না, কালিঘাট খালের পাড়ে বসেই কিন্তু উনি প্রথম "চিংগারী কোয়ি ভড়কে" গানটি গেয়ে ছিলেন।

সুদীপ্তটাও বড়ো কিশোর পাগল ছিলো। আমার আজও মনে পড়ে ডেলোর বাংলোতে সেই রাতে, সবাই তখন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল, আমি আসতেই সুদীপ্ত গেয়ে উঠেছিল "রাত কলি এক খাওব ম্যায়ে আয়ি, অউর গলে কা হার হুয়ি"। আমি তো ওর গানে খুশি হয়ে আমার প্রিয় পেন্টিংটাই দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য ও দাম দিয়েছিল। বেচারা কিশোর প্রেমের জন্যই পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। দেবজানী কে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে কাশ্মীরের রাস্তায় দুজনে হাত ধরে " হাম দোনো দো প্রেমী, দুনিয়া ছোড় চলে" গাওয়ার কোনো দরকার ছিলো! এখন জেলে বসে "ইয়ে ক্যায়া হুয়া, ক্যায়সে হুয়া" শুনছে। তবে লোকজন টাকা টাকা করে যখন আমার পিছনে ছোটে তখন আমার ঐ গানটার কথাই মনে পড়ে "আদমি যো দে হ্যায়, আদমি যো লেতা হ্যায়, জিন্দেগি ভর ও সাজায়ে পিছা করতি হ্যায়।"
মাস খানেক আগে আলিপুর জেলের পাশ থেকে আসছিলাম, হটাৎ জেলের ভিতর থেকে দেখি কিশোরের কন্ঠ ভেসে আসছে - " বড়ি শুনি শুনি সি হ্যায়, জিন্দেগী ইয়ে জিন্দেগী"। ড্রাইভার বলল ওটা মদনার ঘরে বাজছে। নারদার ভিডিও প্রকাশ হবার পর সত্যিই খুব ভেঙে পড়েছিলাম। তখনও ওনার গান " কুচ তো লোগ ক্যাঁহেঙ্গে, লোগোকা কাম হ্যায় ক্যাঁহনা" আমাকে লড়াই করার শক্তি দিয়েছে। আর ৩৪ বছর ধরে কিশোরের গাওয়া " ইয়ে লাল রঙ, কব মুঝে ছোড়ে গা" গানটা আমি প্রতিদিন রাতে শুনতাম।
সিপিএম যখন কুৎসা করে, কন্যাশ্রী আমাদের প্রকল্প, সাইকেল আমরা চালু করেছি, তখন আমি কানে হেড ফোন লাগিয়ে শুনি " কো ই হোতা জিসকো আপনা, হাম আপনে ক্যাহেলেতে ইয়ারো"। আরে দল থেকে যখন ঐ চাষার ব্যাটাকে বহিষ্কার করলো, তখন তো আমিই আশ্রয় দিলাম। মন্ত্রী করার পর দেখি আমাকে বলছে " হামে অউর জিনে কি চাহত না হোতি, আগর তুম না হোতে"।
এই তো সেদিন নজরুল মঞ্চের গ্রীনরুমে দুজনে একটু গপ্প করছিলাম, হটাৎ ওনার মোবাইলটা গেয়ে উঠল "পল পল পল, দিল কে পাশ তুম .."। উনিও কিশোর ভক্ত সেটা সেদিনই জানলুম। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন 'তোমার রিংটোন কি'? আমিও আমার রিংটোনটা শুনিয়ে দিলাম " দিলবার মেরে কবতক মুঝে ইঁউহি তড়পায়ো গে"। উনি হেঁসে জানতে চাইলেন এমন রিংটোন সেট করেছি কেন? আমিও হেসে বলেছিলাম 'CBI এফেক্ট'। তারপর উনি বললেন, শেয়ার ইট খোলো আমি একটা ভালো গান পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওটাকে রিংটোন কোরো। তাই ওনার দেওয়া কিশোরের সেই গান আজ আমার রিংটোন। কানন, এই কানন! একটা মিসকল দাও তো! রিংটোনটা সবাইকে শোনাই।
কানন মিসকল দিতেই ওনার ফোনে কিশোরের কন্ঠ ভেসে উঠল - " কসমে ওয়াদে নিভায়েঙ্গে হাম ......."

Friday 19 August 2016

✍✍✍✍ রাখী উৎসব ✍✍✍✍



                                                     ✍ রাখী উৎসব 
রাখীর দিবসে প্রাতকাল হইতেই কালীঘাটে ভীড় উপছাইয়া পড়িতেছে। ক্ষণকাল পূর্বে ভাইপো বৈঠকখানায় আগমন পূর্বক সমবেত সভ্যগণকে(!) ক্ষণিকের জন্য অপেক্ষা করতে বলিয়াছেন। সমাবেত সভ্যগণ নিজ নিজ উপহার হস্তে লইয়া অধীর আগ্রহে বসিয়া রহিয়াছেন। উপস্হিত সভ্যেরা(!) নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপে ব্যস্ত, ইতিমধ্যে ভাইপো বৈঠকখানায় প্রবেশ করিয়া সবাইকে অবগত করিলেন যে 'উনি আসিতেছেন'। সভ্যগণ আকুল নয়নে দুয়ারের পানে চাহিয়া রহিলেন। সবার উদ্বেগের অবসান করিয়া, হাস্য বদনে, দন্ত বিকশিত করিয়া, সবার উদ্দেশ্যে হস্ত হেলন করিয়া উনি প্রবেশ করিলেন।
প্রথমেই রাখী লইয়া উনি ওনার স্নেহের কাননের নিকট উপস্হিত হইলেন। কাননকে রাখী পরাইতেই কানন একখানি মূল্যবান তোয়ালে ওনাকে উপহার দিয়া কহিলেন "ইহা বিদেশ হইতে আনিয়াছি"। নব্য তোয়ালেটি হস্তে লইয়া উনি কহিলেন "তোমার পুত্র নিশ্চয়ই ইহা আনিয়াছে! ইহা হইতে সোমরসের সুগন্ধ বাহির হইতেছে যে"! কানন দন্ত বিকশিত করিয়া সম্মতি জানাইলে। অতপর উনি অমিতের নিকট উপস্হিত হইলেন। রাখী পরাইবার পর অমিতকে জিজ্ঞাসিল " কি আনিয়াছ"? অমিত প্রত্যুত্তরে কহিলেন "মহার্ঘ্য ভাতা বকেয়া, পিতার ৩৪বৎসরের দেনা, তাই তিওয়ারীর লাড্ডু না লইয়া দাশুর লাড্ডু আনিয়াছি"। সুব্রত হাসিয়া কহিলেন "আমি কিন্তু শক্তিগড়ের ল্যাংচা আনিয়াছি"। খুশী হইয়া উনি কহিলেন "কেবল ল্যাংচা! আলুরচপ সিঙাড়া আনোনাই! সিঙাড়া তো তোমারও খুব প্রিয়"। পার্থের নিকট হইতে একখানি গীতাঞ্জলি উপহার পাইয়া উনি পার্থকে একখানি কথাঞ্জলী প্রত্যাউপহার (রিটার্ন গিফ্ট) করিলেন। ইতমধ্যে মুকুল তার প্রিয় পুষ্প 'শিউলী' ওনার চরনে দিয়া প্রণাম সারিয়া নিয়াছে।
কৃষক পুত্রের উপহারের মোড়কটি খুলিয়া ওনার চক্ষু কপালে উঠিয়া গেল! 'কেউটিয়া' নামক একটি বিষধর সর্প উপহার দিয়াছে। সর্পটি শান্ত দেখিয়া তাহার কারণ জানিতে চাহিলে, কৃষক পুত্র কহিলেন "বৈদেশীক তৈল উহার উপরে না ফেলিলে এ সর্প জাগ্রত হইবে না"। জ্যোতিপ্রিয় এক বস্তা গোবিন্দভোগ চাল আনিয়াছে দেখিয়া উনি কহিলেন "এই চালই তো আমি ২টাকা কেজি দরে বিতরণ করিতেছি"। অনুব্রত নিকটেই গুড় জল লইয়া দাঁড়িয়ে ছিল, ওনার কথা শুনিয়া তারস্বরে হাসিতে লাগিল। উনি ধমক দিয়া কহিলেন "অতো হাসিওনা কেষ্টা, বাড়িয়া যাইবে অক্সিজেন তেষ্টা"।
তাপসকে খুব দুঃখী দেখিয়া কহিলেন " চিন্তার কিছু নাই! শারদীয়ার পূর্বেই শ্যলক গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবে"। মন্টু সুন্দরবনের বাঘের দুগ্ধ, সাধন ইলিশ, গৌমত 'ডানকানে চা' আর অরুপ কিছু ডেঙ্গুর ভাইরাস লইয়া সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। উনি ওদের রাখী পরাতে যাইবেন এমন সময় পশ্চাত্ হইতে রবি তাঁর লম্বায়মান হস্ত এই বামনদিগের ওপর হইতে প্রসারিত করিলেন। হটাৎ গোলযোগ শুনিয়া উনি গৃহের এক কোনে চাহিয়া দেখিলেন, বিজন ও সমীর উপহার লইয়া এগিয়ে আসিতে চাহিছে কিন্তু দেবনারায়ণ উহাদের হস্ত পশ্চাতে টানিয়া কহিতেছে "না না না না না আমি প্রথমে রাখী পরিব"।
উপস্হিত সভ্যদের রাখী পরানো সম্পন্ন হইলে উনি ভাইপো ডাকিয়া তাহার হস্তে দুটি রাখী দিয়া কহিলেন "একটিকে দিল্লিতে পাঠাইবার ব্যবস্থা করো আর অপরটিকে আলিপুর সংশোধনাগারে"। সারাটা দিন উপস্হিত সভ্যগণ প্রচুর আনন্দ করিল। ভোজনের ও চটুল নৃত্যেরও আয়োজন হইয়াছিল। সবাই দারুণ উপভোগ করিল এই রাখী উৎসব। কেবল উনি গৃহে প্রবেশ করিতে নিষেধ করিয়াছেন বলিয়া আরাবুল আর কাইজার উপহার লইয়া সারাটা দিন বাহিরে অপেক্ষারত রহিলেন।